বৃহস্পতিবার সরকার ড্রাগ-রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। আর সেখান থেকেই জানা যাচ্ছে, জার্মানিতে মাদক ব্যবহার অনেকটাই বেড়েছে।
জার্মানির ড্রাগ কমিশনার মাদকাসক্তি দূর করার জন্য আরো অর্থ সাহায্যের আবেদন করেছেন। তার মতে, করোনাকালে মানুষের মনের উপর প্রচণ্ড চাপ পড়েছে। তার প্রভাব মাদক ব্যবহারের উপর পড়েছে।
রিপোর্ট কী বলছে
বার্ষিক রিপোর্টে আইনি ও বেআইনি মাদকের ব্যবহার, মাদক পাচার নিয়ে বিস্তারিত তথ্য আছে। বলা হয়েছে, জার্মানির বেআইনি মাদক-বাজারে গাঁজা ও তার সঙ্গে যুক্ত মাদকেরই রমরমা। ২০২০ সালে মাদক-বাণিজ্য সংক্রান্ত অপরাধের ৫৯ শতাংশই এর সঙ্গে যুক্ত।
হেরোইন অন্য মাদক সংক্রান্ত অপরাধ করোনাকালে কমেছে। আসলে বার, পাব ও ক্লাব বন্ধ থাকার জন্যই এটা হয়েছে বলে রিপোর্টে মন্তব্য করা হয়েছে।
২০২০-তে কোকেন পাচার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। আগের বছরের তুলনায় তা নয় দশমিক ছয় শতাংশ বেড়েছে।
গাঁজাসহ বেশ কিছু মাদক পৃথিবীর অনেক দেশেই অবৈধ৷ কিন্তু কয়েকটি দেশে ইতিমধ্যেই বৈধ হয়েছে এসবের সীমিত সেবন ও বেচাকেনা৷ বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/empics/D. Dyckগাঁজা সেবন অনেক দেশেই আইনতভাবে অপরাধ নয়৷ এমনই একটি দেশ ল্যাটিন অ্যামেরিকার আর্জেন্টিনা৷ সেখানে চিকিৎসার জন্য গাঁজা আগে থেকেই বৈধ হলেও ব্যক্তিগত পছন্দে সেবনের জন্য গাঁজাকে ২০০৯ সাল থেকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Abramovich২০১৭ সালের ১০ মার্চ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীদের গাঁজা সংগ্রহের অনুমতি দেয় জার্মান সরকার৷ অনুমোদনের পর দেশটিতে গাঁজার চাহিদা ব্যাপকহারে বেড়েছে৷
ছবি: Imago/C. Mangচিকিৎসার উদ্দেশ্যে গাঁজার সেবন ও চাষ অস্ট্রেলিয়ায় বৈধ৷ সেই দেশের আদিবাসীদের মধ্যে গাঁজা সেবনের মাত্রা শহরাঞ্চলে কিছুটা কম বলে জানা যায়৷
ছবি: Getty Images/P.Kaneপ্রাপ্তবয়স্করা সেবনের জন্য তিন গ্রাম ওজন পর্যন্ত গাঁজা সঙ্গে রাখতে পারবেন ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামে৷ ২০০৩ সাল থেকে কার্যকরী এই আইনে মাথাপিছু একটি গাঁজা গাছ লাগানোকেও বৈধতা দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Reuters/P. Wojazerমাথাপিছু ৫০ গ্রাম গাঁজা কেনা বলিভিয়ায় বৈধ৷
ছবি: imago/CHROMORANGEসারা বিশ্বে আলোড়ন তুলে সব রকমের গাঁজা সেবন ও চাষের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে ক্যানাডা সরকার৷ ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে নতুন আইন এনে গাঁজা সার্বিকভাবে বৈধ ঘোষণা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/empics/The Canadian Press/J. Fransonল্যাটিন অ্যামেরিকার আরেক দেশ চিলিতেও ২০০৫ সাল থেকে বৈধ হয়েছে গাঁজা বা মারিহুয়ানার সেবন ও বিক্রি৷
ছবি: Nelson Vergara/Revista Mingaসেই ১৯৭৬ সাল থেকেই ইউরোপের নেদারল্যান্ডসে গাঁজা বৈধ৷ সেই দেশের বিখ্যাত ‘কফিশপ’-গুলিতে গাঁজা বিক্রি ও সেবন বৈধ হলেও পাঁচ গ্রামের বেশি গাঁজা রাখতে পারবেন না কেউ৷
ছবি: Getty images/AFP/J. Juinenআফ্রিকার প্রথম দেশ হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ২০১৮ সালে গাঁজা সেবন ও গাঁজা চাষকে বৈধতা দেয়৷ প্রসঙ্গত, এই দেশের ডাক্তারেরা চিকিৎসার প্রয়োজনে গাঁজা সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন ঠিকই, কিন্তু কোনো বিশেষ দোকান বা হাসপাতালে তা বিক্রির পরিষেবা এই মুহূর্তে নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Bosch২০১৩ সাল থেকে উরুগুয়েতে সম্পূর্ণরূপে বৈধ হয়েছে গাঁজা সেবন ও বিক্রি৷ শুধু তাই নয়, নিষেধাজ্ঞা উঠেছে গাঁজা চাষের ওপর থেকেও৷
ছবি: Reuters/A. Stapffঅঞ্চল অনুসারে ভিন্ন আইন থাকায় গাঁজা বা অন্যান্য মাদক বিষয়ক আইনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভিন্ন৷ কিছু রাজ্যে ব্যক্তিগত সেবন বৈধ হলেও দেখা যায় যে, সেখানে গাঁজার চাষে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা৷ কিন্তু ডাক্তারি পরামর্শে গাঁজা সেবন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অংশেই বৈধ বলে জানা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/J. Locher এই রিপোর্টে মাদক ব্যবহারের ক্ষেত্রে করোনার প্রভাবের বিষয়টি যেমন বোঝা যাচ্ছে, তেমনই বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন্ডও দেখা যাচ্ছে।
২০১৫-র সঙ্গে তুলনামূলক একটা খতিয়ান হলো, তামাক ব্যবহার পাঁচ পার্সেন্টেজ পয়েন্ট কমেছে। ক্ষতিকর মদ খাওয়ার পরিমাণও দুই পার্সেন্টেজ পয়েন্ট কমেছে।
কিন্তু ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সিদের মধ্যে গাঁজা খাওয়ার পরিমাণ নয় পার্সেন্টেজ পয়েন্ট বেড়েছে। কোকেনের ব্যবহার এক দশমিক দুই শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে দুই দশমিক নয় শতাংশ।
করোনার প্রতিক্রিয়া
মাদকের ব্যবহার ও মাদকাসক্তি ছাড়ানোর চেষ্টার ক্ষেত্রে করোনা যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। ড্রাগ কমিশনার ড্যানিয়েলা লুডউইগ জানিয়েছেন, ''করোনার ফলে কাউন্সেলিং সেন্টার ও থেরাপিস্টদের সঙ্গে মাদক ব্যবহারকারীদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। এই ব্যবস্থা যাতে ভেঙে না পড়ে, আমরা তার জন্য চেষ্টা করেছি।''
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, করোনাকালে আরেকটা বড় পরিবর্তন হয়েছে। এখন অনলাইনে মাদক পাওয়া যাচ্ছে ও মানুষ তা কিনছে। লুডউইগ বলেছেন, জার্মানি যাতে আন্তর্জাতিক মাদক পাচারের কেন্দ্র না হয়ে ওঠে, তা আমাদের দেখতে হবে। জার্মান সরকারকে এজন্য উদ্যোগী হতে হবে।
রেবেকা স্টডেনমেয়ার/জিএইচ