অনিশ্চয়তার যেমন চ্যালেঞ্জ আছে, তেমন সম্ভাবনাও আছে৷ ভারত বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি থেকে যতটা সম্ভব ফায়দা তুলতে চাইছে৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পররাষ্ট্র নীতি দেখে অনেকটা নৃত্যশিল্পীর জটিল অঙ্গচালনার মতো মনে হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নত করতে রাষ্ট্রপ্রধানেরা একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন, যা পুরোদস্তুর আনুষ্ঠানিক আলোচনা নয়৷ গত মাসে মোদী চীনের নেতা শি জিনপিং-এর সঙ্গে এমনই বৈঠক করেছেন৷ সোমবার সোচিতে রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে আলোচনা করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী৷ আজকের রাশিয়া গত শতকের সোভিয়েত ইউনিয়ন নয়, যার সমর্থন সঙ্গে আছে বলে ভারত ধরে নেবে৷ যদিও এই দু'টি দেশ সম্পর্কে উষ্ণতা ধরে রাখতে চাইছে৷ অস্ত্রের ক্ষেত্রে রাশিয়ার উপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে ভারত৷ এদিকে রাশিয়াও ধীরে ধীরে পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক স্থাপন করছে৷ রাশিয়া পাকিস্তানকে সামরিক পরিবহণের জিনিসপত্র বিক্রি করতে রাজি হওয়ায় তার লক্ষণ মিলেছে৷ অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ সামরিক সম্পর্ক আর একধাপ দূরে৷ তবু মোদী যখন রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে ‘বিশেষ কৌশলগত বোঝাপড়া' বলেন, তখন তার তাৎপর্য তো রয়েছে৷
ভারত চলে বাপের নামে
বংশ নিয়ে প্রায়ই আলোচনা হয় ভারতে৷ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন ভারতের বৈশিষ্ট্যই বংশপরম্পরা৷ রাজনীতি থেকে শুরু করে খেলা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সাম্রাজ্য নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: ANNE-CHRISTINE POUJOULAT/AFP/Getty Images
আম্বানির রাজত্ব
বিখ্যাত শিল্পপতি ধীরুভাই আম্বানি যে সাম্রাজ্য গড়ে গিয়েছিলেন, উত্তরাধিকারসূত্রে তার সম্রাট বনেছেন মুকেশ এবং অনীল আম্বানি৷ বাবার রাজ্য বেশ ভালোভাবেই সামলাচ্ছেন তাঁরা৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে এগিয়েও নিচ্ছেন বহুদূর৷
ছবি: picture-alliance/AP
বচ্চন, দ্য বচ্চন
অমিতাভ বচ্চন সম্পর্কে নতুন করে কাউকে কিছু বলার নেই৷ গত শতাব্দীর ৭০-এর দশক থেকে যে বচ্চন রাজত্ব শুরু হয় বলিউডে, এখনও তা টলাতে পারেনি কেউই৷ তাঁর নামের অংশীদার হয়েই বড় পর্দায় এসেছেন অভিষেক বচ্চন৷ অনেকেই মনে করেন, অমিতাভের ছেলে না হলে বর্তমান অবস্থানে আসা কঠিনই হতো জুনিয়র বচ্চনের৷
ছবি: ANNE-CHRISTINE POUJOULAT/AFP/Getty Images
ছোট দেওল, বড় দেওল
বলিউডের আরেক শীর্ষ অভিনেতা ধর্মেন্দ্র৷ জনপ্রিয় এই অভিনেতার বংশধরেরা অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও নাম কামিয়েছেন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে৷ সানি দেওল ও ববি দেওলের কিছু ছবি হিট হলেও তুখোড় অভিনয়শিল্পীদের সাথে প্রতিযোগিতায় বেশ পিছিয়েই পড়েন তাঁরা৷ চলচ্চিত্রে অভিনেত্রী হিসেবে নাম কামিয়েছেন ধর্মেন্দ্রর মেয়ে ইশা দেওলও৷
ছবি: Ambalika Misra
কাপুর খানদান
কাপুরদের রাজত্বের ইতিহাস অন্য অনেকের চেয়ে বেশ লম্বা৷ ব্রিটিশ শাসনামলে যখন নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগ ছিল, তখন হিন্দি সিনেমার পথিকৃৎদের একজন ছিলেন পৃথ্বিরাজ কাপুর৷ চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য পদ্মভূষণ দেয়া হয় তাঁকে৷ তাঁকে দিয়েই শুরু কাপুর বংশের চার প্রজন্মের রাজত্ব৷ রাজকাপুর, তাঁর ছেলে ঋষি কাপুর এবং সর্বশেষ এখন রণবীর কাপুর আনন্দ দিয়ে চলেছেন বলিউড ভক্তদের৷
ছবি: DW
প্রযোজনা, পরিচালনা, অভিনয়
বাবা মহেশ ভাট বিখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং পরিচালক৷ কিন্তু মেয়ে আলিয়া ভাট সেদিকে না গিয়ে সোজা অভিনয়ে৷ শুধু নাম নয়, মেধাতেও যে বাপের চেয়ে কোন অংশে কম না, তা এখনও প্রমাণ করে চলেছেন আলিয়া ভাট৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
গান্ধী বংশ
ভারতের রাজনীতি, নেহেরুর গড়ে যাওয়া রাজত্ব এবং কংগ্রেস দায়িত্ব এখন রাহুল গান্ধীর কাঁধে৷ কংগ্রেস পরবর্তীতে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসলে রাহুলই হতে পারেন প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: UNI
উত্তর প্রদেশের যাদব
মুলায়েম সিং যাদবের ‘বংশের সুনাম রক্ষা’ করছেন অখিলেশ যাদব৷ সভাপতি হিসেবে বাবার সমাজবাদী দলের হাল তো ধরেছেনই, বাবার মতো হয়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
বিহারের যাদব
বিহার প্রদেশের আরেক যাদব, রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের ছোট ছেলে তেজস্বী যাদব৷ জোট সরকারের সময় উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Imago/Hindustan Times/A. Yadav
কাশ্মিরের মুফতি
জম্মু ও কাশ্মীরের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি৷ সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মোহাম্মদ সাঈদের মেয়ে মেহবুবা৷ রাজ্যটিতে তিনিই প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী৷ সমর্থকরা তাঁকে সম্মান করে ‘বাজি’ বলে ডাকেন, উর্দুতে যার অর্থ ‘বড় বোন’৷
ছবি: Imago/Hindustan Times/N. Kanotra
জম্মুর আবদুল্লাহ
জম্মু ও কাশ্মীরের আরেক নেতা ফারুক আবদুল্লাহর ছেলে ওমর আব্দুল্লাহ৷ তিনিও বাবার কাছ থেকে শুধু রাজনীতিই নয়, পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর পদও৷
ছবি: picture-alliance/epa/F. Khan
আল্লা রাখার উত্তরাধিকার
শুধু উপমহাদেশ নয়, তবলায় জাদু দেখিয়ে পুরো বিশ্বকেই তাক লাগিয়েছিলেন আল্লা রাখা৷ তাঁর সন্তান ওস্তাদ জাকির হোসেন ধরে রেখেছেন সেই বংশপরম্পরা, ছড়িয়ে যাচ্ছেন তবলার ম্যাজিক৷
ছবি: AP
বাপ কা বেটি
উপমহাদেশের আরেক গর্ব পণ্ডিত রবিশংকর৷ এই সিতার মায়েস্ত্রোর যোগ্য কন্যা আনুশকা শংকর৷ বিশ্বের নামকরা সিতারবাদকদের মধ্যে অন্যতম স্থান দখলে নিয়েছেন আনুশকা৷
ছবি: AP
গীতা ফোগাট
আমির খানের চলচ্চিত্র দঙ্গল-এর সৌজন্যে মোটামোটি সবাই এখন জানেন গীতা ফোগাটের নাম৷ বিখ্যাত কুস্তিগীর মহাবীর ফোগাটের মেয়ে গীতা ভারতের হয়ে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় কুস্তিতে স্বর্ণপদক পাওয়া নারী৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
বিচারক চন্দ্রচূড়
ওয়াই ভি চন্দ্রচূড় ছিলেন ভারতে প্রখ্যাত প্রধান বিচারপতি৷ তাঁর ছেলে ধনঞ্জয় চন্দ্রচূড়ও আইনজ্ঞ হিসেবে ধরে রেখেছেন সুনাম৷ ধনঞ্জয়ও এখন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
14 ছবি1 | 14
এই সফর নিয়ে ইকোনমিক টাইমসে দীপাঞ্জন রায়চৌধুরী লিখেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় এমন এক সামরিক পরিকাঠামো গড়ে তুলতে সহমত হয়েছেন, যা কোনো একটি নির্দিষ্ট ব্লক বা শিবিরের অধীন থাকবে না৷ একইসঙ্গে ভারত এই এলাকায় নিয়মমাফিক শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অ্যামেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কাজ করে যাবে৷
মোদী ও পুটিনের আলোচনার ফলশ্রুতি কী, সেটা এখনই পুরোটা বোঝা যাবে না৷ তবে এটা অনুমান করা যায়, রাশিয়ার উপর চাপানো অ্যামেরিকার নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কথা হয়েছে৷ রাশিয়ার কোম্পানির সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক রয়েছে যে দেশগুলির, তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা ও তার ফল নিয়েও কথা হতে পারে৷ অ্যামেরিকার ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনার বিষয়টিও ভারত ও রাশিয়ার কাছে গুরুত্বপূর্ণ৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় কোনো পক্ষকেই স্বস্তিতে রাখেনি৷ ইউরোপ বরাবরই অ্যামেরিকার বন্ধু, এবং তারা পুটিনের কাজকর্মে সন্দিহান৷ ২০০০ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিন্টনের ভারত সফরের পর দুই দেশ কাছাকাছি এসেছে৷ ভারতকে অ্যামেরিকা-রাশিয়া-চীনের সম্পর্ককে মাপতে হচ্ছে৷ কেননা ট্রাম্প এটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে বিশ্বের নতুন অর্থনৈতিক ও সামরিক মহাশক্তি হিসেবে চীনের উত্থানকে তিনি ভালো চোখে দেখছেন না৷
লন্ডনের কিংস কলেজের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক হর্ষ ভি পান্ট এই প্রসঙ্গে বলেন, মনে হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসনের কাজকর্ম রাশিয়া-ভারত-চীন এই ত্রিদেশীয় সম্পর্ককে পুনরায় চাঙ্গা করল, যেটা অপেক্ষাকৃতভাবে অযৌক্তিক বলে মনে হচ্ছে৷ তবে এটা ভারতকে রাশিয়া এবং চীনের সঙ্গে বিশ্বজনীন সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা করতে সাহায্য করবে৷
পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে তার ভূমিকা সত্ত্বেও ভারত চায় না চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কে এটার প্রভাব পড়ুক৷ সাংহাই কো অপারেশন অর্গানাইজেশন-এ ভারতের সদস্যপদ পাওয়ার ক্ষেত্রে উদ্যোগ নিয়েছিল রাশিয়া৷ এই সম্পর্কটাকে ভারত তার বিদেশ নীতির লক্ষ্য অর্জনে ব্যবহার করতে চাইছে৷ সেই জন্য মোদী তাঁর পূর্বসূরি অটলবিহারী বাজপেয়ির কথা বলেছেন৷ প্রাক্তন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী চেয়েছিলেন, রাশিয়া শক্তিশালী দেশ হিসেবে বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিক৷ এটা অ্যামেরিকা ও চীনকে ভারতের এই বার্তা যে, একটি শক্তিশালী দেশের রাজত্বের দিন আর নেই, ঠান্ডা যুদ্ধের পরবর্তী বিশ্বে অনেক শক্তিশালী দেশ রয়েছে৷
ভারত এখনও বাণিজ্য এবং প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে৷ ১২ বিলিয়ন ডলার খরচ করে রাশিয়ার কাছ থেকেভারত সামরিক হার্ডওয়্যার এবং উন্নত অস্ত্রকিনতে উদ্যোগী৷
গত পাঁচ বছরে রাশিয়ার কাছ থেকেই ৬২ শতাংশ প্রতিরক্ষা আমদানি করেছে এই দেশ৷ এই সম্পর্ক দু'দেশের কাছেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ৷ ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে অ্যামেরিকার নীতিতে অবিশ্বাসের কারণে উভয়েই এই সম্পর্ক নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহী এবং তা বজায় রাখতে শেষ চেষ্টা অবধি করতে পারে৷ এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতিতে সোচিতে মোদীর একদিনের ঝটিকাসফর এবং পুটিনের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপচারিতা সবই ইন্ধনের আশা জোগাচ্ছে৷
একজন নরেন্দ্র মোদী
উগ্র সাম্প্রদায়িক আদর্শ এবং বিভাজনের রাজনীতির কারণে ভারতের বহু মানুষের কাছে তিনি খলনায়ক৷ ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে নিজেকে নতুন মোড়কে সামনে এনে সেই নরেন্দ্র মোদীই শোনাচ্ছেন ভারতকে বদলে দেয়ার মন্ত্র৷
ছবি: dapd
চা ওয়ালা
১৯৫০ সালে গুজরাটের নিম্নবিত্ত এক ঘাঞ্চি পরিবারে জন্ম নেয়া নরেন্দ্র মোদী কৈশরে বাবাকে সাহায্য করতে রেল ক্যান্টিনে চা বিক্রি করেছেন৷ ঘাঞ্চি সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী ১৭ বছর বয়সে যশোদাবেন নামের এক বালিকার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়, যদিও বেশিদিন সংসার করা হয়নি৷ ছাত্র হিসেবে সাদামাটা হলেও মোদী বিতর্কে ছিলেন ওস্তাদ৷ ১৯৭১ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস-এর প্রচারক হিসাবে রাজনীতির দরজায় পা রাখেন মোদী৷
ছবি: UNI
গুজরাটের গদিধারী
১৯৮৫ সালে আরএসএস থেকে বিজেপিতে যোগ দেয়ার ১০ বছরের মাথায় দলের ন্যাশনাল সেক্রেটারির দায়িত্ব পান ১৯৯৫ সালে গুজরাটের নির্বাচনে চমক দেখানো মোদী৷ ১৯৯৮ সালে নেন দলের জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব৷ ২০০১ সালে কেশুভাই প্যাটেলের স্বাস্থ্যের অবনতি হলে দলের মনোনয়নে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আবির্ভূত হন নরেন্দ্র মোদী, যে দায়িত্ব তিনি এখনো পালন করে চলেছেন৷
ছবি: Reuters
দাঙ্গার কালিমা
মোদীকে নিয়ে আলোচনায় ২০০২ সালের দাঙ্গার প্রসঙ্গ আসে অবধারিতভাবে৷ স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে ভয়াবহ সেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় গুজরাটে প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হন৷ মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েও তিনি দাঙ্গায় উসকানি দেন৷ তিনি এ অভিযোগ স্বীকার করেননি, আদালতও তাঁকে রেহাই দিয়েছে৷ তবে দাঙ্গার পক্ষে কার্যত সাফাই গেয়ে, হিন্দুত্ববাদের গান শুনিয়েই তিন দফা নির্বাচনে জয় পান মোদী৷
ছবি: AP
রূপান্তর
দাঙ্গার পর নিজের ভাবমূর্তি ফেরানোর উদ্যোগ নেন নরেন্দ্র মোদী৷ একজন বিতর্কিত নেতার বদলে উন্নয়নের কাণ্ডারি হিসাবে তাঁকে প্রতিষ্ঠা দিতে শুরু হয় ‘গুজরাট মডেল’-এর প্রচার৷ ২০০৭ সালের পর নিজেকে একজন সর্বভারতীয় নেতা হিসাবে তুলে ধরতে নতুন প্রচার শুরু করেন এই বিজেপি নেতা, প্রতিষ্ঠা করেন ‘ব্র্যান্ড মোদী’৷গুজরাটের উন্নয়নের চিত্র দেখিয়ে কলঙ্কিত ভাবমূর্তিকে তিনি পরিণত করেন ভারতের ত্রাতার চেহারায়৷
ছবি: UNI
ভারতের পথে পথে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌঁড়ে নরেন্দ্র মোদী পাড়ি দিয়েছেন তিন লাখ কিলোমিটার পথ৷ সারা ভারতে পাঁচ হাজার ৮২৭টি জনসভায় তিনি অংশ নিয়েছেন, নয় মাসে মুখোমুখি হয়েছেন পাঁচ কোটি মানুষের৷ কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা হিসাবে শুরু করলেও এবার তিনি হিন্দুত্ব নিয়ে প্রচার এড়িয়ে গেছেন সচেতনভাবে, যদিও বাংলাদেশের মানুষ, ভূখণ্ড এবং ধর্ম নিয়ে নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি নেতাদের বক্তব্য নতুন সমালোচনার জন্ম দিয়েছে৷
ছবি: AP
নতুন ইতিহাস
ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটই যে এবার ভারতে সরকারগঠন করতে যাচ্ছে, বুথফেরত জরিপ থেকে তা আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল৷ ৬৩ বছর বয়সি মোদীর নেতৃত্বে এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি৷ ৭ই এপ্রিল থেকে ১২ই মে অনুষ্ঠিত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৮১ কোটি ৪০ লাখ৷ তাঁদের মধ্যে রেকর্ড ৬৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ ভোট দিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শেষ হাসি
নির্বাচনে বিজেপির প্রতিশ্রুতি ছিল – মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের অর্থনীতি নতুন গতি পাবে, গুজরাটের আদলে তিনি ভারতকে বদলে দেবেন৷ অবশ্য সমালোচকরা বলছেন, ‘কলঙ্কিত ভাবমূর্তি’ ঢাকতে এসব মোদীর ফাঁপা বুলি৷ তাঁর স্বৈরাচারী মেজাজ, শিক্ষা ও অর্থনীতির জ্ঞান নিয়েও ঠাট্টা-বিদ্রুপ হয়েছে৷ বলা হচ্ছে, ভোটাররা টানা তৃতীয়বার কংগ্রেসকে চায়নি বলেই বিজেপি জয় পেয়েছে৷ যদিও শেষ হাসি দেখা যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর মুখেই৷