1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গাছের জন্যে ভালোবাসা

গোলাম মোর্তোজা
১৬ অক্টোবর ২০১৮

দশ জনের একটা বাড়ি৷ বড় নয়, বেশ ছোট বাড়ি৷ চার বা সাড়ে চার কাঠা জায়গার বাড়িটির একটি ছাদ৷ সেখানেও মালিকানা দশ জনের৷ ছাদ বিষয়ক আগ্রহী মালিকের সংখ্যা বেশি নয়৷ সেই সুযোগে ছাদে কিছু গাছ লাগানোর চিন্তা-ভাবনা৷

Bangladesch Dhaka - Dachgarten
ছবি: Golam Mortoza

যে অর্থে ছাদবাগান বলা হয়, তা মোটেই নয়৷ তবে বেশ কিছু গাছ, সবজির উপস্থিতি ছাদে সবসময়ই থাকে৷ ঢাকা মহানগরে পাখির বসার মতো গাছের বড়ই আকাল৷ ফলজ গাছ তো নেই-ই৷ বাগান নয়, তবুও গাছগুলোতে অল্প কিছু পাখি আসে নিয়ম করে৷ অল্প কিছু ফল, তাতেও পাখি ভাগ নিয়ে নেয়৷

পেয়ারার ছোট দু'টি চারা কিনেছিলাম বৃক্ষ মেলা থেকে৷ এক বছরের মধ্যে বড় হয়ে উঠল৷ আমরা খুঁজছিলাম ভেতরে লাল, এমন পেয়ারা৷ নার্সারির বিক্রেতার কথা পুরোপুরি বিশ্বাস না করেই কিনেছিলাম৷ পরের বছর থেকে গাছ ভর্তি পেয়ারা ধরতে শুরু করল৷ বেশ বড় আকারের অত্যন্ত সুস্বাদু, ভেতরে লাল পেয়ারা৷ বিশ্বাস জন্মেছে, সাধারণত নার্সারির গাছ বিক্রেতারা অসত্য বলেন না৷ এক এক গাছে একশ'র উপরে পেয়ারা ধরেছে টানা চার বছর৷ নিজেরা খেয়েছি, পাখি খেয়েছে৷ বন্ধুরাও কিছু ভাগ পেয়েছে৷ সাধারণত ছাদের টবের গাছ, তিন-চার বছরের বেশি ফলন দেয় না৷ সেই পেয়ারা গাছ দু'টি নেই৷ সেই পেয়ারার চারার গাছ বড় হয়েছে৷ পেয়ারাও ধরছে৷

বৃক্ষ মেলা থেকেই কিনেছিলাম একটি বারোমাসি আম গাছ৷ ছোট টবে লাগানোয় প্রথম দুই বছর আম ধরেনি৷ বড় টবে লাগানোর পর আম ধরতে শুরু করে৷ বছরের প্রায় সব সময়ই গাছে পাঁচ-সাতটি আম থাকে৷ আমগুলো খুব সুস্বাদু নয়৷ ফলে পাকা আম খাওয়ার চেয়ে, সারা বছর কাঁচা আম ডালে দিয়ে খাওয়ার কাজ চলে যায়৷ অসময়ে ডালে কাঁচা আম, অন্যরকমের স্বাদ, আনন্দেরও৷

একটি জামরুল গাছ আছে৷ বছরে একবার গাছ ভর্তি হয়ে জামরুল ধরে৷ দু'টি কাগজি লেবু গাছ আছে৷ একটিতে বারো মাসই লেবু থাকত৷ বছরের খাওয়ার চাহিদা মিটে যেতো৷ সেই গাছটির আয়ু শেষের দিকে৷ এবারের বৃক্ষমেলা থেকে নতুন লেবু চারার সন্ধান করতে হবে৷

ছোট বেলায় গ্রামে ফলসা ফলের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল৷ টক-মিষ্টি এই ফলটির স্বাদ অতুলনীয়৷ নগরে এই ফল পাওয়া যায় না৷ এখন গ্রামেও প্রায় বিলুপ্তির পথে৷ খুব কম সংখ্যক মানুষ ফলসা চেনেন, জানেন৷ আমরা ছাদে যে ফলসার চারাটি লাগিয়েছিলাম, তা গত তিন বছর ধরে ফলন দিচ্ছে৷ যেন অমৃতের স্বাদ৷

একটি আম্রপালি, একটি গোপাল ভোগ এবং একটি লিচুর চারা এনেছিলাম ইশ্বরদী থেকে৷ প্রতিবছর আম্রপালি গাছে ৫০-৬০টি আম শেষ পর্যন্ত থাকে৷ গোপালভোগ গাছে টিকে থাকে ৮-১০টি আম৷ পাকা আম অসাধারণ স্বাদ৷ পরিমাণে অল্প হলেও ভাবতে অবাক লাগে, ছাদের টবে লাগানো গাছের আম খেতে পারি৷ তবে মুখরোচকের চেয়ে বেশি দৃষ্টিনন্দন হচ্ছে, গাছ ভর্তি আমের মুকুল৷ লিচু গাছটিতে এক দেড়শ' লিচু ধরে৷ প্রথম বছর ঘরের মশারি দিয়ে লিচু রক্ষা করেছিলাম পাখিদের থেকে৷ সেই মশারি এখন নেই৷ পাকার বহু আগে লিচু নিজের মনে করে পাখিরা সাবাড় করে দেয়৷

টক একটি ফলের নাম বিলম্বি৷ ডালে দিয়ে খাওয়া যায়৷ ছাদে একটি বিলম্বি গাছ আছে এবং ফল দেয়৷

পুঁই আমার প্রিয় শাক৷ গত সাত-আট বছর পুঁই শাক বাজার থেকে কিনি না৷ সারা বছরই ছাদের টবে পুঁই শাক থাকে৷ শুধু নিজেদের নয়, অন্যান্য ফ্ল্যাটের চাহিদাও মেটায় টবের পুঁই শাক৷ একটু ছড়ানো টবে প্রতি বছর ডাটা এবং মুলোর বীজ ছড়িয়ে দিলে, লকলক করে বেড়ে ওঠে৷

শীতের পুরো মৌসুম টবে টমেটো হয়৷ যে বছর পাখির ভাগ কমানো যায়, সে বছর টমেটো কিনতে হয় না৷ টবে আট দশটি ঢেঁড়শের চারা লাগালে, এক মৌসুমের চাহিদা মিটে যায়৷ প্রতি বছরই আমরা টবের ঢেঁড়শ খেয়ে থাকি৷

দশ টাকা দিয়ে একটি পুদিনার চারা কিনে এনে লাগিয়েছিলাম৷ সেই পুদিনার পাতা শুধু চাহিদাই মেটায় না, দারোয়ানের দাবি, সে একবার দেড়শ' টাকার পুদিনার পাতা বিক্রি করেছে! জাপান থেকে শসার বীজ এনে লাগিয়েছিলাম৷ প্রচুর শসা খেয়েছিলাম সেবার৷

গোলাম মোর্তোজা, সাংবাদিকছবি: Golam Mortoza

আমাদের গ্রামাঞ্চলে এক প্রকারের কচুর শাক পাওয়া যায়৷ নাম ‘মৌলভি কচু'৷ কোথাও কোথাও নাম ‘দুধ কচু'৷ খিচুড়ি বা ভাতে সিদ্ধ করে পেঁয়াজ-মরিচ ও সরিষার তেল দিয়ে ভর্তা করে খেতে হয়৷ গলা চুলকানোর কোনো ভয় নেই৷ স্বাদ? তা আর না বলি, অসাধারণের চেয়ে বেশি কিছু৷ গ্রাম থেকে কয়েকটি কচু গাছ শিকড়সহ নিয়ে এসেছিলাম৷ ডগাসহ পাতা কাটলে আবার হয়৷ কয়েক বছর ধরে নিয়মিত খাচ্ছি৷

শখের তো আর শেষ নেই৷ ছাদে একটি কদবেল গাছও লাগিয়েছি৷ ফল পাওয়া যাবে কিনা জানা নেই৷ লাউ, পেঁপেঁ অনিয়মিত এবং পরিমাণে অল্প হলেও খাওয়া হয় কোনো কোনো বছর৷ এক বছর অনেক শিম হয়েছিল৷ টবের শালগম খাই প্রতিবছর৷

প্রশ্ন আসবে, গাছের চারা কিনে এনে লাগালেই কাজ শেষ হয়ে যায়? না, বিষয়টি এত সহজ নয়৷ বৃষ্টির দিন ছাড়া প্রতিদিন নিয়ম করে সকাল-বিকাল পানি দিতে হয়৷ গোবর মিশ্রিত মাটি দিতে হয় মাঝে মাঝে৷ আগাছা পরিষ্কার করতে হয় নিয়মিত৷ টবের মাটি পরিবর্তন করতে হয়৷ আমরা দুই জন অনেক কিছু করি, তবে সবকিছু নয়৷ আমাদের দুইজন দারোয়ান নিয়মিত সহায়তা করে থাকেন৷

ছাদে গাছ লাগানো বা বাগান যা-ই বলি না কেন, আনন্দ থেকেই করি জীবনযাপনের অংশ হিসেবে৷ গাছগুলোর যত্ন নেওয়া এক অন্যরকম আনন্দ৷ সেই থেকে গাছগুলোর প্রতি জন্ম নেয় এক গভীর ভালোবাসা৷

ভালোবাসা বিষয়ক ছোট্ট একটি ঘটনা বলে লেখা শেষ করি৷

আমাদের একজন দারোয়ান চাকরি ছেড়ে জুটমিলের পুরনো চাকরিতে ফিরে গেছেন বছর পাঁচেক আগে৷ মাঝে মাঝে ফোন করে জানতে চান, গাছগুলো কেমন আছে? শুনলাম কয়েকদিন এসে গাছগুলো দেখে গেছেন৷ পুরনো পেয়ারা গাছটি এখন নেই, মন খারাপ করেছেন!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ