গাছের সার হিসেবে মানুষের মলের ব্যবহার
২৩ জুন ২০২২মল থেকে সার? চাষি হিসেবে টোমাস ভিলানুয়েভা ও তার পরিবারের কাছে মানুষের মল মোটেই অস্বস্তির কারণ নয়৷ এমনকি খাবার টেবিলেও তারা সে বিষয়ে কথা বলেন৷ কারণ সালাদের পাতা ও শাকসবজিও মানুষের মলের পুষ্টির সাহায্যে গজানো হয়েছে৷
টেপেটিক্সটলা নামে মেক্সিকোর ছোট এক অঞ্চলে নিজস্ব খামারে ফলমূল ও শাকসবজি ফলানো হয়৷ সেখানে সার হিসেবে শুধু নিজস্ব মলের কম্পোস্ট ব্যবহার করা হয়৷
টোমাস ঐতিহ্য অনুযায়ী এই ফুলগুলি বপন করেছেন৷ ফসল নিয়ে টোমাস ভিলানুয়েভা এতই সন্তুষ্ট যে, তিনি সেগুলি নিয়ে গান গাইতে গাইতে সরাসরি খেত থেকে রান্নাঘরে আসেন৷ স্ত্রী লিলিয়ানা আরান্দা সেটা দিয়ে খামারের সব শ্রমিকের জন্য দুপুরের খাবার রান্না করেন৷ খাওয়ার সময় পানিসহ সব প্রাকৃতিক উপাদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়৷
এমন কৃষিকাজের ব্যাখ্যা করে টোমাস ভিলানুয়েভা বলেন, ‘‘এভাবে আমরা একটা চক্র অনুযায়ী চলছি৷ মাটিতে যা ফলন হয়, তা হজম করে শেষে মাটিতেই ত্যাগ করা হয়৷ কম্পোস্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যা মাটি থেকে এসেছে, তা আমরা আবার মাটিতে ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি৷ এভাবে চক্র পূর্ণ হয় এবং জীবন চলতে থাকে৷''
খামারে উৎপাদিত শাকসবজি পরিবারের চাহিদা মেটানোর পর বাজারে বিক্রি করা হয়৷ বেড়ে ওঠার জন্য গাছপালার পুষ্টির প্রয়োজন হয়৷ বিশেষ করে নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস গুরুত্বপূর্ণ উপাদান৷ এই জৈব খামারে খনিজ কৃত্রিম সারের প্রবেশ নিষেধ৷ দাম বেশি হবার পাশাপাশি সেগুলি মাটির জন্যও ভালো নয় বলে টোমাস নিশ্চিত৷
সেই লক্ষ্যে তিনি নিজের টিমের সঙ্গে ড্রাই টয়লেটে জমা মলের সঙ্গে পাথরের মিহি গুঁড়া বা খড়ের মতো প্রাকৃতিক উপাদান মিশিয়ে উর্বর কম্পোস্ট সারে রূপান্তরিত করেন৷ এর জন্য অনেক সময় ও পরিশ্রম লাগে৷ কম্পোস্ট প্রক্রিয়ার সময় ব্যাকটেরিয়া তাপমাত্রা অনেক বাড়িয়ে দেয়৷ সেই উত্তাপের ফলে সম্ভাব্য রোগের জীবাণুরও মৃত্যু হয়৷ নানা ধরনের কপি, বিট, ব্রকোলি, লেটুস পাতা, ফলমূলসহ অনেক কিছুর ফলন হয়৷
মেক্সিকোর মোরেলোস রাজ্যে অকোটেপেক অঞ্চলেও মল কাজে লাগানোর বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে৷ স্থপতি হিসেবে সেসার আনিয়োর্ভে সেখানে নতুন এক পরীক্ষা চালিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘'২০ বছর আগে আমি এক ইকোলজিকাল বসত এলাকা গড়ে তুলেছিলাম৷ ড্রাই টয়লেটসহ বসতবাড়ি যে পানি দূষিত করে না, আমি সেটা দেখাতে চেয়েছিলাম৷''
এমন টয়লেটে প্রস্রাব ও মল আলাদা করে জমা হয় এবং পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয় না৷ পয়ঃনিষ্কাশন প্রণালীর সঙ্গেও এই টয়লেট যুক্ত নয়৷ ড্রাই টয়লেটের ব্যবহারকারী হিসেবে ডালিয়া আনিয়োর্ভে ডিয়াস বলেন, ‘‘ কমোডের সামনে প্রস্রাব ও পেছনে মল প্রবেশ করে৷ মলের উপর শুধু কিছু মাটি ফেলে দিতে হয়৷''
মেক্সোকোয় মলমূত্রের একটা বড় অংশই অপরিশোধিত অবস্থায় হ্রদ, নদনদী ও সমুদ্রে গিয়ে পড়ে৷ সেসার এমনটা মোটেই পছন্দ করেন না৷ তাঁর মতে, ড্রাই টয়লেটই সমাধানসূত্র হতে পারে৷ তিনি ওয়ার্কশপের মাধ্যমে এমন টয়লেট তৈরি ও ব্যবহার বুঝিয়ে বলেন৷ তবে মানুষের মল অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় হিসেবে বড় চ্যালেঞ্জ বটে৷
গোরেস্কি/সালদানিয়া/এসবি