এমনও গাছ রয়েছে যা মাটিতে মিশে থাকা ভারি ধাতু শুষে নিতে পারে৷ এর ফলে ফিরে আসে মাটির শুদ্ধতা৷ এমন গাছও রয়েছে যার মাধ্যমে গতানুগতিক কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়াই খনিজ পদার্থ আহরণ করা যায়৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির ফ্রাইবুর্গ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এক ধরণের খাগড়া ঘাসের মাধ্যমে মাটি থেকে জারমেনিয়াম নামে একটা খনিজ পদার্থ উত্তোলন করেছেন৷
পৃথিবীতে ধাতুর চাহিদা তেলের মতোই ব্যাপক৷ এমনকি কোনো কোনো পূর্বানুমান বলছে, ইলেকট্রিক গাড়ির সংখ্যা বাড়তে থাকায় একটা সময়ে গিয়ে তেলের চেয়েও ধাতুর চাহিদা বেড়ে যাবে৷
সমস্যা হচ্ছে, এসব ধাতু অনেক মূল্যবান এবং এগুলোর উত্তোলনও সহজ নয়৷ উপধাতু জার্মেনিয়ামের কথাই ধরা যাক৷ এটা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে ব্যবহার করা হয়৷ এ জন্য সংশ্লিষ্ট শিল্প কারখানায় এর বেশ চাহিদা রয়েছে৷ এটা আলো পরিবাহী৷ এ কারণে রাতের গগলস, গাড়ির দূরত্ব পরিমাপক সেন্সরে এর ব্যবহার রয়েছে৷
কিন্তু জার্মেনিয়াম সহজে মিলে না৷ যদিও এটা সিলিকনের কাছাকাছি এবং সারা পৃথিবীর মাটিতেই এটা পাওয়া যায়৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মাটিতে এর ঘনত্ব খুবই কম৷ এক মেট্রিক টন মাটিতে সাধারণত ১ দশমিক ৫ গ্রাম জার্মেনিয়াম পাওয়া যায়৷
বিশুদ্ধ বাতাসের স্বাদ দেয় যে টাওয়ার
দূষিত নগরে বিশুদ্ধ বাতাসের স্বাদ দিতে শুরু হয়েছে এক অভিনব প্রকল্প৷ শুধু বিশুদ্ধ বাতাস নয়, গহনাও দেয় এই প্রকল্প৷
ছবি: Derrick Wang
এই ধরিত্রীর নয়!
স্মগ বা ধোঁয়া ও কুয়াশার মিশ্রন মুক্ত টাওয়ার দেখতে খু্বই আধুনিক, তবে এটির কাজ সাধারণ: বিশুদ্ধ বাতাস দেয়া৷
ছবি: Derrick Wang
আশেপাশের বাতাস বিশুদ্ধ করা
টাওয়ারের ভেতরে রয়েছে খুবই কার্যকর এয়ার ফিল্টার, যেটি খুব কম জ্বালানি ব্যবহার করে, কিন্তু বাতাসে ভেসে বেড়ানো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাও আটকে ফেলে৷ ফলে টাওয়ারের আশেপাশের বাতাস নগরীর তুলনায় ৭৫ শতাংশ বেশি পরিষ্কার থাকে৷
ছবি: Derrick Wang
মুক্তভাবে শ্বাস নেয়ার জায়গা
নিঃসন্দেহে একটি টাওয়ারের পক্ষে পুরো শহরের বাতাস পরিষ্কার করা সম্ভব নয়৷ তাই এটি স্থাপনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষকে উৎসাহ দেয়া এবং তাদের জন্য এমন একটি জায়গা তৈরি করা যেখানে তারা সমবেত হতে পারবে এবং মুক্তভাবে নিশ্বাস নিতে পারবে৷ এমনকি বেইজিংয়ের মতো দূষিত শহরেও তা সম্ভব৷
ছবি: Laard Buurman
কিন্তু ধুলা দিয়ে কী করা হবে?
যেহেতু রোসেনগার্ডে এমন এক ভবিষ্যতে বিশ্বাস করেন, যেখানে আবর্জনা বলে কিছু থাকবে না, তাই তিনি ধুলিকণাগুলোকে কাজে লাগানোর এক উপায়ও যোগ করেছেন স্মগ মুক্ত টাওয়ারে৷
ছবি: Studio Roosegaarde
মূল্যবান কিছু একটা
রোসেনগার্ডের দল ঠিক করেছে দূষিত বাতাস থেকে সংগৃহীত ধুলিকণা ত্রিশ মিনিট ধরে কম্প্রেস করে এক্রাইলিক দিয়ে মুড়ে ফেলতে হবে৷ ফলে সেগুলো অত্যাশ্চর্য কিউবে পরিনত হয় যা দিয়ে এরকম ‘স্মগমুক্ত রিং’ তৈরি করা যায়৷
ছবি: Studio Roosegaarde
একটি সাহসী স্বপ্ন
এই প্রকল্পের পেছনে রয়েছেন ডাচ ডিজাইনার ডান রোসেনগার্ড৷ তিনি মনে করেন, বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়াটা মানবাধিকার৷ আর সেটা নিশ্চিত করতেই এই প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যেতে চান রোসেনগার্ড৷
ছবি: Willem de Kam
6 ছবি1 | 6
এই পদ্ধতি বেশ ব্যয়বহুল হওয়ায় শিল্প কারখানাগুলো তাদের চাহিদা মেটাতে কয়লার ছাই বা প্রক্রিয়াজাতকৃত আকরিক দস্তা থেকে এটা সংগ্রহ করে৷ এক কেজি জার্মেনিয়ামের দাম দুই হাজার ইউরোর মতো৷
গাছই সংগ্রাহক
ফ্রাইবুর্গের ইউনিভার্সিটি অফ মাইনিং অ্যান্ড টেকনোলজির জীববিজ্ঞানী হ্যারমান হাইলমায়ার মাটি থেকে জার্মেনিয়াম সংগ্রহে গাছকে কাজে লাগিয়েছেন৷ তিনি এক ধরণের খাগড়া ঘাসের মাধ্যমে এই পরীক্ষা চালান৷
আর্দ্র তৃণভূমিতে এই গাছটি বেশ চোখে পড়ে৷ দক্ষিণ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার কৃষকরা জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এর চাষ করে থাকেন৷
এই গাছগুলো সিলিকন অ্যাসিড শুষে নেয় এবং তাদের পাতায় ছোট ছোট বালুকণার মতো করে একত্রিত করে৷ এটা শিকারীর হাত থেকে গাছকে সুরক্ষা দেয়৷ বালুকণা বা ঘাসের স্বাদ ভালো না৷
এই ঘাস জার্মেনিয়ামকেও একইভাবে প্রক্রিয়াজাত করে৷ চাষের পর এটিকে শুকিয়ে পোড়ানো হয়৷ এই ঘাস থেকেও খুব বেশি জার্মেনিয়াম পাওয়া যায় না৷ এক মেট্রিক টন ছাই থেকে ১০০গ্রাম পাওয়া যায়৷
ক্রসিফার্স নামে আরেক প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে, এটা ধাতু আহরণে আরো বেশি পারঙ্গম৷
ইউরোপের সবুজ শহর
পরিবেশ বাঁচানো ও জ্বালানি খরচ কমানো সহ অন্যান্য কারণে ইউরোপের শহরগুলোতে দিন দিন ‘সবুজ জ্বালানি’-র ব্যবহার বাড়ছে৷
ছবি: CC/Negu
বিশুদ্ধ বাতাসের শহর স্টকহোম
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে চলাচলরত যানবাহনের প্রায় ৭৫ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে৷ এছাড়া ‘যানজট কর’ এড়াতে অনেক মালিক নিজের গাড়ি ছেড়ে গণপরিবহণ ব্যবহার করছেন৷ ফলে ইউরোপের অন্যতম বিশুদ্ধ বাতাসের শহর এখন স্টকহোম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Paul Eckenrot
কার্বন নিরপেক্ষ শহর
নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগেই ইউরোপের প্রথম কার্বন নিরপেক্ষ শহর হয়ে গেছে ইটালির ‘সিয়েনা’৷ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে বায়োমাস ও জিওথার্মাল উৎস থেকে উৎপাদিত জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়ে এবং বন রক্ষা করে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে সিয়েনা৷
ছবি: cc-by-sa/Massimo Catarinella
হাইড্রোজেন বাস
অবস্থানের কারণে আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকইয়াভিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব৷ এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে ২০৫০ সালের মধ্যে পুরো শহরকে জীবাশ্ম জ্বালানিমুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ এখনই সেখানকার গণপরিবহণে হাইড্রোজেন ব্যবহার করা হচ্ছে৷ আর শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ ভবনে জিওথার্মাল উৎস থেকে উৎপাদিত জ্বালানির ব্যবহার হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নঁতে ট্রাম
ফ্রান্সের ষষ্ঠ বৃহত্তম শহর নঁতে বায়ু দূষণ ও কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমাতে স্ট্রিটকার (ট্রাম) চলাচল চালু করা হয়েছে৷
ছবি: imago/McPHOTO
সবুজের সমাহার
লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়ুসে দিন দিন পরিবহণের সংখ্যা বাড়ছে৷ কিন্তু তারপরও সেই শহরের বাতাস ইউরোপের অন্য অনেক শহরের চেয়ে ভাল৷ এর কারণ শহরকে ঘিরে রয়েছে বড় বন, বাগান আর পার্ক৷ রাজনীতিবিদরা সেগুলো টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর৷
ছবি: Fotolia/Aleksandr Volkov
আবর্জনা দিয়ে ঘর গরম
ইংল্যান্ডের ডিডকট শহরের বাসিন্দারা নিজেদের আবর্জনা দিয়ে গ্যাস উৎপাদন করে, সেটা দিয়ে ঘর গরম রাখে৷
ছবি: Getty Images
বৃষ্টির পানি ধরে রাখা
বার্লিনের কেন্দ্রে একটি অংশে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে পরে সেগুলো কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এই পানি আশেপাশের ভবনগুলোর টয়লেটে ও অগ্নিনির্বাপক সংস্থায় ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: imago/Schöning
7 ছবি1 | 7
রুর ইউনিভার্সিটির মোলিকুলার জেনেটিকস অ্যান্ড ফিজিওলজি অফ প্ল্যান্টস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক উটে ক্র্যামার বলেন, এই গাছটি কেবল দূষণকারী পদার্থকে মাটির ভেতর থেকে বের করে আনতেই সক্ষম নয়, পাশাপাশি রেকর্ড পরিমাণ মূল্যবান ধাতুকে একত্রিত করতেও সক্ষম৷
অধ্যাপক ক্র্যামার দুটি প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন৷ এগুলো হচ্ছে, এই উদ্ভিদ কি প্যাথোজেন থেকে বাঁচতে ক্যাডিয়াম এবং দস্তাকে কাজে লাগায়? এবং এইসব ধাতু সংগ্রহ, কাণ্ডে স্থানান্তরে কোন ধরণের পন্থা অবলম্বন করে?
কোন ধরণের গাছের মাধ্যমে কোন ধাতু সংগ্রহ করা যায়– তার একটা হিসাব রয়েছে৷ এটা মাটি ও জলবায়ুর উপরও নির্ভর করে৷ ভুট্টা, সূর্যমুখী, কাষ্ঠল গাছও অনেক সময় ব্যবহার করা হয়৷
উইলো এবং পপলার গাছও তাদের পাতায় ধাতু একত্রিত করে৷ এটা সংগ্রহ করতে একটা ভ্যাকুয়াম ক্লিনারে পাতাগুলোকে একত্রিত করতে হবে৷ তবে এটা এখনো অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নয়৷
ধাতু সংগ্রহে অনেক গাছ হয়ত লাভজনক না-ও হতে পারে৷ তবে পরিবেশ দূষণ কমাতে এসব গাছের অনেকগুলোরই রয়েছে কার্যকর ভূমিকা৷