মধ্য অ্যামেরিকার দেশ বেলিজ ঐতিহ্যগত কৃষিকাজের ফলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে৷ একটি এনজিও সেই বিপজ্জনক রীতির বিকল্প হিসেবে টেকসই কৃষি পদ্ধতির উপযোগিতা তুলে ধরছে৷
বিজ্ঞাপন
‘স্লাশঅ্যান্ডবার্ন' কৃষিপদ্ধতি
মধ্য অ্যামেরিকার দেশ বেলিজে এপ্রিল ও মে বছরের সবচেয়ে উষ্ণ মাস৷ এমন সময়ে অগ্নিকাণ্ডও বেশি দেখা যায়৷ ইচ্ছাকৃতভাবে জঙ্গলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়৷ গাছ কেটে পোড়ানোর কাজ বহু সহস্রাব্দ ধরে এখানকার কৃষিকাজের অঙ্গ৷সংরক্ষণ ট্রাস্টের প্রতিনিধি গুস্তাভো রেকেনা এই রীতি সম্পর্কে বলেন, ‘‘এর ফলে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে, জমির ক্ষতি হচ্ছে, ফসলেরও ক্ষতি হতে পারে৷ সমাজ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে৷ এতটাই ধ্বংসাত্মক এর প্রভাব৷ এটা মোটেই কৃষির সেরা পন্থা নয়৷''
‘স্লাশ অ্যান্ড বার্ন' – অর্থাৎ গাছ কেটে জ্বালিয়ে দেওয়াই এই পদ্ধতির নাম৷ এর ফলে পোড়া মাটি সাময়িকভাবে উর্বর হয়ে ওঠে,কারণ গাছের অবশিষ্ট অংশের পুষ্টি অনুর্বর জমিতে মিশে যায়৷ কিন্তু এই প্রক্রিয়ার ফলে বিশাল পরিমাণ কার্বন নির্গমন ঘটে৷
গাছ পোড়ানোরকুপ্রভাব
কখনো কখনো আগুনের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না৷ যেমন পাশের একটি খেতেও এবার আগুন ধরে গেছে৷ গুস্তাভো রেকেনা নিজেদের উদ্যোগের ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘আগুন সম্পূর্ণ দূর করা আমাদের লক্ষ্য নয়৷ কারণ এটা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ৷ জীববৈচিত্র্য ও অন্যান্য খামারগুলির সুরক্ষার স্বার্থে আমরা শুধু সেরা প্রক্রিয়াগুলি প্রয়োগ করতে চাই৷ কারণ বলগাহীন আগুন অন্যান্য খামারের কাছেও হুমকি৷ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে আগুন জনপদ ও মানুষের জীবনযাত্রার ক্ষতি করতে পারে৷''
গাছ পোড়ানো বন্ধ করার উদ্যোগ
04:17
অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবে গাছে আগুন লাগানোর প্রক্রিয়ার বিকল্পের খোঁজ করতে হবে৷ সেই লক্ষ্যে গুস্তাভো রেকেনা ও তাঁর এনজিও একাধিক কৌশল প্রয়োগ করছে৷ যেমন পেশাদারি পদ্ধতিতে কোকো চাষ৷ এই এনজিও এক সংরক্ষিত অরণ্য ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে৷ সেখানে ক্ষুদ্র চাষিদের অরগ্যানিক কোকো চাষ শেখানো হচ্ছে৷ এর ফলে জঙ্গলের ক্ষতি না করেও তাঁদের আয় হচ্ছে৷ কারণ কোকো গাছের বৃদ্ধির জন্য অন্যান্য গাছের ছায়ার প্রয়োজন হয়৷ কোকো চাষি হিসেবে জনসন ইকাল মনে করেন, ‘‘এই সংরক্ষিত এলাকায় কড়া নিয়ম ও বিধি রয়েছে, যা আমরা মেনে চলি৷ যেমন রাসায়নিক পদার্থ, কীটনাশকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ৷ আগুনের ব্যবহারও নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷''
বিকল্প পথ
সংরক্ষিত এলাকার বাইরে জঙ্গলের অন্য এক অংশে অদূর ভবিষ্যতে ভুট্টা ও বিন চাষ শুরু হবে৷ অতীতে সেখানে গাছ পোড়ানো হতো৷ আজ ইংগা গাছের কারণে জমি উর্বর হয়ে উঠেছে৷ চাষি হিসেবে অর্লান্দো কুকুল ৩ বছর আগে বীজ বপন করেছেন৷ ইতোমধ্যে খেত ভরে গেছে৷ সেইসঙ্গে গাছের ঝরে যাওয়া পাতা ও বীজের কল্যাণে মাটির উপর নাইট্রোজেন-সমৃদ্ধ পুষ্টিকর এক স্তর সৃষ্টি হয়েছে৷ ঠিক গাছ পোড়ানোর পর মাটি যেমন উর্বর হয়ে ওঠে, এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটছে৷ অর্লান্দো বলেন, ‘‘আপনি সেই স্তর দেখতে পারেন৷ এখন কালো মাটি দেখা যাচ্ছে৷ আমরা মাটি পুনরুদ্ধার করেছি৷ ফলে মাটি আরও উর্বর হয়ে উঠেছে৷''
এই এনজিও-র সাহায্যে অর্লান্দো কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রথমবার ভুট্টার ফসল তুলবেন৷ তার আগে তিনি আলোর সরবরাহ নিশ্চিত করতে গাছের উপরের অংশ ছেঁটে ফেলবেন৷ কিন্তু সেই অংশ আবার দ্রুত বেড়ে উঠবে৷
বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ১০টি বোটানিক্যাল গার্ডেন
বোটানি বা উদ্ভিদবিদ্যা একটি বিজ্ঞান৷ কিন্তু বিজ্ঞানের সঙ্গে নন্দনতত্ত্বের যোগ ঘটে বোটানিক্যাল গার্ডেন নামে পরিচিত উদ্যানগুলিতে৷ সেখানে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির গাছপালা ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে মানুষের ভিড় হয়৷
ছবি: picture-alliance/R. Bryant/Arcaid
রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনস, কিউ
রানি ভিক্টোরিয়ার আমলের বৃহত্তম গ্রিনহাউসটির নাম টেম্পারেট হাউস, যা দেখতে পাওয়া যাবে দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের কিউ গার্ডেন্সে৷ এখানে যেসব বিরল গাছ ও উদ্ভিদ রয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো দক্ষিণ আফ্রিকার এন্সেফালার্টোস উডিয়াই – পাম গাছের মতো একটি সাইক্যাড গাছ৷ পুরু, সবুজ পাতা সম্বলিত গাছটির একটিমাত্র নমুনা আজ অবধি মুক্ত প্রকৃতিতে খুঁজে পাওয়া গেছে৷ নয়তো গাছটি বস্তুত বিলুপ্ত৷
ছবি: picture-alliance/R. Bryant/Arcaid
কির্শটেনবশ ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন
কেপ টাউনের বোটানিক্যাল গার্ডেনটি টেবল মাউন্টেনের পুবদিকের ঢালে৷ ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই উদ্যানটিতেই প্রথম শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট এলাকার গাছপালা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা হয়৷ এখানকার ৭,০০০ উদ্ভিদের মধ্যে নানা ধরনের ঘাস ছাড়া অবশ্যই প্রোটিয়া ফুলগাছটিও আছে, কেননা, প্রোটিয়া হলো দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় ফুল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ZB/R. Kaufhold
আর্কটিক-অ্যালপাইন বোটানিক গার্ডেন, ট্রমসো
মেরুবৃত্তের উপরে অবস্থিত এই উদ্যানটি হলো বিশ্বের উত্তরতম বোটানিক্যাল গার্ডেন৷ মেরু অঞ্চল ও উচ্চ পার্বত্য এলাকার হাজার হাজার ফুল ফোটে এই বাগানে – তার মধ্যে হিমালয়ের নীল পপি ফুলও আছে৷ ট্রমসোর এই ছোট্ট উদ্যানটির মালিক হল নরওয়ের সুমেরু বিশ্ববিদ্যালয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Bäsemann
রিও ডি জানেইরোর বোটানিক্যাল গার্ডেন
ইউনেস্কো এই উদ্যানটিকে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ হিসেবে ঘোষণা করেছে৷ ১৮০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সুবিশাল উদ্যানটিতে প্রায় ৬,৫০০ ধরনের গাছপালা আছে, যাদের মধ্যে অনেকগুলোই বিলুপ্তির মুখে৷ রিও ডি জানেইরোর দক্ষিণের এই এলাকাটির নাম উদ্যানটির নামে: জার্দিম বোতানিকো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সিঙ্গাপুর বোটানিক গার্ডেন্স
সিঙ্গাপুরের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় উদ্যানগুলির অন্যতম৷ উদ্যানটি অর্কিডের সংগ্রহের জন্য বিখ্যাত৷ দর্শকরা এখানে একটি বৃষ্টিপ্রধান অরণ্যের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতে পারেন৷ ২০১৫ সালে উদ্যানটিকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকাভুক্ত করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/prisma
মন্ট্রিয়ল বোটানিক্যাল গার্ডেন
ছবির চৈনিক উদ্যানটির মতো নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে ৩০টি বাগান ও ১০টি গ্রিনহাউস মিলে মন্ট্রিয়ল বোটানিক্যাল গার্ডেন৷ মিং রাজবংশের রাজকীয় উদ্যানগুলির প্রেরণায় তৈরি চাইনিজ গার্ডেনটি হলো চীনের বাইরে সবচেয়ে বড় চৈনিক উদ্যান৷ ফার্স্ট নেশনস গার্ডেন নামের অংশটিতে ক্যানাডার আদত উপজাতিক বাসিন্দাদের প্রাকৃতিক জ্ঞান সম্পর্কে একটি প্রদর্শনী দেখতে পাওয়া যাবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/All Canada Photos
সার সিউসাগর রামগুলাম বোটানিক্যাল গার্ডেন
মরিশাসের বোটানিক্যাল গার্ডেনটি তার সুবিশাল জলজ লিলি ও পদ্মফুলের জন্য বিখ্যাত৷ আদতে উদ্যানটি মশলা চাষের জন্য সৃষ্টি হয়েছিল৷ উদ্যানটির নামকরণ করা হয়েছে স্বাধীন মরিশাসের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর নামে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Global Travel Images
বার্লিন বোটানিক গার্ডেন্স
বার্লিনের ডাহলেম এলাকায় ৪৩ হেক্টর এলাকা জুড়ে তৈরি এই বাগানটি ইউরোপের বৃহত্তম বোটানিক্যাল গার্ডেন৷ বার্লিনের মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এর মালিক৷ একটি ট্রপিক্যাল হাউস ও চারপাশের বাগানে সারা বিশ্বের প্রায় ২০,০০০ উদ্ভিদ প্রজাতির নমুনা রাখা রয়েছে – নানা ধরনের পাম গাছ, লতানো গাছ ও একটি দৈত্যাকার বাঁশঝাড়ও রয়েছে তার মধ্যে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Global Travel Images
8 ছবি1 | 8
জীববৈচিত্র্যের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ
অর্লান্দো কুকুল আগে যখন গাছে আগুন লাগাতেন, তখন ফসল তোলার কয়েক বছর পর সেই জমিতে আর চাষ করা যেত না৷ এবার প্রাণীগুলিও ফিরে আসতে শুরু করছে৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে আমি আশেপাশে কোনো পাখিও দেখি নি৷ খরগোশ বা হরিণও নয়৷ কয়েকদিন আগে একটা হরিণ এসেছিল৷ আমি বেশ খুশি৷ তারা আবার ফিরে আসছে, কাছে আসছে৷ আগুন লাগালে ধোঁয়া তাদের তাড়িয়ে দিতো৷ এমনকি প্রাণীরাও আগুন দেখলে ভয় পায়৷ তখন তাদের দৌড়তে হয়৷''
গুস্তাভো রেকেনা আরও বেশি চাষিকে টেকসই কৃষি পদ্ধতির কার্যকারিতা সম্পর্কে বোঝাতে চান৷ এই পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তাঁর মনে কোনো সন্দেহ নেই৷