অ্যামেরিকা ও আঞ্চলিক শক্তিগুলির উদ্যোগে রাফা শহরে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান ঠেকাতে এক বোঝাপড়ার চেষ্টা চলছে৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করছেন৷
বিজ্ঞাপন
সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসকে দমন করতে গাজায় ইসরায়েলের অভিযানকে ঘিরে দেশেবিদেশে বিতর্কের শেষ নেই৷ প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু সেখান থেকে হামাসকে নির্মূল করতে যাবতীয় পদক্ষেপ নিতে বদ্ধপরিকর৷ সেনা অভিযানের চাপে হামাসের নেতারা রাফা শহরে আত্মগোপন করে আছেন বলে ইসরায়েল মনে করছে৷ কিন্তু সেখানে সামরিক অভিযান চালালে স্থানীয় বাসিন্দা ও গাজার বাকি অংশ থেকে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১২ লাখ শরণার্থীর জীবন বিপন্ন হবে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশ নেতানিয়াহুকে সতর্ক করে দিচ্ছে৷ ইসরায়েলি পণবন্দিদের মুক্তির বদলে অস্ত্রবিরতি সংক্রান্ত বোঝাপড়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে আসছে৷
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেশ রাফাহ শহরে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ তিনি ইসরায়েলের উপর প্রভাব রাখতে পারে এমন সব দেশের উদ্দেশ্যে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে এমন অভিযান বন্ধ করার চেষ্টার আবেদন জানিয়েছেন৷ জাতিসংঘের সাহায্যকারী সংস্থার প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, রাফা শহরে স্থলবাহিনীর অভিযান হলে সেই ট্র্যাজিডি বর্ণনা করার শব্দ থাকবে না৷
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ইসরায়েলসহ কয়েকটি আঞ্চলিক দেশ সফর করে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ ‘টাইমস অফ ইসরায়েল' সংবাদপত্রের সূত্র অনুযায়ী বুধবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলের সরকার হামাসের অস্ত্রবিরতির প্রস্তাবের জবাব দিতে চলেছে৷ ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল' সংবাদপত্রের সূত্র অনুযায়ী কয়েকটি আঞ্চলিক দেশের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে মার্কিন প্রশাসন এক সার্বিক শান্তি প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করেছে৷ এর আওতায় দুটি ধাপে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে একাধিক ইসরায়েলি পণবন্দিদের মুক্তি দেবে হামাস৷ এ ছাড়া দশ সপ্তাহের এক অস্ত্রবিরতিও কার্যকর হওয়ার কথা৷ ব্লিংকেন ইসরায়েলের এমন ‘উদার' মনোভাবের প্রশংসা করেছেন এবং হামাসের উদ্দেশ্যে সেই প্রস্তাব মেনে নেওয়ার ডাক দিয়েছেন৷ তিনি বুধবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে গাজায় আরো ত্রাণ পাঠানোর বিষয়েও আলোচনা করছেন৷
বন্দি বিনিময় ও অস্ত্রবিরতি সংক্রান্ত প্রস্তাব সত্ত্বেও মঙ্গলবার ইসরায়েলপ্রধানমন্ত্রী রাফা শহরে সামরিক অভিযানের ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ তাঁর দফতরের এক বিবৃতি অনুযায়ী, সেখানে হামাসের শেষ ঘাঁটি থেকে গেছে৷ তাই সব লক্ষ্য পূরণের আগে যুদ্ধ বন্ধ করার প্রশ্নই ওঠে না৷ বোঝাপড়া হোক বা না হোক, রাফা থেকে হামাসের ব্যাটেলিয়ন নিশ্চিহ্ন করা হবে৷ মূলত জোট সরকারের কট্টর জাতীয়তাবাদী শরিকদের চাপে নেতানিয়াহু সেই অভিযানের প্রস্তুতি চালাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ এমনকি সেই পদক্ষেপ না নিলে তাঁর জোট সরকার ভেঙে যেতে পারে বলেও কয়েকজন মন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মত্রিচ হামাসের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান বজায় রাখার পক্ষে সওয়াল করে চলেছেন৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এপি)
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার যত চেষ্টা
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা চালিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷ কিন্তু এসেছে কি শান্তি?
জাতিসংঘ রেজ্যুলেশন ১৯৬৭
১৯৬৭ সালে ছয়দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা দখল করে ইসরায়েল৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সে বছরের ২২ নভেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘রেজ্যুলেশন ২৪২’ নামে একটি প্রস্তাব পাস হয়৷ প্রস্তাবে দখলকৃত ফিলিস্তিনি এলাকা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/Keystone
ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি ১৯৭৮
মিশর ও সিরিয়ার নেতৃত্বে আরব রাষ্ট্রগুলো ১৯৭৩ সালে আবারো ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়৷ এ যুদ্ধের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে বিশ্ব নেতারা৷ তাদের চেষ্টায় ১৯৭৮ সালে ১২ দিন আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবকাশ যাপন কেন্দ্র ক্যাম্প ডেভিডে এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়৷ এ চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির ভিত হিসিবে বিবেচনা করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Daugherty
মাদ্রিদ কনফারেন্স ১৯৯১
ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিষয়ে ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেতৃত্বে স্পেনের মাদ্রিদে এ কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে আরো অংশ নেয় ইসরায়েল, জর্ডান, লেবানান, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন৷ এ কনফারেন্সের তাৎক্ষণিক কোন ফলাফল আসেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Hollander
অসলো অ্যাকর্ড ১৯৯৩
১৯৯৩ সালে নরওয়ের অসলোতে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি আলোচনায় বসে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন৷ আলোচনার পরবর্তী ধাপে এ দু’দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যা অসলো চুক্তি নামে পরিচিত৷ চুক্তিতে বলা হয় যে, পশ্চিম তীর থেকে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করবে ইসরায়েল৷ পাঁচ বছরের জন্য ফিলিস্তিনকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের অনুমতিও দেয় এ চুক্তি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Sachs
আরব পিস ইনিশিয়েটিভ ২০০২
২০০২ সালে আরব লিগের নেতারা লেবাননের বৈরুতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি পরিকল্পনার একটি প্রস্তাব পাস করেন৷ প্রস্তাবনায় ইসরায়েলকে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ চলাকালীন দখলকৃত সব জায়গা ত্যাগ করতে বলা হয়, যেন পশ্চিম তীরে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে তোলা যায়৷ বিনিময়ে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/C. Kealy
রোডম্যাপ ২০০৩
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া জাতিসংঘের সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির রোডম্যাপ নামে পরিকল্পনার প্রস্তাব দেয়৷ ২০০৫ সালের মধ্যে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল দুইটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয় এই রোডম্যাপে৷
ছবি: Getty Iamges/AFP/J. Aruri
সংঘর্ষ, অস্ত্র বিরতির চেষ্টা
২০১২ সালের শেষ দিকে গাজায় দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়তে থাকে৷ এ সময় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি অস্ত্র বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ ২০১৪ সালে ইসরায়েলি এক তরুণ নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনে সামরিক অভিযান চালালে পরিস্থিতি আবারো খারাপ হতে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্যারিস সম্মেলন ২০১৭
২০১৭ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন বিষয়ে আলোচনা করতে ৭০টি দেশের প্রতিনিধিরা প্যারিসে একত্রিত হয়৷ তবে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের কোনো প্রতিনিধিই এ আলোচনায় অংশ নেয়নি৷
ছবি: Reuters/T. Samson
ট্রাম্পের শান্তি আলোচনা
প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়ে শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এতে বলা হয় পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন বন্ধ রাখবে ইসরায়েল, তবে ইতোমধ্যে অধিকৃত সকল স্থাপনায় তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে৷ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিন৷