ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হলো না। গাজায় আবার আক্রমণ শানিয়েছে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান।
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েলের অভিযোগ, গাজা ভূখণ্ড থেকে জ্বলন্ত বেলুন দক্ষিণ ইসরায়েলে এসে পড়েছে। তারই জবাব দেয়া হয়েছে। বুধবার সকালে গাজায় একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী আক্রমণ চালায় বলে হামাস নিয়ন্ত্রিত ফিলিস্তিনি মিডিয়া জানিয়েছে।
এখনো পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর নেই। ১১ দিন ধরে প্রবল লড়াইয়ের পর গত ২১ মে ইসরায়েল ও হামাস যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে সেই যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হলো না।
ইসরায়েল কী বলছে?
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী(আইডিএফ) বিমান আক্রমণের কথা স্বীকার করেছে। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, হামাস জ্বলন্ত বেলুন ইসরায়েলে পাঠিয়েছিল। তার ফলে ইসরায়েলে ২০টি জায়গায় আগুন ধরে যায়। তারই জবাব দেয়া হয়েছে মাত্র। আইডিএফ মুখপাত্র সেই ভিডিও পোস্ট করে দাবি করেছেন, গাজা শহর এবং দক্ষিণ ইসরায়েলের খান ইউনিস শহরকে টার্গেট করেছিল হামাস।
হামাসের উত্থান ও কার্যক্রম
২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে হামাস৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বেশিরভাগ দেশের কাছে তারা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচিত৷ তবে হামাসের কিছু মিত্র দেশও রয়েছে৷
ছবি: Mohammed Abed/AFP/Getty Images
উত্থানপর্ব
১৯৮০-এর দশকে ইয়াসির আরাফাতের প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-র বিরোধিতায় হামাসের জন্ম৷ পিএলও-র বিরোধী শক্তি হিসেবে দাঁড় করাতে শুরুর দিকে ইসরায়েল সরকার হামাসকে অর্থ সহায়তা দিয়েছিল বলে অনেকক্ষেত্রে দাবি করা হয়৷ তবে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠায় কোনো ধরনের ভূমিকার কথা বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: Reuters/S. Salem
ইসরায়েলকে অস্বীকার
পিএলও-র মতো হামাস ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকারে বিশ্বাস করে না৷ তাদের প্রতীকে রয়েছে জেরুসালেমের ‘ডোম অব দ্য রক’৷ ইসরায়েল, গাজা ও পশ্চিম তীরকে একক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে তারা বিবেচনা করে৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
শান্তি চুক্তি প্রত্যাখ্যান
১৯৯৩ সালে ইয়াসির আরাফাত অসলো চুক্তির অধীনে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করেন, যার মধ্য দিয়ে ১৯৮৭ সালে শুরু হওয়া প্রথম ইন্তিফাদার অবসান হয়৷ হামাস এই শান্তি প্রক্রিয়া প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলে হামলা অব্যাহত রাখে৷
ছবি: J. David Ake/AFP/Getty Images
নির্বাচনে জয়
২০০৬ সালের গাজার সাধারণ নির্বাচনে হামাস পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে৷ এরপর থেকে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বে ফাতাহ-এর অধীনে রয়েছে পশ্চিম তীর আর গাজার নিয়ন্ত্রণ হামাসের হাতে৷ ২০০৮-০৯, ২০১২ ও ২০১৪ সালে ইসরায়েলি সেনার সঙ্গে হামাসের তুমুল লড়াই চলে৷
ছবি: AP
সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত
১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করে৷ ২০০৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নও তাদেরকে সন্ত্রাসী তালিকায় রাখে৷ হামাস এই বিষয়ে আদালতে চ্যালেঞ্জ করে৷ তবে আদালত তাদের আবেদন বাতিল করে৷ যুক্তরাজ্য ক্যানাডা, জাপান, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াও হামাসকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Khatib
হামাসের সহযোগী
হামাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সহযোগী কাতার৷ দেশটির আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল-থানি প্রথম রাষ্ট্রনেতা, যিনি ২০১২ সালে হামাস সরকারের সঙ্গে দেখা করেন৷ এখন পর্যন্ত দেশটি হামাসকে ১৮০ কোটি ডলার দিয়েছে৷ হামাসের প্রতি তুরস্কেরও সমর্থন রয়েছে৷ সংগঠনটির নেতা ইসমাইল হানিয়ের পক্ষে রাজনৈতিক অবস্থান রয়েছে রেচেপ তাইয়েপ-এর্দোয়ানের৷ এছাড়াও বিভিন্ন উদ্যোগ ও ফাউন্ডেশনের সহযোগিতাও পায় তারা৷
ছবি: AP
হামাসের রকেট উৎস
সবশেষ সংঘাতেও ইসরায়েলের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন শতাধিক রকেট ছুঁড়েছে হামাস৷ দীর্ঘদিন হামাস রকেটের জন্য ইরানের উপর নির্ভরশীল ছিল৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুদান ও মিশর হয়ে সেখান থেকে অস্ত্র চোরাচালান হতো৷ তবে বর্তমানে গাজাতেই হামাস রকেট বানাচ্ছে বলেও ধারণা করা হয়৷
ছবি: Mohammed Abed/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
এখন ইসরায়েলে নাফতালি বেনেটের নেতৃত্বে জোট সরকার গঠিত হয়েছে। সেই সরকারের আমলে এই প্রথম আক্রমণ হলো। বেনেট অতীতে বলেছিলেন, এই ধরনের বেলুন এলে সেনাবাহিনী তার কড়া জবাব দেবে।
জেরুসালেম মার্চের ফলে উত্তেজনা
জেরুসালেমে চরম দক্ষিণপন্থি ইহুদি বিক্ষোভকারীরা পতাকা আন্দোলিত করে মিছিল করছে। এই মিছিল পূর্ব জেরুসালেমের আরব সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় হয়েছে। এর ফলে ফিলিস্তিনিরা ক্ষুব্ধ।
মিছিলে প্রচুর তরুণ আরব-বিরোধী স্লোগান দেয়। ইসরায়েল সরকারও এই মিছিলের নিন্দা করেছে। বিদেশমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদ বলছেন, ''যারা এই জাতিবাদী স্লোগান দিচ্ছিলেন, তারা ইসরায়েলের জনগণের মর্যাদাহানি করেছেন।''