যুদ্ধবিরতি শেষ হতেই বিমান থেকে গাজায় বোমাবর্ষণ শুরু করেছে ইসরায়েল৷ গত কয়েকদিনে এলাকায় ফেরা ফিলিস্তিনিরা আবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার সকালে যুদ্ধবিরতির ইতি টানে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান৷ ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে বেজে ওঠে সাইরেন৷ দূর থেকে এলাকাটি আলোকিত হয়ে উঠতে দেখা যায়৷ ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর দাবি, হামাস যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করে হঠাৎ রকেট হামলা চালানোয় তারা ‘সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে’ হামলা শুরু করেছে৷
আরো আট ইসরায়েলির মুক্তি
এর আগে আরো আটজন পণবন্দিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। ইসরায়েল ৩০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে।
যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, হামাস একজনকে মুক্তি দিলে ইসরায়েল দেবে তিনজনকে। হামাস গতকাল ইসরায়েলি ও থাইল্যান্ডের নাগরিকদের পাশাপাশি দুইজন রুশকেও মুক্তি দিয়েছে। তাই আটজন ইসরায়েলের নাগরিকের সঙ্গে দুইজন রুশকে ধরে দশজন হচ্ছে। সেই অনুপাতে ইসরায়েল ৩০ জনকে মুক্তি দেবে।
মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার জানিয়েছে, যে আটজনকে বৃহস্পতিবার হামাস মুক্তি দিয়েছেন, তাদের মধ্যে একজন উরুগুয়ে, একজন মেক্সিকো ও একজন রাশিয়ার যৌথ নাগরিক। তাদের রেডক্রসের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের সেনা জানিয়েছে, আট বন্দিকে রেডক্রস তাদের হাতে তুলে দিয়েছে। তরা ইসরায়েলের ভিতরে প্রবেশ করেছেন।
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার যত চেষ্টা
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা চালিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷ কিন্তু এসেছে কি শান্তি?
জাতিসংঘ রেজ্যুলেশন ১৯৬৭
১৯৬৭ সালে ছয়দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা দখল করে ইসরায়েল৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সে বছরের ২২ নভেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘রেজ্যুলেশন ২৪২’ নামে একটি প্রস্তাব পাস হয়৷ প্রস্তাবে দখলকৃত ফিলিস্তিনি এলাকা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/Keystone
ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি ১৯৭৮
মিশর ও সিরিয়ার নেতৃত্বে আরব রাষ্ট্রগুলো ১৯৭৩ সালে আবারো ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়৷ এ যুদ্ধের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে বিশ্ব নেতারা৷ তাদের চেষ্টায় ১৯৭৮ সালে ১২ দিন আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবকাশ যাপন কেন্দ্র ক্যাম্প ডেভিডে এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়৷ এ চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির ভিত হিসিবে বিবেচনা করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Daugherty
মাদ্রিদ কনফারেন্স ১৯৯১
ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিষয়ে ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেতৃত্বে স্পেনের মাদ্রিদে এ কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে আরো অংশ নেয় ইসরায়েল, জর্ডান, লেবানান, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন৷ এ কনফারেন্সের তাৎক্ষণিক কোন ফলাফল আসেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Hollander
অসলো অ্যাকর্ড ১৯৯৩
১৯৯৩ সালে নরওয়ের অসলোতে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি আলোচনায় বসে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন৷ আলোচনার পরবর্তী ধাপে এ দু’দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যা অসলো চুক্তি নামে পরিচিত৷ চুক্তিতে বলা হয় যে, পশ্চিম তীর থেকে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করবে ইসরায়েল৷ পাঁচ বছরের জন্য ফিলিস্তিনকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের অনুমতিও দেয় এ চুক্তি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Sachs
আরব পিস ইনিশিয়েটিভ ২০০২
২০০২ সালে আরব লিগের নেতারা লেবাননের বৈরুতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি পরিকল্পনার একটি প্রস্তাব পাস করেন৷ প্রস্তাবনায় ইসরায়েলকে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ চলাকালীন দখলকৃত সব জায়গা ত্যাগ করতে বলা হয়, যেন পশ্চিম তীরে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে তোলা যায়৷ বিনিময়ে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/C. Kealy
রোডম্যাপ ২০০৩
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া জাতিসংঘের সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির রোডম্যাপ নামে পরিকল্পনার প্রস্তাব দেয়৷ ২০০৫ সালের মধ্যে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল দুইটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয় এই রোডম্যাপে৷
ছবি: Getty Iamges/AFP/J. Aruri
সংঘর্ষ, অস্ত্র বিরতির চেষ্টা
২০১২ সালের শেষ দিকে গাজায় দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়তে থাকে৷ এ সময় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি অস্ত্র বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ ২০১৪ সালে ইসরায়েলি এক তরুণ নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনে সামরিক অভিযান চালালে পরিস্থিতি আবারো খারাপ হতে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্যারিস সম্মেলন ২০১৭
২০১৭ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন বিষয়ে আলোচনা করতে ৭০টি দেশের প্রতিনিধিরা প্যারিসে একত্রিত হয়৷ তবে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের কোনো প্রতিনিধিই এ আলোচনায় অংশ নেয়নি৷
ছবি: Reuters/T. Samson
ট্রাম্পের শান্তি আলোচনা
প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়ে শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এতে বলা হয় পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন বন্ধ রাখবে ইসরায়েল, তবে ইতোমধ্যে অধিকৃত সকল স্থাপনায় তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে৷ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিন৷
ছবি: Reuters/M. Salem
9 ছবি1 | 9
ব্লিংকেন যা বলেছেন
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন বৃহস্পতিবার তেল আভিভে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, দক্ষিণ গাজায় সামরিক অভিযান শুরুর আগে যেন বেসামরিক মানুষদের রক্ষার ব্যবস্থা করে ইসরায়েল।
তিনি জানিয়েছেন, ''ইসরায়েলের সেনা বিশ্বের অন্যতম সেরা। হামাস তাদের সামনে যে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা অতিক্রম করার ক্ষমতা তাদের আছে। তবে এই কাজ করার সময় সাধারণ মানুষের যেন ন্যূনতম ক্ষতি হয়। এই দায়বদ্ধতাও তাদের আছে।''
ব্লিংকেন বলেছেন, ''ইসরায়েল য়েন সাধারণ বেসামরিক মানুষকে রক্ষার পরিকল্পনাও নেয়। বেসামরিক মানুষের মৃত্যু আর যেন না হয়।'' তার দাবি, ''ইসরায়েল সরকার এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছে।''
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, গাজায় যুদ্ধবিরতির পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে।
গাজায় ত্রাণ পাঠানোর কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে সাইপ্রাস
01:11
ইসরায়েলে আইসিসি-র চিফ প্রসিকিউটার
ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের চিফ প্রসিকিউটার করিম খান ইসরায়েল সফর করছেন। গত ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর বেঁচে যাওয়া মানুষের আবেদনে সাড়া দিয়ে তিনি সফর করছেন বলে জানানো হয়েছে। এরপর তিনি অধিকৃত ওয়েন্ট ব্যাংকের রামাল্লাহতে যাবেন।
আইসিসি জানিয়েছে, তার এই সফর তদন্তের জন্য নয়, বরং আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।