গাজায় মুহুর্মুহু বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল৷ হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছে৷ ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি প্রতিশোধপরায়ণ মানসিকতা ছেড়ে শান্তি স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন বারাক ওবামা৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার থেকে গাজায় বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল৷ হামলার লক্ষ্য মূলত ‘ইসলামি জঙ্গি সংগঠন' হামাসের ঘাঁটি৷ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, দু দিনে অন্তত ৪০০টি লক্ষ্যস্থলে হামলা চালিয়েছে তারা৷ হামলায় এ পর্যন্ত নিহত ৩২ জনের মধ্যে অন্তত দু জন নারী এবং পাঁচজন শিশু রয়েছে৷
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হামাসের উপর্যুপরি রকেট হামলা বন্ধ করার উদ্দেশ্যেই তাদের এই বিমান হামলা৷ সাগর থেকেও চলছে হামলা৷ মঙ্গলবার ইসরায়েলের কয়েকটি শহরকে লক্ষ্য করে হামাস রকেট হামলা শুরু করার পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা অভিযান জোরদার করে৷ দু দিনের লাগাতার আক্রমণের কারণে হামাসের হামলার মাত্রা অনেক কমেছে৷ মঙ্গলবার ইসরায়েলের দিকে অন্তত ১৬০টি রকেট ছুড়েছিল হামাস৷ বুধবার গাজা থেকে মাত্র ৪টি রকেট ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে৷
আরাফাতের মৃত্যুর কারণ নিয়ে বিতর্ক
বিষ প্রয়োগে নয়, স্বাভাবিক কারণেই ফিলিস্তিনের সাবেক নেতা ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ফ্রান্সের তদন্ত সংস্থা৷
ছবি: DW/Y.Teyze
ফরাসি তদন্ত
ফ্রান্সের একটি তদন্ত সংস্থার বরাত দিয়ে দেশটির একটি বেতার জানিয়েছে, ‘বার্ধক্য ও সংক্রমণজনিত’ কারণে মৃত্যু হয়েছে ইয়াসির আরাফাতের৷
ছবি: AP
সুইস তদন্ত থেকে ভিন্ন
ফরাসি এই প্রতিবেদন সুইস বিশেষজ্ঞদের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে একেবারে ভিন্ন৷ সুই বিশেষজ্ঞরা গত মাসে জানিয়েছিল, আরাফাতের দেহাবশেষ পরীক্ষায় উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয় পলোনিয়াম পাওয়া গেছে৷ বিষ প্রয়োগে আরাফাতকে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী সুহা আরাফাত আদালতে মামলা করার পর ফ্রান্স ২০১২ সালের আগস্টে তদন্ত শুরু করে৷ সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা আরাফাতের কাপড়ে এই বিষাক্ত পদার্থের খোঁজ পান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আরাফাতের মৃত্যু
২০০৪ সালের নভেম্বরে ৭৫ বছর বয়সে ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফিলিস্তিনের এই কিংবদন্তি নেতা৷ হাসপাতালের মেডিক্যাল রিপোর্টে বলা হয়েছিল, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যু হয়েছে তাঁর৷ কিন্তু কি কারণে দ্রুত তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল তার ব্যাখ্যা দিতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ এরপর থেকেই তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে নানা জল্পনা কল্পনা চলতে থাকে৷
ছবি: Reuters
পলোনিয়াম নিয়ে আলোচনার শুরু
লন্ডনে এক সাবেক কেজিবি গোয়েন্দাকে হত্যা করতে ব্যবহৃত হওয়ায় ২০০৬ সালে পলোনিয়াম নিয়ে সর্বপ্রথম আলোচনার ঝড় ওঠে৷ কেজিবি গোয়েন্দা লিটভিনেঙ্কো লন্ডনের একটি বিলাসবহুল হোটেলে বৈঠক করার সময় পলোনিয়াম মেশানো চা পান করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: AP
পলোনিয়াম কী?
‘পলোনিয়াম ২১০’ বিশ্বের বিরলতম পদার্থগুলোর একটি৷ ১৮৯৮ সালে বিজ্ঞানী দম্পতি মেরি ও পিয়েরে কুরি এই পদার্থটি আবিষ্কার করেন৷ এই বিজ্ঞানীদ্বয়ের দেশ পোল্যান্ডের নাম অনুসারে সেই পদার্থের নাম রাখা হয় পলোনিয়াম৷ ভূপৃষ্ঠের শক্ত আবরণে খুব নিম্ন ঘনত্বে প্রাকৃতিকভাবেই এই পদার্থের সৃষ্টি হতে পারে৷ তবে পারমাণবিক চুল্লিতেও কৃত্রিমভাবে এটির উৎপাদন সম্ভব৷
ছবি: dpa
বিপদজনক
পলোনিয়াম অত্যন্ত বিপদজনক৷ খুব সামান্য পরিমাণেও যদি মানুষের দেহে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তাহলেও মৃত্যু ডেকে আনতে পারে৷ কারণ এটির আলফা তেজস্ক্রিয় উপাদান যকৃত, বৃক্ক এবং অস্থিমজ্জার উপর বিষক্রিয়া ঘটিয়ে একাধিক অঙ্গ বিকল করে দেয়৷ ২০০৬ সালে পলোনিয়ামের বিষক্রিয়ায় নিহত লিটভিনেঙ্কোর ক্ষেত্রে বমিবমি ভাব, চুল উঠে যাওয়া, গলা ফোলা এবং বিবর্ণ হয়ে যাওয়ার লক্ষণগুলো ধরা পড়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হন্তাদের কাছে লোভনীয়
পলোনিয়াম দিয়ে ভালো অস্ত্র বানানো যায়৷ এর আলফা তেজস্ক্রিয় উপাদান ত্বক ভেদ করে না এবং তেজস্ক্রিয় নির্ণয়কারী যন্ত্রেও ধরা পড়ে না৷ ফলে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এটি অন্য দেশে পাচার করা সহজ৷ নিশ্বাসের সাথে অথবা ক্ষতস্থান দিয়ে কারো দেহে পলোনিয়াম ঢুকিয়ে দেওয়া যায়৷ তবে সবচেয়ে নিশ্চিত উপায় হলো খাবার কিংবা পানির সাথে মিশিয়ে দেওয়া৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কুরি দম্পতির মেয়ে’র মৃত্যু
কুরি দম্পতির মেয়ে ইরিন লিউকেমিয়ায় মারা গিয়েছিল বলেই বিশ্ব জানে৷ তবে অনেকে সন্দেহ করেন যে, তাদের পরীক্ষাগার থেকে দুর্ঘটনাবশত কোনোভাবে পলোনিয়াম ইরিনের দেহে প্রবেশ করে থাকতে পারে৷
ছবি: DW/Y.Teyze
8 ছবি1 | 8
তবে হামাসের হামলা থামলেই ইসরায়েলের আগ্রাসী অভিযান থেমে যাবে এমন কোনো ইঙ্গিত নেই৷ গাজার সীমান্তে ইসরায়েল পদাতিক বাহিনী মোতায়েন করায় হামলার তীব্রতা বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ বার্তা সংস্থা এপি-কে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেরনার জানান এ মুহূর্তে হামলা থামানোর পরিকল্পনা তাদের নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘সংগঠনটিকে (হামাস) আগ্রাসনের জন্য চরম মূল্য দিতে হবে৷ রকেট হামলা চালিয়ে ওরা আক্ষরিক অর্থেই আমাদের জিম্মি করে রাখতে চাইছে৷''
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দু পক্ষের প্রতি প্রতিশোধের মানসিকতা ছেড়ে শান্তি স্থাপনে উদ্যোগী হবার আহ্বান জানিয়েছেন৷ জার্মানির সাপ্তাহিক ‘ডি সাইট'-এর এক প্রতিবেদনে তাঁর এই আহ্বানের কথা প্রকাশিত হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে৷ গাজায় ইসরায়েলের হামলার কারণে বিশ্বজুড়েই উদ্বেগ বাড়ছে৷ এ হামলাকে ‘বর্বরোচিত' আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে জর্ডান৷