গাজায় ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷ বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও এর নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ বিক্ষোভ হয়েছে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আরো রক্তপাত ও প্রাণহানি বন্ধে সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে৷ শান্তি প্রক্রিয়া আবার শুরুর লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করতে হবে৷ বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, ইসরায়েলকে অবশ্যই ফিলিস্তিনি ভূমি দখল বন্ধ করতে হবে৷ পূর্ব জেরুজালেমসহ ফিলিস্তিনিদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র থাকতে হবে৷''
এদিকে বিএনপি'র চেয়ারপার্সন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শনিবার সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘ফিলিস্তিনিদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের দাবিকে ধ্বংস করার জন্যই সমস্ত হিংস্রতা দিয়ে এই সামরিক আক্রমণ চালানো হচ্ছে৷ আমি গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের এহেন সামরিক অভিযানের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি৷ অবিলম্বে ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর ওপর অন্যায় বর্বরোচিত হামলা বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি৷ ইসরায়েল যদি তার আগ্রাসী মনোভাব বরাবরের মতো অব্যাহত রাখে তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে কখনোই শান্তি ফিরে আসবে না৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাচ্ছি তারা যেন ইসরায়েলকে জীবনবিনাশী ও বিধ্বংসী সামরিক অভিযান বন্ধ করতে চাপ সৃষ্টি করে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় এগিয়ে আসে৷''
যে লড়াই আজও চলছে...
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান সংঘাত নিয়ে গবেষণা করছে হাইডেলবার্গ ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল কনফ্লিক্ট রিসার্চ (এইচআইআইকে)৷ তাদের হিসেবে, গত বছর গোটা বিশ্বে চারশোর মতো সংঘাত ঘটেছে, যার বিশটি সরাসরি যুদ্ধ৷ এই নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Reuters
শান্তির কোনো লক্ষণ নেই
ধর্মান্ধতা, দুষ্প্রাপ্য খনিজ পদার্থের লোভ কিংবা ক্ষমতা দখলের বাসনা – হাজার হাজার বছর ধরে যুদ্ধ, সংঘাতের কারণ ঘুরে ফিরে এগুলোই৷ ২০১৩ সালেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি৷ হাইডেলবার্গ ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল কনফ্লিক্ট রিসার্চ (এইচআইআইকে) গত বছরের উল্লেখযোগ্য কিছু সংঘাত, যুদ্ধের কথা প্রকাশ করেছে ‘কনফ্লিক্ট ব্যারোমিটার ২০১৩’ শিরোনামে৷
ছবি: Reuters
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো
গত বছর কিভু-তে সেনাবাহিনী নিয়মিত এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে৷ ২০১৩ সালের শেষের দিকে অবশ্য সরকার ঘোষণা দেয়, বিদ্রোহীদের দমনে সক্ষম হয়েছে তারা৷ অন্যদিকে এম২৩ গোষ্ঠীর ঘোষণা, এখন থেকে রাজনৈতিক পথে দাবি আদায়ের চেষ্টা করবে তারা৷
ছবি: Melanie Gouby/AFP/GettyImages
মালি
মালিতে উগ্র ইসলামপন্থিরা ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে৷ ২০১২ সালে সে দেশের উত্তরাঞ্চলের একটা বড় অংশ তাদের দখলে চলে যায়৷ ফলশ্রুতিতে মালি সরকারকে যুদ্ধে সহায়তায় এগিয়ে আসে ফ্রান্স৷ এরপর পিছু হটতে বাধ্য হয় উগ্র ইসলামপন্থিরা৷ বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মালিতে শান্তি রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে৷ তবে সে দেশে বিভিন্ন জঙ্গি এবং আত্মঘাতী হামলার খবর মাঝে মাঝেই শোনা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নাইজেরিয়া
উগ্র ইসলামপন্থি জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারাম নাইজেরিয়ায় শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করতে চায়৷ এই লক্ষ্য পূরণে সে দেশের খ্রিষ্টান এবং মধ্যপন্থি মুসলমানদের উপর হামলা অব্যাহত রেখেছে গোষ্ঠীটি৷ ছবিতে একটি হামলায় নিহতদের জন্য সমাধি খুঁড়ছেন তাদের খ্রিষ্টান আত্মীয়রা৷ নাইজেরিয়ায় আরো একটি সংঘাত চলছে৷ তৃণভূমি ইস্যুতে খ্রিষ্টান কৃষকরা লড়াই করছেন গবাদি পশু পালক মুসলমানদের সঙ্গে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সুদান
গত দশ বছরের বেশি সময় ধরে দারফুর অঞ্চলে বসবাসকারী আফ্রিকার বিভিন্ন গোষ্ঠী সরকারি বাহিনী এবং তাদের অনুসারীদের সঙ্গে লড়াই করছে৷ যুদ্ধের কারণে কয়েক লাখ মানুষ ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে এবং অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আফগানিস্তান
আফগানিস্তানে নিযুক্ত ন্যাটো বাহিনী স্থানীয় বাহিনীর হাতে সে দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার পরও সংঘাত অব্যাহত রয়েছে৷ তালেবান এবং অন্যান্য চরমপন্থি গোষ্ঠী সে দেশের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আত্মঘাতী হামলা এবং ‘বুবি-ট্র্যাপ’-এর মাধ্যমে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে৷ বিশেষ করে সীমান্ত অঞ্চলে সংঘাত থামার কোন লক্ষণ নেই৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, আফগানিস্তানে ২০১৩ সালে আড়াই হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মেক্সিকো
মাদক, মানবপাচার, ব্ল্যাকমেল এবং চোরাচালানের মতো কর্মকাণ্ড মেক্সিকোর মাফিয়াদের অর্থ উপার্জনের উৎস৷ আয়ের এসব উৎস নিরাপদ রাখতে মাফিয়ারা একে অপরের সঙ্গে এবং প্রয়োজনে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়৷ সে দেশে প্রতি সপ্তাহেই দাঙ্গার ঘটনা ঘটে৷ মেক্সিকো সরকারের হিসেব অনুযায়ী, গত বছর সে দেশে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সিরিয়া
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে৷ সেদেশ কার্যত বিভিন্ন অংশে ভাগ হয়ে গেছে৷ কিছু অংশের দখল রয়েছে সে দেশের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারি বাহিনীর কাছে, বাকি বিভিন্ন অঞ্চল মধ্যপন্থি বিরোধী দল, উগ্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দখলে চলে গেছে৷ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত এক লাখের বেশি মানুষ নিহত এবং নব্বই লাখের মতো মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে৷
ছবি: Mohmmed Al Khatieb/AFP/Getty Images
ফিলিপাইন্স
চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে ফিলিপাইন্সে মোরো সম্প্রদায় স্বাধীনতার দাবিতে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে৷ মাঝে কিছুদিন অপেক্ষাকৃত শান্ত থাকার পর ২০১৩ সালে আবারো তারা শুরু হয়েছে সহিংস সংগ্রাম৷ বিদ্রোহী গোষ্ঠী এমএনএলএফ সে দেশের দক্ষিণের দ্বীপগুলোর স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে৷ যুদ্ধের কারণে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে৷
ছবি: Reuters
সোমালিয়া
সোমালিয়ায় আল-শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারি বাহিনীর যুদ্ধ চলছে গত আট বছর ধরে৷ জাতিসংঘ এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের সেনাদের সহায়তায় সোমালিয়া সরকার আল-শাবাবকে ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে৷ তবে এখনো সে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি বড় অংশ জঙ্গি গোষ্ঠীর দখলে রয়েছে৷
ছবি: Mohamed Abdiwahab/AFP/Getty Images
দক্ষিণ সুদান
তিন বছর আগে স্বাধীনতা লাভ করা দক্ষিণ সুদানে এখনো সংঘাত অব্যাহত রয়েছে৷ সে দেশের ভাইস-প্রেসিডেন্টের পক্ষের সেনারা প্রেসিডেন্সিয়াল ফোর্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে৷ এছাড়া প্রতিবেশী দেশ সুদানের দুটি রাজ্যে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গেও সম্পৃক্ত রয়েছে দক্ষিণ সুদানের সেনারা৷
ছবি: Reuters
11 ছবি1 | 11
অপর এক বিবৃতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর ওপর ইসরায়েলের এই হামলাকে সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক বলে আখ্যায়িত করেন৷
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘বিশ্ব জনমত উপেক্ষা করে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় হামলা চালাচ্ছে৷ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষ ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হলেও ইসরায়েল হামলা বন্ধ করছে না৷ ইসরায়েল বিশ্ব জনমতের কোনো তোয়াক্কাই করছে না৷'' তিনি গাজায় হত্যা বন্ধের ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে জাতিসংঘসহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং শান্তিকামী রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান৷
শনিবার ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি ইসলামি সংগঠন ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে৷ তারা পবিত্র রমজান মাসে এই হামলা বন্ধের আহ্বান জানান৷