ইসরায়েলের দাবি, একদিন আগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছিল হামাস। তারই জবাবে তারা গাজা স্ট্রিপে হামলা করেছে।
বিজ্ঞাপন
জেরুসালেমে আল-আকসা মসজিদ চত্বরে সহিংসতা নিয়ে এমনিতেই প্রবল উত্তেজনা ছিল। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এই আক্রমণ ও প্রতি-আক্রমণের ঘটনা।
ইসরায়েলের সেনার দাবি, সোমবার হামাস ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে। সেই ক্ষেপণাস্ত্র নিস্ক্রিয় করে দিতে সক্ষম হয় সেনা। সেনা জানিয়েছে, এরই জবাবে গাজা ভূখণ্ডে অস্ত্র তৈরির কারখানার উপর আঘাত হানা হয়।
হামাস মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইসরায়েলের আক্রমণ ব্যর্থ হয়েছে। যেখানে ইসরায়েল আক্রমণ করেছে, সেটা পুরোপুরি খালি ছিল। এই হামলায় কেউ হতাহত হয়নি।
হামাসের উত্থান ও কার্যক্রম
২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে হামাস৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বেশিরভাগ দেশের কাছে তারা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচিত৷ তবে হামাসের কিছু মিত্র দেশও রয়েছে৷
ছবি: Mohammed Abed/AFP/Getty Images
উত্থানপর্ব
১৯৮০-এর দশকে ইয়াসির আরাফাতের প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-র বিরোধিতায় হামাসের জন্ম৷ পিএলও-র বিরোধী শক্তি হিসেবে দাঁড় করাতে শুরুর দিকে ইসরায়েল সরকার হামাসকে অর্থ সহায়তা দিয়েছিল বলে অনেকক্ষেত্রে দাবি করা হয়৷ তবে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠায় কোনো ধরনের ভূমিকার কথা বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: Reuters/S. Salem
ইসরায়েলকে অস্বীকার
পিএলও-র মতো হামাস ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকারে বিশ্বাস করে না৷ তাদের প্রতীকে রয়েছে জেরুসালেমের ‘ডোম অব দ্য রক’৷ ইসরায়েল, গাজা ও পশ্চিম তীরকে একক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে তারা বিবেচনা করে৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
শান্তি চুক্তি প্রত্যাখ্যান
১৯৯৩ সালে ইয়াসির আরাফাত অসলো চুক্তির অধীনে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করেন, যার মধ্য দিয়ে ১৯৮৭ সালে শুরু হওয়া প্রথম ইন্তিফাদার অবসান হয়৷ হামাস এই শান্তি প্রক্রিয়া প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলে হামলা অব্যাহত রাখে৷
ছবি: J. David Ake/AFP/Getty Images
নির্বাচনে জয়
২০০৬ সালের গাজার সাধারণ নির্বাচনে হামাস পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে৷ এরপর থেকে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বে ফাতাহ-এর অধীনে রয়েছে পশ্চিম তীর আর গাজার নিয়ন্ত্রণ হামাসের হাতে৷ ২০০৮-০৯, ২০১২ ও ২০১৪ সালে ইসরায়েলি সেনার সঙ্গে হামাসের তুমুল লড়াই চলে৷
ছবি: AP
সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত
১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করে৷ ২০০৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নও তাদেরকে সন্ত্রাসী তালিকায় রাখে৷ হামাস এই বিষয়ে আদালতে চ্যালেঞ্জ করে৷ তবে আদালত তাদের আবেদন বাতিল করে৷ যুক্তরাজ্য ক্যানাডা, জাপান, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াও হামাসকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Khatib
হামাসের সহযোগী
হামাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সহযোগী কাতার৷ দেশটির আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল-থানি প্রথম রাষ্ট্রনেতা, যিনি ২০১২ সালে হামাস সরকারের সঙ্গে দেখা করেন৷ এখন পর্যন্ত দেশটি হামাসকে ১৮০ কোটি ডলার দিয়েছে৷ হামাসের প্রতি তুরস্কেরও সমর্থন রয়েছে৷ সংগঠনটির নেতা ইসমাইল হানিয়ের পক্ষে রাজনৈতিক অবস্থান রয়েছে রেচেপ তাইয়েপ-এর্দোয়ানের৷ এছাড়াও বিভিন্ন উদ্যোগ ও ফাউন্ডেশনের সহযোগিতাও পায় তারা৷
ছবি: AP
হামাসের রকেট উৎস
সবশেষ সংঘাতেও ইসরায়েলের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন শতাধিক রকেট ছুঁড়েছে হামাস৷ দীর্ঘদিন হামাস রকেটের জন্য ইরানের উপর নির্ভরশীল ছিল৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুদান ও মিশর হয়ে সেখান থেকে অস্ত্র চোরাচালান হতো৷ তবে বর্তমানে গাজাতেই হামাস রকেট বানাচ্ছে বলেও ধারণা করা হয়৷
ছবি: Mohammed Abed/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
উত্তেজনা বাড়ছে
জেরুসালেমে পবিত্র আল-আকসা মসজিদ চত্বরে ফিলিস্তিনিদের ঢুকতে বাধা দেয়া হয়েছিল। ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে মুসলিম কর্তৃপক্ষ ওই চত্বরের দেখভাল করেন। ওই জায়গাকে টেম্পল মাউন্টও বলা হয়।
ফিলিস্তিনিদের অভিযোগ, ইসরায়েল ওই চত্বরে ইহুদিদের অধিকার বাড়াতে চাইছে। কিন্তু তারা তা মেনে নিতে রাজি নন। গত কয়েকসপ্তাহে সহিংসতার বলি হয়েছেন ২৬ জন ফিলিস্তিনি ও ১৪ জন ইসরায়েলের মানুষ।
মঙ্গলবারও ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ইসরায়েলিদের বসতি বিস্তার করা নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। ফিলিস্তিনি চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন, অন্তত আটজনের শরীরে রবার বুলেটের আঘাত ছিল। তাছাড়া কাঁদানে গ্যাসের প্রকোপে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতে প্রাণহানির তথ্য
জাতিসংঘের সংস্থা ‘অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স’ ওসিএইচএ ২০০৮ সাল থেকে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতে হতাহতের সংখ্যার হিসাব রাখছে৷ ছবিঘরটি সেই তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি৷
ছবি: Imago
ফিলিস্তিনির প্রাণহানি
জাতিসংঘের সংস্থা ‘অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অফ হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স’ ওসিএইচএ ২০০৮ সাল থেকে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতে হতাহতের সংখ্যার হিসাব রাখছে৷ তাদের হিসেবে ১ জানুয়ারি ২০০৮ থেকে ২৬ জুলাই ২০২১ পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৯৫৩ জন ফিলিস্তিনি (এর মধ্যে সাধারণ নাগরিক তিন হাজার ৩৮৮ জন) প্রাণ হারিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
ইসরায়েলি প্রাণহানি
২০০৮ সালের ২৪ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১৮ মে পর্যন্ত মারা যাওয়া ইসরায়েলির সংখ্যা ২৬২ জন (এর মধ্যে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনাকারী ৯৯ জন ও সাধারণ নাগরিকের সংখ্যা ৪১)৷
ছবি: Reuters
আহত
উল্লেখিত সময়ে এক লাখ ২৮ হাজার ২৭৭ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন৷ ইসরায়েলি আহত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৭০৯ জন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
লিঙ্গ ও বয়সভেদে হিসাব (ফিলিস্তিন)
মারা যাওয়া পাঁচ হাজার ৯৫৩ জন ফিলিস্তিনির মধ্যে তিন হাজার ৯৮৪ জন পুরুষ, ৬১১ জন নারী, এক হাজার ৭৪ জন বালক ও ২৬৭ জন বালিকা৷ ছবিতে দুই বছরের ফিলিস্তিনি শিশু মালেক শাতের মরদেহ হাতে তার স্বজনদের দেখা যাচ্ছে৷ ২০১১ সালে ইসরায়েলের হামলায় মালেকের মৃত্যু হয়৷
ছবি: Imago
লিঙ্গ ও বয়সভেদে হিসাব (ইসরায়েল)
প্রাণ হারানো ২৬২ জনের মধ্যে ২০৮ জন পুরুষ, ৩১ জন নারী, ১৫ জন বালক ও ছয়জন বালিকা রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Tibbon
সবচেয়ে বেশি হতাহত যে বছর
২০১৪ সালে দুই হাজার ৩২৯ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান৷ ঐ বছর ইসরায়েলি মারা গেছেন ৮৮ জন৷ হামাসের দুই সদস্য কর্তৃক ইসরায়েলের তিন টিনএজার অপহরণ ও হত্যার পর ঐ বছরের ৮ জুলাই হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজায় হামলা শুরু করেছিল ইসরায়েল৷ শেষ হয়েছিল ২৬ আগস্ট৷ ছবিতে ২০২০ সালে ইসরায়েলি পুলিশের গুলিতে নিহত আয়াদ হালাকের ছবি হাতে তার মাকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Illean
বছরভেদে প্রাণহানি (ফিলিস্তিন)
২০০৮ সালে ৮৯৯, ২০০৯ সালে ১০৬৬, ২০১০ সালে ৯৫, ২০১১ সালে ১২৪, ২০১২ সালে ২৬০, ২০১৩ সালে ৩৯, ২০১৫ সালে ১৭৪, ২০১৬ সালে ১০৯, ২০১৭ সালে ৭৭, ২০১৮ সালে ৩০০, ২০১৯ সালে ১৩৭, ২০২০ সালে ৩২ ও ২০২১ সালের ২৬ জুলাই পর্যন্ত ৩১২৷
ছবি: Reuters
বছরভেদে প্রাণহানি (ইসরায়েল)
২০০৮ সালে ৩৪, ২০০৯ সালে ১১, ২০১০ সালে ৮, ২০১১ সালে ১৬, ২০১২ সালে ৭, ২০১৩ সালে ৬, ২০১৫ সালে ২৬, ২০১৬ সালে ১২, ২০১৭ সালে ১৭, ২০১৮ সালে ১৩, ২০১৯ সালে ১০, ২০২০ সালে ৩ ও ২০২১ সালের ১৮ মে পর্যন্ত ১১৷
ছবি: imago/UPI Photo
8 ছবি1 | 8
অ্যামেরিকার প্রতিক্রিয়া
মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট ব্লিংকেন জানিয়েছেন, আল আকসায় স্থিতাবস্থা বজায় রাখা উচিত।
সংযুক্ত আরব আমিরাতও ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়ে অবিলম্বে আল-আকসায় সহিংসতা বন্ধ করতে এবং প্রার্থনাকারীদের নিরাপত্তা দেয়ার দাবি করেছে।