ইসরায়েলের একের পর এক বিমান হামলায় গাজায় ভেঙে পড়েছে একের পর এক ভবন। সোমবার রাতে হামাস জানিয়েছে, কোভিড পরীক্ষার সেন্টারটিও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বিমান হানায় বিপুল ক্ষতি হয়েছে সেন্টারটির। একই সঙ্গে হামাস জানিয়েছে, এখনো পর্যন্ত দুইশ-রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে গাজায়। তার মধ্যে শিশু এবং নারীর সংখ্যা অনেক। অন্যদিকে টেলিফোনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের। যুদ্ধবিরতি নিয়ে তাদের মধ্যে কথা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
আয়রন ডোম : আকাশে ইসরায়েলের রক্ষাকর্তা
হামাসের ছোঁড়া অধিকাংশ রকেটই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার অনেক আগে আকাশেই বিস্ফোরিত হচ্ছে৷ যার কারণে ইসরায়েল বারবার এভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যাচ্ছে, সেই ‘আয়রন ডোম ’সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন ছবিঘরে...
ছবি: Nir Elias/REUTERS
১৫ বছর আগের পরিকল্পনা
সর্বশেষ ২০০৬ সালেও একবার বড় যুদ্ধে জড়িয়েছিল ইসরায়েল৷ লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর সঙ্গে সেই যুদ্ধে হিজবুল্লাহর ছোঁড়া রকেটে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল ইসরায়েলের৷ সেই যুদ্ধের পরই খুব শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার ঘোষণা দেয় ইসরায়েল৷ ওপরের ছবিটি ২০০৬ সালের যুদ্ধের সময়ের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/W. Hamzeh
পাঁচ বছরে বাস্তবায়ন
হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সেই যুদ্ধের পাঁচ বছর পর, অর্থাৎ ২০১১ সালে অত্যাধুনিক এক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ায় সাফল্যের ঘোষণা দেয় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়৷ আকাশে স্বল্প পাল্লার সব ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রকে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থার নাম দেয়া হয় ‘আয়রন ডোম’৷ আয়রন ডোম-এর ওপরের ছবিটি ২০১১ সালে তোলা৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/D. Balilty
আয়রন ডোম যেভাবে কাজ করে
আয়রন ডোম তিন ধাপে কাজ করে৷ প্রথমে রাডার ব্যবস্থা ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে আসতে থাকলে তা চিহ্নিত করে তার গতিপথ শনাক্ত করে৷ তারপর ওই ক্ষেপণাস্ত্রকে কোথায় আঘাত করা যাবে কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তা স্থির করে৷ এভাবে ‘হিট পয়েন্ট’ ঠিক করে জানালে ফায়ারিং সিস্টেম সঙ্গে সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে৷ ওপরের ছবিতে গাজা থেকে ছুটে আসা রকেটকে আঘাত করতে যাচ্ছে আয়রন ডোম থেকে ছোঁড়া অ্যান্টি-মিসাইল৷
ছবি: Amir Cohen/REUTERS
সবার চোখ আকাশে
হামাসের ছোঁড়া শত শত রকেট আয়রন ডোম এমনভাবে আকাশেই নিষ্ক্রিয় করেছে যে তাতে অনেকের চোখই এখন আকাশের দিকে৷ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম তো বটেই, এমনকি ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলের মানুষও চরম উৎকণ্ঠা নিয়ে তাকিয়ে দেখেন হামাস সফল হলো, নাকি ইসরায়েল৷ ওপরের ছবিটি ইসরায়েলের আশকেলন শহরের৷ আয়রন ডোম থেকে অ্যান্টি-মিসাইল উড়ে যেতে দেখছেন কয়েকজন৷
ছবি: Amir Cohen/REUTERS
অবাক করা সাফল্য
ইসরায়েলের দাবি, হামাসের ছোঁড়া শতকরা নব্বই ভাগ রকেটই আয়রন ডোম সফলভাবে নিষ্ক্রিয় করতে পারছে৷ ওপরে তারই একটি দৃষ্টান্ত৷ ঠিক সময়ে রকেটের যাত্রাপথ শনাক্ত করে, ‘হিট পয়েন্ট’ স্থির করে অ্যান্টি-মিসাইল পাঠিয়ে হামাসের আরেকটি আঘাতের প্রয়াস ব্যর্থ করে দিলো আয়রন ডোম৷
ছবি: Amir Cohen/REUTERS
নিখুঁত নয় আয়রন ডোম
আয়রন ডোম তৈরি করেছে ইসরায়েলের রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস ও অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ৷ অত্যাধুনিক এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রও সহায়তা করেছে৷ তবে আয়রন ডোম পুরোপুরি নিখুঁত নয়৷ এক সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে রকেট ছুঁড়লে এর প্রতিরক্ষাব্যুহে কিছুটা হলেও যে ফাটল দেখা দেয় তা খুব স্পষ্ট৷ সেকারণেই হামাসের কিছু রকেট ইসরায়েলে আঘাত হানতে পারছে বলে মনে করেন সমরবিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Amir Cohen/REUTERS
6 ছবি1 | 6
মার্কিন প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, জো বাইডেন নেতানিয়াহুকে জানিয়েছেন, তিনি যুদ্ধবিরতি সমর্থন করেন। যদিও কূটনীতিবিদদের একাংশের বক্তব্য, অ্যামেরিকা এখনো যুদ্ধ বন্ধের জন্য যথেষ্ট সরব নয়। অন্যদিকে লেবাননও লড়াইয়ে ঢুকে পড়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, লেবাননে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে। লেবাননও ইসরায়েলে রকেট ছোড়ার কথা স্বীকার করেছে। দক্ষিণ লেবাননে সেনার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সাধারণ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের জরুরি বৈঠকে বসার কথা। সেখানে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। কীভাবে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা। নরওয়ে জানিয়েছে, মঙ্গলবার এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও।