গাজায় গণহত্যার মতো ‘কার্যকলাপ' দেখা যায়নি: যুক্তরাষ্ট্র
৪ জানুয়ারি ২০২৪
গাজায় গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে এমনটি ধরে নেয়ার মতো কার্যকলাপ দেখছে না যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর৷ আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সাউথ আফ্রিকার করা মামলার প্রেক্ষিতে তা জানিয়েছেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার৷
'গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল', এমন অভিযোগে নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা করেছে সাউথ আফ্রিকা।ছবি: Peter Dejong/AP Photo/picture alliance
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)-তে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করায় সাউথ আফ্রিকার সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ ‘গাজার মানুষের উপর গণহত্যা চালানোর' অভিযোগে ইসরায়েলে বিরুদ্ধে হেগভিত্তিক আদালতে এই মামলার শুনানি শুরু হবে আগামী সপ্তাহে৷
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি মামলাটিকে, ‘‘অযোগ্য, ‘কাউন্টারপ্রোডাক্টিভ' এবং সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন'' বলে অভিহিত করেছেন৷
অন্যদিকে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার অভিযোগটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমরা এমন কার্যকলাপ দেখছি না যা গণহত্যা বলে বিবেচিত হতে পারে৷''
মিলার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘গণহত্যা অবশ্যই জঘন্য নৃশংসতা৷ এটা এমন অভিযোগ যা হালকাভাবে গঠিত হওয়া উচিত নয়৷''
সাউথ আফ্রিকা প্রায়ই ফিলিস্তিনিদের সঙ্গেইসরায়েলের আচরণের সমালোচনা এবং কর্মকাণ্ডকে নিজেদের জাতিবিদ্বেষের ইতিহাসের সঙ্গে তুলনা করে৷ তাদের অভিযোগ, ‘গাজায় ফিলিস্তিনিদের ধ্বংসের সুনির্দিষ্ট অভিপ্রায় নিয়ে' কার্যকলাপ চালাচ্ছে ইসরায়েল৷
গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধে ইসরায়েলকে বাধ্য করতে আদালতের কাছে নির্দেশনার আবেদন জানিয়েছে দেশটি৷ অন্যদিকে ইসরায়েল জানিয়েছে, আইসিজে-তে তারা আত্মপক্ষ সমর্থন করবে৷ সাউথ আফ্রিকার এই উদ্যোগকে ষড়যন্ত্র হিসেবেও অভিহিত করেছে তারা৷
এদিকে গাজার ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসন করা নিয়ে ইসরায়েলের দুই মন্ত্রীর প্রস্তাবের কড়া সমলাচোনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ তাদের বক্তব্য সরকারের অবস্থান নয় বলে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করেছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন৷
৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১২০০ মানুষকে হামাস হত্যা করার পর গাজায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল৷ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইসরায়েলসহ বিভিন্ন দেশ হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে৷
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া বুধবারের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় মারা গেছেন ২২ হাজার ৩১৩ ফিলিস্তিনি৷
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার যত চেষ্টা
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা চালিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷ কিন্তু এসেছে কি শান্তি?
জাতিসংঘ রেজ্যুলেশন ১৯৬৭
১৯৬৭ সালে ছয়দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা দখল করে ইসরায়েল৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সে বছরের ২২ নভেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘রেজ্যুলেশন ২৪২’ নামে একটি প্রস্তাব পাস হয়৷ প্রস্তাবে দখলকৃত ফিলিস্তিনি এলাকা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/Keystone
ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি ১৯৭৮
মিশর ও সিরিয়ার নেতৃত্বে আরব রাষ্ট্রগুলো ১৯৭৩ সালে আবারো ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়৷ এ যুদ্ধের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে বিশ্ব নেতারা৷ তাদের চেষ্টায় ১৯৭৮ সালে ১২ দিন আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবকাশ যাপন কেন্দ্র ক্যাম্প ডেভিডে এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়৷ এ চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির ভিত হিসিবে বিবেচনা করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Daugherty
মাদ্রিদ কনফারেন্স ১৯৯১
ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিষয়ে ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেতৃত্বে স্পেনের মাদ্রিদে এ কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে আরো অংশ নেয় ইসরায়েল, জর্ডান, লেবানান, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন৷ এ কনফারেন্সের তাৎক্ষণিক কোন ফলাফল আসেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Hollander
অসলো অ্যাকর্ড ১৯৯৩
১৯৯৩ সালে নরওয়ের অসলোতে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি আলোচনায় বসে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন৷ আলোচনার পরবর্তী ধাপে এ দু’দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যা অসলো চুক্তি নামে পরিচিত৷ চুক্তিতে বলা হয় যে, পশ্চিম তীর থেকে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করবে ইসরায়েল৷ পাঁচ বছরের জন্য ফিলিস্তিনকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের অনুমতিও দেয় এ চুক্তি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Sachs
আরব পিস ইনিশিয়েটিভ ২০০২
২০০২ সালে আরব লিগের নেতারা লেবাননের বৈরুতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি পরিকল্পনার একটি প্রস্তাব পাস করেন৷ প্রস্তাবনায় ইসরায়েলকে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ চলাকালীন দখলকৃত সব জায়গা ত্যাগ করতে বলা হয়, যেন পশ্চিম তীরে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে তোলা যায়৷ বিনিময়ে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/C. Kealy
রোডম্যাপ ২০০৩
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া জাতিসংঘের সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির রোডম্যাপ নামে পরিকল্পনার প্রস্তাব দেয়৷ ২০০৫ সালের মধ্যে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল দুইটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয় এই রোডম্যাপে৷
ছবি: Getty Iamges/AFP/J. Aruri
সংঘর্ষ, অস্ত্র বিরতির চেষ্টা
২০১২ সালের শেষ দিকে গাজায় দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়তে থাকে৷ এ সময় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি অস্ত্র বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ ২০১৪ সালে ইসরায়েলি এক তরুণ নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনে সামরিক অভিযান চালালে পরিস্থিতি আবারো খারাপ হতে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্যারিস সম্মেলন ২০১৭
২০১৭ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন বিষয়ে আলোচনা করতে ৭০টি দেশের প্রতিনিধিরা প্যারিসে একত্রিত হয়৷ তবে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের কোনো প্রতিনিধিই এ আলোচনায় অংশ নেয়নি৷
ছবি: Reuters/T. Samson
ট্রাম্পের শান্তি আলোচনা
প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়ে শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এতে বলা হয় পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন বন্ধ রাখবে ইসরায়েল, তবে ইতোমধ্যে অধিকৃত সকল স্থাপনায় তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে৷ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিন৷