হামাসের আক্রমণ, ইসরায়েলের প্রত্যাঘাত এবং তার জেরে দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধ। ইসরায়েল কি লক্ষ্যপূরণ করতে পারলো?
নেতানিয়াহু সরকার হামাসএগিয়েছিল। কে ধ্বংস করা এবং পণবন্দিদের মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
বিজ্ঞাপন
সাত অক্টোবর, ২০২৩। ইসরায়েলের ভিতরে ঢুকে হামলা চালিয়ে বারোশ মানুষকে হত্যা করে হামাস, ২৫১ জনকে পণবন্দি করে নিয়ে যায়। হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ অনেক দেশ।
একদিন পর, অর্থাৎ, ৮ অক্টোবর ইসরায়েল গাজা আক্রমণ করে। তারপর থেকে দুই বছর কেটে গেছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে গত দুই বছরে ইসরায়েল সেনার আক্রমণে অন্ততপক্ষে ৬৬ হাজার মানুষ মারা গেছেন, তারমধ্যে ৮০ শতাংশই বেসামরিক মানুষ। আহত হয়েছেন কম করে এক লাখ ৬৯ হাজার মানুষ।
ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন জানিয়েছে, গাজায় ৯০ শতাংশ বাড়ি হয় ধ্বংস হয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাজার ২১ লাখের মধ্যে ১৯ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। ইসরায়েল তাদের অনুমতি ছাড়া গাজায় কোনো জিনিস ঢুকতে দিচ্ছে না, তাই সেখানে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে ১৫০ জন শিশুসহ ৪৫০ জন মারা গেছেন।
ইসরায়েলের লক্ষ্য আংশিক পূরণ হয়েছে
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছিলেন, দুইটি লক্ষ্য নিয়ে তিনি যুদ্ধে নেমেছেন। এক, সব পণবন্দিকে মুক্ত করবেন, দুই, হামাসকে নিশ্চিহ্ন করবেন। দুই বছর পর দুইটি লক্ষ্যের কোনোটিই তিনি পুরোপুরি পূরণ করতে পারেননি।
২৫১ জন পণবন্দির মধ্যে ১৪৮ জন জীবন্ত অবস্থায় ইসরায়েল ফিরেছেন। বেশ কিছু মৃ়ত পণবন্দির দেহও ইসরায়েলে এসেছে। এখনো ৪৮ জন পণবন্দি হামাসের কাছে আছে। তার মধ্যে ২০ জন বেঁচে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
যুদ্ধকে লজ্জা দিতে যেখানে বেজে ওঠে সংগীতের সুর
বিধ্বস্ত গাজার বাতাসে ভেসে বেড়ায় মানুষের কান্না, যন্ত্রণার খতিয়ান৷ তার মধ্যেও বেঁচে থাকার রসদ খোঁজেন তরুণ সংগীতশিল্পীরা৷ শান্তি খোঁজেন সুর ও গানের মধ্যে দিয়ে৷ খোঁজেন আশার আলোও৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
ভয়ের বিরুদ্ধে আশার লড়াই
গাজা সিটি দখল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল৷ যুদ্ধে ভেঙেছে গাজা কলেজের ঘর৷ গুলিবিদ্ধ দেওয়াল, ভাঙা জানলা৷ মোহাম্মদ আবু মেহেদির কাছে এ আর নতুন কিছু নয়৷ তাই এমন পরিস্থিতিতেও তিন ছাত্রী ও এক ছাত্রকে তিনি শেখাতে পারেন গিটার৷ মেহেদি মনে করেন, এই দুর্বিষহ সময়ে সংগীত মানুষকে একটু হলেও মানসিক শান্তি দিতে পারে৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
হার না মানা এক শিক্ষক
২০২৪ সালের শুরুতে যুদ্ধবিধ্বস্ত দক্ষিণ গাজায় সংগীতের ক্লাস নিতে শুরু করেন আহমদ আবু আমশা৷ এডওয়ার্ড সাইদ ন্যাশনাল কনজার্ভেটরি অব মিউসিক-এর অন্যতম শিক্ষক তিনি৷ দক্ষিণ গাজার যুদ্ধের আতঙ্কগ্রস্ত ভীত কিশোর-কিশোরীদের গান ও বাজনা শেখাতে শুরু করেন আহমদ৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
‘সংগীত আমাকে আশা জোগায়’
‘‘গান-বাজনা আমাকে আশা জোগায় ও সব উৎকণ্ঠা দূর করে৷’’ জানিয়েছে ১৫ বছরের রিফান আল কাসাস৷ ন‘বছর বয়স থেকে সে আরবি বাদ্যযন্ত্র ‘উদ’ বাজাতে শিখেছে৷ তার আশা, একদিন সে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাজাবে৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
পরিস্থিতি ভয়াবহ
সংগীত শিক্ষকের তাঁবু থেকে বেরোলেই চোখের সামনে বিধ্বস্ত গাজা শহরের চিত্র৷ আপৎকালীন আশ্রয়শিবিরে শত শত মানুষ৷ একটু খাবার, ওষুধ, একফোঁটা জলের জন্য হাহাকার৷ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত৷ কেউ কেউ ক্লাসে আসতেও পারেন না৷ দৃশ্যটি ১২ আগস্টের৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
মৃত্যু ও যন্ত্রণাকে হারাতে
ধ্বংস হয়ে যাওয়া স্কুলবাড়ির সামনে নিজের বাদ্যযন্ত্র উদ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ১৮ বছরের ইউসেফ সাদ৷ স্কুলের বাকি সব বাদ্যযন্ত্রই ধ্বংস হয়ে গেছে৷ ১৮ বছরের এই তরুণের স্বপ্ন, ‘‘একদিন আমি নিশ্চয়ই শিশুদের সংগীতের পাঠ দিতে পারবো, যাতে তারা ধ্বংসলীলা সত্ত্বেও সৌন্দর্যকে বেছে নেয়৷’’
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
মঞ্চ, শ্রোতা ও দর্শক
পরিস্থিতি ভয়াবহ, কিন্তু সংগীত তো সবসময়েই শ্রোতাকে খুঁজে নেয়৷ যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরে একটি তাঁবুর মধ্যেই অনুষ্ঠানের আয়োজন৷ সে অনুষ্ঠানের শেষে প্রশংসা ও হাততালিতে ফেটে পড়ে সেই তাঁবু৷ ২০ বছরের এক তরুণ শিক্ষার্থী জানান, ‘‘সংগীতের নতুন ধরন নিয়ে জানতে আমার ভালো লাগে৷ তার চেয়েও ভালো লাগে রক (সংগীতের এক বিশেষ ঘরানা)৷’’ দৃশ্যটি ৪ আগস্টের৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
এক মুহূর্তের আনন্দ
কোনোরকমে খাড়া করা মঞ্চে শিশুদের কচি গলার গান যেন হারিয়ে দেয় প্রতিদিনের বিস্ফোরণের শব্দকে৷ দৃশ্যটি ৪ আগস্টের৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
যন্ত্রণা বনাম সংগীত
ওসামা জাহৌজ ‘নেই’ নামক একটি বাঁশি বাজান৷ মূলত আরবি, ফারসি ও তুর্কী সংগীতে এই বাঁশি বাজানো হয়৷ তার কথায়, ‘‘ বোমা বিস্ফোরণ তীব্র হলে আমি শ্বাসের ব্যায়াম করি, বা খুব নিচু লয়ে বাঁশি বাজাই৷ বাজানোর সময় মনে হয় আমি আবার স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছি৷ নেই যেন আমার যন্ত্রণাকে ধীরে ধীরে মুছে দিচ্ছে৷’’
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
8 ছবি1 | 8
গত দুই বছরে ইসমাইল হানিয়া, সিনওয়ারের মতো হামাস নেতাসহ অসংখ্য হামাস কর্মী মারা গেছেন। তা সত্ত্বেও হামাস এখনো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে ডনাল্ড ট্রাম্পের শান্তিচুক্তি মানলে হামাস আর সশস্ত্র মিলিশিয়া গোষ্ঠী হিসাবে কাজ করতে পারবে না।
ইসরায়েলের শত্রুরা দুর্বল হয়েছে
লড়াইটা শুধু গাজায় সীমাবদ্ধ ছিল না, ইয়েমেনে হুতি, লেবাননে হেজবোল্লার সঙ্গেও হয়েছে। ইসরায়েলের বিমান বাহিনী ইরানে পরমাণু প্রকল্পের উপর লাগাতার বোমাবর্ষণ করেছে। সিরিয়ায় বাশার আসাদের শাসন শেষ হওয়ায় ইরান দীর্ঘদিনের এক মিত্রকে হারিয়েছে।
হেজবোল্লা নেতা হাসান নারারাল্লাও ইসরায়েলের আক্রমণে মারা গেছেন।
গণহত্যার অভিযোগ
গত দুই বছরে ইসরায়েলের সেনা গাজায় হাসপাতালে, ত্রাণশিবিরে, স্কুলে বোমা ফেলেছে, যার ফলে প্রচুর নারী, শিশু মারা গেছেন। প্রচুর সাংবাদিক, ত্রাণকর্মী, উদ্ধারকারী কর্মীও মারা গেছেন। ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ ঢুকতে দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর জেনোসাইড স্কলারস, বি সেলেম ও ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের মতো ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠনগুলি অভিযোগ করেছে, ফিলিস্তিনে ইসরায়েল গণহত্যা করছে। নেতানিয়াহুর সরকার অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, এই ধরনের কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই। তারা আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করেছেন মাত্র।