গাজায় নিরাপত্তা নেই, সাহায্য পাঠাতে পারছে না ডাব্লিউএইচও
১১ জানুয়ারি ২০২৪
ডাব্লিউএইচও জানিয়ে দিয়েছে, তারা গাজায় মানবিক সাহায্যের মিশন বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহে এই নিয়ে ছয়বার মিশন বন্ধ করা হলো।
বিজ্ঞাপন
বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) জানিয়েছে, ষথেষ্ট নিরাপত্তার আশ্বাস না পেলে তারা গাজায় মানবিক সাহায্যের মিশন বন্ধ করতে বাধ্য হবে। বুধবার তারা সাহায্য পাঠায়নি গাজায়। অভিযোগ, গাজায় তাদের একাধিক কর্মী নিহত হয়েছেন। মানবাধিকার কর্মীদেরও সেখানে আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে।
গত ২৬ ডিসেম্বর শেষবার গাজায় ডাব্লিউএইচও কর্মীরা মানবিক সাহায্য নিয়ে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। বুধবার ফের তাদের যাওয়ার কথা ছিল। ডাব্লিউএইচও প্রধান জানিয়েছেন, বিধ্বস্ত অঞ্চলে যাওয়ার জন্য ইসরায়েলের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। একইসঙ্গে নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছিল। মানবাধিকার কর্মীরা মধ্য গাজায় যেতে চাইছিলেন। শুধু ডাব্লিউএইচও নয়, আরো বেশ কিছু সংস্থাও সেখানে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু ইসরায়েল এখনো পর্যন্ত অনুমতি দেয়নি। এই পরিস্থিতিতে মানবিক সাহায্য নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে ডাব্লিউএইচও।
গাজায় যে পরিমাণ মানবিক সহায়তা যাচ্ছে
গত সপ্তাহান্তে রাফা সীমান্ত দিয়ে গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো শুরু হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ সহায়তা পাঠানো হয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের?
ছবি: Ahmed Gomaa/Xinhua/IMAGO
কত ট্রাক সহায়তা?
সপ্তাহান্তে সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর গাজায় শনিবার ২০ ট্রাক এবং রোববার ১৪ ট্রাক মিলিয়ে মোট ৩৪ ট্রাক সহায়তা পাঠানো হয়৷ সোমবার আরো ৪০টি ট্রাকে সহায়তা পাঠানোর খবর পাওয়া যায়৷ এরপর আর কোনো সহায়তার ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে কি না সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি৷
ছবি: Ahmed Gomaa/Xinhua/IMAGO
কী সহায়তা দেওয়া হচ্ছে?
জানা গেছে ট্রাকে করে খাবার পানি, ওষুধ, খাবার এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল৷ প্রবেশ পথে ট্রাকগুলোকে যাচাই-বাছাই করছে ইসরায়েলের নিরাপত্তারক্ষীরা৷ সহায়তার নামে যেন কোনো অস্ত্র প্রবেশ করতে না পারে সেজন্যই ট্রাকগুলোতে তল্লাশি চালায় ইসারায়েলি কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Ahmed Gomaa/Xinhua/IMAGO
কী দরকার গাজাবাসীর?
দাতা সংস্থাগুলো বলছে, গাজার সাধারণ মানুষের নিত্য চাহিদা মেটাতে দিনে অন্তত একশ ট্রাক সহায়তা প্রয়োজন৷ খাবার, ওষুধ ছাড়াও জ্বালানি সহযোগিতা দেওয়ার আহ্বান ত্রাণ সরবরাহকারী সংস্থাগুলোর৷ গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় পানির সংকট তৈরি হচ্ছে৷ তাছাড়া হাসপাতালগুলোকে চালু রাখতে প্রয়োজন জ্বালানি৷
ছবি: Hatem Ali/AP/picture alliance
জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে?
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, জ্বালানি নিয়ে ৬টি ট্যাংকার রাফাহ ক্রসিং অতিক্রম করেছে যদিও স্বতন্ত্র সূত্র থেকে এটি নিশ্চিত করা যায়নি৷ তবে ফিলিস্তিনের একজন মুখপাত্র বিষয়টি নিশ্চিত করলেও ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল এমন তথ্যের কথা অস্বীকার করেছে৷ এদিকে, ফিলিস্তিনের বেসামরিক বিষয়ক ইসরায়েলের ডিফেন্স বডির পক্ষ থেকে বলা হয়, জাতিসংঘের একটি তেলের ডিপো থেকে হাসপাতালে জ্বালানি সরবরাহ করা হয়েছে৷
ছবি: Mohammed Abed/AFP/Getty Images
অপেক্ষমাণ সহায়তা
সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর থেকে গাজায় প্রবেশের লক্ষ্যে কয়েক দিন ধরে সহায়তার ট্রাক অপেক্ষমাণ রয়েছে৷ জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা জানায়, গাজা সীমান্তে সংস্থাটির এক হাজার টন খাদ্য সরবরাহের অপেক্ষায় রয়েছে৷
ছবি: Ibraheem Abu Mustafa/REUTERS
সহায়তায় কোন কোন দেশ
ফিলিস্তিনীদের সহায়তায় এরইমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিশরে সহায়তা পাঠিয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, রাশিয়া, তুরস্ক এবং রুয়ান্ডাসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশ৷
ছবি: Mohammed Asad/AP Photo/picture alliance
জার্মানির অর্থ সহায়তা বৃদ্ধি
গাজার বসবাসরত সাধারণ মানুষের জন্য ৫০ মিলিয়ন ইউরোর বাড়তি সহায়তা ঘোষণা করেছে জার্মানি৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা দেন৷ জার্মানির এই সহয়তা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য বেয়াবকের৷
ছবি: Annette Riedl/dpa/picture alliance
7 ছবি1 | 7
ডাব্লিউএইচও-র অভিযোগ, ভয়াবহ লড়াই চলছে বেশ কিছু এলাকায়। ঘন ঘন বোমা পড়ছে। তেল মিলছে না, যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে যেখানে সাহায্য যাওয়া প্রয়োজন, সেখানেই ঢোকাই সম্ভব হচ্ছে না।
গাজা স্ট্রিপের ৩২টির মধ্যে মাত্র ১৫টি হাসপাতাল আংশিকভাবে চালু আছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
রেড ক্রিসেন্ট কর্মীদের মৃত্যু
বুধবার ফিলিস্তিনের মানবাধিকার সংস্থা রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, তাদের একটি অ্যাম্বুল্যান্সে গোলা এসে লেগেছে। ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। সকলেই মানবাধিকার কর্মী ছিলেন। গাজায় সাহায্যের জন্য গেছিলেন।
সালাহ আল দিন স্ট্রিটে এই ঘটনা ঘটেছে। মধ্য গাজার এই রাস্তাটি দিয়ে উত্তর এবং দক্ষিণ গাজায়যাওয়া যায়। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তা। ওই রাস্তার খুব কাছে আরেকটি জায়গায় হাসপাতাল অঞ্চলে একই দিনে বোমারু হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তাতেও বহু বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। ইসরায়েল এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। অন্য কোনো সূত্রের কাছ থেকে এই তথ্য যাচাই করা যায়নি।
হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি এখনো পর্যন্ত ১২০টি অ্যাম্বুল্যান্স ধ্বংস হয়েছে। ৩২৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। গাজায় সব মিলিয়ে ২৩ হাজার ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।