ফিলিস্তিনের গাজার উপত্যকা ইসরায়েলি বাহিনির গুলিতে অন্তত ৪১ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরও অনেকে৷
বিজ্ঞাপন
ফিলিস্তিনের গাজার উপত্যকার ওই ঘটনায় নিহতদের মধ্যে শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷
বিক্ষোভরতরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে এ সংঘর্ষে আড়াইশ থেকে ৩০০ লোক আহত হয়েছে৷ আর গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগুনে ২০০ বিক্ষোভকারী পুড়ে গেছেন৷
ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনি দিকে আগুন ছুড়ে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ আনা হলেও তারা বলছে, ‘‘বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে ১০ হাজার বিক্ষোভকারীকে নিয়ন্ত্রণে ঠিক যতোটুকু আগুন ছুড়ে নিয়ন্ত্রণের বিধিমালা রয়েছে, তারা সে অনুযায়ীই আগুন ছুড়েছে৷’’
গত ছয় সপ্তাহ ধরেই মে মাসের ১৪ তারিখ এবং জেরুসালেম সারা বিশ্বের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে৷ কেননা, সেখানেই পুরোদমে চালু হতে যাচ্ছে অ্যামেরিকার দূতাবাস, যা নিয়ে রয়েছে সমালোচনা এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়া৷
জেরুসালেমকে নিজেদের রাজধানী বলে বিবেচনা করে ইসরায়েল৷ অপরদিকে ফিলিস্তিনিরা তাঁদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে পূর্ব জেরুসালেম দাবি করে আসছে৷ তাঁরা ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছে৷
ফিলিস্তিনিরা মার্কিন এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে এর প্রবল বিরোধিতা করেছে৷ দূতাবাস উদ্বোধনের বিরুদ্ধে গণপ্রতিবাদের জন্য জেরুজালেমে জমায়েত হচ্ছে তারা৷
মে মাসের ১৪ তারিখ জেরুসালেম সারা বিশ্বের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে৷ কেননা, সেখানেই পুরোদমে চালু হচ্ছে অ্যামেরিকার দূতাবাস, যা নিয়ে রয়েছে সমালোচনা এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়া৷
দক্ষিণ জেরুজালেমের শান্ত আবাসিক এলাকা আরনোনায় এ দূতাবাস উদ্বোধন উপলক্ষে ইতিমধ্যে দু'পাশের রাস্তায় সারি সারি করে অ্যামেরিকা ও ইসরাইলের পতাকা লাগানো হয়৷ হিব্রু, আরবি এবং ইংরেজি ভাষায় নির্দেশিকাও দেওয়া হয়৷
তবে তেল আবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে অ্যামেরিকার দূতাবাস খোলা নিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সমালোচনা৷ তাঁরা বলছেন, জেরুসালেমে অ্যামেরিকার দূতাবাস নিয়ে আসার এই পদক্ষেপ এ অঞ্চলের সাত দশকেরও বেশি রাজনৈতিক অস্থিরতাকে আরও উসকে দেবে৷
ফিলিস্তিনের পাথর ছোঁড়া তরুণেরা
জেরুসালেম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইসরায়েলি সেনাদের দিকে পাথর ছুঁড়ে প্রতিবাদ জানায় ফিলিস্তিনি তরুণরা৷ নাম প্রকাশ না করে তাঁরা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন৷
ছবি: REUTERS
সম্বল গুলতি
গাজা শহরের পূর্বে ইসরায়েল সীমান্তের কাছে গুলতি হাতে এক ফিলিস্তিনিকে দেখা যাচ্ছে৷ তিনি বলছেন, ‘‘জেরুসালেম নিয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন রুখতে আমি যা করতে পারি তা হচ্ছে এই গুলতি দিয়ে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ইসরায়েলি সেনাদের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারতে৷ আমি স্বপ্ন দেখি যে, আমাদের পবিত্র ভূমি ফিরে পাওয়ার যুদ্ধে সব আরব ও মুসলিম এক হয়েছে৷’’
ছবি: REUTERS
জেরুসালেম যেন শরীরেরই অংশ
এই বিক্ষোভকারী তরুণের বক্তব্য, ‘‘আমরা ট্রাম্পকে বলতে চাই যে, জেরুসালেম আমাদের শরীরের অংশ, যা ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না৷ আমরা জেরুসালেমকে ভালোবাসি এবং একে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে রক্ষার জন্য সবকিছু, এমনকি আমাদের প্রাণও উৎসর্গ করে পারি৷ বিশ্ব যদি সদয় হয়ে থাকে, তাহলে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের কারণে আমাদের জন্য যে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা শেষ করার উদ্যোগ নেয়া উচিত৷’’
ছবি: REUTERS
‘‘গুলতি হাতে মানুষ’’
এই নামেই পরিচিত ছবির এই তরুণ৷ তাঁর কথা, ‘‘আমি কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত নই৷ আমার সংশ্লিষ্টতা জেরুসালেমের সঙ্গে৷ আমি একটা বিষয় জানি, যারা আমাকে গাজায় অবরুদ্ধ করে রেখেছে, যারা আমাকে গাজার বাইরে গিয়ে আমার স্বপ্ন পূরণের পথে দাঁড়িয়ে আছে, তারা ঐ বেড়ার পেছনে রয়েছে, তারা হচ্ছে ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী৷’’
ছবি: REUTERS
ইহুদিদের বিরুদ্ধ লড়াই
মুখে মাস্ক পরা এই ফিলিস্তিনি তরুণ বলছেন, ‘‘বিশ্বের অবশ্যই বোঝা উচিত যে, বেকারত্ব আমাদের যোদ্ধা হওয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ আমরা হামাস কিংবা ফাতাহর বিরুদ্ধে লড়বো না, আমরা শুধু ইহুদিদের বিরুদ্ধে লড়বো৷ হামাস আর ফাতাহর মধ্যে বিভাজনের সমাপ্তি ও আরও বিদ্যুতের দাবিতে ডাকা সমাবেশে আমরা অংশ নিয়েছি৷ কিন্তু আমরা হামাস কিংবা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দিকে পাথর ছুড়তে রাস্তায় নামবো না৷’’
ছবি: REUTERS
বঞ্চনার শিকার
‘‘একজন তরুণ হিসেবে আমি একটি সম্মানজনক জীবন থেকে বঞ্চিত হচ্ছি৷ আমার এই অবস্থার জন্য যেটা দায়ী সেই ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আমি বিদ্রোহ করতে পারি৷ অ্যামেরিকার সহায়তা নিয়ে দখলদাররা আমাদের মাতৃভূমিকে অবরোধ করে রেখেছে৷’’
ছবি: REUTERS
স্বপ্নের কথা
‘‘আমি আশা করছি, আমি আমার স্বপ্ন নিয়ে বাঁচবো৷ আমি সবসময় চাকরি আর চলাফেরার স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছি৷’’
ছবি: REUTERS
দুর্ভোগের প্রতিবাদ
আহত বন্ধুর শরীরের রক্ত আবু জাবেরের হাতে লেগে রয়েছে৷ সে বলছে, ‘‘জেরুসালেম নিয়ে ট্রাম্প যে উন্মাদের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার প্রতিবাদ জানাই আমরা৷ ইসরায়েলের অবরোধের কারণে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছি৷ আমার হাতে যে রক্ত দেখছেন তা আরব ও মুসলিম বিশ্বকে ইসরায়েল ও অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে উৎসাহ দেবে বলে আমি আশা করি৷’’
ছবি: REUTERS
অন্য উপায় নেই
‘‘আমরা ক্ষুধার্ত৷ ঘরে আমাদের বিদ্যুৎ নেই, আমাদের বাবাদের চাকরি নেই৷ এই পরিস্থিতি প্রতিবাদ ছাড়া আর কিছু আনতে পারে না৷’’
ছবি: REUTERS
অবরোধের প্রতিবাদ
‘‘গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছি আমরা৷ অবরোধের কারণে আমাদের আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে৷ আশা করছি, শিগগিরই অবরোধ তুলে নেয়া হবে৷’’
ছবি: REUTERS
শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভ
‘‘ইসরায়েল ও আমাদের মধ্যে অনেকদিন ধরে যুদ্ধ চলছে৷ আমাদের ভূমিতে একজন ইসরায়েলি দখলদারি থাকা পর্যন্ত আমরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাব৷ ট্রাম্প বা অন্য কেউ আমাদের ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না৷’’
ছবি: REUTERS
10 ছবি1 | 10
এমনকি সাধারণ ইসরায়েলি জনগণের মধ্যেই দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া৷
ইউরিয়েল বেরেনস্টেইন পূর্ব জেরুসালেমের রাস্তায় তাঁর কুকুর নিয়ে হাঁটছিলেন৷ তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বলেন, ‘‘আমি মনে করি এটা ঠিক আছে৷ এখানে অ্যামেরিকার দূতাবাস সরিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে, কেননা, এটিই তো শেষ পর্যন্ত রাজধানী৷ এমনকি একটি শিশুও এ কথা বলবে৷ যদি কখনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হয়, ঐক্যমতের মাধ্যমে দু'পক্ষের সমঝোতা হয়, তাহলে অন্যকিছু হবে হয়ত, কিন্তু এখন তো জেরুসালেমই ইসরায়েলের রাজধানী৷’’
২৫ বছর বয়সি এই ইসরায়েলি অবশ্য মনে করেন এ বিতর্কিত সিদ্ধান্তটি বিবাদমান দুইপক্ষের সম্পর্ককে আরও তিক্ততায় নিয়ে যেতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘এটি অবশ্যই অস্থিরতা তৈরি করবে, কিন্তু আমরা কেবল এটুকু আশা করতে পারি দু'পক্ষের নেতারা সাধারণ জনগণকে শান্ত করতে সমর্থ হবেন৷’’
জেরুসালেমে অ্যামেরিকার যে কনসুলেট ভবন আছে সেখানেই ছোট পরিসরে অন্তর্বর্তীকালীন এ দূতাবাসটি চালু করা হচ্ছে৷ পরে পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস ভবন নির্মিত হলে তেল আবিব থেকে দূতাবাসের অপরাপর অংশও সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে৷
ইসরায়েলের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সঙ্গে মিলানোর জন্য মার্কিন দূতাবাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এগিয়ে আনা হয়৷
রেনা রাবা নামের আরেক ইসরায়েলি ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘আমার মনে হয় এটা নিয়ে কোনো দ্বিধার অবকাশ নেই, জেরুসালেম ইসরায়েলের রাজধানী৷ এখানেই অ্যামেরিকার দূতাবাস হওয়া উচিত৷’’
জেরুজালেমকে নিজেদের ‘শাশ্বত ও অখণ্ড’ রাজধানী বলে বিবেচনা করে ইসরায়েল৷ অপরদিকে ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে পূর্ব জেরুজালেম দাবি করে আসছে৷ তারা ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছে৷
এদিকে জেরুজালেম দূতাবাসের কার্যক্রম শুরু উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কন্যা ইভাঙ্কা ও তার স্বামী জারেড কুশনার এখন সেখানে অবস্থান করছেন৷ তাঁরা দুজনই হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা৷ কুশনার দম্পতির পাশাপাশি অ্যামেরিকার অর্থমন্ত্রী স্টিফেন মুচিন ও উপ-পরাষ্ট্রমন্ত্রী জন সুলিভানও অনুষ্ঠান উপস্থিত ছিলেন৷
বিতর্কিত শহর জেরুসালেম
জেরুসালেম বিশ্বের প্রাচীনতম ও সবচেয়ে বিতর্কিত শহরগুলির অন্যতম৷ ইহুদি, মুসলিম ও খ্রিষ্টান, তিনটি ধর্মের মানুষের কাছে জেরুসালেম একটি পবিত্র শহর৷ এ কারণে জেরুসালেম নিয়ে বিরোধ ও বিতর্ক লেগেই আছে৷
ছবি: picture-alliance/Zumapress/S. Qaq
রাজা ডেভিডের শহর
ওল্ড টেস্টামেন্টের বিবরণ অনুযায়ী, জুডাহ ও ইসরায়েলের রাজা ডেভিড যীশুখ্রিষ্টের জন্মের প্রায় এক হাজার বছর আগে জেবুসাইটদের কাছ থেকে জেরুসালেম জয় করেন৷ ডেভিড জেরুসালেমকে তার রাজধানী করেন ও জেরুসালেম তাঁর রাজ্যের ধর্মীয় কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়৷ বাইবেলে কথিত আছে যে, ডেভিডের পুত্র রাজা সলোমন জেরুসালেমে ইসরায়েলের দেবতা ইয়াওয়েহ’র প্রথম মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন ও জেরুসালেম ইহুদি ধর্মের প্রাণকেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়৷
ছবি: Imago/Leemage
পারস্যের শাসনে
নব্য ব্যাবিলোনিয়ান রাজা দ্বিতীয় নেবুচাডনেজার (বাম থেকে তৃতীয়) খ্রিষ্টপূর্ব ৫৯৭ ও ৫৮৬ সালে জেরুসালেম জয় করেন বলে বাইবেলে আছে৷ তিনি রাজা জেহোইয়াকিম (ডান থেকে পঞ্চম) ও অন্যান্য সম্ভ্রান্ত ইহুদিদের বন্দি করে ব্যাবিলনে পাঠান ও ইয়াওয়েহ’র মন্দিরটি ধ্বংস করেন৷ পারস্যের রাজা সাইরাস দ্য গ্রেট ব্যাবিলন দখল করার পর নির্বাসিত ইহুদিদের জেরুসালেমে ফেরার ও মন্দিরটি পুনরায় গড়ে তোলার অনুমতি দেন৷
ছবি: picture-alliance/Mary Evans Picture Library
রোমক ও বাইজান্টাইন আমল
খ্রিষ্টজন্মের ৬৩ বছর পরে জেরুসালেম রোমক শাসনে আসে, কিন্তু জনগণের মধ্যে প্রতিরোধ অব্যাহত থাকায় তার তিন বছর পরেই প্রথম ইহুদি-রোমক যুদ্ধের অবতারণা ঘটে৷ চার বছর যুদ্ধের পর রোমকরা জয়ী হয় ও ইহুদিদের মন্দিরটি পুনরায় ধ্বংস করা হয়৷ রোমক আর বাইজান্টাইনরা মিলে প্রায় ৬০০ বছর ধরে জেরুসালেম শাসন করে৷
ছবি: Historical Picture Archive/COR
আরব বিজয়
বৃহত্তর সিরিয়ায় ইসলামের জয়ের পর মুসলিম সেনাবাহিনী জেরুসালেমে পৌঁছায়৷ (ছবিতে) খলিফা উমরের আদেশে ৬৩৭ সালে দীর্ঘ অবরোধের পর জেরুসালেমের পতন ঘটে৷ মুসলিম শাসন চলাকালীন বিভিন্ন গোষ্ঠীর শাসকরা শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে সংঘাত চালান৷ জেরুসালেম একধিকবার অবরুদ্ধ ও বিজিত হয়৷
ছবি: Selva/Leemage
ক্রুসেড
১০৭০ সাল থেকে মুসলিম নেতারা ক্রমেই খ্রিষ্টান জগতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেন৷ শেষমেষ পোপ দ্বিতীয় আর্বান ক্রুসেডের ডাক দেন৷ ২০০ বছরের মধ্যে মোট পাঁচটি ক্রুসেড জেরুসালেম জয়ের জন্য যাত্রা করে৷ কিন্তু ১২৪৪ সালে ক্রুসেডাররা শহরটির নিয়ন্ত্রণ হারায় ও জেরুসালেম পুনরায় মুসলিম শাসনে আসে৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
অটোমান ও ব্রিটিশ আমল
অটোমানরা মিশর ও আরব জয় করার পর ১৫৩৫ সালে জেরুসালেম একটি অটোমান জেলার প্রশাসনিক কার্যালয়ে পরিণত হয়৷ অটোমান শাসনের প্রথম কয়েক দশকে শহরটির প্রভূত উন্নতি ঘটে৷ ১৯১৭ সালে অটোমান সৈন্যদের বিরুদ্ধে ব্রিটেনের জয়ের পর ফিলিস্তিন ব্রিটিশ শাসনে আসে ও জেরুসালেম বিনাযুদ্ধে ব্রিটিশদের হাতে চলে যায়৷
ছবি: Gemeinfrei
বিভক্ত শহর
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেন তার ফিলিস্তিনি সনদ ছেড়ে দেয়৷ অপরদিকে জাতিসংঘ হলোকস্ট থেকে যেসব ইহুদি বেঁচেছেন, তাদের জন্য একটি স্বদেশ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে দেশবিভাগের সিদ্ধান্ত নেয়৷ অতঃপর কিছু আরব দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে ও অংশত জেরুসালেম দখল করে৷ ১৯৬৭ সাল অবধি জেরুসালেমের পশ্চিমাংশ ইসরায়েল ও পুবের অংশ জর্ডানের দখলে ছিল৷
ছবি: Gemeinfrei
পূর্ব জেরুসালেম ইসরায়েলের হাতে ফিরল
১৯৬৭ সালের ছয় দিনের এক যুদ্ধে ইসরায়েল মিশর, জর্ডান ও সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়৷ সাইনেয়াই, গাজা স্ট্রিপ, পশ্চিম তীর, গোলান হাইটস ও পূর্ব জেরুসালেমের দখল করে নেয় ইসরায়েল৷ ইসরায়েলের প্যারাট্রুপার সৈন্যরা ১৯৪৯ সাল যাবৎ প্রথমবারের মতো ইহুদিদের জেরুসালেমের ‘ওয়েলিং ওয়াল’-এ দাঁড়ায়৷ পূর্ব জেরুসালেমকে সরকারিভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ না করা হলেও, সামগ্রিক প্রশাসনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷
জেরুসালেমে মুসলিমদের পবিত্র স্থানগুলি মুসলিমদের জন্য খোলা৷ টেম্পল মাউন্ট একটি স্বশাসিত মুসলিম প্রশাসনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত৷ মুসলিমরা ডোম অফ দ্য রক ও তার সংলগ্ন আল-আকসা মসজিদটি দর্শন করতে পারেন ও সেখানে নামাজ পড়তে পারেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Gharabli
জেরুসালেম নিয়ে বিরোধ
আজ অবধি জেরুসালেমের পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ মর্যাদা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শান্তির পথে অন্তরায় হয়ে রয়েছে৷ ১৯৮০ সালে ইসরায়েল গোটা জেরুসালেমকে তার ‘‘চিরন্তন ও অবিভাজনযোগ্য রাজধানী’’ বলে ঘোষণা করে৷ ১৯৮৮ সালে জর্ডান পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুসালেমের উপর তার দাবি পরিত্যাগ করার পর ফিলিস্তিন রাজ্য ঘোষিত হয়৷ ফিলিস্তিন রাজ্যও জেরুসালেমকে তাদের রাজধানী বলে গণ্য করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
10 ছবি1 | 10
গত বছর জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প৷ এর মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে নিরপেক্ষ থাকার কয়েক দশক ধরে অনুসৃত নীতি থেকে সরে আসে অ্যামেরিকা৷ দেশটির এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ৷
ফ্রান্স, তুরস্ক, সৌদি আরবসহ অনেক মিত্র দেশের আহ্বান উপেক্ষা করেই অ্যামেরিকার দূতাবাস স্থানান্তরের ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, জেরুসালেমে অ্যামেরিকার দূতাবাস উদ্বোধন তাঁদের জন্য উদযাপনের একটি বিষয়৷ অপরদিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস একে বর্ণনা করেছেন মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রচেষ্টার ওপর ‘শতকের সবচেয়ে বড় আঘাত’ হিসেবে৷
মুসলিম, খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের কাছে পবিত্র নগরী জেরুসালেমকে রাজধানী হিসেবে চায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন৷ ইসরায়েল বরাবরই জেরুসালেমকে তাদের রাজধানী বলে দাবি করে আসছে৷ অন্যদিকে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলিদের দখলে যাওয়া পূর্ব জেরুসালেমকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী করতে চান ফিলিস্তিনি নেতারা৷
কয়েক দশক ধরে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের কেন্দ্রে রয়েছে জেরুসালেমের বিষয়টি৷ পবিত্র ওই নগরীর ওপর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়৷ ১৯৯৩ সালের ইসরায়েল-ফিলিস্তিন চুক্তি অনুযায়ী জেরুসালেমের পরিচয় কী হবে তা শান্তি আলোচনায় ঠিক হওয়ার কথা৷
এইচআই/এসিবি (রয়টার্স)
গত ১২ ডিসেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...
ট্রাম্পের জেরুসালেম সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
সারা বিশ্বে হাজার হাজার মুসলিম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেবার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ পথবিক্ষোভে মার্কিন ও ইসরায়েলি পতাকা পোড়ানো হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Gharabli
জার্মানি
রবিবার বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ তোরণে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের একটি প্রধানত মুসলিম জনতা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রদর্শন করে৷ বিক্ষোভকারীদের হাতে ফিলিস্তিনি ও তুর্কি পতাকা ছিল৷ বিক্ষোভে একটি ইসরায়েলি পতাকাও পোড়ানো হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী হাইকো মাস পরে বলেন যে, জার্মানিতে ইহুদি বিদ্বেষের কোনো স্থান নেই৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
তুরস্ক
ট্রাম্পের ঘোষণার পর পরই তুরস্কে প্রতিবাদ শুরু হয়ে যায়৷ ছবিতে বিক্ষোভকারীরা ইস্তানবুলে মার্কিন ও ইসরায়েলি পতাকায় আগুন ধরাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/O. Orsal
মিশর
ছবিতে কায়রোয় সিন্ডিকেট অফ জার্নালিস্টস-এর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি প্রতিকৃতি দাহ করছেন; ছবির গায়ে লেখা আছে, ‘ট্রাম্প, সাংবাদিকরা আপনাকে বলছে, জেরুসালেম আরব’৷ পরে পুলিশ আটজন বিক্ষোভকারীকে নিষিদ্ধকৃত মুসলিম ব্রাদারহুড সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগের দায়ে গ্রেপ্তার করে৷
ছবি: Reuters/M. A. E. Ghany
লেবানন
লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনী রবিবার বৈরুতে মার্কিন দূতাবাসের কাছে বিক্ষোভকারীদের রোখার জন্য কাঁদানে গ্যাস ও জলের কামান ব্যবহার করে৷ হেজবুল্লাহ সংগঠন উত্তরোত্তর প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Hussein
ইরাক
ইরাকের শিয়াপন্থি মুসলিমরাও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জেরুসালেম সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে পথে নেমেছেন, যেমন এখানে দক্ষিণ ইরাকের বসরা শহরে৷
ছবি: Reuters/E. al-Sudani
ইরান
ইরানের রাজধানী তেহরানে বিপুল বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়েছে এবং আগামীতেও হবে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে৷ ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি রবিবার বলেন যে, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার ‘‘আগুনে তেল ঢেলেছে৷’’
ছবি: picture-alliance/AA/Stringer
পাকিস্তান
পাকিস্তানের করাচিতে শিয়াপন্থি বিক্ষোভকারীরা মার্কিন কনস্যুলেটের দিকে যাবার পথে মার্কিন ও ইসরায়েলি পতাকা পদদলিত করছেন৷
ছবি: Reuters/A. Soomro
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর
শ্রীনগরের দক্ষিণ-পশ্চিমে বুদগাম শহরে বিক্ষোভকারীরা জুম্মার নামাজের পর মিছিল করেন ও ইসরায়েলের পতাকা পোড়ান (ছবি)৷ তাদের মুখে ‘অ্যামেরিকা নিপাত যাও’ ও ‘ইসরায়েল নিপাত যাও’ ধ্বনি শোনা যায়৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/D. Yasin
মালয়েশিয়া
কুয়ালা লামপুরে শুক্রবারের নামাজের পর সহস্রাধিক মুসলিম ট্রাম্পের জেরুসালেম সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর উদ্দেশ্যে মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে যাত্রা করেন৷ ক্রীড়ামন্ত্রী জামালুদ্দিন স্বয়ং তাদের নেতৃত্ব দেন৷ জনতা ‘ইসলাম দীর্ঘজীবী হোক’ ধ্বনি দেয়৷
ছবি: Reuters
ইন্দোনেশিয়া
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়ায় চার দিন ধরে প্রতিবাদ চলেছে৷ জাকার্তার মার্কিন দূতাবাসের সামনে মার্কিন ও ইসরায়েলি পতাকা পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে৷ এছাড়া ট্রাম্প ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতিকৃতি দাহ করা হয়৷
ছবি: Reuters/Beawiharta
ব্রাজিল
রবিবার ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে ফিলিস্তিনি ফ্রন্ট নামধারী একটি আন্দোলন ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রদর্শন করে৷