রমজান মাসে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস করলো নিরাপত্তা পরিষদ। হামাসকে বন্দিমুক্তির কথা বলা হলো।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে প্রস্তাব পাস হলো। ছবি: Craig Ruttle/AP Photo/picture alliance
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর প্রায় ছয় মাস পর সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি নিয়ে প্রস্তাব পাস করলো। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য ভোটদানে বিরত ছিল।
এই প্রস্তাবের পক্ষে ১৪টি ভোট পড়ে। আগের অবস্থান থেকে সরে এসে যুক্তরাষ্ট্র ভোট দেয়নি।
এর আগে এই বিষয়ে চারটি প্রস্তাব বাতিল হয়ে গিয়েছিল। তিনবার অ্যামেরিকা এবং একবার রাশিয়া ও চীন বিরুদ্ধে ভেটো দিয়েছিল।
জাতিসংঘের প্রস্তাবে কী বলা হয়েছে?
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অবিলম্বে দীর্ঘমেয়াদী ও স্থায়ীযুদ্ধবিরতির দিকে যাওয়া দরকার।
প্রস্তাবে অবশ্য গত ৭ অক্টোবর আক্রমণের পর হামাস যাদের যুদ্ধবন্দি করে রেখেছে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার কথাও বলা হয়েছে। আগামী ৯ এপ্রিল রমজান মাস শেষ হচ্ছে। তার মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরুর কথা বলা হয়েছে।
গাজায় এখন যা পরিস্থিতি
যুদ্ধ থেমেছে৷ আর ইসরায়েল থেকে উড়ে আসছে না রকেট৷ নতুন করে প্রাণ বা সম্পদ হানির আশঙ্কা এই মুহূর্তে নেই৷ তবে যুদ্ধের এমন সব চিহ্ন আছে যেসব মুছে গাজাবাসীর জন্য স্বাভাবিক জীবনে ফেরা খুব কঠিন৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Mohammed Salem/Reuters
১১ দিনে সব শেষ
টানা ১১ দিন চলেছে ফিলিস্তিনের হামাস শাসিত গাজার সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ৷ যুদ্ধ বিরতির ঘোষণার পর গাজার উত্তরাঞ্চলের বাইত হানুন এলাকায় নিজের বাড়িতে ফিরে এক নারীর মাথায় হাত! তার বাড়িটা পুরোপুরি ধ্বংস, এখন থাকবেন কোথা!
ছবি: Ibraheem Abu Mustafa/Reuters
দিশাহারা বাবা
দুই সন্তানকে নিয়ে নিজের বাড়িতে এসে ফিলিস্তিনি এই তরুণেরও দিশেহারা অবস্থা৷ তার পরিবারকেও আশ্রয়হীন করেছে ১১ দিনের যুদ্ধ৷
ছবি: Suhaib Salem/Reuters
তবুও শান্তি...
‘‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে/ তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে’’ কবির এ কথাগুলোই যেন মনে করিয়ে দেয় এই ছবি৷ তাদের বাড়ি-ঘর নেই৷ ধ্বংস হয়ে গেছে সব৷ তবু প্রতিবেশীকে দেখে একটু ভালো লাগা, একটু শুভেচ্ছা বিনিময়৷ জীবন তো বয়ে চলে!
ছবি: Mohammed Salem/Reuters
সন্তানের সান্ত্বনা
নিজের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যেতে দেখে হতাশায় ভেঙে পড়েছেন এক নারী৷ তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন তার সন্তান৷
ছবি: Mohammed Salem/Reuters
সম্বল নিয়ে ফেরা
১১ দিনের যুদ্ধের সময় গাজার অনেক মানুষকেই আশ্রয় নিতে হয়েছিল সীমান্ত থেকে দূরের কোনো স্কুলে৷ এই শিশুটিও তার পরিবারের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিল জাতিসংঘ পরিচালিত এক স্কুলে৷ এখন তার বাড়ি ফেরার পালা৷
ছবি: Ibraheem Abu Mustafa/Reuters
যেভাবেই আছি, বেঁচে তো আছি...
যুদ্ধবিরতিতে বেঁচে থাকার আনন্দ দুই ফিলিস্তিনি তরুণের কোলাকুলি৷
ছবি: Mohammed Salem/Reuters
কোথায় টাওয়ার!
এখানে বিশাল এক টাওয়ার ছিল৷ এলাকাবাসী এখন আর সেই টাওয়ার খুঁজে পাচ্ছেন না৷ইসরায়েলের ছোঁড়া মিসাইলের আঘাতে সেই টাওয়ার পুরোপুরি ধ্বংস৷ ওপর থেকে তোলা ছবি৷
ছবি: Mohammed Salem/Reuters
যেন এক দুঃস্বপ্ন
গাজার উত্তরাঞ্চলের বাইত হানুন এলাকায় নিজের বাড়িতে ফিরে যা দেখলেন, তা মানতে পারছিলেন না তারা৷দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছেন একজন, পেছনে- দূরে আরেকজন মাথায় হাত দিয়ে কাঁদছেন৷
ছবি: Mohammed Salem/Reuters
ধ্বংসস্তূপে সম্বল সন্ধান
ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ির নীচ থেকে যা কিছু ব্যবহারযোগ্য সব খুঁজে বের করে জড়ো করছেন এক নারী৷
ছবি: Ibraheem Abu Mustafa/Reuters
9 ছবি1 | 9
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গাজায় মানবিক সাহায্য বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। গাজায় প্রবেশের ক্ষেত্রে যে সব বাধা তৈরি করা হয়েছে, তা-ও অবিলম্বে তুলে নেয়ার কথা প্রস্তাবে বলা হয়েছে।
এই প্রস্তাব জাতিসংঘে আলজেরিয়া, আরব ব্লকের প্রতিনিধিরা সমর্থন করেছে। এছাড়া স্লোভেনিয়া, সুইজারল্যান্ড, ইকুয়েডর, জাপান, গায়ানা, মাল্টা, মোজাম্বিক, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিরিয়া লিয়োনের মতো অস্থায়ী সদস্যরাও সমর্থন করেছে।
জাতিসংঘে আলজেরিয়ার দূত বেন্ডজামা বলেছেন, ''ফিলিস্তিনের মানুষ গত পাঁচ মাস ধরে ভয়ংকর কষ্ট সহ্য করেছে। দীর্ঘসময় ধরে সেখানে রক্ত ঝরছে। আমাদের দায়িত্ব হলো, অবিলম্বে এটা বন্ধ করা। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদ দায়িত্ব নিয়েছে।''
ফিলিস্তিনের দূত বলেছেন, ''গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করার ক্ষেত্রে এই প্রস্তাব একটা বড় ভূমিকা নেবে। এর ফলে যেন গাজার মানুষের উপর আঘাত বন্ধ হয়।''
তবে ইসরায়েল ও হামাস এই প্রস্তাব মানবে কিনা এবং এই প্রস্তাব রূপায়ণ করবে কিনা, সেটা অন্য বিষয়।
হামাসকে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, যুক্তরাজ্য ও অন্য কয়েকটি সংগঠন সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে মনে করে। তারা এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেছে, তারা দুই পক্ষের মধ্যে বন্দিবিনিময়ে রাজি।