জয় নিশ্চিত না হলে গাজায় যুদ্ধবিরতি হবে না, স্পষ্ট করে দিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েল-হামাস সংঘাত নিয়ে সোমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীইসরায়েল নেতানিয়াহু। তিনি জানিয়েছেন, হামাসকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হবে না। সাংবাদিক সম্মেলনের সময়েও যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হবে না। নেতানিয়াহুর বক্তব্য, যতক্ষণ ইসরায়েলের জয় নিশ্চিত না হচ্ছে, ততক্ষণ লড়াই অব্যাহত থাকবে। হামাসকে ছাড় দেওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই।
সোমবারই ডিডাব্লিউয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস। তিনি জানিয়েছেন, ''গাজার বেসামরিক মানুষ আমাদের শত্রু নয়। আমাদের লক্ষ্য হামাস। ওই অঞ্চলের বেসামরিক মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য যা যা করা প্রয়োজন ছিল, আমরা তার সবটাই করেছি।'' তবে নেতানিয়াহুর মতোই তিনিও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আপাতত যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কোনো সম্ভাবনাই নেই। হামাসকে নিশ্চিহ্ন করেই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হবে।
গাজায় যে পরিমাণ মানবিক সহায়তা যাচ্ছে
গত সপ্তাহান্তে রাফা সীমান্ত দিয়ে গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো শুরু হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ সহায়তা পাঠানো হয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের?
ছবি: Ahmed Gomaa/Xinhua/IMAGO
কত ট্রাক সহায়তা?
সপ্তাহান্তে সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর গাজায় শনিবার ২০ ট্রাক এবং রোববার ১৪ ট্রাক মিলিয়ে মোট ৩৪ ট্রাক সহায়তা পাঠানো হয়৷ সোমবার আরো ৪০টি ট্রাকে সহায়তা পাঠানোর খবর পাওয়া যায়৷ এরপর আর কোনো সহায়তার ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে কি না সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি৷
ছবি: Ahmed Gomaa/Xinhua/IMAGO
কী সহায়তা দেওয়া হচ্ছে?
জানা গেছে ট্রাকে করে খাবার পানি, ওষুধ, খাবার এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল৷ প্রবেশ পথে ট্রাকগুলোকে যাচাই-বাছাই করছে ইসরায়েলের নিরাপত্তারক্ষীরা৷ সহায়তার নামে যেন কোনো অস্ত্র প্রবেশ করতে না পারে সেজন্যই ট্রাকগুলোতে তল্লাশি চালায় ইসারায়েলি কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Ahmed Gomaa/Xinhua/IMAGO
কী দরকার গাজাবাসীর?
দাতা সংস্থাগুলো বলছে, গাজার সাধারণ মানুষের নিত্য চাহিদা মেটাতে দিনে অন্তত একশ ট্রাক সহায়তা প্রয়োজন৷ খাবার, ওষুধ ছাড়াও জ্বালানি সহযোগিতা দেওয়ার আহ্বান ত্রাণ সরবরাহকারী সংস্থাগুলোর৷ গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় পানির সংকট তৈরি হচ্ছে৷ তাছাড়া হাসপাতালগুলোকে চালু রাখতে প্রয়োজন জ্বালানি৷
ছবি: Hatem Ali/AP/picture alliance
জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে?
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, জ্বালানি নিয়ে ৬টি ট্যাংকার রাফাহ ক্রসিং অতিক্রম করেছে যদিও স্বতন্ত্র সূত্র থেকে এটি নিশ্চিত করা যায়নি৷ তবে ফিলিস্তিনের একজন মুখপাত্র বিষয়টি নিশ্চিত করলেও ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল এমন তথ্যের কথা অস্বীকার করেছে৷ এদিকে, ফিলিস্তিনের বেসামরিক বিষয়ক ইসরায়েলের ডিফেন্স বডির পক্ষ থেকে বলা হয়, জাতিসংঘের একটি তেলের ডিপো থেকে হাসপাতালে জ্বালানি সরবরাহ করা হয়েছে৷
ছবি: Mohammed Abed/AFP/Getty Images
অপেক্ষমাণ সহায়তা
সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর থেকে গাজায় প্রবেশের লক্ষ্যে কয়েক দিন ধরে সহায়তার ট্রাক অপেক্ষমাণ রয়েছে৷ জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা জানায়, গাজা সীমান্তে সংস্থাটির এক হাজার টন খাদ্য সরবরাহের অপেক্ষায় রয়েছে৷
ছবি: Ibraheem Abu Mustafa/REUTERS
সহায়তায় কোন কোন দেশ
ফিলিস্তিনীদের সহায়তায় এরইমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিশরে সহায়তা পাঠিয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, রাশিয়া, তুরস্ক এবং রুয়ান্ডাসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশ৷
ছবি: Mohammed Asad/AP Photo/picture alliance
জার্মানির অর্থ সহায়তা বৃদ্ধি
গাজার বসবাসরত সাধারণ মানুষের জন্য ৫০ মিলিয়ন ইউরোর বাড়তি সহায়তা ঘোষণা করেছে জার্মানি৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা দেন৷ জার্মানির এই সহয়তা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য বেয়াবকের৷
ছবি: Annette Riedl/dpa/picture alliance
7 ছবি1 | 7
জাতিসংঘের সমালোচনা
জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক ত্রাণ সংস্থার প্রধান নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইসরায়েলের মনোভাবের কড়া সমালোচনা করেছেন। ফিলিপ লাজারিনি জানিয়েছেন, ''হামাসকে শাস্তি দিতে গিয়ে ইসরায়েল সার্বিক শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। সাধারণ বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।'' গাজায় এখন কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়।
বস্তুত, ইসরায়েল দাবি করেছে, গাজা থেকে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে দেওয়ার পরেই তাদের ট্যাঙ্ক এবং স্থলসেনা গাজায় প্রবেশ করেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, যেভাবে ইসরায়েলের সেনা গাজায় আক্রমণ চালাচ্ছে, তাতে গাজা স্ট্রিপের কোনো জায়গাই এখন আর নিরাপদ নয়।
পুটিনের সমালোচনা
এদিকে ইসরায়েল-হামাস সংঘাত নিয়ে মুখ খুলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন। মধ্যপ্রাচ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে অ্যামেরিকা, এমনই অভিযোগ করেছেন পুটিন। পুটিনের কথায়, ''এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে অ্যামেরিকা এবং তার সহযোগী শক্তিরা।'' সরাসরি না বললেও, অ্যামেরিকার সমর্থক পশ্চিমা দেশগুলির কথা উল্লেখ করেছেন পুটিন।
এই সমস্যার একমাত্র সমাধান স্বাধীন এবং সার্বভৌম ফিলিস্তিন বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। সম্প্রতি রাশিয়ার একটি বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলার জন্যও পশ্চিমা এজেন্সি এবং ইউক্রেনকে দোষারোপ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।