ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরো একদিন বাড়লো। আগের শর্তেই যুদ্ধবিরতি হয়েছে বলে কাতার জানিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবারই যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কাতার জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি আরো একদিন বাড়ানো হয়েছে। তার আগে বুধ ও বৃহস্পতিবার হামাস ও ইসরায়েল দুপক্ষই কিছু বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।
ইসরায়েলের সেনাও জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরো একদিন বাড়ানো হয়েছে। এই সময়ের মধ্যেও বন্দিদের মুক্তি দেয়া হবে। কাতার জানিয়েছে, প্রতিদিন হামাস ১০ জন করে পণবন্দিকে ছাড়বে এবং ইসরায়েল ৩০ জন করে ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। আর এই সময়ের মধ্যে কেউ কোনো সামরিক অভিযান চালাবে না। গাজায় ত্রাণ ঢুকতে দেয়া হবে।
কারা মুক্তি পেলেন?
দুই পক্ষের মধ্যে অন্যতম মধ্যস্থতাকারী কাতার জানিয়েছে, বুধবার হামাস যে ১০জন ইসরায়েলিকে ছেড়েছে, তাদের মধ্যে তিনজন জার্মানিরও নাগরিক। একজন ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক। একজন ইসরায়েলের পাশাপাশি ডাচ নাগরিক।
নেদারল্যান্ডসের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে জানিয়েছেন, ''এই ইসরায়েলি-ডাচ নাগরিকের বয়স ১৮ বছর। ভয়ংকর অভিজ্ঞতার পর তিনি পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। এটা খুবই আনন্দের ও স্বস্তির বিষয়।'' তিনি বলেছেন, ''বাকি পণবন্দিদের দ্রুত মুক্তি দেওয়াটাও জরুরি।''
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর অফিস জানিয়েছে, ''১০ জন ইসরায়েলি ও চারজন থাইল্যান্ডের নাগরিক ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছেন। তাদের পরিবারকেও এই কথা জানানো হয়েছে।''
ইসরায়েলের সেনা জানিয়েছে, ''রেড ক্রস এই ১৪ জনকে ইসরায়েলে পৌঁছে দেয়ার পর প্রথমে তাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হচ্ছে। তারপর সেনাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেবে।''
হামাসের সুড়ঙ্গে ইসরায়েলের আক্রমণ
ইসরায়েলের দাবি, উত্তর গাজার ভিতরে ঢুকে হামাস সুড়ঙ্গে আক্রমণ চালাচ্ছে তারা। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি দক্ষিণে পালাচ্ছেন।
ছবি: Ammar Awad/REUTERS
পালাচ্ছে মানুষ
ইসরায়েলের সেনা দাবি করেছে, উত্তর গাজা থেকে অন্তত ৫০হাজার বেসামরিক মানুষ দক্ষিণ গাজার দিকে পালিয়েছে। ইসরায়েলের সেনা তাদের পালাতে সাহায্য করেছে। ফোন করে, লিফলেট দিয়ে তাদের শহর ছাড়তে বলা হয়েছে।
ছবি: Belal Khaled/AA/picture alliance
সুড়ঙ্গের সন্ধানে সেনা
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, উত্তর গাজায় শহরের ভিতরে ঢুকে পড়েছে ইসরায়েলের সেনা। হামাসের সুড়ঙ্গ খুঁজে বার করে আক্রমণ চালাচ্ছে তারা। তারা এমন জায়গায় পৌঁছে গেছে, হামাস যা কোনোদিন কল্পনাও করতে পারেনি।
ছবি: Israeli Defense Forces/Handout via REUTERS
রকেট প্রস্তুকারকের মৃত্যু
ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসের এক গুরুত্বপূর্ণ রকেট প্রস্তুতকারক ব্যক্তি ইসরায়েলের সেনার হাতে নিহত হয়েছেন।
ছবি: Abed Khaled/AP Photo/picture alliance
উত্তর গাজায় ক্ষমতা হারিয়েছে হামাস
ইসরায়েলের দাবি, উত্তর গাজায় হামাস তার ক্ষমতা হারিয়েছে। এখনো দক্ষিণ গাজায় তারা লড়াই চালাচ্ছে। এবং সে কারণেই হাজার হাজার মানুষ উত্তর থেকে দক্ষিণের দিকে চলে যাচ্ছে। উত্তরের দখল কার্যত এখন ইসরায়েলের সেনার হাতে।
ছবি: Israel Defense Forces/Handout via REUTERS
১৩০টি সুড়ঙ্গ ধ্বংস
ইসরায়েলের সেনার দাবি, তারা উত্তর গাজায় হামাসের ১৩০টি সুড়ঙ্গ ধ্বংস করেছে। সুড়ঙ্গ অর্থাৎ, মাটির নিচে বাংকার। ইসরায়েলের দাবি, বেসামরিক বাড়ি, হাসপাতালের নিচে বাংকার বানিয়ে হামাস নিজেদের 'সন্ত্রাসী' কাজকর্ম চালাতো। সে কারণেই হামাসকে আক্রমণের সময় বহু বেসামরিক ভবনে আক্রমণ চালাতে হচ্ছে।
ছবি: Bashar Taleb/APA Images via ZUMA Press/picture alliance
বাংকারের কাঠামো
ইসরায়েলের দাবি, বাংকার গুলি ২ মিটার উঁচু এবং এক মিটার চওড়া। তার ভিতর জলের লাইন, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা সবই করা আছে। ফলে চাইলে মানুষ সেখানে টানা কিছুদিন থাকতে পারে।
ছবি: Bashar Taleb/APA Images via ZUMA Press/picture alliance
জি-৭ এর আবেদন
জি-৭ দেশগুলি ইসরায়েলের কাছে আবেদন জানিয়েছে সংঘাত-বিরতির জন্য। অ্যামেরিকার মতো তারাও বলেছে, যুদ্ধবিরতি না হোক, কৌশলগত বিরতি দিক ইসরায়েল। যাতে ওই সময়ে বেসামরিক মানুষ অন্তত ঘর থেকে পালাতে পারেন। ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা কৌশলগত বিরতি দিচ্ছে।
ছবি: Jack Guez/AFP
ইটালির হাসপাতাল জাহাজ
ইটালি গাজার কাছে সমুদ্রে একটি হাসপাতালের পরিকাঠামো যুক্ত জাহাজ পাঠিয়েছে। আহত বেসামিরক ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য ওই জাহাজ পাঠানো হয়েছে।
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
ইসরায়েলে ব্লিংকেন
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বৃহস্পতিবার তেল আভিভে পৌঁছেছেন। তিনি ইসরায়েলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন।
ব্লিংকেন বলেছেন, যুদ্ধবিরতির মেয়াদ যাতে বাড়ে তিনি সেই চেষ্টা করবেন।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস লড়াই শুরুর পর এই নিয়ে তৃতীয়বার ইসরায়েল গেলেন ব্লিংকেন।
চীনের বক্তব্য
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন, ''ইসরায়েল-হামাস সংঘাত দেখিয়ে দিচ্ছে, ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রও জরুরি।''
তিনি বলেছেন, ''দুই রাষ্ট্র নীতি দিয়েই সমস্যার সমাধান হতে পারে। না হলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল পরিস্থিতি উত্তপ্ত ও টালমাটাল থাকবে।''
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার যত চেষ্টা
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা চালিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷ কিন্তু এসেছে কি শান্তি?
জাতিসংঘ রেজ্যুলেশন ১৯৬৭
১৯৬৭ সালে ছয়দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা দখল করে ইসরায়েল৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সে বছরের ২২ নভেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘রেজ্যুলেশন ২৪২’ নামে একটি প্রস্তাব পাস হয়৷ প্রস্তাবে দখলকৃত ফিলিস্তিনি এলাকা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/Keystone
ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি ১৯৭৮
মিশর ও সিরিয়ার নেতৃত্বে আরব রাষ্ট্রগুলো ১৯৭৩ সালে আবারো ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়৷ এ যুদ্ধের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে বিশ্ব নেতারা৷ তাদের চেষ্টায় ১৯৭৮ সালে ১২ দিন আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবকাশ যাপন কেন্দ্র ক্যাম্প ডেভিডে এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়৷ এ চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির ভিত হিসিবে বিবেচনা করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Daugherty
মাদ্রিদ কনফারেন্স ১৯৯১
ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিষয়ে ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেতৃত্বে স্পেনের মাদ্রিদে এ কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে আরো অংশ নেয় ইসরায়েল, জর্ডান, লেবানান, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন৷ এ কনফারেন্সের তাৎক্ষণিক কোন ফলাফল আসেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Hollander
অসলো অ্যাকর্ড ১৯৯৩
১৯৯৩ সালে নরওয়ের অসলোতে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি আলোচনায় বসে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন৷ আলোচনার পরবর্তী ধাপে এ দু’দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যা অসলো চুক্তি নামে পরিচিত৷ চুক্তিতে বলা হয় যে, পশ্চিম তীর থেকে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করবে ইসরায়েল৷ পাঁচ বছরের জন্য ফিলিস্তিনকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের অনুমতিও দেয় এ চুক্তি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Sachs
আরব পিস ইনিশিয়েটিভ ২০০২
২০০২ সালে আরব লিগের নেতারা লেবাননের বৈরুতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি পরিকল্পনার একটি প্রস্তাব পাস করেন৷ প্রস্তাবনায় ইসরায়েলকে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ চলাকালীন দখলকৃত সব জায়গা ত্যাগ করতে বলা হয়, যেন পশ্চিম তীরে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে তোলা যায়৷ বিনিময়ে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/C. Kealy
রোডম্যাপ ২০০৩
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া জাতিসংঘের সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির রোডম্যাপ নামে পরিকল্পনার প্রস্তাব দেয়৷ ২০০৫ সালের মধ্যে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল দুইটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয় এই রোডম্যাপে৷
ছবি: Getty Iamges/AFP/J. Aruri
সংঘর্ষ, অস্ত্র বিরতির চেষ্টা
২০১২ সালের শেষ দিকে গাজায় দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়তে থাকে৷ এ সময় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি অস্ত্র বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ ২০১৪ সালে ইসরায়েলি এক তরুণ নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনে সামরিক অভিযান চালালে পরিস্থিতি আবারো খারাপ হতে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্যারিস সম্মেলন ২০১৭
২০১৭ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন বিষয়ে আলোচনা করতে ৭০টি দেশের প্রতিনিধিরা প্যারিসে একত্রিত হয়৷ তবে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের কোনো প্রতিনিধিই এ আলোচনায় অংশ নেয়নি৷
ছবি: Reuters/T. Samson
ট্রাম্পের শান্তি আলোচনা
প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়ে শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এতে বলা হয় পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন বন্ধ রাখবে ইসরায়েল, তবে ইতোমধ্যে অধিকৃত সকল স্থাপনায় তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে৷ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিন৷
ছবি: Reuters/M. Salem
9 ছবি1 | 9
ওয়েন্ট ব্যাংকে দুই অপ্রাপ্তবয়স্কের মৃত্যু
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, ইসরায়েলের সেনা জেনিন ত্রাণশিবির আক্রমণ করার সময় একজন আট ও একজন ১৫ বছর বয়সিকে মেরেছে।
ইসরায়েলের সেনা জানিয়েছে, তাদের দিকে যারা বিস্ফোরক ছুড়ছিল, তাদেরই গুলি করা হয়েছে। তবে তারা এটা জানায়নি, ওই দুইজনের বিষয়ে তারা এই মন্তব্য করেছে কিনা।