বুধবার ভোরে ইসরায়েলের বোমা হামলায় গাজার একটি স্কুল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ স্কুল ভবনটিতে নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে আসা ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিয়েছিল৷ অস্থায়ী এ আশ্রয় শিবিরে বোমা হামলা চালানোর আগে ইসরায়েলি পদাতিক বাহিনী অনেকক্ষণ ধরে সে এলাকায় কামানের গোলা ছোড়ে৷ তারপর বোমার আঘাতে ধ্বংস করা হয় স্কুলটি৷ এ হামলায় অন্তত ২০ জন মারা গেছে৷
ইসরায়েলের অভিযোগ, গাজার স্কুলগুলোকে হামাস রকেট রাখার গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছে৷ এ সন্দেহে গত কয়েকদিনে কয়েকটি স্কুলে বোমা হামলা চালানো হলো৷ বার্তা সংস্থাগুলোর খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার জাবালিয়ার এক স্কুল বোমা হামলায় ধসে পড়ায় ২৮ জন নিহত হয়৷ বুধবার আবার গাজার একটি স্কুলে হামলা৷ ইসরায়েল আর হামাসের চলমান যুদ্ধে আশ্রয় শিবিরগুলোতেও ফিলিস্তিনিদের ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই৷
এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন আরো প্রকট হয়ে উঠেছে৷ বুধবার যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য প্যালেস্টাইন লিবারেশন ফোর্স, অর্থাৎ পিএলও এবং ইসলামিক জিহাদের শীর্ষ নেতাদের কায়রোয় যাওয়ার কথা৷ অবশ্য তাঁদের এ সফরের আগেই যু্দ্ধবিরতি প্রস্তাবের সাফল্য নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে৷ মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানান, বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে৷ টেলিফোনে কথা বলার সময় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবকে সফল করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন কেরি৷ নেতানিয়াহুর শর্ত – যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে হামাসের সুড়ঙ্গ থেকে ইসরায়েলকে নিজেদের নাগরিকদের রক্ষা করার অনুমতি থাকতে হবে৷
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ৷ পরিসংখ্যান বলছে, নিহতদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশই শিশু ও নারী৷ বোমার আঘাতে প্রাণ হারানো শিশুরা হয়ত যুদ্ধ কি তাই জানে না৷ গাজার শিশুদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Reutersইসরায়েলি বিমান হামলায় বিধ্বস্ত একটি গাড়ি পরীক্ষা করে দেখছে এক ফিলিস্তিনি শিশু৷ ছবিটি গত ১৪ জুলাই তোলা৷ বিমান হামলায় গাজায় নিহতদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশই নারী ও শিশু৷
ছবি: Mohammed Abed/AFP/Getty Imagesইসরায়েলের বিমান হামলা থেকে বাঁচতে পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটছেন ফিলিস্তিনিরা৷ তবে গাজায় তাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় নেই বললেই চলে৷ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা মনে করেন, ইসরায়েলের হামলা সহসা বন্ধের কোনো লক্ষণ নেই৷
ছবি: Reutersইসরায়েলি হামলায় আহত ফিলিস্তিনি এই ছেলেটি গাজার দক্ষিণাঞ্চলে মিশর সীমান্তে অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে মিশরে ঢোকার জন্য অপেক্ষা করছে৷ আহতদের চিকিৎসার সুবিধার্থে মিশর রাফা সীমান্ত খুলে দেয় ১০ জুলাই৷
ছবি: Said Khatib/AFP/Getty Imagesবাড়িতে যে-কোনো মুহূর্তে পড়তে পারে ইসরায়েলের বোমা৷ তাই ঘরবাড়ি ছেড়ে এই শিশুরা আশ্রয় নিয়েছে গাজায় অবস্থিত জাতিসংঘের স্কুলে৷ এখানে যে বোমা পড়বে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ তবে আশঙ্কা কম৷
ছবি: Mahmud Hams/AFP/Getty Imagesবাড়ির উপরে উড়ছে ইসরায়েলি ড্রোন৷ আর সেটাই দেখছে এই শিশুটি৷
ছবি: Thomas Coex/AFP/Getty Imagesগাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলের বিমান হামলায় প্রাণ হারায় চার বছরের শিশু ইয়াসমিন৷ ছবিটি ১০ জুলাই তার জানাজার সময় তোলা৷
ছবি: Reutersগাজার শিশুরা জানে না তাদের অপরাধ কি? কেনই বা বোমা হামলার নির্মম শিকার তারা? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটারেও এমন প্রশ্ন করেছেন অনেকে৷ গত ১৪ জুলাই তোলা ছবিতে চাচার মৃত্যুতে কাঁদছে দুই শিশু৷
ছবি: Mahmud Hams/AFP/Getty Imagesছবিটি ২০১২ সালের এপ্রিলে তোলা৷ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এক শিশুকে জাতিসংঘের স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে তার এক সহপাঠী৷ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আহতও হচ্ছে অসংখ্য শিশু৷ পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে তাদের৷ তবে এই শিশুটি ইসরায়েলি হামলায় দৃষ্টি হারিয়েছে কিনা জানা যায়নি৷
ছবি: Reutersইসরায়েলের বিমান হামলা থেকে বাঁচতে অনেক ফিলিস্তিনি তাদের স্ত্রী সন্তান নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করছেন৷ তবে গাজার দু’দিকে ইসরায়েল, একদিনে মিশর এবং অপর পাশে সমুদ্র৷ এই অবস্থায় নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পাওয়া দুষ্কর৷ তবুও প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা৷
ছবি: picture-alliance/dpaগাজায় ইসরায়েলের হামলা নতুন নয়৷ হামাসের রকেট ছোড়ার জবাব সেদেশ দেয় বিমান হামলার মাধ্যমে৷ আর তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাণ হারায় নারী, শিশু এবং হামাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন মানুষ৷
ছবি: Reuters
অন্যদিকে হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘ইসরায়েল মানবিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি৷ এ অঙ্গীকার অনুযায়ী তারা কাজ করে কিনা আমরা তা দেখবো৷ শিশুদের হত্যা করে যতক্ষণ পর্যন্ত ভূমি দখল চালানো হবে ততক্ষণ আমরা যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেব না৷''
এসিবি/জেডএইচ (এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)