গাজায় একটি হাসপাতালে ভয়াবহ বিস্ফোরণে কয়েকশ মানুষ মারা গেছেন। এই হামলার দায় নেয়নি কোনো পক্ষই।
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা এই আক্রমণ করেনি। ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসীদের রকেট হাসপাতালে ভেঙে পড়েছে। আর হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েল হাসপাতালে বিমান হামলা চালিয়েছে। তার ফলে এই ভয়ংকর অবস্থা হয়েছে।
হাসপাতাল-আক্রান্ত হওয়ার পর আরব দেশগুলি জানিয়ে দিয়েছে, তারা জর্ডনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে আর আলোচনায় বসবে না।
গাজার স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে জানানো হয়েছে, বুধবার ভোরে এই হাসপাতালটি আক্রান্ত হয়। গাজার সিভিল ডিফেন্স প্রধান প্রথমে বলেছিলেন, অন্ততপক্ষে তিনশ জন মারা গেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, অন্ততপক্ষে পাঁচশ জন মারা গেছেন। উদ্ধারকারীরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন।
এই হাসপাতালে বিস্ফোরণের আগে গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণে তিন হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি। তার আগে হামাসের আক্রমণে ইসরায়েলে এক হাজার তিনশ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। দুইশ মানুষকে হামাস পণবন্দি করে নিয়ে গিয়েছে।
হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ চালানোর পর গত তিনদিন গাজা স্ট্রিপে লাগাতার বিমান হামলা চালচ্ছে ইসরায়েল। কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। প্রতিটি বাড়ি জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ছবি: Belal Al SabbaghAFP/Getty Images
হামাসের আক্রমণ
গত শনিবার ইসরায়েলে আক্রমণ চালিয়েছিল হামাস। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অ্যামেরিকা হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে মনে করে। হামাসের সেই আক্রমণের পর পাল্টা যুদ্ধে নেমেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, হামাসকে এমন শিক্ষা দেওয়া হবে যে গাজা স্ট্রিপের পরবর্তী প্রজন্মও ভয়াবহতার কথা মনে রাখবে।
ছবি: Mohammed Talatene/dpa/picture alliance
গাজার অবস্থা
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী এখনো পর্যন্ত গাজা স্ট্রিপের ভিতর অন্তত ৮০০টি বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্ত পাঁচ হাজার বাড়ি। প্রায় চার লাখ মানুষ জল পর্যন্ত পাচ্ছেন না। পানীয় জল পৌঁছাচ্ছে না তাদের কাছে।
ছবি: Fatima Shbair/AP/picture alliance
প্রাণের সন্ধান
ইসরায়েলের বিমানহামলায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে এই ভবন। উদ্ধারকর্মীরা সেখানেই প্রাণের সন্ধানে নেমেছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে মানুষ বেঁচে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ছবি: Mahmud Hams/AFP/Getty Images
শিশুর মৃতদেহ
কোলের শিশুকে কবর দিতে নিয়ে যাচ্ছেন তার আত্মীয়রা। গত তিনদিনে গাজায় অন্তত ১৪০টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। একশর বেশি নারী মারা গেছেন।
ছবি: Mahmud Hams/AFP/Getty Images
গৃহহীন মানুষ
গাজা সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ। সেখান থেকে পালানোর পথ নেই। ইসরায়েলের আক্রমণে এখনো পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৮৭ হাজার মানুষ গৃহহীন। এক লাখ ৩৭ হাজার মানুষ জাতিসংঘের বিভিন্ন স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। মিশরের দিকের সীমান্তও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ছবি: Saleh Salem/REUTERS
ইসরায়েল-গাজা সীমান্ত
ইসরায়েল-গাজা সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরায় ইসরায়েলের সেনা। গোটা সীমান্তে কাঁটাতার বসানো। সেই কাঁটাতার উপেক্ষা করেই শনিবার ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল হামাস। তারপরেই গাজায় আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েল।
ছবি: Oren Ziv/AP/picture alliance
সীমান্তে সেনা
ইসরায়েল-গাজা সীমান্তে ইসরায়েল প্রায় তিন লাখ সেনা মজুত করেছে। সঙ্গে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র এবং যুদ্ধের সাজোয়া গাড়ি। গাজার মানুষের ধারণা, যে কোনো সময় ইসরায়েলের সেনা গাজা স্ট্রিপের ভিতরে ঢুকে পড়তে পারে।
ছবি: Ilia Yefimovich/dpa/picture alliance
হাসপাতালেও বোমা
মানবাধিকার কর্মীদের বক্তব্য, গাজা স্ট্রিপে হাসপাতাল লক্ষ্য করেও বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে। হাসপাতালে ওষুধের অভাবে, খাবারের অভাবে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে ছোট ছোট শিশুরা। একে যুদ্ধপরাধ বলে মনে করছে কোনো কোনো সংগঠন।
ছবি: Mahmud Hams/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক বিবিসি-কে জানিয়েছেন, সেখানে চার হাজার ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন। সবাই এখন ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া মানুষকে উদ্ধারের চেষ্টা করছে। আর এই আল আহলি হাসপাতালটি পুরোপুরি চার্চের অনুদানে চলে।
গুতেরেসের নিন্দা
জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল গুতেরেস বলেছেন, ''গাজার হাসপাতালে কয়েকশ ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষের মৃত্যুতে আমি বিপর্যস্ত। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। হাসপাতাল ও তার কর্মীরা আন্তর্জাতিক আইনে সুরক্ষিত।''
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের হামলায় রীতিমতো চমকে গেছে ইসরায়েল৷ ক্ষয়ক্ষতির ধাক্কা ইসরায়েলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে আগের ধারণাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে৷
ছবি: Jack Guez/AFP/Getty Images
সংগীত উৎসবে হামলা
গাজার কাছেই সুপারনোভা মিউজিক ফেস্টিভালে হামলা করে হামাস৷ শনিবার হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের সীমান্ত ভেদ করে ঢুকে পড়ে৷ তাদের জন্য এই উৎসবটি ছিল সহজ টার্গেট৷ কমপক্ষে ২৬০ জন মারা গেছেন সেখানে৷ অনেককে বন্দি করা হয়েছে৷ পরে ইসরায়েলি সেনারা জায়গাটি সুরক্ষিত করে৷
ছবি: Jack Guez/AFP/Getty Images
হামাসকে হটানো
ইসরায়েলি সেনারা নিয়মিত ফিলিস্তিনি এলাকায় অভিযান চালায়৷ এসব অভিযানে প্রতিপক্ষের যোদ্ধারা এবং সাধারণ মানুষ মারা যান৷ খুব কমই তাদের একই পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে৷ কর্তৃপক্ষকে তাই নিজেদের শহরগুলোকে সুরক্ষিত করার ব্যাপারে তেমন প্রস্তুত মনে হয়নি৷ ইসরায়েলি সেনা যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে৷
ছবি: Thomas Coex/AFP/Getty Images
ইসরায়েলি কবর
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধে সাধারণত ফিলিস্তিনে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হয়৷ গেল সপ্তাহান্তে হামাসের হামলা সেই সংখ্যাকে বদলে দেয়৷ মৃতদের মধ্যে ইসরায়েলি সাধারণ মানুষই বেশি ছিলেন৷ ২০০০ সালে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময়ও একই পরিস্থিতি ছিল৷ ইহুদিদের যেহেতু খুব দ্রুত কবর দেবার নিয়ম, তাই ঘটনার পরপরই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়৷
ছবি: Maya Alleruzzo/AP/picture alliance
রক্তদান
ইসরায়েলি ইহুদিদের একটা অংশ ধর্মীয় কর্মে যুক্ত৷ তাদের জন্য সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া বাধ্যতামূলক নয়৷ তাদের অনেকেই হাসপাতালগুলোতে রক্ত দিতে চলে এসেছেন৷ হাসপাতালগুলোতে কয়েক হাজার আহত ইসরায়েলি ভর্তি হয়েছেন৷
ছবি: Ronen Zvulun/REUTERS
সুদূরপ্রসারী প্রভাব
হামাস ও ইসরায়েলের এই যুদ্ধের সুদূরপ্রসারী প্রভাব যে শুধু ভূরাজনৈতিকভাবে পড়ে তা নয়, ইসরায়েলে অনেক দূর দেশ থেকে মানুষ আসেন কাজ করতে৷ এদের মধ্যে রয়েছেন থাইল্যান্ডের অনেক মানুষ৷ তাদের অনেককে হামাস যোদ্ধারা মেরে ফেলেছে, বা তুলে নিয়ে গেছে৷ কারো কারো কোন খোঁজই নেই৷
ছবি: Thomas Suen/REUTERS
ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর অগ্রাধিকার
ইসরায়েলিরা একটা ট্রমার মধ্য দিয়ে গেলেও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, কেমন করে কোন সতর্কবার্তা ছাড়াই হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ করে৷ তাদের অভিযোগ, ইসরায়েলি বাহিনী দেশের মানুষকে রক্ষা করার চেয়ে ফিলিস্তিনি এলাকা ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক বিতর্কিতভাবে দখল ও সেখানে সেটেলার ইসরায়েলিদের সেবায় লেগে আছে৷
ছবি: HAZEM BADER/AFP
যুদ্ধের প্রস্তুতি
ইসরায়েলের সেনাদের জন্য এখন শোকপালনের সময় নেই৷ তারা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছেন৷ ২০০৫-এ যেই গাজা উপত্যকা ছেড়ে এসেছেন, সেখানে আবার ঢোকার প্রস্তুতি নিয়েছেন৷ দেশটির প্রধানমন্ত্রী গাজার মানুষদের এলাকা ছেড়ে যাবার আহ্বান করেছেন, যেটি আসলে তাদের জন্য অসম্ভব, কারণ সব সীমান্ত ইসরায়েল বন্ধ করে রেখেছে৷
ছবি: Jack Guez/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
ইইউ-র পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেল এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। বরেল বলেছেন, ''আবার বেসামরিক মানুষকে চরম মূল্য দিতে হলো। এই ঘটনার জন্য কারা দায়ী তা জানতে হবে এবং তাদের শাস্তি দিতে হবে।''
মাক্রোঁ বলেছেন, ''এই হামলার পিছনে কোনো অজুহাত থাকতে পারে না। ফ্রান্স এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা করছে।'' ফ্রান্সের দাবি, অবিলম্বে গাজায় মানবিক সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
বাইডেনের সফরসূচি
বাইডেন বলেছেন, ''হাসপাতালে বিস্ফোরণের ফলে আমি ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত।''
জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র জন কিরবি জানিয়েছেন, ইসরায়েলে পৌঁছাবার পর বাইডেন প্রথমে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। তারপর তিনি ইসরায়েলের ওয়ার ক্যাবিনেটের সঙ্গে মিলিত হবেন। যারা হামাসের আক্রমণের সফল মোকাবিলা করেছিলেন, এমন কিছু মানুষের সঙ্গে বাইডেন দেখা করবেন।
কিরবি জানিয়েছেন, তারপর হামাসের আক্রমণে যারা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন এমন কিছু পরিবারের সঙ্গে বাইডেন দেখা করবেন। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করার পর তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন। কিরবি জানিয়েছেন, ইসরায়েলের প্রকৃত বন্ধু হিসাবে বাইডেন কিছু কঠিন প্রশ্ন তুলবেন।