গাজা অভিযানের জন্য তৈরি ইসরায়েলের সেনা: নেতানিয়াহু
২৬ অক্টোবর ২০২৩
নেতানিয়াহু জনিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলের স্থলবাহিনী কবে আক্রমণ শুরু করবে, যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা সেই সিদ্ধান্ত নেবে।
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েলের জাতীয় টেলিভিশনে বুধবার একটি বক্তৃতা করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি জানিয়েছেন, গাজায় আক্রমণ চালানোর জন্য ইসরায়েলের স্থলবাহিনী তৈরি। কিন্তু কবে তারা সেই আক্রমণ চালাবে, সে কথা প্রকাশ্যে জানানো হবে না। রণনীতি মেনেই তা গোপন রাখা হবে।
তবে গাজায় হামাসকে লক্ষ্য করে ইসরায়েল এখনো বোমা ফেলে যাচ্ছে। সারারাত ধরে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। এবার বিমানবাহিনীর পাশাপাশি স্থলপথেও আক্রমণ সানাতে চলেছে ইসরায়েলের সেনা।
এদিকে বুধবারই জতিসংঘে ইসরায়েল-হামাস সংঘাত নিয়ে একটি আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। চীন এবং রাশিয়া বাকি সকলের সিদ্ধান্তে ভেটো প্রয়োগ করেছে। অ্যামেরিকা সেই সিদ্ধান্তপত্র তৈরি করেছিল।
অন্যদিকে রাশিয়াও একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছিল। কিন্তু অন্য কোনো দেশ তা গ্রহণ করেনি। অধিকাংশ দেশই সেই প্রস্তাবে ভোট দেয়নি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিন বলেছেন, গাজায় যদি ত্রাণ পাঠানো না যায়, তাহলে এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তার বাইরেও ছড়াবে।
ইসরায়েলি আর ফিলিস্তিনিদের এক করছে সংগীত
জার্মানির রাজধানী বার্লিনের এক সংগীত অ্যাকাডেমিতে ২৩ অক্টোবর একটি কনসার্ট হয়েছে৷ সেখানে একসঙ্গে বাজিয়েছেন ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের শিক্ষার্থীরা৷
ছবি: Stefan Maria Rother
শুরুর কথা
আর্জেন্টিনায় জন্মগ্রহণ করা ও বর্তমানে বার্লিনে বসবাসকারী কন্ডাক্টর ও পিয়ানোবাদক ডানিয়েল বারেনবোইম (ডানে) তার বন্ধু প্রয়াত ফিলিস্তিনি-অ্যামেরিকান লিটারেরি থিওরিস্ট এডওয়ার্ড সাঈদের (বামে) সঙ্গে মিলে স্পেনের সেভিয়ায় ১৯৯৯ সালে ‘ওয়েস্ট-ইস্টার্ন ডিভান অর্কেস্ট্রা’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে বার্লিনে দ্য বারেনবোইম-সাঈদ অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়৷
ছবি: Fundación Barenboim-Said
ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর প্রতিক্রিয়া
অ্যাকাডেমির ডিন মিশায়েল বারেনবোইম (ডানিয়েল বারেনবোইমের ছেলে) জানান, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে তার অ্যাকাডেমির ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীরা ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করছে৷ কিন্তু ইসরায়েলি শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, হামাসের সন্ত্রাসী হামলার পর সব পরিবর্তন হয়ে গেছে৷
ছবি: AHMAD GHARABLI/AFP
অ্যাকাডেমির উদ্যোগ
ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীরা যেন হামলা নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলে সেই বিষয়ে অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে৷ তাদের মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা দিতে হিব্রু ও আরবি ভাষায় পারদর্শী থেরাপিস্টেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
ছবি: Stefan Maria Rother
নতুন সেমিস্টারের প্রথম কনসার্ট
হামাসের হামলার কয়েকদিন পর অ্যাকাডেমিতে নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয়৷ আর প্রথম কনসার্টটি হয় ২৩ অক্টোবর৷ তার আগে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে কনসার্টে বাজানো আমাদের জন্য খুব কঠিন৷ কিন্তু এই অন্ধকারতম সময়েও আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠাতা ডানিয়েল বারেনবোইম ও এডওয়ার্ড সাঈদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবো৷’’
ছবি: Stefan Maria Rother
শান্তির বার্তা
কনসার্টের আগে এক বিবৃতিতে ডানিয়েল বারেনবোইম লিখেছেন, ‘‘আমাদের শান্তির বার্তা অবশ্যই আগের চেয়ে আরও জোরে উচ্চারণ করতে হবে৷’’ তিনি বলেন, ‘‘উভয়পক্ষকেই তাদের শত্রুদের মানুষ হিসেবে চিনতে হবে এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, তাদের ব্যথা ও কষ্টের প্রতি সহানুভূতি জানানোর চেষ্টা করতে হবে৷ ইসরায়েলিদেরও এটা মেনে নিতে হবে যে, ফিলিস্তিনের দখলদারিত্ব এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Shohat
5 ছবি1 | 5
অ্যামেরিকা যে প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল, তাতে একদিকে গাজায় মানবিক সাহায্য দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। অন্যদিকে, ইসরায়েলের সমর্থনে সেখানে বলা হয়েছিল, প্রতিরক্ষার অধিকার সকলের আছে। আর তা নিয়েই ভেটো দিয়েছে রাশিয়া এবং চীন।
অ্যামেরিকার খসড়া প্রস্তাবকে সম্পূর্ণভাবে নস্যাৎ করেছে রাশিয়া। অন্যদিকে, অ্যামেরিকা জানিয়েছে, তারা একটি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের চেষ্টা করেছিল।
ইইউ বলেছে, ইসরায়েল যেন সংঘর্ষ-বিরতি ঘোষণা করে। সেই সময় গাজায় উপযুক্ত পরিমাণে ত্রাণ পাঠানো সম্ভব হবে।
এদিকে নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্ত রক্ষীরা তাদের কাজে কোনো গাফিলতি করেছিল কি না, সে বিষয়ে এখনই তিনি কোনো আলোচনা করবেন না। বর্তমান পরিস্থিতি সামলানোর পরেই এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার যত চেষ্টা
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা চালিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷ কিন্তু এসেছে কি শান্তি?
জাতিসংঘ রেজ্যুলেশন ১৯৬৭
১৯৬৭ সালে ছয়দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা দখল করে ইসরায়েল৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সে বছরের ২২ নভেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘রেজ্যুলেশন ২৪২’ নামে একটি প্রস্তাব পাস হয়৷ প্রস্তাবে দখলকৃত ফিলিস্তিনি এলাকা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/Keystone
ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি ১৯৭৮
মিশর ও সিরিয়ার নেতৃত্বে আরব রাষ্ট্রগুলো ১৯৭৩ সালে আবারো ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়৷ এ যুদ্ধের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে বিশ্ব নেতারা৷ তাদের চেষ্টায় ১৯৭৮ সালে ১২ দিন আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবকাশ যাপন কেন্দ্র ক্যাম্প ডেভিডে এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়৷ এ চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির ভিত হিসিবে বিবেচনা করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Daugherty
মাদ্রিদ কনফারেন্স ১৯৯১
ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিষয়ে ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেতৃত্বে স্পেনের মাদ্রিদে এ কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে আরো অংশ নেয় ইসরায়েল, জর্ডান, লেবানান, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন৷ এ কনফারেন্সের তাৎক্ষণিক কোন ফলাফল আসেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Hollander
অসলো অ্যাকর্ড ১৯৯৩
১৯৯৩ সালে নরওয়ের অসলোতে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি আলোচনায় বসে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন৷ আলোচনার পরবর্তী ধাপে এ দু’দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যা অসলো চুক্তি নামে পরিচিত৷ চুক্তিতে বলা হয় যে, পশ্চিম তীর থেকে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করবে ইসরায়েল৷ পাঁচ বছরের জন্য ফিলিস্তিনকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের অনুমতিও দেয় এ চুক্তি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Sachs
আরব পিস ইনিশিয়েটিভ ২০০২
২০০২ সালে আরব লিগের নেতারা লেবাননের বৈরুতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি পরিকল্পনার একটি প্রস্তাব পাস করেন৷ প্রস্তাবনায় ইসরায়েলকে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ চলাকালীন দখলকৃত সব জায়গা ত্যাগ করতে বলা হয়, যেন পশ্চিম তীরে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে তোলা যায়৷ বিনিময়ে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/C. Kealy
রোডম্যাপ ২০০৩
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া জাতিসংঘের সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির রোডম্যাপ নামে পরিকল্পনার প্রস্তাব দেয়৷ ২০০৫ সালের মধ্যে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল দুইটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয় এই রোডম্যাপে৷
ছবি: Getty Iamges/AFP/J. Aruri
সংঘর্ষ, অস্ত্র বিরতির চেষ্টা
২০১২ সালের শেষ দিকে গাজায় দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়তে থাকে৷ এ সময় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি অস্ত্র বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ ২০১৪ সালে ইসরায়েলি এক তরুণ নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনে সামরিক অভিযান চালালে পরিস্থিতি আবারো খারাপ হতে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্যারিস সম্মেলন ২০১৭
২০১৭ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন বিষয়ে আলোচনা করতে ৭০টি দেশের প্রতিনিধিরা প্যারিসে একত্রিত হয়৷ তবে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের কোনো প্রতিনিধিই এ আলোচনায় অংশ নেয়নি৷
ছবি: Reuters/T. Samson
ট্রাম্পের শান্তি আলোচনা
প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়ে শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এতে বলা হয় পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন বন্ধ রাখবে ইসরায়েল, তবে ইতোমধ্যে অধিকৃত সকল স্থাপনায় তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে৷ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিন৷
ছবি: Reuters/M. Salem
9 ছবি1 | 9
বস্তুত, ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর নেতানিয়াহুর সরকারকে দেশের ভিতর প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের সুরক্ষার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করবেন।
এদিকে অ্যামেরিকার হাউসের নতুন স্পিকার মাইক জনসন জানিয়েছেন, তার প্রথম কাজ হচ্ছে, ইসরায়েলকে সাহায্য সংক্রান্ত বিলটি পাশ করানো।