গাজা উপত্যকায় বিক্ষোভরত ফিলিস্তিনিদের ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করা হয়েছে বলে মনে করে জাতিসংঘ৷ ইসরায়েলের এমন আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ভোট দিয়েছে সংস্থাটির সাধারণ পরিষদ৷
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্র হামাসের ওপর দায় চাপাতে চাইলেও জাতিসংঘের ভোটে তা বাতিল হয়েছে৷ আলজেরিয়া, তুরস্ক এবং ফিলিস্তিনের উত্থাপন করা এই প্রস্তাবে ১৯৩ সদস্যের মধ্যে সাড়া দিয়েছে ১২০টি দেশ৷ বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ৮টি দেশ, ভোট দেয়ায় বিরত ছিল ৪৫ সদস্য৷
এ মাসের শুরুতেই ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে একই ধরনের একটি প্রস্তাবে ভেটো দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ সাধারণ পরিষদের এই নিন্দা প্রস্তাবকে নিরাপত্তা পরিষদে ভেটোর জবাব হিসেবে দেখা হচ্ছে৷
বিপক্ষে ভোটে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সাথে যোগ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া মার্শাল আইল্যান্ডস, মাইক্রোনেশিয়া, নাউড়ু, টোগো এবং সলোমন আইল্যান্ডস৷ ভোটদানে বিরত থাকে জার্মানি৷
গাজা উপত্যকায় কেন সংঘাত?
এই সংঘাত কয়েক শতাব্দী প্রাচীন৷ কিন্তু এ বছর কিছু ঘটনা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার সংঘাতকে আরো উস্কে দিয়েছে, যার ফলে গাজা উপত্যকায় উত্তাপ বিরাজ করছে৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
ঝরলো প্রাণ আরো তিন ফিলিস্তিনির
গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে আরো তিন জন ফিলিস্তিন নিহত হয়েছেন৷ ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এটিই সংঘাতের সর্বশেষ ঘটনা৷ গত মার্চ থেকেই ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের ওপর বার বার গুলি চালিয়েছে, যার কঠোর সমালোচনা করে আসছে জাতিসংঘ৷
ছবি: Imago/Zuma/A. Amra
ফেব্রুয়ারি ২০১৮: সীমান্তে বোমা
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সীমান্তে বোমা বিস্ফোরণে চার ইসরায়েলি সেনা আহত হন৷ইসরায়েল ফিলিস্তিনের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হামাসকে এর জন্য দায়ী করে গাজায় হামাসকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
জাতিসংঘের ত্রাণকার্য
জাতিসংঘ গাজা উপত্যকার অর্ধেকেরও বেশি মানুষের জন্য ত্রাণ সরবরাহ করে৷ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তারা সতর্ক করে যে, গাজায় দুর্ভিক্ষ হানা দিতে পারে৷ যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থায় তাদের প্রদেয় সংস্থান বন্ধ করে দেয়, যেন সমস্যা সমাধানে ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করে৷ পরে ত্রাণ সংস্থাটি বলে, জুলাই পর্যন্ত রসদ আছে তাদের কাছে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/S. Jarar'Ah
ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রীর সফর
পশ্চিমতীর ভিত্তিক ফাতাহ গ্রুপের ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী রামি হামদাল্লাহ’র নেতৃত্বে একটি দল গত ১৩ মার্চ গাজা সফর করেন৷ গাজায় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য হামাসকে দুষছে ফিলিস্তিনি সরকার৷ জবাবে হামাস বলেছে, এ ধরনের মন্তব্য গাজা ও পশ্চিমতীরের মধ্যে একতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
ইসরায়েলে আবারো বিমান হামলা
১৮ মার্চ গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে বোমা বিস্ফোরণে কেউ আহত না হলেও ইসরায়েল এই সুযোগে আরেক দফা বোমা হামলা চালায় গাজায়৷ হামাসের সুড়ঙ্গগুলোকে ধ্বংস করাই এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল৷ বোমা হামলার কারণে বাস্তুচ্যুত অনেক ফিলিস্তিনি ঘটনার পরের কয়েকদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত সীমানা দিয়ে ইসরায়েলে চলে যান৷
ছবি: Reuters/I. A. Mustafa
সীমান্তে বিক্ষোভের ঘোষণা
গাজা উপত্যকায় একটি শান্তিপূর্ণ মিছিলের ঘোষণা দেন ফিলিস্তিনিরা৷ তাঁরা পালিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমিতে ফিরে আসার অধিকার দেয়ার দাবি জানান৷ ইসরায়েল সেই দাবি মেনে নেয়নি৷
ইসরায়েল দাবি মেনে না নেয়ায় গত ৩০ মার্চ ল্যান্ড ডে’কে সামনে রেখে সীমান্তের দিকে প্রায় ত্রিশ হাজার ফিলিস্তিনি এগোতে থাকেন৷ কেউ কেউ সীমান্ত বেড়ার দিকে এগিয়ে যান৷ ইসরায়েলের সীমান্তরক্ষীরা তাঁদের ওপর গুলিবর্ষণ করলে ১৬ জন নিহত হন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Hams
আবারো সীমান্তে প্রতিবাদ
৬ এপ্রিল পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে এক সাংবাদিক নিহত হন৷ সেদিন মোট নয় ফিলিস্তিনি গুলিবিদ্ধ হন৷
ছবি: Reuters/I. A. Mustafa
আমরা আঘাত করবো: নেতানিয়াহু
গত ৯ এপ্রিল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, ‘‘আমাদের পরিষ্কার কথা, কেউ আমাদের আক্রমণ করবে মনে হলে, আমরা তা মেনে নেবো না৷ আমরা তাদের আঘাত করবো৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/G. Tibbon
তৃতীয়বারের মতো প্রতিবাদ
১৩ এপ্রিল তৃতীয়বারের মতো প্রতিবাদে সীমান্তে জড়ো হন ফিলিস্তিনিরা৷ ৩০ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৪৫ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Salem
ইসরায়েলি সেনাদের গুলি
ফিলিস্তিনিদের ইট পাটকেলের জবাব টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ছাড়াও গুলিবর্ষণ করে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা৷ এ নিয়ে জাতিসংঘ ব্যাপক সমালোচনা করলেও তা কানে তোলেনি তারা৷ নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি তোলা হলেও কাজ হয়নি৷
ছবি: Reuters/I.A. Mustafa
11 ছবি1 | 11
মৃত্যুর মিছিল
মার্চের শেষে শুরু হওয়া বিক্ষোভে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ১২০ ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন চার হাজারেরও বেশি৷ ইসরায়েল অবশ্য বিক্ষোভ আর সহিংসতার জন্য হামাসকেই দায়ী করে আসছে৷ তবে এই বিক্ষোভে হামলায় কোনো ইসরায়েলের নাগরিক নিহত হননি৷
সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে ইসরায়েল-দখলীকৃত ফিলিস্তিনে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বানও জানানো হয়েছে৷
গত মাসে ইস্তানবুলে ইসলামী দেশগুলোর সংগঠন ওআইসির বৈঠকে একটি আন্তর্জাতিক সুরক্ষা বাহিনী গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়৷ তবে এমন বাহিনী গঠনে প্রয়োজন নিরাপত্তা পরিষদের, যেখানে এরই মধ্যে ভেটো দিয়ে রেখেছে ইসরায়েলের মিত্রদেশ যুক্তরাষ্ট্র৷
প্রতিক্রিয়া
সাধারণ পরিষদে ভোটের ঠিক আগে এক বক্তব্যে জাতিসংঘে ইসরায়েলের প্রতিনিধি ড্যানি ডেন বলেন, এই প্রস্তাবে সমর্থনের মানে জঙ্গি সংগঠনগুলোকে ‘উৎসাহিত' করা এবং হামাসকে আরো ‘শক্তিশালী' করে তোলা৷
যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাব সংশোধনের দাবি তোলে৷ সহিংসতা উসকে দেয়ায় হামাসকে দায়ী করে দেশটি৷ যুক্তরাষ্ট্রের দূত নিকি হ্যালি প্রস্তাবটিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পক্ষপাত বলেও মন্তব্য করেন৷
তিনি বলেন, ‘‘কারো কারো জন্য ইসরায়লকে আক্রমণ করা একটি রাজনৈতিক খেলায় পরিণত হয়েছে৷ আমি আশা করি, এই এক-পাক্ষিক প্রস্তাবের পক্ষে যাঁরা এগিয়ে আসছেন, তাঁরা প্রেসিডেন্ট আব্বাসকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতেও ভূমিকা রাখবেন৷''
ফিলিস্তিনের কর্মকর্তা অবশ্য অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, মে মাসে জেরুসালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে তারা আর ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিরপেক্ষ আলোচনাকারী হিসেবে বিবেচনা করেন না৷
সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব মানতে বাধ্য নয় কোনো পক্ষই৷ তবে কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে৷