ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর দাবি, গাজা এখন উত্তর গাজা ও দক্ষিণ গাজা এই দুই ভাগে বিভক্ত। রোববার উত্তর গাজায় ব্যাপক আক্রমণ ইসরায়েলের।
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সের(আইডিএফ) মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, বেসামরিক মানুষ এখনো দক্ষিণ গাজায় যেতে পারছেন এবং তাদের সেখানেই চলে যাওয়া উচিত।
গাজায় টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন। ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এই অবস্থা হয়েছে বলে ফিলিস্তিনি টেলিকম সংস্থা প্যালটেল জানিয়েছে।
গাজায় মৃতের সংখ্যা সমানে বাড়ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আবার জানিয়ে দিয়েছেন, পণবন্দিদের ফেরত না দিলে যুদ্ধবিরতি হবে না। নেতানিয়াহু বলেছেন, ''যতক্ষণ আমরা বিজয়ী না হচ্ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সামনে লড়াই করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।''
সেনার জারি করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ইসরায়েলের সেনা প্রতিটি বাড়িতে ঢুকছে। কামান ও সাঁজোয়া বুলডোজার সবকিছু গুঁড়িয়ে দিচ্ছে।
গাজার বাসিন্দা আবু হাসেরিয়া জানিয়েছেন, ''ইসরায়েলের আক্রমণ দেখে মনে হচ্ছে যেন প্রবল ভূমিকম্প হচ্ছে। তারা পুরো এলাকা ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে।''
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার যত চেষ্টা
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা চালিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷ কিন্তু এসেছে কি শান্তি?
জাতিসংঘ রেজ্যুলেশন ১৯৬৭
১৯৬৭ সালে ছয়দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা দখল করে ইসরায়েল৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সে বছরের ২২ নভেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘রেজ্যুলেশন ২৪২’ নামে একটি প্রস্তাব পাস হয়৷ প্রস্তাবে দখলকৃত ফিলিস্তিনি এলাকা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/Keystone
ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি ১৯৭৮
মিশর ও সিরিয়ার নেতৃত্বে আরব রাষ্ট্রগুলো ১৯৭৩ সালে আবারো ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়৷ এ যুদ্ধের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে বিশ্ব নেতারা৷ তাদের চেষ্টায় ১৯৭৮ সালে ১২ দিন আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবকাশ যাপন কেন্দ্র ক্যাম্প ডেভিডে এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়৷ এ চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির ভিত হিসিবে বিবেচনা করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Daugherty
মাদ্রিদ কনফারেন্স ১৯৯১
ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিষয়ে ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেতৃত্বে স্পেনের মাদ্রিদে এ কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে আরো অংশ নেয় ইসরায়েল, জর্ডান, লেবানান, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন৷ এ কনফারেন্সের তাৎক্ষণিক কোন ফলাফল আসেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Hollander
অসলো অ্যাকর্ড ১৯৯৩
১৯৯৩ সালে নরওয়ের অসলোতে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি আলোচনায় বসে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন৷ আলোচনার পরবর্তী ধাপে এ দু’দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যা অসলো চুক্তি নামে পরিচিত৷ চুক্তিতে বলা হয় যে, পশ্চিম তীর থেকে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করবে ইসরায়েল৷ পাঁচ বছরের জন্য ফিলিস্তিনকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের অনুমতিও দেয় এ চুক্তি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Sachs
আরব পিস ইনিশিয়েটিভ ২০০২
২০০২ সালে আরব লিগের নেতারা লেবাননের বৈরুতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি পরিকল্পনার একটি প্রস্তাব পাস করেন৷ প্রস্তাবনায় ইসরায়েলকে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ চলাকালীন দখলকৃত সব জায়গা ত্যাগ করতে বলা হয়, যেন পশ্চিম তীরে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে তোলা যায়৷ বিনিময়ে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/C. Kealy
রোডম্যাপ ২০০৩
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া জাতিসংঘের সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির রোডম্যাপ নামে পরিকল্পনার প্রস্তাব দেয়৷ ২০০৫ সালের মধ্যে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল দুইটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয় এই রোডম্যাপে৷
ছবি: Getty Iamges/AFP/J. Aruri
সংঘর্ষ, অস্ত্র বিরতির চেষ্টা
২০১২ সালের শেষ দিকে গাজায় দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়তে থাকে৷ এ সময় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি অস্ত্র বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ ২০১৪ সালে ইসরায়েলি এক তরুণ নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনে সামরিক অভিযান চালালে পরিস্থিতি আবারো খারাপ হতে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্যারিস সম্মেলন ২০১৭
২০১৭ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন বিষয়ে আলোচনা করতে ৭০টি দেশের প্রতিনিধিরা প্যারিসে একত্রিত হয়৷ তবে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের কোনো প্রতিনিধিই এ আলোচনায় অংশ নেয়নি৷
ছবি: Reuters/T. Samson
ট্রাম্পের শান্তি আলোচনা
প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়ে শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এতে বলা হয় পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন বন্ধ রাখবে ইসরায়েল, তবে ইতোমধ্যে অধিকৃত সকল স্থাপনায় তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে৷ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিন৷
ছবি: Reuters/M. Salem
9 ছবি1 | 9
ব্লিংকেনের সফর
এরই মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন প্রথমে ওয়েস্ট ব্যাংক ও পরে ইরাক যান। রোববার সন্ধ্যায় তিনি ইরাকে পৌঁছান। এই সফরের বিষয়ে আগে থেকে জানানো হয়নি। তিনি ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আল-সুদানির সঙ্গে কথা বলেন।
ব্লিংকেন বলেছেন, গাজার সংঘাত যাতে এই এলাকার অন্যত্র ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য অ্যামেরিকা চেষ্টা করছে। তিনি জানিয়েছেন, গাজায় যে পরিমাণ ত্রাণ পাঠানো হয়েছে, তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম।
ব্লিংকেন জানিয়েছেন, হামাস যাতে পণবন্দিদের ছেড়ে দেয়, তার উপর অ্যামেরিকা নজর রেখেছে।
ব্লিংকেনের মধ্যপ্রাচ্য সফরের আগে ইরানের মদতপুষ্ট হেজবোল্লাহ জানিয়ে দিয়েছিল, ব্লিকেনের সফরের ফলে সংঘাত আরো তীব্র হবে।
বিশ্বের জ্বালানি বাজারে ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের প্রভাব
01:12
ইসরায়েলের মন্ত্রী বরখাস্ত
ইসরায়েলের মন্ত্রী ইলিয়াহু বলেছিলেন, ''গাজায় পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার করা হোক।'' তারপরই প্রধানমন্ত্রীর অফিস জানিয়েছে, ''ইলিয়াহুকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিবৃতি, বাস্তবসম্মত নয়। আন্তর্জাতিক আইন মেনে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আক্রমণ করছে। নিরাপরাধরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেটাও তারা দেখছে।''
তুরস্কে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ
তুরস্কে ফিলিস্তিনপন্থিরা একটি বিমানঘাঁটিতে ঢোকার চেষ্টা করে। এই বিমানঘাঁটিতে মার্কিন সেনা আছে। তুরস্কের পুলিশের ব্যারিকেড সরিয়ে কয়েকশ বিক্ষোভকারী এগোতে থাকে।
তখন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্য হয়। তাদের উপর জলকামানও ব্যবহার করা হয়।