গাজায় ইসরায়েলের হামলা নিয়ে দেশে দেশে প্রতিবাদ চলছে৷ এবার হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা৷ বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরাও যোগ দিয়েছেন এই উদ্যোগে৷
বিজ্ঞাপন
ফেসবুকে অনেকেই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে গাজা-র প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন৷ সবাই নিজেদের নাম এবং কোন দেশের নাগরিক বা কোথায় আছেন সেই স্থানটি উল্লেখ করে স্ট্যাটাসে লিখছেন #supportgaza অথবা #FreePalestine অথবা #standwiththepeacefulinhabitantsofgaza৷
বাংলাদেশের সংস্কৃতি কর্মী আনুশেহ আনাদিল তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘‘আমি বাংলাদেশের আনুশেহ আনাদিল৷ আমি গাজাকে সমর্থন করছি৷''
আলোচিত এক হ্যাশট্যাগের কথা
নাইজেরিয়ায় প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রীকে অপহরণের ঘটনা নিয়ে সারা বিশ্বে এখন বেশ আলোচনা হচ্ছে৷ কিন্তু শুরুতে বিষয়টা তেমন নজড় কাড়তে পারেনি৷ একটি হ্যাশট্যাগ এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে৷
ছবি: Screenshot Facebook
দুই শতাধিক ছাত্রী অপহরণ
জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারাম নাইজেরিয়ার একটি স্কুল থেকে প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রীকে অপহরণ করে৷ ঘটনা ঘটে ১৪ এপ্রিল৷ তার একদিন পর সেটা নিয়ে রিপোর্ট করে এএফপি৷ কিন্তু তখনও বিষয়টা বিশ্বের নজর কাড়তে পারেনি৷ পরে টুইটারে শুরু হয় বহুল আলোচিত #bringbackourgirls বা ‘আমাদের মেয়েদের ফিরিয়ে আনো’ প্রচারণা৷
ছবি: picture alliance/abaca
প্রচারণার যেভাবে শুরু
এর অন্যতম উদ্যোক্তা হাদিজা বালা উসমান এএফপিকে বলেন, এত বড় একটা অপহরণের ঘটনা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে না পারায় তিনি ও তাঁর ছয় বন্ধু সেটা প্রচারের উপায় খুঁজতে শুরু করেন৷ এভাবেই প্রচারণার শুরু৷
ছবি: Twitter
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সহায়তা
প্রচারণায় গতি আনতে উসমান’রা তাঁদের অনলাইন আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ওবিয়াগেলি এজেকওয়েসিলিকে যুক্ত করেন৷ তিনি বিষয়টা শেয়ার করেন তাঁর প্রায় দেড় লক্ষ টুইটার অনুসারীর সঙ্গে৷ এভাবেই অপহরণের সংবাদটি সবার আলোচনার মাঝে চলে আসে৷
ছবি: Photo by Slaven Vlasic/Getty Images
মিশেল ওবামা
হ্যাশট্যাগ প্রচারণায় যে কাজ হয়েছে এই ছবি তার প্রমাণ৷ যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা ছবিটি তুলে টুইটারে পোস্ট করেছেন৷ সঙ্গে লিখেছেন, ‘‘নাইজেরিয়ার অপহৃত ছাত্রী ও তাদের পরিবারের জন্য রইলো শুভকামনা৷’’
ছবি: Twitter
হিলারি ক্লিন্টন
সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন ছাত্রী অপহরণের ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ বলে আখ্যায়িত করেছেন৷
ছবি: Screenshot Twitter
মালালা ইউসুফজাই
হ্যাশট্যাগ প্রচারণায় যোগ দিয়ে মালালা অপহৃত ছাত্রীদের নিজের ‘বোন’ বলে সম্বোধন করেছেন৷
ছবি: Screenshot Twitter
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
অপহরণের ঘটনা সম্পর্কে ফ্রান্সের একটি টেলিভিশনকে জোলি বলেন, ‘‘আমি খুবই বিরক্ত, ক্ষিপ্ত....এরকম একটা কাজ যে কেউ করতে পারে, তা সত্যিই আমার কল্পনার বাইরে৷’’
ছবি: Reuters
অ্যান হ্যাথাওয়ে
অস্কারজয়ী অভিনেত্রী অ্যান হ্যাথাওয়ে ও তাঁর স্বামী অ্যাডাম শুলমানকে ‘আমাদের মেয়েদের ফিরিয়ে আনো’ প্রচারণার সমর্থনে আয়োজিত একটি ব়্যালিতে অংশগ্রহণ করেন৷
ছবি: Screenshot Facebook
8 ছবি1 | 8
অদিতি দে তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘‘আমি বাংলাদেশের মেয়ে অদিতি৷ আছি নিউক্যাসলে৷ গাজায় যা হচ্ছে এটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত এবং মানবতাবিরোধী৷ আমি চাই ফিলিস্তিন স্বাধীন হোক এবং আমি গাজার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি৷''
রাজীব খাজা লিখেছেন, ‘‘আমি বাংলাদেশ থেকে রাজীব খাজা৷ গাজার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি এবং ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছি৷ তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘‘আপনারাও স্ট্যাটাস প্রাইভেসি ওপেন করে এইভাবে স্ট্যাটাস দিন৷ তাহলে ট্রেন্ডিং হিসেবে এইটাই দেখানো হবে৷ শেয়ার করুন৷''
প্যালেস্টাইনের নাগরিক নূর আওয়াদ লিখেছেন,‘‘আমার নাম নূর আওয়াদ৷ আমার বাবার জন্মস্থান জেরুসালেম৷ মা জন্মেছেন ইয়াফাতে৷ আর আমার জন্ম ক্যানাডায়৷ বড় হয়েছি আবুধাবিতে৷ আমি যেখানেই থাকি না কেন আমার পাসপোর্টে একটা নীল চিহ্ন দিয়ে ভিজিটর লেখা৷ তাই ফিলিস্তিনেও আমি নিজের পরিচয়ে যেতে পারি না৷ অথচ আমি ফিলিস্তিনি, আমার জন্ম কোথায় কোথায় বড় হয়েছি এটা কোন বিষয় নয়৷ এটাই আমার মাতৃভূমি৷ তাই আমি আমার জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছি৷ আমি চাই সম্মানের সাথে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে৷ একটি স্বাধীন দেশে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে চাই৷''
আওয়াদ #Palestine ও #SupportGaza হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেছেন৷
গাজার শিশুদের কী অপরাধ?
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ৷ পরিসংখ্যান বলছে, নিহতদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশই শিশু ও নারী৷ বোমার আঘাতে প্রাণ হারানো শিশুরা হয়ত যুদ্ধ কি তাই জানে না৷ গাজার শিশুদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Reuters
ধ্বংসের মাঝে বেঁচে থাকা
ইসরায়েলি বিমান হামলায় বিধ্বস্ত একটি গাড়ি পরীক্ষা করে দেখছে এক ফিলিস্তিনি শিশু৷ ছবিটি গত ১৪ জুলাই তোলা৷ বিমান হামলায় গাজায় নিহতদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশই নারী ও শিশু৷
ছবি: Mohammed Abed/AFP/Getty Images
পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা
ইসরায়েলের বিমান হামলা থেকে বাঁচতে পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটছেন ফিলিস্তিনিরা৷ তবে গাজায় তাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় নেই বললেই চলে৷ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা মনে করেন, ইসরায়েলের হামলা সহসা বন্ধের কোনো লক্ষণ নেই৷
ছবি: Reuters
অপেক্ষা
ইসরায়েলি হামলায় আহত ফিলিস্তিনি এই ছেলেটি গাজার দক্ষিণাঞ্চলে মিশর সীমান্তে অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে মিশরে ঢোকার জন্য অপেক্ষা করছে৷ আহতদের চিকিৎসার সুবিধার্থে মিশর রাফা সীমান্ত খুলে দেয় ১০ জুলাই৷
ছবি: Said Khatib/AFP/Getty Images
স্কুলে রাতযাপন
বাড়িতে যে-কোনো মুহূর্তে পড়তে পারে ইসরায়েলের বোমা৷ তাই ঘরবাড়ি ছেড়ে এই শিশুরা আশ্রয় নিয়েছে গাজায় অবস্থিত জাতিসংঘের স্কুলে৷ এখানে যে বোমা পড়বে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ তবে আশঙ্কা কম৷
ছবি: Mahmud Hams/AFP/Getty Images
আতঙ্ক
বাড়ির উপরে উড়ছে ইসরায়েলি ড্রোন৷ আর সেটাই দেখছে এই শিশুটি৷
ছবি: Thomas Coex/AFP/Getty Images
ইয়াসমিনের জানাজা
গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলের বিমান হামলায় প্রাণ হারায় চার বছরের শিশু ইয়াসমিন৷ ছবিটি ১০ জুলাই তার জানাজার সময় তোলা৷
ছবি: Reuters
বিনা অপরাধে শাস্তি
গাজার শিশুরা জানে না তাদের অপরাধ কি? কেনই বা বোমা হামলার নির্মম শিকার তারা? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটারেও এমন প্রশ্ন করেছেন অনেকে৷ গত ১৪ জুলাই তোলা ছবিতে চাচার মৃত্যুতে কাঁদছে দুই শিশু৷
ছবি: Mahmud Hams/AFP/Getty Images
প্রতিবন্ধীদের আশ্রয়
ছবিটি ২০১২ সালের এপ্রিলে তোলা৷ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এক শিশুকে জাতিসংঘের স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে তার এক সহপাঠী৷ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আহতও হচ্ছে অসংখ্য শিশু৷ পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে তাদের৷ তবে এই শিশুটি ইসরায়েলি হামলায় দৃষ্টি হারিয়েছে কিনা জানা যায়নি৷
ছবি: Reuters
নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান
ইসরায়েলের বিমান হামলা থেকে বাঁচতে অনেক ফিলিস্তিনি তাদের স্ত্রী সন্তান নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করছেন৷ তবে গাজার দু’দিকে ইসরায়েল, একদিনে মিশর এবং অপর পাশে সমুদ্র৷ এই অবস্থায় নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পাওয়া দুষ্কর৷ তবুও প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হামলা নতুন নয়
গাজায় ইসরায়েলের হামলা নতুন নয়৷ হামাসের রকেট ছোড়ার জবাব সেদেশ দেয় বিমান হামলার মাধ্যমে৷ আর তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাণ হারায় নারী, শিশু এবং হামাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন মানুষ৷
ছবি: Reuters
10 ছবি1 | 10
এদিকে, জিয়া হাসান মনে করেন ফেসবুকের চেয়ে টুইটারে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার বেশি কার্যকর৷ নিজের ফেসবুক পাতায় তিনি লিখেছেন, ‘‘ফেসবুক এবং টুইটারের পার্থক্যটা বোঝা জরুরি৷ টুইটার জিনিসটা পাবলিক ইউজের জন্যে তৈরি করা এবং ফেসবুক জিনিসটা প্রাইভেট আলাপের জন্যে তৈরি করা৷... ফেসবুকে আপনি যেইটা লিখবেন সেইটার ভিজিবিলিটি যদি আপনি ‘পাবলিক' করেও দেন, তবুও সেইটা একটা সুনির্দিষ্ট লোকের কাছে পৌঁছাবে, যারা মূলত আপনার ফ্রেন্ড, সাবস্ক্রাইবার অথবা বেশি হইলে আপনার ফ্রেন্ড এবং সাবস্ক্রাইবারদের ফ্রেন্ড৷ ফেসবুকে যে অ্যালগরিদম ব্যবহার করে সে কারণে সেটা বাকিদের কাছে পৌঁছাবে না৷... তবে টুইটারের বিষয়টা আলাদা৷ টুইটার বিষয়টাই পাবলিক৷ এই জন্যে টুইটার ব্যবহারকারী সাংবাদিকরা হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে এই তথ্যগুলো পেতে পারে৷ আপনি যখন টুইটারে একটা হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করবেন, সেইটা যখন লক্ষ লক্ষ লোক একই ধরনের হ্যাশট্যাগ দেয়, সেইটা বিভিন্ন ধরনের ট্রেন্ডিং টুলস দিয়ে ধরা পড়বে৷ সেইটা বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকরা ব্যবহার করে৷ সেইটা রাজনীতিবিদরাও লক্ষ্য রাখেন৷''
এ কারণে জিয়া হাসান ফলদায়ক কিছু করতে সবাইকে টুইটারে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ এছাড়া তিনি আরেকটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘...আমি বলি সত্যিকারের একটা কাজ করেন। মার্কিন, ইসরায়েলি কোম্পানিদের কিছু পণ্য বর্জন দিয়ে শুরু করেন। বিশ্বাস করেন, মুসলমান বিশ্ব যদি সচেতনভাবে মার্কিন এবং ইসরায়েলি মালিকানার পণ্য বর্জন করা শুরু করে, তাহলে সত্যিই দেখবেন ইসরায়েলের উপরে কর্পোরেট বিশ্ব এমন চাপ দিছে যে, তারা প্যালেস্টাইনে গণহত্যা বন্ধ করবে৷''
সামহয়্যারইন ব্লগে মাহফুজ খান উইকিপিডিয়ার সাহায্য নিয়ে ইসরায়েলের ইতিহাস সম্পর্কে লিখেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনি ভূখন্ডকে দ্বিখন্ডিত করা সংক্রান্ত ১৮১ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয়৷ জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে দ্বিখন্ডিত করার প্রস্তাব পাস করে নিজেদের মাতৃভূমির মাত্র ৪৫ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের এবং বাকি ৫৫ শতাংশ ভূমি ইহুদীবাদীদের হাতে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়৷ এভাবে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েল স্বাধীনতা ঘোষণা করে৷''
এরপর মাহফুজ লেখেন, ‘‘বিশ্বের ৫০টি মুসলিম রাষ্ট্রের ৩০টি দেশ ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি৷ অথচ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো আজ নিশ্চুপ৷''