গাজা শহরে দু'টি বহুতলে আক্রমণ চালিয়েছে ইসরায়েলের সেনা। বহু ফিলিস্তিনি ওই দু'টি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
গাজা শহরে বহুতলে হামলাছবি: Omar Ashtawy/APA Images/ZUMA/picture alliance
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসের সামনে তারা দু'টি শর্ত দিয়েছে। এক, হামাসের সমস্ত সদস্যকে আত্মসমর্পণ করতে হবে এবং দুই, হামাসের হাতে আটক সমস্ত বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে। এই দু'ই শর্ত মানলে তবেই তারা হামলা বন্ধ করবে। বস্তুত, রোববার ইসরায়েল সেনার তরফে ফিলিস্তিনে বলা হয়েছে, সকলকে শহর ছেড়ে দক্ষিণে চলে যেতে হবে। আপাতত তারা গাজা শহরে আক্রমণ চালাবে। হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলসহ বেশ কিছু দেশ।
ইসরায়েলের এই আচরণের তীব্র নিন্দা করেছে বিশ্বের একাধিক মানবাধিকার সংগঠন। যেভাবে গাজা শহর দখল করার চেষ্টা করছে ইসরায়েল, তার প্রতিবাদ করা হয়েছে। তবে তারাও হামাসের কাছে সমস্ত বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
হামাসের বক্তব্য
হামাসের তরফ থেকেও ইসরায়েলের কাছে একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে। তারা জানিয়েছে, আপাতত যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি। তাদের কাছে আলোচনার জন্য বেশ কিছু বিষয় আছে, যা যুদ্ধবিরতি ঘোষণায় কাজে লাগতে পারে।
যুদ্ধকে লজ্জা দিতে যেখানে বেজে ওঠে সংগীতের সুর
বিধ্বস্ত গাজার বাতাসে ভেসে বেড়ায় মানুষের কান্না, যন্ত্রণার খতিয়ান৷ তার মধ্যেও বেঁচে থাকার রসদ খোঁজেন তরুণ সংগীতশিল্পীরা৷ শান্তি খোঁজেন সুর ও গানের মধ্যে দিয়ে৷ খোঁজেন আশার আলোও৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
ভয়ের বিরুদ্ধে আশার লড়াই
গাজা সিটি দখল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল৷ যুদ্ধে ভেঙেছে গাজা কলেজের ঘর৷ গুলিবিদ্ধ দেওয়াল, ভাঙা জানলা৷ মোহাম্মদ আবু মেহেদির কাছে এ আর নতুন কিছু নয়৷ তাই এমন পরিস্থিতিতেও তিন ছাত্রী ও এক ছাত্রকে তিনি শেখাতে পারেন গিটার৷ মেহেদি মনে করেন, এই দুর্বিষহ সময়ে সংগীত মানুষকে একটু হলেও মানসিক শান্তি দিতে পারে৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
হার না মানা এক শিক্ষক
২০২৪ সালের শুরুতে যুদ্ধবিধ্বস্ত দক্ষিণ গাজায় সংগীতের ক্লাস নিতে শুরু করেন আহমদ আবু আমশা৷ এডওয়ার্ড সাইদ ন্যাশনাল কনজার্ভেটরি অব মিউসিক-এর অন্যতম শিক্ষক তিনি৷ দক্ষিণ গাজার যুদ্ধের আতঙ্কগ্রস্ত ভীত কিশোর-কিশোরীদের গান ও বাজনা শেখাতে শুরু করেন আহমদ৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
‘সংগীত আমাকে আশা জোগায়’
‘‘গান-বাজনা আমাকে আশা জোগায় ও সব উৎকণ্ঠা দূর করে৷’’ জানিয়েছে ১৫ বছরের রিফান আল কাসাস৷ ন‘বছর বয়স থেকে সে আরবি বাদ্যযন্ত্র ‘উদ’ বাজাতে শিখেছে৷ তার আশা, একদিন সে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাজাবে৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
পরিস্থিতি ভয়াবহ
সংগীত শিক্ষকের তাঁবু থেকে বেরোলেই চোখের সামনে বিধ্বস্ত গাজা শহরের চিত্র৷ আপৎকালীন আশ্রয়শিবিরে শত শত মানুষ৷ একটু খাবার, ওষুধ, একফোঁটা জলের জন্য হাহাকার৷ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত৷ কেউ কেউ ক্লাসে আসতেও পারেন না৷ দৃশ্যটি ১২ আগস্টের৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
মৃত্যু ও যন্ত্রণাকে হারাতে
ধ্বংস হয়ে যাওয়া স্কুলবাড়ির সামনে নিজের বাদ্যযন্ত্র উদ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ১৮ বছরের ইউসেফ সাদ৷ স্কুলের বাকি সব বাদ্যযন্ত্রই ধ্বংস হয়ে গেছে৷ ১৮ বছরের এই তরুণের স্বপ্ন, ‘‘একদিন আমি নিশ্চয়ই শিশুদের সংগীতের পাঠ দিতে পারবো, যাতে তারা ধ্বংসলীলা সত্ত্বেও সৌন্দর্যকে বেছে নেয়৷’’
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
মঞ্চ, শ্রোতা ও দর্শক
পরিস্থিতি ভয়াবহ, কিন্তু সংগীত তো সবসময়েই শ্রোতাকে খুঁজে নেয়৷ যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরে একটি তাঁবুর মধ্যেই অনুষ্ঠানের আয়োজন৷ সে অনুষ্ঠানের শেষে প্রশংসা ও হাততালিতে ফেটে পড়ে সেই তাঁবু৷ ২০ বছরের এক তরুণ শিক্ষার্থী জানান, ‘‘সংগীতের নতুন ধরন নিয়ে জানতে আমার ভালো লাগে৷ তার চেয়েও ভালো লাগে রক (সংগীতের এক বিশেষ ঘরানা)৷’’ দৃশ্যটি ৪ আগস্টের৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
এক মুহূর্তের আনন্দ
কোনোরকমে খাড়া করা মঞ্চে শিশুদের কচি গলার গান যেন হারিয়ে দেয় প্রতিদিনের বিস্ফোরণের শব্দকে৷ দৃশ্যটি ৪ আগস্টের৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
যন্ত্রণা বনাম সংগীত
ওসামা জাহৌজ ‘নেই’ নামক একটি বাঁশি বাজান৷ মূলত আরবি, ফারসি ও তুর্কী সংগীতে এই বাঁশি বাজানো হয়৷ তার কথায়, ‘‘ বোমা বিস্ফোরণ তীব্র হলে আমি শ্বাসের ব্যায়াম করি, বা খুব নিচু লয়ে বাঁশি বাজাই৷ বাজানোর সময় মনে হয় আমি আবার স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছি৷ নেই যেন আমার যন্ত্রণাকে ধীরে ধীরে মুছে দিচ্ছে৷’’
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
8 ছবি1 | 8
হামাসের বক্তব্য, বহু ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের জেলে বন্দি। তাদের ছেড়ে দেওয়া হলে তারাও তাদের হাতে আটক বন্দিদের মুক্তি দেবে।
বস্তুত, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের এই সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। ইসরায়েলে একটি অনুষ্ঠানে আক্রমণ চালিয়েছিল হামাস। সেখানে এক হাজার ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। বহু মানুষকে বন্দি করে নিয়ে গেছিল হামাস। যার মধ্যে শিশু এবং নারীও আছে। এরপরেই ইসরায়েল পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। যাতে এখনো পর্যন্ত ৬৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে বহু নারী ও শিশু আছে।
ট্রাম্পের হুমকি
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প হামাসকে কার্যত হুমকি দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলের শর্ত মেনে নেওয়ার এটিই তাদের সামনে শেষ সুযোগ। ইসরায়েল এবং হামাসের যুদ্ধ বন্ধের জন্য ওয়াশিংটন একটি খসড়া চুক্তি তৈরি করেছে। ট্রাম্পের দাবি, হামাস ওই চুক্তি মেনে নিলেই এই লড়াই আপাতত বন্ধ হবে।
গাজায় মানবিক বিপর্যয়, অনাহারে মারা যাচ্ছে শিশুরা
05:15
This browser does not support the video element.
ট্রাম্প জানিয়েছেন, ''ইসরায়েল আমার শর্ত মেনে নিয়েছে।'' সমাজ মাধ্যমে ট্রাম্প লিখেছেন, ''হামাসকে শেষ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এরপর আর তাদের কাছে কোনো অনুরোধ করা হবে না।''
উল্লেখ্য, এর আগেও হামাসকে একই কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু শেষপর্যন্ত হামাস সব শর্ত মানতে রাজি হয়নি। হামাসের হাতে বন্দি ব্যক্তিদের পরিবার একটি সংগঠন তৈরি করেছে। ইসরায়েল সরকারের কাছে তারাও সমস্ত শর্ত মেনে নেওয়ার আর্জি জানিয়েছে।
ইসরায়েলের আক্রমণ
এদিকে গাজা শহরে লাগাতার আক্রমণ চালাচ্ছে ইসরায়েল। দুইটি বহুতলে হামলা চালিয়েছে তারা। হামাসের অভিযোগ, ওই বাড়ি দুইটিতে হামাসের সদস্যরা ছিল। কিন্তু স্থানীয় মানুষের দাবি, সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন বেসামরিক মানুষ। স্থানীয় সাংবাদিকেরাও একই দাবি করেছেন।