বাংলাদেশ গত ২৪ ঘণ্টায় একজন চিকিৎসকসহ চারজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন৷ বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত নতুন আরো ২১৯ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; মোট আক্রান্ত এখন পর্যন্ত এক হাজার ২৩১ জন৷ সর্বমোট মারা গেছেন ৫০ জন৷
আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় সাতজন সংক্রমণমুক্ত হয়েছেন৷ এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৪৯ জন৷
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের বেশ কিছু এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে৷ সেগুলো হলো, নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকার মিরপুর ও বাসাবো৷ এছাড়া নতুন করে গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও কেরানীগঞ্জে আক্রান্ত বাড়ছে৷ এসব এলাকায় লকডাউন কঠোর করতে হবে৷
প্রথম চিকিৎসকের মৃত্যু
করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রথম একজন চিকিৎসক মারা গেছেন৷ সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মঈন উদ্দীন বুধবার সকাল পৌনে সাতটায় ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান৷
গত ৫ এপ্রিল তার করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে৷ সিলেটে নিজ বাসায় তিনি ‘আইসোলেশনে’ ছিলেন৷ ৭ এপ্রিল তাকে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ অবস্থার অবনতি হলে পরদিন বিকালে তাঁকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল৷ তার বয়স ছিল ৫০ বছর৷
নতুন ‘ক্লাস্টার’
মাদারীপুরের শিবচর, ঢাকার মীরপুর ও বাসাবো এবং নারায়ণগঞ্জ জেলাকে আগেই করোনা ভাইরাসের ‘ক্লাস্টার’ ঘোষণা করে আইইডিসিআর৷ ক্লাস্টার অর্থ যেখানে অল্প দূরত্বে অধিক আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে৷ বাংলাদেশে এখন সামাজিক সংক্রমণ হচ্ছে৷ বাড়ছে ক্লাস্টারের সংখ্যাও৷ নতুন করে গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও কেরানীগঞ্জে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ওই সব এলাকায় কঠোর লকডাউন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷
দেশে দেশে অস্থায়ী করোনা হাসপাতাল
করোনার বিরুদ্ধে লড়তে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্বের অনেক দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা৷ ফলে অস্থায়ী হাসপাতাল গড়ে তোলা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/WANA/A. Khara
ইটালি
মিলানের কাছে ক্রেমোনা হাসপাতালের বাইরে একটি ফিল্ড হাসপাতাল৷
ছবি: Getty Images/E. Cremaschi
যুক্তরাষ্ট্র
নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটানের জ্যাকব কে জ্যাভিটস কনভেনশন সেন্টারে একটি অস্থায়ী হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Kelly
স্পেন
মাদ্রিদের আইএফইএমএ কনফারেন্স সেন্টারে এই সামরিক হাসপাতালটি গড়ে তোলা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Comunidad de Madrid
ফ্রান্স
মুইলোজে শহরের একটি হাসপাতালের বাইরে সামরিক বাহিনী একটি ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তুলেছে৷
ছবি: Reuters/S. Bozon
ইরান
তেহরানের এক শপিং মলকে অস্থায়ী হাসপাতালে রূপ দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Reuters/WANA/A. Khara
চীন
উহান শহরে প্রথম করোনা ধরা পড়েছিল৷ সেখানে গড়ে তোলা ১৬টি অস্থায়ী হাসপাতালের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ায় গতমাসে সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
ব্রাজিল
সাও পাওলোর আইবিরাপুয়েরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে করোনা রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/R. Patrasso
রাশিয়া
মস্কোর বাইরে এই হাসপাতালটি নির্মাণের কাজ চলছে৷
ছবি: Reuters/Moscow News Agency/D. Voronin
গাজা
রাফাহ সীমান্তে এই কোয়ারান্টিন ফ্যাসিলিটি গড়ে তোলা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/WHO in the Occupied Palestinian Territories
সার্বিয়া
বেলগ্রেডের মেলা আয়োজনের এই হলকে করোনা রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
পোল্যান্ড
রকলো শহরের ইউনিভার্সিটি ক্লিনিক্যাল হাসপাতালের বাইরে এই অস্থায়ী এমার্জেন্সি রুম তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Agencja Gazeta/K. Cwik
সুইডেন
গোথেনবুর্গের একটি হাসপাতালের বাইরে এই ফিল্ড হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়৷
ছবি: Reuters/TT NEws Agency/A. Ihse
ইন্দোনেশিয়া
জাকার্তার কেমায়োরান অ্যাথলেট ভিলেজে গড়ে তোলা এই হাসপাতালের যন্ত্র পরীক্ষা করে দেখছেন এক ডাক্তার৷
ছবি: Reuters/Antara Foto/H. Mubarak
কলোম্বিয়া
বোগোতার সামরিক হাসপাতালের পার্কিং এলাকায় অস্থায়ী তাঁবু তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/L. Munoz
জার্মানি
লায়েরের একটি সাবেক হাসপাতাল আবারও প্রস্তুত করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/L. Kuegeler
আর্জেন্টিনা
বুয়েনস আইরেসের কাছে সান মিগুয়েলেতে এই মিলিটারি মোবাইল হাসপাতালটি গড়ে তোলা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/M. Baglietto
16 ছবি1 | 16
বাড়ছে পরীক্ষা, বাড়ছে শনাক্ত
বাংলাদেশ গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়৷ তারপর টানা ছয়দিন কোন নতুন রোগী পাওয়া যায়নি৷ এর মূল কারণ ছিল পরীক্ষার অপর্যাপ্ততা৷ এরপর পরীক্ষার আওতা যত বাড়তে থাকে শনাক্তও তত বাড়তে থাকে৷ তবে এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে নতুন সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে এবং প্রায় প্রতিদিনই নতুন আক্রান্তের রেকর্ড হচ্ছে৷ এর কারণও টেস্টের আওতা ও পরিমাণ বৃদ্ধি৷ আইইডিসিআর এর তথ্য অনুযায়ী ১৫ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত ১৪ হাজার ৮৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে৷ তারমধ্যে আইইডিসিআর এ চার হাজার ৪১২টি এবং অন্যান্য ল্যাবে ১০ হাজার ৪৫৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়৷ এই দুটো সংখ্যাই নতুন রোগী শনাক্ত বাড়ার কারণ স্পষ্ট করে দিচ্ছে৷ শুরুতে দেশে শুধু আইইডিসিআর এ করোনা ভাইরাস টেস্ট করা যেত৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথম থেকেই বলে আসছে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার পরীক্ষা৷ যত বেশি পরীক্ষা করা যাবে তত রোগী শনাক্ত হবে এবং তাদের আলাদা রাখার মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণ কমিয়ে আনা যাবে৷ করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সফল দেশগুলোর অন্যতম দক্ষিণ কোরিয়া এই কৌশল অবলম্বন করে পুরো দেশ লকডাউন করা ছাড়াই কোভিড-১৯ মহামারিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে৷ সফল অন্যান্য দেশও প্রায় একই কৌশল নিয়েছে৷
এসএনএল/এফএস
করোনা: এসব গুজবে কান দেবেন না
পুরো বিশ্বে নভেল করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে গুজবের শেষ নেই৷ বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গুজব সবচেয়ে বেশি৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এমনই কয়েকটি গুজবের জবাব দিয়েছে৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Geisler-Fotopress
১. ফাইভ-জি মোবাইল নেটওয়ার্কে করোনা ছড়ায়?
রেডিও তরঙ্গ বা মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কোন ভাইরাস ছড়ায় না৷ এমন অনেক দেশেই করোনা’র সংক্রমণ হয়েছে, যাদের ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
২. রোদের তাপ কি করোনা প্রতিরোধ করে?
তাপমাত্রা যত বেশিই হোক না কেনো, যেকোন তাপমাত্রায় আপনি সংক্রমিত হতে পারেন৷ ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা আছে এমন অনেক দেশেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. van den Bergh
৩. একবার সংক্রমণ, সারাজীবনের সংক্রমণ?
করোনা আক্রান্ত যেকোন মানুষ পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেন৷ আপনার লক্ষণ চিনতে হবে এবং সেই বুঝে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে৷ আপনার যদি জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট থাকে তাহলে ডাক্তারকে ফোন দিন৷
ছবি: AFP/B.R. Smith
৪. ১০ সেকেন্ডের নাই ভরসা
অনেকে মনে করেন কোনো ধরনের কষ্ট বা কাশি ছাড়া ১০ সেকেন্ড বা তার বেশি সময় শ্বাস আটকে রাখতে পারলে তার করোনা নেই৷ এই ধারণা ভুল৷ করোনা ভাইরাসের খুব সাধারণ একটি লক্ষণ হল শুকনো কাশি, ক্লান্তি এবং জ্বর৷ কারো কারো ক্ষেত্রে ভয়াবহ ধরনের নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা যায়৷ আপনার উচিত এসব লক্ষণ থাকলে আগে পরীক্ষা করা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Campodonico
৫. মদে মুক্তি?
বেশি বেশি মদ বা অ্যালকোহল খেলে করোনা প্রতিরোধ হয় না বরং তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J.-P. Muller
৬. তীব্র শীতে করোনা মরে?
এটা বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই যে তীব্র শীত বা বরফে করোনা ভাইরাস টিকে থাকতে পারে না৷ কারণ বাইরের তাপমাত্রা যাই হোক না কেনো আপনার শরীরের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷
ছবি: picture-alliance/AA/A. Ozdil
৭. হ্যান্ড ড্রায়ার করোনা মারে?
না৷ হাত শুকানোর যে মেশিন, করোনা ভাইরাসের উপর তার কোন প্রভাব নেই৷ আপনার যা করণীয় তা হল: বার বার সবান পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া৷ এরপর টিসু, তোয়ালা বা গরম ড্রায়ার দিয়ে হাত শুকাতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/AP/NIAID-RML
৮. নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন কি করোনায় কার্যকর?
না৷ নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন যেমন: নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন বা হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি ভ্যাকসিন করোনার ক্ষেত্রে কার্যকর নয়৷ এই ভাইরাস একেবারে নতুন এবং ভিন্ন ধরনের, যার জন্য চাই আলাদা ভ্যাকসিন৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় গবেষকরা এ বিষয়ে কাজ করছেন৷
ছবি: Reuters/B. Guan
৯. নাকের ড্রপ কি সংক্রমণ থেকে বাঁচায়?
না৷ এমন কোন তথ্য-প্রমাণ এখনো মেলেনি যে নিয়মিত স্যালাইন পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করলে এই সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়৷
ছবি: Imago Images/Panthermedia/A. Guillem
১০. করোনা প্রতিরোধে বিশেষ কোন ওষুধ?
করোনা প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কোন ওষুধ নেই৷ কেবল লক্ষণ অনুযায়ী এ রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকেরা৷