গাজী আনিসের আত্মহত্যা:হেনোলাক্স গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা
৫ জুলাই ২০২২
ঠিকাদার গাজী আনিসের গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার ঘটনায় হেনোলাক্স গ্রুপের কর্ণধার নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
আনিসের বড় ভাই নজরুল ইসলাম মঙ্গলবার দুপুরে শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন বলে শাহবাগ থানার এসআাই গোলাম হোসেন খান ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান৷
তিনি বলেন, ‘‘মামলায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে৷ আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে৷’’
ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে নিজের গায়ে আগুন দেওয়া ঠিকাদার গাজী আনিস হাসপাতালে মারা গেছেন৷ কোম্পানি থেকে পাওনা কোটি টাকা না পেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান৷
আনিসের দেহের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়৷ তিনি ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ছিলেন৷
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন জানান, মঙ্গলবার ভোর ৬টা ১০ মিনিটে আনিসের মৃত্যু হয়৷ ৫০ বছর বয়সি গাজী আনিসের বাড়ি কুষ্টিয়ায়, তিনি ঠিকাদারি ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন এবং এক সময় কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন৷
একটি কোম্পানির কাছ থেকে পাওনা কোটি টাকা না পেয়ে ক্ষোভ থেকে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা চালান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন ৷ তাদের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী, সোমবার বিকাল ৫টার দিকে প্রেস ক্লাবের ফটকের ভেতরে খোলা স্থানে আনিস নিজের গায়ে আগুন দেন ৷ শোয়া অবস্থায় তার গায়ে আগুন জ্বলছে দেখে আশপাশ থেকে সবাই ছুটে যান ৷ তারা পানি ঢেলে আগুন নেভালেও ততক্ষণে তার গায়ের পোশাক সম্পূর্ণ পুড়ে যায় ৷
আনিসকে বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়ার সময় মো. আলী নামে এক সংবাদকর্মী ছিলেন ৷ সোমবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘তার সঙ্গে একটু কথা হয়েছিল৷ তিনি বলেছেন, একটি কোম্পানির কাছ থেকে তিনি ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা পাবেন৷ ওই কোম্পানি তা দিচ্ছে না ৷ পাওনা পেতে তিনি এর আগে মানববন্ধন করেছিলেন৷ কিন্তু কোনো লাভ হয়নি তাই তিনি নিজের গায়ে আগুন দেন ৷’’
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
আত্মহত্যার সাতকাহন
জীবন সুন্দর৷ যত কষ্টই থাকুক বেঁচে থাকা তবু আনন্দের৷ তবু অনেকেই বেছে নেয় আত্মহননের পথ৷ ছবিঘরে থাকছে আত্মহত্যা নিয়ে কিছু পরিসংখ্যান...
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone USA Falkenberg
বাংলাদেশে এক বছরে ১৪ হাজার!
আঁচল ফাউন্ডেশন ২০২১ সালের মার্চ মাসে এক প্রতিবেদনে জানায়, করোনাকালে এক বছরে সারা বাংলাদেশে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন আত্মহত্যা করেছেন৷ ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩টি জাতীয় পত্রিকা, ১৯টি স্থানীয় পত্রিকা, হাসপাতাল ও থানা থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/W. Sabawoon
নারীর সংখ্যা বেশি
তরুণদের সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন আত্মহত্যা করেছেন, তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি৷ মোট আত্মহত্যার ৫৭ শতাংশ, অর্থাৎ ৮ হাজার ২২৮জনই ছিলেন নারী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone USA Falkenberg
বেশি আত্মহত্যা যে বয়সে
আঁচল ফাউন্ডেশনের সেই প্রতিবেদনে আত্মহত্যাপ্রবণ বয়সের ধারণাও উঠে আ্সে৷ সেখানে বলা হয়, আত্মঘাতী হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সি ছিলেন ৪৯ শতাংশ, ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সি ৩৫ শতাংশ এবং ৩৬ থেকে ৪৫ বছর বয়সি ১১ শতাংশ। সেই সময় সবচেয়ে কম আত্মহত্যা করেছিলেন ৪৬ থেকে ৮০ বছর বয়সিরা- ৫ শতাংশ।
ছবি: Colourbox
বড় কারণ
২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা হয়েছে পারিবারিক সমস্যার কারণে৷ ওই সময়ে মোট আত্মহত্যার ৩৫ শতাংশই ছিল পারিবারিক সমস্যাজনিত কারণে৷ এর বাইরে ২৪ শতাংশ সম্পর্কে টানাপোড়েনের কারণে এবং যথাক্রমে ৪ ও ১ শতাংশ আর্থিক সংকট ও লেখাপড়া নিয়ে দুর্ভাবনা বা পরীক্ষায় ব্যর্থতার কারণে কারণে আত্মহত্যা করেছিল। তবে ৩২ শতাংশ মানুষের আত্মহত্যার কারণ থেকে যায় অজ্ঞাত৷ এই তথ্যগুলোও আঁচল ফাউন্ডেশনের৷
ছবি: Steve Helber/AP/picture alliance
৪০ সেকেন্ডে একজন
ডাব্লিউএইচও-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি চল্লিশ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহত্যা করে৷
২০২১ সালের জুনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক প্রতিবেদনে জানায়, সারা বিশ্বে বছরে অন্তত সাত লাখ তিন হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা হয় নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে৷
ছবি: Fotolia/Photographee.eu
আত্মহত্যা : পাপ ও ‘অপরাধ’
সব ধর্মেই আত্মহত্যাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে৷ ধর্মমতে আত্মহনন করা মহাপাপ৷ আইনও আত্মহত্যাকে নিরুৎসাহিত করে৷ আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচিত করা বাংলাদেশের আইনেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩০৬ ধারা অনুযায়ী, কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে আত্মহত্যায় সহায়তা করা ব্যাক্তির ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে৷