1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জন্মশতবর্ষে অম্লান হেমন্ত

১৩ ডিসেম্বর ২০২০

মন্দিরে বসে গাইছেন সন্ন্যাসী। তাঁর সম্পর্কে এমনই বলেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। জন্মশতবর্ষে সেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে অনেক পরিকল্পনা ছিল বাঙালির। কিন্তু কোভিড মহামারি থাবা বসিয়েছে তাতে। যদিও বাংলার সব ঘর প্রতিদিনই হেমন্তময়।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ছবি: Payel Samanta/DW

বাংলা সঙ্গীতের স্বর্ণযুগের অধ্যায় পেরিয়ে গেলেও রোমান্টিক থেকে গণচেতনা, সব ধরনের গানে উজ্জ্বল হেমন্ত৷ এমনকী রবীন্দ্রসঙ্গীতের অভিজাত ঘরানা ভেঙে তাকে আমজনতার মঞ্চে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি৷ বাংলা গানে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এক মাইলফলক৷ তিনি শুধু কন্ঠশিল্পী নন,  অসামান্য এক সুরকারও বটে৷ শুধু বাংলায় নয়, মুম্বাই গিয়েও অসাধারণ সাফল্য পেয়েছিলেন হেমন্ত৷

পঙ্কজকুমার মল্লিক, কৃষ্ণচন্দ্র দে প্রমুখের কণ্ঠ শুনে বাঙালির এক ধরনের শ্রুতির অভ্যাস তৈরি হয়েছিল৷ সেই গায়কী আস্তে আস্তে বদলে যায়৷ বদলে যাওয়া সময়ের পুরোধা হয়ে গেলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়৷ তাঁর জলদগম্ভীর কণ্ঠ ভাসিয়ে দিল বাঙালির শ্রুতির জগৎকে৷ বাংলার মেলোডি নির্ভর গানের এক নতুন দিগন্ত খুলে গেল৷ রোম্যান্টিক গান তিনি হয়ে উঠলেন তরুণদের উদ্দীপনা আর প্রবীণের স্মৃতির ধারক৷ একের পর এক বেসিক রেকর্ড থেকে বাংলা ছায়াছবির গান কিংবদন্তি করে তুলল তাঁকে৷

তাঁর কণ্ঠে মানবিক আবেদন ছিল: শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার

This browser does not support the audio element.

এর পিছনের রহস্যটা কী? সঙ্গীতশিল্পী শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সচেতনভাবে পূর্বসূরিদের থেকে নিজের গায়কী বদলে ফেলেছিলেন৷ অর্থাৎ প্রথা ভেঙেছিল৷ তাঁর কণ্ঠে মানবিক আবেদন ছিল৷ এটা শ্রোতাদের ছুঁয়ে যায়৷ সে কারণে তিনি এত জনপ্রিয়৷ একই কারণে তিনি চেতনার গানেও সফল৷’’ স্বাধীনতার বছরেই সলিল চৌধুরীর সুরে হেমন্ত গাইলেন, ‘কোনো এক গাঁয়ের বধূ’৷ এছাড়া সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘রানার’ তাঁর গলায় পূর্ণতা পেল৷’’

কিংবদন্তি শিল্পী ১৯২০ সালে জন্মগ্রহণ করেন৷ এই বছর তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে একগুচ্ছ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু কোভিডের প্রকোপে প্রায় সবই বাতিল করতে হয়েছে৷ সেজন্য অবশ্য হেমন্ত স্মরণ থেমে থাকেনি৷ নিত্যদিন বাঙালির ঘরে সেই উদযাপন চলছে৷ যদিও বাঙালির শোনার অভ্যাস বদলে গিয়েছে অনেক বছর৷ কবীর সুমনের হাত ধরে বাংলা গান নতুন বাঁক নিয়েছে৷ তার পর থেকে এই সময় পর্যন্ত বাংলা গানে সুরারোপ থেকে গায়কীর আরো পরিবর্তন এসেছে৷

সঙ্গীতশিল্পী মনোময় ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান ছিল মেলোডি নির্ভর৷ রাগ-রাগিণীর ব্যবহার বেশি ছিল৷ এখন পাশ্চাত্য সঙ্গীতের প্রয়োগ অনেক বেড়েছে৷ গানের ধরন অনেকটা বদলেছে৷’’ তবে মেলোডির দিন কি ফুরিয়েছে? এই প্রশ্নে সঙ্গীতের শিক্ষক ছন্দা দত্ত বলেন, ‘‘মেলোডির মৃত্যু নেই। চিরকাল তার কদর থাকবে৷ সেজন্য অতীতের গান আমরা শুনি৷ কোনো কিছুই থেমে থাকে না৷ পরিবর্তনই সময়ের নিয়ম৷ পুরোনোকে রেখেই নতুনকে আমরা গ্রহণ করেছি৷’’

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান মেলোডি নির্ভর: মনোময় ভট্টাচার্য

This browser does not support the audio element.

সুমন-পরবর্তী বাংলা ব্যান্ড ও ছায়াছবির গানে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের প্রভাব অনেকটাই৷ বিশেষত তরুণ প্রজন্মকে আকর্ষণ করেছে বাড়তি যন্ত্রানুষঙ্গে নতুন যুগের গান৷ কিন্তু তাঁদের কাছেও অতীত দিনের গানের আকর্ষণ রয়েছে৷ কলেজ পড়ুয়া দিবাকর সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আমাদের কলেজ অনুষ্ঠানে কয়েক বছর আগে পর্যন্ত ব্যান্ডের গান একচেটিয়াভাবে মঞ্চ দখল করেছিল৷ কিন্তু বাংলা আধুনিক গান আবার তার জায়গা কিছুটা ফিরে পেয়েছে৷ তাই রাঘব চট্টোপাধ্যায়, শুভমিতার মতো শিল্পীরা এসে গান শোনান৷ আমাদের প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা তা উপভোগ করে৷’’

তবে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতো সাঙ্গীতিক প্রতিভা এই সময়ে নেই বললেই চলে৷ যিনি একাধারে সুরকার এবং বিভিন্ন ধরনের গানের কণ্ঠশিল্পী৷ মনোময়ের বক্তব্য, ‘‘এখন এ ধরনের শিল্পী আছেন কি না, সেটা আমার বলা ঠিক নয়৷ তবে উনি সঙ্গীতের ক্ষেত্রে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন, সব ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছেন, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ