গানের ভিতর দিয়ে যখন দেখি ভুবনখানি...
২৪ জুন ২০১১![Rabindranath Tagore](https://static.dw.com/image/5555281_800.webp)
রবীন্দ্রসংগীতের সবচেয়ে বড় দিক হল, এ এমন এক ধারার গান, যা বাঙালি রবীন্দ্রনাথের আগে আর শোনেনি৷ রবীন্দ্রনাথের রচনাশৈলীর যাবতীয় বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সঙ্গেই এই সংগীত উঠে এসেছে স্বতোৎসারিত প্রবাহের মত৷ অমৃতের প্রবাহ বললে খুব ভুল হবে না৷ তাঁর সৃষ্টির এই বিশেষ দিকটিতে ধরা পড়েছে জীবনের যাবতীয় পর্যায়৷ তা সে প্রেম থেকে প্রকৃতি কিংবা স্বদেশ চেতনা থেকে বৈরাগ্য কিংবা পূজা থেকে রসবোধ৷ জীবনযাপনের সব শাখাতেই, মানবমনের সব অনুভূতি নিয়েই সংগীত রচনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ৷ ভাসিয়ে দিয়েছেন মানুষকে অপরূপ সুরের আর বাণীর স্রোতে৷
রবীন্দ্রনাথ তাঁর সংগীতের রসদ সংগ্রহ করেছিলেন বহুকিছু থেকে৷ শেষ কৈশোরে তাঁর রচিত ভানুসিংহের পদাবলী যেমন ব্রজবুলিতে শান্ত স্নিগ্ধ প্রেমের বাণী শুনিয়েছে, তেমনই আবার ভারতীয় মার্গসংগীত, রাগভাঙা গান এবং সুর কিংবা পাশ্চাত্যের ধর্মসংগীত থেকে শুরু করে পশ্চিমের লোকগানের সুরকেও তিনি আত্মস্থ করে ঢেলে দিয়েছেন নিজের রচনায়৷ বাংলার লোকগানের আদলকেও তিনি মিশিয়েছেন নিজের মনের মাধুরীর সঙ্গে৷ সেই সংগীত আসন পেয়েছে অবশেষে যেন রাজসভায়৷
রবীন্দ্রজন্মের পর পেরিয়ে গেছে দেড়শোটি বছর৷ এত বছর পরেও কতটা প্রাসঙ্গিক তাঁর সংগীত? সে প্রশ্ন স্বভাবতই জরুরি মনে হতে পারে৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই এত বছর পেরিয়ে গেলেও আজও বাঙালি মননের মনে হয়না রবীন্দ্রসংগীত তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে৷ সেকথাই বলছেন এমনকি আজকের প্রজন্মের শিল্পীরা, শ্রোতারাও৷ আজও প্রতি বছর নবীন, তরুণ শিল্পীরা আগ্রহ নিয়ে শিখছেন রবীন্দ্রনাথের গান৷ গাইছে আজকের প্রজন্ম তাঁরই সেই শাশ্বত রচনা৷ বারেবারে বাঙালির মননকে ঋদ্ধ করছে, তার হৃদয়কে আপ্লুত করছেন সেই রবীন্দ্রনাথ৷ লালন ফকির যাঁর প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘সত্যদ্রষ্টা বাউল৷'
পরীক্ষানিরীক্ষাও যে রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে হচ্ছে না, তাও নয়৷ নতুন প্রজন্মের কোন কোন গায়ক বা গায়িকা তাঁর সুরকে ঢেলে দিচ্ছেন আজকের ব্যাকরণে৷ হয়তো বা কিছু নতুন ধাঁচের সুরের ব্যবহার, বা গায়কীর পরিবর্তন এনে চেষ্টা হচ্ছে রবীন্দ্রসংগীতকে নতুন চেহারায় উপস্থাপিত করার৷ সেই অত্যাধুনিক আর সাহসী সব প্রচেষ্টা মানুষ কতটা নিতে পারছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে৷ রয়েছে বিতর্ক৷ যদিও সবকিছুর ঊর্ধ্বে থেকে যাচ্ছেন যিনি তিনি কিন্তু রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং৷ কারণ এই কবি তাঁর শেষ জীবনে একবার বলেছিলেন, ‘সব চলে গেলেও গান রয়ে যাবে৷' সেকথা চিরকালের৷ যতদিন বাংলা ভাষার অস্তিত্ব থাকবে, রবীন্দ্রসংগীত ঠিক ততদিনই বাঙালির হৃদয়কন্দরের কথা বলে যাবে, গেয়ে যাবে সেই একই ভালোবাসা দিয়ে৷ তার প্রধান কারণ, এ যে চিরন্তন আত্মার বাণী আর চিরকালের চেনা সুর৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই