একবছর আগে চীনের উহান শহরে ধরা পড়ে করোনা ভাইরাস৷ দিনটিকে নানাভাবে স্মরণ করেছেন উহানের মানুষ৷ সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ মানুষের হন্তারক এ ভাইরাসের সঙ্গে এখনো লড়ছে মানুষ৷
বিজ্ঞাপন
গিটারে বিষাদের সুরে প্রিয়জন হারানোর হাহাকার৷মাইক্রোফোনে ভেসে আসা সুরের ওঠানামায় শিল্পী লু ইয়ান বর্ণনা করছেন করোনায় ক্লান্ত শহর উহানের বেদনাগাঁথা৷ আর সেই সাথে জানাচ্ছেন ‘এ যুদ্ধে আমরা জয়ী'৷
এক বছর আগে ধরা পড়া করোনায় দেশটিতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় উহান শহরে৷ ৭৬ দিনের লকডাউন মেনে নিয়ে যন্ত্রণাও কম সইতে হয়নি শহরবাসীকে৷ গানে তাই শহরবাসীকে ধন্যবাদ দিতে ভুলেননি শহরটির শিল্পীরা৷ জাতির জন্য অনেক বড় ত্যাগ স্বীকার করেছে উহানবাসী, গাইলেন ইয়ান৷
শুধু গানে নয়, গ্রাফিতি কিংবা রম্যরচনায়ও উহান শহরের এ ত্যাগকে স্বীকার করছেন সেখানকার শিল্পীরা৷ সেই সাথে এ ভাইরাসে নিহতদের প্রতি জানিয়েছেন শোক৷
চীনে রাজনৈতিক স্পর্শকাতর গ্রাফিতি বা এ ধরনের অংকনে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা৷ তারপরও থেমে নেই আঁকিয়েরা৷ হুয়াং বোয়েন গ্রাফিতির মাধ্যমে ধরে রাখতে চান করোনার স্মৃতি, হোক না তা ভয়াবহ৷ গ্রাফিতি আঁকতে তাকে শহরে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে৷ এজন্য শহর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবার অনুমতি৷
করোনার প্রথমদিকে এ ভাইরাসের বিষয়ে যে কয়জন ডাক্তার চীন সরকারকে সতর্ক করেছিলেন তাদের একজন লি ওয়েনলিয়াং৷ করোনায় আক্রান্ত হয়েই মারা যান তিনি৷ গ্রাফিতিতে হুয়াং স্মরণ করেছেন সেই চিকিৎসককেও৷ ডাক্তার লি যে হাসপাতালে কাজ করতেন সে হাসপাতালের দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতিতে হুয়াং লিখেছেন ‘সততার সাথে কথা বলুন এবং সবসময় এটি মনে রাখুন'৷
‘আমি যা বলতে চেয়েছি তাই বলেছি,' শিল্পের প্রতি নিজের ভালোবাসার কথা এভাবেই জানালেন হুয়াং৷
ব্লগাররাও নানাভাবে স্মরণ করছেন উহান শহরে করোনার হানাকে৷ দেশটির গণমাধ্যমে এমনই একটি ভিডিওর কথা বলা হয়েছে৷ ভিডিওতে একজন ব্লগার উহান শহর ও এর বাসিন্দারা কীভাবে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন৷
আরআর/এসিবি (এএফপি)
দুই দশকে নতুন যত ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব
গোটা বিশ্ব এখন করোনা ভাইরাস বিরুদ্ধে লড়ছে, যার শুরুটা হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে৷ গত প্রায় দুই দশকে ছড়িয়ে পড়া নতুন কয়েকটি ভাইরাস নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Center for Disease Control
বার্ড ফ্লু (এইচ৫এন১)
১৯৯৭ সালে হংকংয়ে এইচ৫এন১ ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ তারপর ২০০৩, ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে এশিয়ার আরো কয়েকটি দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়৷ ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৬৩০ জন বার্ড ফ্লুতে সংক্রমিত হয়েছেন এবং ৩৭৫ জন মারা গেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিপাহ ভাইরাস
১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার পাংকর দ্বীপের ছোট্ট শহর কামপুং তেলুক নিপাহতে নতুন একটি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়৷ পরের বছর ওই শহরের নামে ভাইরাসটির নামকরণ হয় নিপাহ৷ এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যুর আশঙ্কা ৫৪ শতাংশ৷ ২০১৮ সালে ভারতের কেরালায় এই ভাইরাস সংক্রমণে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়৷ ২০১৩ সালে বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে অন্তত ১০ জন মারা যান৷
ছবি: Getty Images/AFP
সার্স
সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব হয় চীনে৷ ২০০২ ও ২০০৪ সালে এশিয়ার কয়েকটি দেশে সার্স ভাইরাস মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ে৷ আট হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হন, মারা যান প্রায় ৭৭৪ জন৷ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হলে ভয়াবহ শ্বাসকষ্ট হয়৷ তবে ২০০৪ সালের পর এই ভাইরাসে প্রাদুর্ভাবের খবর আর পাওয়া যায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Reynolds
সোয়াইন ফ্লু
২০০৯ সালে প্রথম বিশ্বজুড়ে এইচ১এন১ ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যায়৷ শূকরের ফ্লুর সঙ্গে লক্ষণ মিল থাকায় একে সোয়াইন ফ্লু নাম দেওয়া হয়৷ এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১ থেকে ২১ শতাংশ মানুষ এ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন৷ দেড় লাখ থেকে প্রায় ছয়লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ ঢাকায় নতুন বছরে সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার খবর শোনা গেলেও আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: AP
মার্স (মিডলইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম)
এটি সার্স ভাইরাস গোত্রেরই একটি ভাইরাস৷ ২০১২ সালে প্রথম সৌদি আরবে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়৷ দেশটিতে মার্সে আক্রান্ত প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ মারা যান৷ উট থেকে এই ভাইরাস মানবদেহে ছড়ায় বলে ধারণা করা হয়৷ হাঁচি, কাশি ও সংস্পর্শের মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষেও ছড়ায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
করোনা ভাইরাস
চীনের উহান প্রদেশে গত ডিসেম্বর থেকে করোনা ভাইরাস প্রকোপ শুরু হয়৷ পরবর্তীতে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
বৈশ্বিক মহামারি
২০২০ সালের শুরু থেকেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে বিভিন্ন দেশে৷ এক পর্যায়ে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ এশিয়া থেকে ইউরোপ হয়ে এখন অ্যামেরিকা রয়েছে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর শীর্ষে৷ সারা বিশ্বে এরিমধ্যে দুই লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে রহস্যময় ভাইরাসটি৷
ছবি: Getty Images/L. DeCicca
প্রতিষেধক নেই
এখনও করোনার কোন প্রতিষেধক আবিস্কার হয়নি৷ তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ৷ কয়েকটি উদ্যোগ বেশ খানিকটা এগিয়েছে৷ মানব শরীরে কিছু সম্ভাব্য টিকার পরীক্ষা নিরীক্ষাও শুরু হয়েছে৷ তবে সেগুলো কার্যকারিতা নিশ্চিত হতে আরো বছর খানেক সময় লাগতে পারে৷