সুন্দর গান শুনলে কার না মন ভালো হয়? একাধিক গবেষণা অনুযায়ী গান গাইলে শরীর-মন-স্বাস্থ্যেরও উপকার হয়৷ এমনকি কঠিন রোগের চিকিৎসার সময়েও রোগীদের দিয়ে গান গাওয়াচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷
বিজ্ঞাপন
ইয়োসেফিনে ও তার মা স্পিচ থেরাপিস্টের কাছে যাচ্ছেন৷ জন্মের সময়েই তার হৃৎপিণ্ডে ত্রুটি ধরা পড়েছিল৷ ফলে স্বাভাবিক বিকাশে বিলম্ব ঘটছে৷ একেবারে শিশু বয়স থেকেই ইয়োসেফিনে থেরাপির জন্য এফা ক্যোস্টার্সের কাছে আসছে৷ তিনি বলেন, ‘‘ইয়োসেফিনের মতো অনেক শিশুর জন্য গানের মাধ্যমে থেরাপি অনেক সহজ হয়৷ কারণ খেলাচ্ছলে এমন অনুশীলন মোটেই থেরাপির মতো মনে হয় না৷ গান গাইলে সুর ও তালের মাধ্যমে মস্তিষ্কের অনেক অংশ সত্যি সক্রিয় হয়ে ওঠে৷ একদিকে সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ সেগুলি মস্তিষ্কের অ্যাকুস্টিক, অডিটিভ, ভিশুয়াল ও মোটরের মতো অংশ৷ বিশেষ করে শিশুদের থেরাপির সময় এগুলি অত্যন্ত কাজে লাগে, কারণ এর মাধ্যমে তাদের মনোনিবেশ করার ক্ষমতা সত্যি বেড়ে যায়, তারা আরও দ্রুত সাড়া দেয়৷ শব্দভাণ্ডার বাড়ানোর মতো থেরাপির ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া কাজে লাগানো হয়৷’’
এদিকে শিয়াল চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে৷ গানের মধ্যেই সেই গল্প বলা হচ্ছে৷ ইয়োসেফিনে গোটা বিষয়টা বেশ উপভোগ করছে৷ এফা ক্যোস্টার্স এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘গান গাইতে হলে কিছু শব্দ ও পংক্তি মনে রাখতে হয়৷ গানে একই অংশ বার বার ফিরে আসে বলে নতুন শব্দ ভালো করে শেখানো যায়৷’’
সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর সাতটি শখ
অনেকেই শখ করে বাগান বা খেলাধুলা করেন কিংবা গান গেয়ে থাকেন৷ এ রকমই কিছু হবি বা শখ সম্পর্কে জেনে নিন, যেগুলো শুধু আনন্দই দেয় না, নানা রোগ সারাতে ওষুধের মতো কাজ করে৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collection
বাগান করা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়
দিনে মাত্র ৩০ মিনিট বাগানে কাজ করলে ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়৷ পাশাপাশি স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা যেমন কমায়, তেমনি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও কমায় শতকরা ৩০ ভাগ৷ এই তথ্য জানা যায়, স্টকহোমের ক্যারোলিন্সকা ইন্সটিটিউটের করা এক সমীক্ষার ফলাফল থেকে৷
ছবি: Rido - Fotolia.com
নাচুন, আনন্দে থাকুন
সালসা, ট্যাঙ্গো কিংবা ফ্রি স্টাইল নাচ – যে নাচই হোক না কেন, সপ্তাহে তিন দিন মাত্র ২০ মিনিটের নাচ মনকে যেমন ভালো রাখে, তেমনি শরীরের ভারসাম্যকেও ঠিক রাখে৷ তাছাড়া নাচের নতুন নতুন মুদ্রা শেখার মধ্য দিয়ে মস্তিষ্কের নার্ভে বিশেষ কোষ তৈরি হয়, যা মস্তিষ্ককে সচল রাখে৷ আরো আছে৷ নিয়মিত নাচ ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমায় শতকরা ৭৬ ভাগ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে ‘উল’ বুনুন
উল বোনা এমন এক বিশেষ থেরাপি, যা কিনা যে কোনো দুশ্চিন্তা বা ব্যথাকে ভুলে থাকতে সাহায্য করে৷ যাঁদের নিয়মিত ব্যথা হয়, তাঁরা নিয়মিত উল বুনলে তা ব্যথাকে ধীরে ধীরে কমে যেতে সাহায্য করবে৷ শুধু তাই নয়, উল বোনায় ডিপ্রেশনও কমে শতকরা ৫৪ ভাগ৷ একটি ব্রিটিশ গবেষণার ফলাফল থেকে এই তথ্য জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
খেলাধুলা ও ব্যায়াম
খেলাধুলা বা ব্যায়াম একজন মানুষকে তরুণ রাখে, এ আর নতুন কী! তবে নিয়মিত খেলাধুলা ও ব্যয়াম শরীরকে সচল রাখা ছাড়াও মেনোপজ বা হট ফ্লাশের সমস্যাকেও দূরে রাখে৷ তাছাড়া ঘুমের সমস্যা, মাথা ব্যথা, মেজাজ ওঠা-নামা এমনকি হাড়ের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়াকেও দমন করে নিয়মিত শরীরচর্চা৷
ছবি: picture alliance / dpa
প্রাণী পোষা
বাড়িতে কুকুর, বেড়াল, মাছ, কচ্ছপ বা পাখির মতো ছোট প্রাণী পুষলে বা দেখাশোনা করলে মানুষের আয়ু দশ বছর পর্যন্ত বাড়তে পারে – এমন তথ্য অনেক আগেই এসেছে গবেষণা থেকে৷ বাড়িতে পোষা প্রাণীকে আদর করার মধ্য দিয়ে ‘সুখ হরমোন’ বেড়ে যায় এবং উচ্চ রক্তচাপ কমে৷
ছবি: Fotolia/otisthewolf
‘গান’ ভয় ও ডিপ্রেশন দূরে রাখে
সবাইকে যে গায়ক-গায়িকা হতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই৷ ঘর গোছানো, বাসন ধোয়া কিংবা কাপড় ইস্ত্রি করার সময়ও মনের সুখে গান গাইতে পারেন যে কেউ৷ আর বাথরুম সিঙ্গার তো অনেকে আছেনই৷ গান গাওয়ার সময় শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়৷ এবং শরীরের প্রোটিন অণুগুলো তখন সক্রিয় হয়ে ওঠে৷ যার ফলে ভয় ও ডিপ্রেশন দূরে সরে যায়৷ কার্ডিফের টেনোভাস ক্যানসার কেয়ারের করা এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে এই তথ্যটি৷
ছবি: SWR
ডায়েরি লিখতে পারেন
আপনার কি ডায়েরি লেখার অভ্যাস আছে? সারাদিনের দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ সবকিছু যদি ডায়েরিতে লিখে রাখেন এবং পরে সে লেখা পড়েন, তাহলে কেটে যাওয়া ক্ষত বা অপারেশনের ক্ষতও তাড়াতাড়ি সেরে যেতে পারে৷ এবং ডায়েরি লেখা স্ট্রেসের মাত্রা কমিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সহযোগিতা করে৷ ডায়েরি লেখার উপকারিতা নিয়ে এই গবেষণাটি করেছিল নিউজিল্যান্ডের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Universal Pictures Production
7 ছবি1 | 7
তবে শুধু ইয়োসেফিনের মতো কম বয়সি রোগীর ক্ষেত্রেই গান কাজে লাগে না৷ একের পর এক হাসপাতালে গান গাওয়ার থেরাপির চল বেড়ে চলেছে৷ গান গেয়ে কারো মনে আনন্দ হয়, তারুণ্য জেগে ওঠে৷ অনেকের মন হালকা হয়ে যায়৷
গান গাওয়ার মাধ্যমে চিকিৎসার সময়ে রোগীদের মনোযোগ অন্য বিষয়ে সরিয়ে নেওয়া যায়, তাদের মনে সাহস জোগানো যায়৷ এর বাড়তি কিছু সুবিধাও রয়েছে৷ ক্যানসার বিশেষজ্ঞ প্রোফেসর মাইকে ডে ভিট মনে করেন, ‘‘আসলে গান গাইলে সব রোগীরই উপকার হয়৷ বিশেষ করে যে সব রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য তো বটেই৷ গান গাওয়ার সময় গভীর শ্বাস নিতে হয়৷ অনেক সময় জুড়ে নিঃশ্বাস বের করতে হয়, শ্বাসপ্রশ্বাস ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়৷’’
বিশেষ করে ফুসফুস ক্যানসারের রোগীদের জন্য প্রোফেসর ডে ভিট গানের থেরাপি প্রয়োগ করতে চান৷ প্রো. ডে ভিট বলেন, ‘‘আমি এমন অনেক রোগীকে চিনি, টিউমারের কারণে অনেক মানুষের সঙ্গে গান গাইতে যাদের বেশ ভয় করে৷ তারা নিজেদের এবং বাকিদের কণ্ঠ শোনে৷ এমন সমবেত অনুভূতির ফলে তাদের মন থেকে ভয় দূর হয়৷ সংগীতের সার্বিক অভিজ্ঞতার মধ্যে তারা নিজেদের দুর্বলতা ভুলে যায়৷ অসাধারণ ব্যাপার৷’’
অসংখ্য গবেষণায় একই ফল উঠে এসেছে৷ গান গাইলে আমাদের স্বাস্থ্য নানাভাবে উপকৃত হয়৷
অ্যানি হফমান/এসবি
পৃথিবীকে মাতিয়ে রাখা কালজয়ী কিছু গান
ভালোবাসা, সত্য, স্বাধীনতা আর মানবতার কথা বলা গান দশকের পর দশক ধরে আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে৷ নতুন বছরে নতুন এক দশকেও প্রবেশ করেছে পৃথিবী৷ আসুন জেনে নেই বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সাড়া জাগানো কিছু গান ও তার পেছনের গল্প৷
ছবি: picture alliance/ASSOCIATED PRESS
এলভিস প্রিসলি: ‘লাভ মি টেন্ডার’ (১৯৫৬)
পপ গানের গুরু এলভিস প্রিসলির ‘লাভ মি টেন্ডার’ গানের ইতিহাস দীর্ঘ৷ যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধের সময় প্রথম গানটি প্রকাশ পায়৷ পরে ওই গৃহযুদ্ধ নিয়ে নির্মাণ করা সিনেমা ‘লাভ মি টেন্ডার’-এ প্রিসলি গানের সুর কিছুটা পরিবর্তন করেন৷ সিনেমায় প্রিসলি নিজেও অভিনয় করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/Leemage/MP
বিটলস: ‘হেই জুড’ (১৯৬৮)
বিখ্যাত এই গানটি জন লেননের ছেলে জুলিয়ানকে উদ্দেশ্য করে লেখা৷ ইওকো ওনোর সঙ্গে লেননের প্রেম শুরু হলে স্ত্রীর সঙ্গে লেননের বিচ্ছেদ ঘটে৷ পাঁচ বছরের ছোট্ট ছেলেটি বাবা-মায়ের এই সম্পর্কচ্ছেদের সঙ্গে কিভাবে মানিয়ে নেবে তা নিয়েই এই গান৷
ছবি: Imago/LFI
জন লেনন: ‘ইমাজিন’ (১৯৭১)
জন লেননের সলো ক্যারিয়ারে সর্বাধিক বিক্রিত গান ‘ইমাজিন’৷ সেখানে এমন এক পৃথিবীর কথা বলা হয়েছে যেখানে থাকবে না কোনো ভেদাভেদ, হবে মানবতার জয়৷ এক যুক্তরাজ্যেই ১৬ লাখেরও বেশি ক্যাসেট বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Randu
অ্যাডেল: ‘স্কাইফল’ (২০১২)
২০১২ সালে জেমস বন্ড সিরিজের ‘স্কাইফল’ সিনেমায় ‘স্কাইফল’ গানের জন্য ব্রিটিশ গায়িকা অ্যাডেল অস্কার জেতেন৷ সিনেমায় এজেন্ট ০০৭ ড্যানিয়েল ক্রেগ আকাশ থেকে পড়ে যাচ্ছেন আর সঙ্গে নাটকীয় এই গান৷
ছবি: Getty Images
সেলিন ডিওন: ‘মাই হার্ট উইল গো অন’ (১৯৯৭)
মৃত্যুকে ছাপিয়ে ভালোবাসার জয়৷ ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘টাইটানিক’ সিনেমায় সেই ভালোবাসার জয়গান গাওয়া হয়েছে৷ সিনেমায় সেলিন ডিওনের ‘মাই হার্ট উইল গো অন’ বিশ্বজুড়ে প্রেমিক হৃদয়কে কাঁপিয়ে দিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance /dpa
সিন্ডি লোপার: ‘টাইম আফটার টাইম’ (১৯৮৪)
মার্কিন গায়িকা সিন্ডি লোপারের মিউজিক ভিডিও ‘টাইম আফটার টাইম’-এ দৈনন্দিন জীবনযাপনে ধীরে ধীরে ফিকে হতে থাকা নারী-পুরুষের ভালোবাসা দেখানো হয়েছে৷ সেখানে লোপার তার ভালোবাসার মানুষটিকে ছেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু সারা জীবন সব পরিস্থিতিতে তাকে পাশে পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: Imago/MediaPunch/G. Gershoff
ক্যাট স্টিভান্স: ‘ফাদার অ্যান্ড সন’ (১৯৭০)
ব্রিটিশ গায়ক ক্যাট স্টিভানের আসল নাম ইউসুফ ইসলাম৷ তার জনপ্রিয় গান ‘ফাদার অ্যান্ড সন’-এ একটি ছেলে তার বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাশিয়ায় যুদ্ধে যেতে চায়৷