করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে মাস্ক পরা বা ব্যবধান বজায় রাখায় যারা বিশ্বাস করেন না, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে গবেষকরা তাদের দেখিয়ে দিতে পারেন যে, আমাদের মুখ থেকে ড্রপলেট কতদূর চলে যেতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
মিউনিখের এক স্টুডিওতে দুটি পরীক্ষা চালানো হয়েছে৷ গান গাওয়ার সময় মুখ থেকে যে অদৃশ্য আর্দ্র ড্রপলেট বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে, মাটিয়াস এশটারনাখ ও স্টেফান ক্নিসবুর্গেস সেগুলি পরীক্ষা করেছেন৷ বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, বড় বিন্দুর পাশাপাশি ক্ষুদ্র এয়ারোসোলের মধ্যেও করোনা ভাইরাস থাকতে পারে৷
এয়ারলাঙেন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ড. স্টেফান ক্নিসবুর্গেস বড় আকারের অদৃশ্য ড্রপলেট বা বিন্দু পরীক্ষা করেছেন৷ সেগুলি দৃশ্যমান করে তুলতে গায়কদের লেজারের এক স্তরের দিকে মুখ করে গান গাইতে বলা হয়েছে৷ ক্নিসবুর্গেস বলেন, ‘‘যে কোনো দৃশ্যমান কণা লেজারের এই স্তরে প্রবেশ করবে৷ এমনকি মুখ থেকে নির্গত ড্রপলেটও লেজার রশ্মি থেকে ছিটকে বেরোবে৷ আমরা নির্দিষ্ট জায়গায় বসানো হাইস্পিড ক্যামেরার সাহায্যে সেগুলির ছবি তুলে কণার গতিপথ অনুসরণ করবো৷''
বড় বিন্দুর তুলনায় এয়ারোসোল আরও ক্ষুদ্র৷ তবে নিঃশ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে ই-সিগারেটের তরল পদার্থ গ্রহণ করলে, সেগুলিও দৃশ্যমান করে তোলা যায়৷ মুখ থেকে যে ধোঁয়া ছাড়া হয়, তা এয়ারোসোল দিয়ে তৈরি৷ সেই ধোঁয়া চোখে দেখা যায়৷ গান গাওয়ার সময়েও সেটা দৃশ্যমান হয়৷ মাটিয়াস এশটারনাখ নিজে তা যাচাই করে দেখেছেন৷
গান গাওয়া, কথা বলা বা নিঃশ্বাসপ্রশ্বাসের সময়ে মুখ থেকে দুই ধরনের তরল বিন্দু বেরিয়ে আসে৷ কথা বলার সময় বড় বিন্দুগুলি প্রায় দেড় মিটার দূরে মাটিতে পড়েযায়৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, গানের সময়েও কি তেমনটা ঘটে?
আরও অনেক ক্ষুদ্র এয়ারোসোলের আচরণ একেবারে ভিন্ন৷ সেগুলি এতই হালকা যে বাতাসের মধ্যে ভেসে বেড়াতে পারে৷ গবেষকরা জানতে চেয়েছিলেন, গান গাওয়ার সময়ে এয়ারোসোল ঠিক কী করে৷ মিউনিখের এলএমইউ হাসপাতালের মাটিয়াস এশটারনাখ বলেন, ‘‘এই কণা কোথায় যায়? সেটি কীভাবে প্রসারিত হয়? আমার সংক্রমণ ঘটলে আমার প্রতিবেশী বা বাকি দর্শকের জন্য আমি কি ঝুঁকির কারণ হতে পারি? আমরা আজ সেই সব প্রশ্নের জবাব দিতে চাই৷
পরীক্ষার জন্য সব প্রস্তুতি শেষ৷ পরের দিন দশ জন পেশাদার সংগীতশিল্পী দুটি হলে দশটি ভিন্ন পরীক্ষায় অংশ নেবেন৷ মাটিয়াস এশটারনাখ বলেন, ‘‘আমরা যে গ্যাস গ্রহণ করেছি, ঘরের মধ্যে তা সত্যি কতদূর চলে যেতে পারে, তা আমাকে সত্যি অবাক করছে৷''
তরল পদার্থ ধূমপান করে গান গাওয়া মোটেই সহজ কাজ নয়৷ কয়েকবার অনুশীলনের পর পরীক্ষা শুরু হচ্ছে৷ প্রতিটি সাদা ও কালো দাগ দশ সেন্টিমিটারের সমান৷ এভাবে এয়ারোসোলের ধোঁয়ার বিস্তার পরিমাপ করা সম্ভব৷
ডোরোটে রেঙেলিং/এসবি
করোনার বিরুদ্ধে কারা জেতে, কারা জেতে না
ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমানে সমানে লড়ে, কিন্তু এই লড়াইয়ে ব্রাজিল পাত্তাই পায় না৷ ৪৫ বছর আগের এক যুদ্ধের মতো পুঁচকে ভিয়েতনামের কাছে আবার লজ্জা পায় যুক্তরাষ্ট্র৷ করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের আরো কিছু বিষয় থাকছে ছবিঘরে..
ছবি: Getty Images/AFP/S. Lima
দেশ অপ্রস্তুত আর প্রেসিডেন্ট একগুঁয়ে হলে যা হয়
চীনে করোনা সংকট দেখা দেয়ার দু’মাস পরও যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাসামগ্রীর ঘাটতি, করোনা টেস্ট শুরু করায় বিলম্ব, ইটালিতে মৃত্যুর মিছিল দেখেও করোনাকে ট্রাম্পের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, মধ্য এপ্রিলেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে চাওয়া- ইত্যাদির উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি৷ বিশেষজ্ঞরা যা চান ট্রাম্প তার ঠিক বিপরীত দিকে হাঁটতে চেয়েছেন৷ ফলাফল পরাশক্তি হয়েও করোনার কাছে নাস্তানাবুদ হওয়া৷
শীতল যুদ্ধের যুগ আর নেই৷ তবে এ যুগেও কমিউনিস্ট শাসিত কিউবা আর যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মধুর হয়নি ৷ যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যু এক লাখ ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে, অথচ কিউবায় মারা গেছে মাত্র ৮৩ জন৷ হোক না মাত্র এক কোটি ১৪ লাখ মানুষের দেশ, করোনাকে এভাবে বোতলবন্দি করলো কিভাবে তা-ই এখন কৌতুহলের কেন্দ্রে৷ গার্ডিয়ান বলছে, শুরু থেকে সপ্তাহের সাতদিন ঘরে ঘরে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করে তা সম্ভব করেছে কিউবা৷
ছবি: pictrure-alliance/AP Photo/I. Francisco
বিশেষজ্ঞরা স্বেচ্ছাচারিতার কবলে পড়লে যা হয়
লকডাউন প্রশ্নে ট্রাম্পের বিরোধিতা করে কোণঠাসা হয়েছেন জাতীয় অ্যালার্জি ও সংক্রামক রোগ ইনস্টিটিউটের প্রধান ডা, অ্যান্থনি ফাউচি, একই বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর বিরোধিতা করে দায়িত্ব হারিয়েছেন ব্রাজিলের দুই স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷ সামাজিক দূরত্ব মানার সরাসরি বিরোধিতা করা বলসোনারোর দেশও এখন ধুঁকছে৷ গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে কিউবার চেয়ে সত্তর গুন পিছিয়ে আছে ব্রাজিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Lima
ভিয়েতনাম হলে যা হয়
ভিয়েতনামও করোনার বিরুদ্ধে দারুণ সফল৷ দেশ ছোট আর অর্থনীতি দুর্বল হলেও বড় যুদ্ধে ভিয়েতনাম কখনো হারেনি৷ ৩৫ বছর আগে সামরিক যুদ্ধে ব্যর্থ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, এখন ব্যর্থ হচ্ছে করোনা ভাইরাস৷ দ্রুত সীমান্ত বন্ধ করা, অল্প সময়ে বেশি পরীক্ষা করানো, সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন- সব নিয়ম কঠোরভাবে মেনে সফল হয়েছে ভিয়েতনাম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Hau Dinh
সরকার এবং সরকারপ্রধান অপরিনামদর্শী না হলে যা হয়
জনমনে অসন্তোষ দেখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট বন্ধ করেছিল ব্রাজিল সরকার৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তা আবার চালু হয়েছে৷ ফুটবলে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে আর্জেন্টিনা ২৬ হাজারের মতো সংক্রমণ আর মাত্র ৭৮৭ জন করোনায় মৃত্যু নিয়ে এখনো অনেক ভালো অবস্থায়৷ আর্জেন্টিনার জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি, বিপরীতে ব্রাজিলের জনসংখ্যা ২১ কোটির কাছাকাছি হলেও ব্যবধানটা কিন্তু সেই তুলনায় অনেক বড়!
ছবি: Getty Images
করোনাকে বেশি সময় দিলে যা হয়
করোনা যখন হানা দিলো, তখন পরীক্ষার প্রস্তুতি, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের জোগান- সব কিছুরই ঘাটতি ছিল ইউরোপের দেশটিতে৷ লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব মানতে চাননি অনেকে৷ ফলে বিপদ বেড়েছে দ্রুত৷ এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক৷ এ পর্যন্ত ইটালিতে ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ ডাক্তার মারা গেছেন একশ’রও বেশি৷ বেশির ভাগ ডাক্তারই মারা গেছেন পিপিই ছাড়া চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/E. Mattia Del Punta
ছোট দেশও ‘গাইডলাইন’ মানলে যা হয়
প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্ন জানিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডে আর করোনায় সংক্রমিত রোগী নেই৷ বিশ্লেষকরা বলছেন মূলত গাইডলাইন মেনে চলার কারণেই এমন সাফল্য এসেছে৷ ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের স্কুল অব ফার্মাসির শিক্ষক ওকসানা পাইসিক বলেন, ‘‘ প্রথমে খুঁজে বের করা, তারপর টেস্ট করা, আইসোলেট করা, প্রত্যেক রোগীকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা, সংক্রমণ ধরা পড়লে কোয়ারান্টিনে পাঠানো- এসব মেনেই নিউজিল্যান্ড সফল হয়েছে৷’’