পছন্দের সুর কানে এলে কার না মন মেতে ওঠে? বিজ্ঞানীরা মানুষের উপর সংগীতের প্রভাব সম্পর্কে অনেক গবেষণা চালাচ্ছেন৷ সংগীত মানুষের আচরণ কীভাবে বদলে দিতে পারে, তার কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
চলচ্চিত্রের ইতিহাসে কিছু সংগীত স্মরণীয় হয়ে আছে৷ সংগীতই চিত্রনাট্যে প্রায় অসহনীয় সাসপেন্স বা উত্তেজনার অনুভূতি এনে দেয়৷ সংগীত মনোবিজ্ঞানী হিসেবে প্রো. গ্যুন্টার রোটার বলেন, ‘‘সংগীত যে শরীরের ৫০টি বিভিন্ন প্যারামিটার বা স্থিতিমাপ পরিবর্তন করতে পারে, সেটা পরিমাপ করা সম্ভব৷ সংগীত শোনার সময়ে মস্তিষ্কের তরঙ্গ, হৃদস্পন্দন, এমনকি কয়েকটি হরমোনও বদলে যায়৷’’
সংগীত কীভাবে ও কেন আমাদের প্রভাবিত করে এবং আমাদের অনুভূতির সঙ্গে জুড়ে যায়, মিউজিক সাইকোলজিস্ট হিসেবে গ্যুন্টার রোটার তা নিয়ে গবেষণা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ভাষার সুরই সম্ভবত সংগীতের উৎস৷ ভাষার মধ্যে আবেগ থেকে মানুষ কিছুটা বার করে সংগীতের মধ্যে চালিত করেছে৷ আমরা সংগীতের মাধ্যমে মানুষের মনমেজাজ ও অবস্থা বদলে দিতে পারি৷ অন্তত কাগজেকলমে এমনটাই দাবি করা যায়৷’’
হোটেল-রেস্তোরাঁয় বেশিরভাগ সময়ে সংগীত চালু থাকে৷ আমরা কী খাচ্ছি, কত পরিমাণ খাচ্ছি এবং কত অর্থ ব্যয় করতে চাই, সংগীত সে সবের উপর প্রভাব ফেলে৷ যেমন ব্রিটেনের এক গবেষণা অনুযায়ী ক্লাসিকাল বা ধ্রুপদী সংগীত শুনলে অতিথিরা খাবারের জন্য দশ শতাংশ বেশি দাম দিতে প্রস্তুত থাকেন৷ এমনকি এমন সংগীতের অনুরাগী না হলেও মন উদার হয়ে উঠতে পারে৷ প্রো. রোটার অবশ্য মনে করেন, ‘‘ক্লাসিকাল সংগীত আমাদের পছন্দ না হলেও সেই ধারা অনেক বেশি অর্থবহ ও খানদানি মনে হয়৷ সেই সংগীত শোনার সময় আমরা আশেপাশের পরিবেশের অনেক বিষয়ের মধ্যেও সেই বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাই৷’’
সাংগীতিক প্রভাব সত্ত্বেও সেই সাফল্যের কিছু সীমা অবশ্যই রয়েছে৷ প্রো. গ্যুন্টার রোটার বলেন, ‘‘রেস্তোরাঁয় বসে কোনো গান শুনলে যে প্রভাব দেখা যায়, তার ফলে কিন্তু খাবারের মান সম্পর্কে অনুভূতি মোটেই ঢাকা পড়ে না৷ আমার মতে, সংগীতের প্রভাব এতদূর যেতে পারে না৷’’
আমাদের পছন্দের সংগীত মস্তিষ্কের মধ্যে আনন্দের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে৷ সংগীত যখন তথাকথিত ‘লিম্বিক সিস্টেম'-এ পৌঁছে যায়, তখন ডোপামিন নামের আনন্দের হরমোনের নিঃসরণ ঘটে৷ এর ফলে শুধু মনে আনন্দ আসে না, শরীরও অনেক শিথিল, কর্মক্ষম ও সক্রিয় হয়ে ওঠে৷ ফলে আমাদের কর্মক্ষমতার উপরও তার প্রভাব পড়ে৷
হাতির জন্য পিয়ানোর সুর!
‘হাতি মেরে সাথী’ কথাটা উপমহাদেশে ভীষণ জনপ্রিয়৷ হাতি নিয়ে ঢালিউড বলিউডে নির্মিত হয়েছে বেশ কিছু ছবি৷ ব্রিটিশ নাগরিক পল ব্যারটন সত্যিই হাতির বন্ধু৷ থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী এক গ্রামে হাতিদের তিনি পিয়ানো বাজিয়ে শোনান!
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
সুরের সুধা
থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী কাঞ্চনবাড়ি প্রদেশে হাতির অভয়ারণ্যে প্রতিদিন হাতিদের জন্য পিয়ানো বাজান পল৷ দিনে বেশ কয়েকবার পিয়ানো বাজান পল৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
খাওয়ার সময়
প্রতিদিন হাতিদের খাওয়ার সময়টায় আয়োজন করে পিয়ানো বাজান পল৷ এতে করে হাতিরা বেশ আরাম করে খাবার খেয়ে নেয়৷এ সময় তারা কোনো হইচই করে না৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
সুস্থ করে তুলতে পিয়ানো
এই অভয়ারণ্যের হাতিরা সবাই কমবেশি অসুস্থ, পাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার পাওয়া কিংবা অতিরিক্ত কাজে অচল প্রায়৷ সব হাতিই সুর ভালোবাসে বলে অভয়ারণ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
লাম দুয়ানের ভালোবাসা
৬৫ বছর বয়সি লাম দুয়ান এই আশ্রমের অন্ধ হাতি৷ রাতে ঘুমানোর সময় পিয়ানো বাজলে সে বেশ খুশি হয়৷ খাওয়া ও অন্যান্য সময়েও পলের পিয়ানো বাজলে হাতিরা বেশ শান্ত থাকে৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
মানুষের ভিড়
হাতি কেমন করে গান শোনে সেটি খবর হয়ে ছড়িয়ে পড়তেই মানুষের ভিড় বেড়েছে কাঞ্চনবাড়ি অভয়াশ্রমে৷ হাতির সঙ্গে মানুষেরাও উপভোগ করছেন পিয়ানোর সেই মূর্ছনা৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
সুরের সঙ্গে ৮ বছর
গত ৮ বছর যাবত হাতিদের চিকিৎসায় ও ব্যথা উপষমে সুর নিয়ে কাজ করে আসছে কাঞ্চনবাড়ি অভয়ারণ্যের কর্তৃপক্ষ৷ এতে সব হাতি পুরোপুরি সেরে না উঠলেও আরাম পায় বলে জানা গেছে৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
প্রতিদিন পিয়ানো
প্রতিদিন খুব ভোরে একটি ছোট ট্রাকে নিজের পিয়ানো নিয়ে অভয়ারণ্যে পৌঁছে যান পল৷এরপর মিউজিক নোট বদলে বদলে সুর শোনান হাতিদের৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
বন্ধু হাতি
অসুস্থ, অন্ধ বা পঙ্গু হয়ে যাওয়া হাতিদের সুর থেরাপি শুরু হওয়ার পর থেকে খুব একটা রাগতে দেখা যায়নি৷ আশ্রমের দর্শনার্থীরা অনায়াসে হাতিদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারে ও কাছ থেকে আদর করতে পারে৷
ছবি: Reuters/S. Z. Tun
8 ছবি1 | 8
রেস্তোরাঁ হোক অথবা কেনাকাটা, সব ক্ষেত্রেই সেটা দেখা যায়৷ ক্রেতাদের স্বাচ্ছন্দ্য জরুরি, কারণ একমাত্র তখনই তারা বেশি সময় কাটাবে এবং আরও কেনাকাটা করবে৷ অন্তত কাগজেকলমে সেটাই আশা করা হয়৷
কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কেনাকাটার সময়ে সংগীতের প্রভাবের বিষয়টি কিন্তু বেশ জটিল৷ প্রো. রোটার বলেন, ‘‘যেমন কোনো বহুতল বিপণীর সবচেয়ে নীচের তলায় কোনো জিনসের দোকানে সেটা কাজে লাগতে পারে৷ কোনো ডিজে সংগীত পরিবেশন করতে পারে৷ ক্রেতাদের গড় বয়সও মোটামুটি একরকম৷ তারা অবসর সময়ে কোন গান শোনে, আমাদের তা ভালো জানা আছে৷ সেই গান বাজালে কিছু সাফল্য পাওয়া যেতে পারে৷ এমন আশা থাকলেও মাত্রাতিরিক্ত প্রত্যাশা উচিত নয়৷’’
কারণ পরিকল্পনা করে সেই সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়৷ এমনকি সেরা কনসেপ্ট বা কৌশল সবসময়ে লক্ষ্য পূরণ করে না৷ সংগীত মনোবিজ্ঞানী হিসেবে প্রো. গ্যুন্টার রোটার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘বিষয়টা হলো, বিজ্ঞান এখনো সংগীত পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারে নি৷ সংগীতের পেছনে এক মানুষ থাকে, যে নিজের অনুভূতি অনুযায়ী কাজ করে, সংগীত রচনা করে এবং সেটি কাজে লাগায়৷’’
অর্থাৎ সব কিছু ঠিকমতো খাপ খেলে তবেই সংগীতের পূর্ণ প্রভাব খাটানো সম্ভব৷
ইয়ো সিগলার/এসবি
পপ সংগীতের অদ্ভুত কিছু যুগলবন্দী
রক স্টারের সঙ্গী অপেরা গায়িকা, ব়্যাপারের যুগল লোক গায়ক৷ পপ সংগীতের ইতিহাসে এমন অস্বাভাবিক কিছু জুটির কথা থাকছে আজকের ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kinowelt Filmverleih
জ্যা-জি ও বিয়ন্সে
ব্যক্তিগত জীবনে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী৷ কিন্তু গানের ভুবনে একসাথে হবেন, এমন কথা কখনও শোনা যায়নি৷ কোনো ধরনের ঘোষণা বা মার্কেটিং ছাড়াই হঠাৎ করেই রিলিজ হলো যৌথ অ্যালবাম ‘এভরিথিং ইজ লাভ’৷ জ্যা-জি ও বিয়ন্সের বিবাহিত জীবনে অনেক দিন ধরেই নানা উত্থান-পতনের খবর আসছিল মিডিয়ায়৷ তবে এখন যে তাদের মধ্যে দারুণ সমঝোতা, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/MAXPPP/F. Dugit
লেডি গাগা ও টোনি বেনেট
ভিন্ন ধারার সংগীতশিল্পি লেডি গাগার সাথে বৃদ্ধ জ্যাজ গায়ক! কেন নয়! ২০১৪ সালে একটি জ্যাজ অ্যালবামে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন টোনি বেনেট ও লেডি গাগা৷ যাঁরা মনে করে লেডি গাগা ‘শুধু পোকার ফেইস’-এর মতো ইলেক্ট্রোপপ ভালো করেন, তাঁদের গাগা আরো একবার বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তিনি কতটা বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী৷
ছবি: Getty Images/Kevork Djansezian
কাইলি মিনোজ ও নিক কেইভ
একজনকে ধরে নেয়া হয় গোথিক পপের অন্যতম সেরা হিসেবে, অন্যজন জনপ্রিয় ডিস্কো ধারায়৷ এই দুই ধারার সম্মিলন কীভাবে সম্ভব! সেটিই করে দেখালেন কাইলি ও নিক৷ ‘হোয়্যার দ্য ওয়াইল্ড রোজেজ গ্রো’ গানে দু’জনের সমন্বয় পেয়েছে অসাধারণ জনপ্রিয়তা৷ গানের মূল বিষয় – এক প্রেমিকের, যে তার প্রেমিকাকে খুন করে৷
ছবি: Youtube/emimusic
ক্রিস্টিনা এগিলেরা ও দ্য স্টোনস
শক্তিশালী কণ্ঠস্বরের সাথে রক এন রোল লেজেন্ড৷ ২০০৮ সালে বিখ্যাত পরিচালক মার্টিন স্করসেজি তাঁর কনসার্ট ফিল্ম ‘শাইন আ লাইট’-এর জন্য এই দু’জনকে একসাথে নিয়ে আসেন৷ ফিল্মের লিভ উইথ মি গানটিতে মিক জ্যাগার ও পপ সম্রাজ্ঞী এগিলেরা দুর্দান্ত ঝলক দেখান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kinowelt Filmverleih
ফ্রেডি মার্কারি মন্টসেরাট কাবালে
রক অ্যান্ড পপ সেনসেশনের সাথে অপেরা গায়কের জুটি৷ ১৯৮৭ সালে দু’জন মিলে রেকর্ড করেন গান – ‘বার্সেলোনা’৷ কাবালের পারফরমেন্সে মুগ্ধ মার্কারির সাথে তৈরি হয় গভীর বন্ধুত্ব৷
ছবি: picture-alliance/empics
এলটন জন ও কিকি ডি
এই দুই তারকার ‘ডোন্ট গো ব্রেকিং মাই হার্ট’-কে ইতিহাসের অন্যতম ওয়ান হিট ওয়ান্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ ১৯৭০ সালে রিলিজ হওয়া এই গান এখনও সাড়া জাগায় প্রেমিক-প্রেমিকাদের মনে৷