ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে অবস্থিত মেডেন ফার্মাসিউটিক্যালের তৈরি কাশির সিরাপ খেয়ে গাম্বিয়ায় ৬৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে ভারত৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চলতি সপ্তাহে জানিয়েছে, তারা মেডেনের তৈরি চারটি সিরাপ গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখেছে৷ সেগুলোর মধ্যে যে পরিমাণ ডাইইথাইলিন গ্লাইকল ও ইথাইলিন গ্লাইকল পাওয়া গেছে তা ‘অগ্রহণযোগ্য’৷ এই দুটি উপাদান বিষাক্ত হতে পারে এবং সেগুলোর কারণে কিডনি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷
ওষুধ তৈরিতে গ্লিসারিনের সস্তা বিকল্প হিসেবে এই দুটি উপাদান ব্যবহৃত হতে পারে৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে চারটি সিরাপ পরীক্ষা করেছে সেগুলো হলো প্রোমেথাজিন ওরাল সলিউশন, কফেক্সমালিন বেবি কফ সিরাপ, মেকফ বেবি কফ সিরাপ এবং ম্যাগ্রিপ এন কোল্ড সিরাপ৷
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই চার সিরাপের নমুনা পরীক্ষা করতে কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে তাদের পরীক্ষার তথ্য ভারতকে দেয়ার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে৷
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, পরীক্ষার তথ্য পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷
হরিয়ানা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনিল ভিজ বলেছেন, পরীক্ষায় যদি ‘ভুল কিছু পাওয়া যায় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে’৷
ছয়টি প্রাণঘাতী সুপারবাগ
চিকিৎসা থেকে শুরু করে কৃষিতে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারে জন্ম নিচ্ছে ঔষধ প্রতিরোধী সুপারবাগ৷ কার্যকরী অ্যান্টিবায়োটিকের অভাবে মানব স্বাস্থ্যও এখন হুমকিতে পড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/BSIP
ক্যানডিডা অরিস
ত্বকের এক ধরণের ছত্রাক সংক্রমণ থেকে জন্ম নেয় ক্যানডিডা অরিস৷ এটি এখন এতটাই শক্তিশালী সুপারবাগ যে, কোনো ঔষধে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না৷ যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি এটি ছড়িয়ে পড়েছে৷ ৫টি মহাদেশে এর অস্তিত্ব মিলেছে৷ এই সুপারবাগের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে এমনকি কয়েকটি হাসপাতাল বন্ধের ঘটনাও ঘটেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Armer
সিউডোমোনাস এরোগিনোসা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে মানবজাতির জন্য অন্যতম হুমকি উল্লেখ করে ‘নাইটমেয়ার বাগ’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করেছে৷ ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে এটি বেড়ে ওঠে, যা বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিরোধী জীবাণুগুলোর একটি৷ দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মানুষই প্রথম এই সুপারবাগে সংক্রমিত হন৷ তবে দূষিত পানির মাধ্যমে সুস্থ মানুষও এর দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/BSIP
নাইসেরিয়া গনোরিয়া
গনোরিয়া চিকিৎসার কোনো টিকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি৷ অ্যাজিথ্রোমাইসিন, সেফিক্সিম এবং সেফট্রিয়াক্সনের মতো অ্যান্টিবায়োটিকই এটি প্রতিরোধের একমাত্র উপায়৷ কিন্তু বহুল ব্যবহারে যৌনবাহিত এই জীবাণু এখন এইসব ঔষধের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে৷ গতবছর অস্ট্রেলিয়ায় আর চলতি বছর যুক্তরাজ্যে এই ধরণের জীবাণু সংক্রমণের খোঁজ মিলেছে৷
ছবি: picture alliance/BSIP
স্যালমোনেলা
জীবাণুটি আগে খাবার থেকে আসা ‘নন টাইফয়ডাল’ সংক্রমণ ঘটানোর জন্য পরিচিত ছিল৷ কিন্তু এর মাধ্যমে এখন টাইফয়েড জ্বরেও আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ৷ গত কয়েক দশকে জীবাণুটির অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে৷ এশিয়া ও আফ্রিকায় দূষিত খাবার ও পানি থেকে এই জীবাণুর উৎপত্তি হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Thompson
অ্যাসিনেটোব্যাকটার
এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জীবাণুর তালিকায় রয়েছে৷ অ্যাসিনেটোব্যাকটার সাধারণত মাটি ও পানিতে থাকে৷ রোগীর শরীরে এর অস্তিত্ব সহজে টের পাওয়া যায় না৷ কিন্তু এর ফলে দুর্বল রোগীদের ফুসফুস, রক্ত ও ক্ষতে প্রাণঘাতী সংক্রমণ হতে পারে৷ মূলত হাসপাতালগুলোর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে তাই এই জীবাণুর বেশি সংক্রমণ দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/BSIP/CDC
ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষা
বিশ্বে প্রতি বছর ১৭ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে মায়োব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিসের কারণে৷ পরিসংখ্যান বলছে, নতুন করে যক্ষা রোগের যত বিস্তার ঘটছে তার ১৩ ভাগই শক্তিশালী চিকিৎসা দিয়েও প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না৷ ৬ ভাগ পুরোপুরি ঔষধ প্রতিরোধী, যার কারণে মানুষ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছেন৷
ছবি: picture-alliance/BSIP/NIAID
6 ছবি1 | 6
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গতমাসের শেষের দিকে ভারতের ‘ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়াকে’ গাম্বিয়ায় শিশু মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছিল৷
তবে মেডেন ফার্মাসিউটিক্যালের পরিচালক নরেশ কুমার গয়াল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, তারা মাত্র বৃহস্পতিবারই এ বিষয়ে জানতে পেরেছেন৷ তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন বলেও জানান৷
১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত মেডেন কোম্পানি শুধুমাত্র গাম্বিয়াতে ঐসব সিরাপ রপ্তানি করে বলে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে৷