যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের করোনা ভাইরাসে ব্যাপকহারে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে৷করোনা থেকে রক্ষার কোনো সরঞ্জাম নেই৷ মাস্ক না পেয়ে টি-শার্ট ছিড়ে নাক-মুখ বাঁধছেন অনেকে৷
বিজ্ঞাপন
স্যান ডিয়েগোর ওটে মেসা ডিটেনশন সেন্টারে অভিবাসনপ্রত্যাশী এলসিকে (ছদ্মনাম) মাস্ক দিতে এসেছেন এক গার্ড৷তবে মাস্ক পেতে হলে একটা ফর্মে স্বাক্ষর করতে হবে৷ সেই ফর্মে লেখা আছে, ‘‘করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হলে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না৷’’ এলসি এবং ডিটেনশন সেন্টারে থাকা অন্য কয়েকজনের এই অভিযোগ অবশ্য কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করেছে৷ কর্তৃপক্ষের দাবি, শুধু মাস্ক পরলে করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচা যাবে না- এই সত্য মনে করিয়ে দিতেই ফর্মটিতে স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছে৷
এদিকে ওটে মেসা ডিটেনশন সেন্টারের ৭২ জন বন্দির মধ্যে করোনার সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে৷মাত্র এক সপ্তাহে সংক্রমিতের সংখ্যা এক থেকে বেড়ে ১২ হয়েছে৷
ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে অভিবাসনপ্রত্যাশী বন্দিদের মনে৷ ফর্ম পূরণ না করলে মাস্ক দেয়া হয় না৷ করোনার হাত থেকে বাঁচতে তাই টি-শার্ট ছিড়ে নাক-মুখ ঢাকছেন অনেকে৷
করোনাকালে নানা দেশের কয়েদিদের অবস্থা
কারাগারের ভেতরে করোনার সংক্রমণ থেকে কীভাবে কয়েদিদের রক্ষা করা হচ্ছে, জানুন ছবিঘরে…
ছবি: Reuters/A. Foto
‘আমরা ফেলনা নই’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একটি জেলের জানালায় লেখা, ‘‘আমাদের সাহায্য করুন, আমরা ফেলনা নই৷’’ এই মূহুর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্তের দেশ অ্যামেরিকায় জেলবন্দী কয়েদিদের আতঙ্কে থাকা খুব একটা আশ্চর্যজনক নয়।
ছবি: Reuters/J. Vondruska
প্রতিবাদ যখন কারাগারেও
ইটালিতে কয়েদিদের পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করার ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে বেশ কিছু কয়েদি বিক্ষোভ করেন। আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়াতেও অনুন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন বেশ কিছু কয়েদি।
ছবি: Reuters
কয়েদিদের জন্য বাড়তি পদক্ষেপ
অনেক দেশে কয়েদিদের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মেক্সিকোতে কয়েদিরাই নিজেদের জন্য মাস্ক তৈরি করছেন। কোথাও চলছে কয়েদিদের টীকাদানের কাজ। ইন্দোনেশিয়ায় কয়েদিদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করছেন জেলখানা।
ছবি: Reuters/J. L. Gonzales
স্বনির্ভর কয়েদিরা
মেক্সিকোর মতো সার্বিয়াতেও কয়েদিরা জোর কদমে বানাচ্ছেন মাস্ক। মাস্ক ছাড়াও বিশেষ জীবাণুরোধক পোশাক বানাচ্ছেন তারা। এবং মাস্ক ও পোশাক নিজেদের এবং দেশের ডাক্তারদের জন্যও প্রস্তুত করছেন তারা।
ছবি: Reuters/Lebanese Internal Security Force
মুক্তি পাচ্ছেন অনেকে
ইন্দোনেশিয়ায় সাজার মেয়াদ শেষ হতে চলা কয়েদিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সংক্রমণ ঠেকাতে। একই ধারা দেখা যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতেও। সেখানে ‘লো রিস্ক প্রিজনার’ হিসেবে চিহ্নিত কয়েদিদের ছেড়ে দেবার কথা উঠেছে। জেলে ভিড় কমিয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর কথা আলোচিত হচ্ছে বিশ্বের অন্যত্রও।
ছবি: Reuters/A. Foto
5 ছবি1 | 5
করোনা ভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ এখন যুক্তরাষ্ট্র৷ এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে সেখানে৷ মৃত্যুর মিছিল থামাতে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ এক নির্দেশে বড় অপরাধ না করা অভিবাসন প্রত্যাশীদের ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে৷ সেই নির্দেশ অনুযায়ী এ পর্যন্ত ১৬০ জনকে ছাড়া হয়েছে৷ তবে এখনো ৩৩ হাজার ৮০০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী আছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে৷
বেশিরভাগ ডিটেনশন সেন্টারেই মাস্ক, হাত ধোয়ার সুব্যবস্থা বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার উপায় নেই৷
লুইজিয়ানায় ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে৷ ছয় হাজারেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীকে আটক রাখা হয়েছে সেখানে৷ সেখানকার এক ডিটেনশন সেন্টারের পরিস্থিতি বোঝাতে ক্যামেরুন থেকে আসা একজন বলেছেন, ‘‘এখানে আমাদের মধ্যে কোনো সামাজিক দূরত্ব নেই৷ স্রেফ ঈশ্বরের কৃপায় বেঁচে আছি আমরা৷’’
অভিবাসন প্রত্যাশীদের আইনি সংস্থা আরএআইসিইএস অ্যাকশন গ্রুপের মাধ্যমে প্রকাশ করা ভিডিওতে হাউসটনের মন্টগোমারি প্রসেসিং সেন্টারের এক নারী অভিবাসন প্রত্যাশী বলেছেন, ‘‘অফিসারদের মাস্ক আছে, আমাদের নেই৷’’ আরেক নারী জানিয়েছেন, তিনি অন্তঃসত্ত্বা এবং সন্তানের জীবন নিয়ে তিনি চিন্তিত৷
এসিবি/কেএম (এপি)
যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃতদের গণকবর
যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে প্রতিদিন। লাশ এত বেশি যে কবর দেয়ার জন্য নিতে হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। ড্রোন থেকে তোলা ছবিতে তারই কিছু মুহূর্ত...
ছবি: Reuters/L. Jackson
ভয়াবহ বিপর্যয়ে যুক্তরাষ্ট্র
করোনা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বে নেমেছে বিপর্যয়৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রে মাত্রাটা অনেক বেশি৷ ভাইরাসটির প্রাদূর্ভব প্রথমে চীনে দেখা গেলেও চীন পরিস্থিতি সামলে নিয়েছে৷ এশিয়া থেকে ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়লে শুরুতে মৃত্যুর সংখ্যায় সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল ইতালি, ঠিক পেছনেই ছিল স্পেন৷ কিন্তু এখন সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ মৃতের সংখ্যা ২২ হাজার ছাড়িয়েছে সেখানে৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
'মৃত্যুপুরী' নিউইয়র্ক
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা নিউইয়র্কের৷ গোটা দেশের মোট আক্রান্তের ৩৪ ভাগই নিউইয়র্কের৷ ফলে করোনায় মৃতদের জন্য এখন আর কবর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ গণকবর দেয়া শুরু করতে হয়েছে বাধ্য হয়ে৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
কেন এই গণকবর
যে হারে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যু হচ্ছে, সেই হারে আলাদাভাবে সবাইকে কবর দেয়ার জায়গা এবং এত বড় কর্মযজ্ঞে শরিক হওয়ার মতো লোকবলের অভাব রয়েছে৷ তাই বহু মানুষকে কবর দেয়া হচ্ছে একসঙ্গে৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
কোথায় এই গণকবর?
মৃত্যুহার খুব দ্রুত কমাতে না পারলে যুক্তরাষ্ট্রে কত জায়গায় গণকবরের ব্যবস্থা করতে হবে তা এখন বলা মুশকিল৷ তবে নিউইয়র্কের হার্ট আইল্যান্ডের অন্তত একটি গণকবরের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসেছে৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
কবর খোঁড়ার ধুম
ড্রোন থেকে তোলা ছবিতে দেখা যায়, হার্ট আইল্যান্ডে করোনা ভাইরাসে মৃতদের জন্য কবর খোঁড়ার কাজ চলছে পুরোদমে৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
শেষ বিদায়ে 'একা'
মৃতদের হাসপাতাল থেকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গণকবরে৷ সংক্রমণ এড়াতে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনদের অনুপস্থিতিতেই দেয়া হচ্ছে কবর৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
সারি সারি কবর, থরে থরে কবর
লম্বা লাইনে অনেক মৃতদেহ পাশাপাশি কবর দিয়েও চলছে না, হাট আইল্যান্ডে কয়েক স্তরে কবর দেয়া হচ্ছে করোনায় মৃতদের৷