সৌদি আরবে গাল্ফ অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ সেখানে তথাকথিক ইসলামিক স্টেট বা আইএস মোকাবিলার উপায় নিয়ে কথা হবে৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
বিজ্ঞাপন
জঙ্গি এই সংগঠনের বিরুদ্ধে আকাশ থেকে বিমান হামলার অভিযান চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ গাল্ফ অঞ্চলের দেশগুলো এতে সহায়তা করছে৷ তবে বৃহস্পতিবারের আলোচনায় আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়তে সামরিক সহায়তা ছাড়াও আর্থিক ও রাজনৈতিক সহায়তা চাইবে যুক্তরাষ্ট্র৷ ইতিমধ্যে গাল্ফ দেশগুলোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে কথা বলেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশটন কার্টার৷ বুধবার গাল্ফ মিত্রদের তিনি বলেন, ইরাকে আইএসকে পরাজিত করতে শিয়াপ্রধান দেশটিতে বিভিন্ন ইসলামি গোষ্ঠীর সমন্বয়ে একটি সরকার গঠন করা প্রয়োজন৷ সেক্ষেত্রে সুন্নিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে৷ উল্লেখ্য, গাল্ফ অঞ্চলের ছয়টি দেশের মধ্যে ওমান ছাড়া বাকি দেশগুলো সুন্নিপ্রধান৷
এছাড়া আইএস-এর কাছ থেকে ইরাকের যে অঞ্চলগুলো মুক্ত করা গেছে সেখানকার অবকাঠামো পুনর্নিমাণকাজে গাল্ফ দেশগুলোর কাছ থেকে আর্থিক সহায়তাও চেয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী৷
ওবামার সঙ্গে গাল্ফ অঞ্চলের শীর্ষনেতাদের বৈঠকে এই বিষয়গুলো আবারও উত্থাপিত হবে৷ এছাড়া শিয়াপ্রধান ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সম্পর্কের বিষয়টিও গাল্ফ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ কেননা, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব পশ্চিমা বিশ্ব ইরানের সঙ্গে একটি পরমাণু চুক্তি করেছে৷ বিষয়টি ভালোভাবে নেননি গাল্ফ নেতারা৷ কারণ শিয়াপ্রধান ইরানকে তাঁরা অত্র অঞ্চলের শান্তির বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক মনে করেন৷
সৌদি বাদশার সঙ্গে বৈঠক
বুধবার সৌদি বাদশা সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেন ওবামা৷ সে সময় সৌদি আরবের মানবাধিকার সমস্যা নিয়ে দুই নেতার মধ্যে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস৷ তবে ঠিক কোন বিষয়ে কথা হয়েছে সেটা জানায়নি তারা৷
বৃহস্পতিবার গাল্ফ নেতাদের সঙ্গে ওবামার বৈঠকে ঐ দেশগুলোতে নারীর সমানাধিকার ও সেখানে বাস করা শিয়াদের মানবাধিকারের বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পাবে না বলে জানাচ্ছে বার্তা সংস্থাগুলো৷ যদিও বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার জন্য ওবামার প্রতি আহ্বান ও চাপ রয়েছে৷
ইউরোপে পরমাণু হামলা চালাবে আইএস!
ইউরোপীয় কমিশন ও ন্যাটোর দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন৷ লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে তাঁরা বলেন, আইএস সহ অন্যান্য সন্ত্রাসীরা পরমাণু উপাদান সংগ্রহের ব্যাপারে আগ্রহী৷
জেডএইচ/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)
কোথা থেকে অর্থ পাচ্ছে আইএস?
পেট্রোলিয়াম বিক্রি থেকে শুরু করে ব্যাংক ডাকাতি, অধিকৃত এলাকায় কর চাপানো এবং প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি করে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট প্রায় ২০০ কোটি ডলার একত্র করেছে৷ তাতে তাদের আরও ২ বছর চলে যাবার কথা৷
ছবি: picture alliance/abaca
বেআইনি তেল বিক্রি
বেআইনি ভাবে পেট্রোলিয়াম বিক্রি আইএস-এর আয়ের প্রধান উৎস৷ সিরিয়া ও ইরাকে বেশ কিছু বড় তৈলকূপ আপাতত তাদের দখলে৷ মূলত তুরস্কের মধ্য দিয়েই তারা চোরাচালানের কাজ চালিয়ে থাকে৷ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, কালোবাজারে তেল বিক্রি করে আইএস-এর মাসে প্রায় ৪ কোটি ডলার আয় হয়৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
ব্যাংক ডাকাতি
সিরিয়া ও ইরাকে কোনো এলাকা দখলের পর আইএস সবার আগে ব্যাংকগুলি কবজা করে ফেলে৷ মার্কিন প্রশাসনের ধারণা, এভাবে তারা ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছে৷ শুধু মোসুল শহর দখল করেই তারা নাকি ৬২ কোটি ডলার লুট করেছিল৷ বছরে প্রায় ৫০,০০০ জিহাদি কর্মীর বেতন দিতে এই অর্থ যথেষ্ট৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
কর আদায় ও চাঁদাবাজি
আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষকে ৫ থেকে ১৩ শতাংশ আয়কর দিতে হয়৷ জার্মান সরকারের সূত্র অনুযায়ী, আইএস অ-মুসলিমদের কাছ থেকে জিজিয়া করও আদায় করে৷ তাছাড়া চাঁদাবাজিও তাদের আয়ের আরেকটি উৎস৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি
‘জিহাদিরা’ আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধ্বংস করতে অভ্যস্ত৷ তবে বেশি দামি অ্যান্টিক সম্পদ সযত্নে সরিয়ে ফেলে কালোবাজারে বিক্রি করে তারা৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করতে পিছপা হয় না এই গোষ্ঠী৷ তবে বিক্রিমূল্যের সঠিক অঙ্ক জানা নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
মুক্তিপণ ও প্রচারণা
মানুষজনকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় আইএস-এর দু-মুখী চাল৷ একদিকে এটা আয়ের একটা উৎস, অন্যদিকে এর মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রচারণার কাজও হয়ে যায়৷ কিছু ‘মূল্যবান’ জিম্মির শিরশ্ছেদ করে সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপুল সাফল্য পায় আইএস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সহানুভূতি দেখাতে চাঁদা
আইএস-এর প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ মানুষ গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে রয়েছে৷ তারা এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তহবিলে আর্থিক অবদান রাখে৷ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সূত্র অনুযায়ী সৌদি আরবে ২০১০ সাল থেকে ৮৬০ জন ব্যক্তিকে সন্ত্রাসের কাজে আর্থিক সাহায্য দেবার অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ সেখানে ১০০ জনের শাস্তি হয়েছে৷