‘গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কোনো রেকর্ড নেই’
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯আর চকবাজারের আগুনের কারণ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কথা বলা হলেও তদন্তে তার কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বিস্ফোরক অধিদপ্তর৷
বাংলাদেশে এখন প্রাইভেট কারসহ কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) চালিত যানবাহনের সংখ্যা পাঁচ লাখেরও বেশি৷ এই তথ্য সরকারের রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানী লিমিটেড-এর৷ প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (সিএনজি) প্রকৌশলী মহম্মদ আলী বিশ্বাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা সিএনজি কনভারশন সেন্টারগুলোর অনুমোদন দেই৷ এ পর্যন্ত ১৮০টির অনুমোদন দিলেও অপারেশন আছে ১০-১২টি৷ বাকিগুলো কাজ করেনা৷ আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে এপর্যন্ত পাঁচ লাখের মত গাড়ি সিএনজিতে রূপান্তর করা হয়েছে৷''
যানবাহন সিএনজিতে রূপান্তরের পর তা নিয়মিত রিটেষ্ট হয় কিনা দেখার দায়িত্ব বিস্ফোরক পরিদপ্তরের৷ তারা এই রিটেষ্ট ওয়ার্কশপেরও অনুমোদনও দেয়৷ পরিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক সামসুল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পাঁচ বছর পর সিলিন্ডার রিটেষ্ট করতে হয়৷ কিন্তু এই রিটেষ্টের আগ্রহ শুরুতে ছিলনা৷ তবে এখন আগ্রহ বাড়ছে৷ ২০১৮ সালে রিটেস্টের ওয়ার্কশপ ছিল ৭-৮টি৷ তবে এবছর সংখ্যা ৩০টির মত৷''
তিনি বলেন, ‘‘গাড়িতে সিএনজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের যে খবর আমরা দেখি সেটা আসলে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ নয়৷ কয়েকটি কারণে বিস্ফোরণ হয়৷ দু'টি গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে ফেটে যেতে পারে৷ অথবা সিলিন্ডার ছাড়া অন্য যে কিট আছে তার কারণে আগুন ধরে যেতে পারে৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘শুরুতে চকবাজারে গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণে আগুনের কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত আমরা তার কোনো প্রমাণ পাইনি৷ কোনো আলামতও পাওয়া যায়নি৷''
প্রসঙ্গত, সিএনজি উচ্চচাপে সিলিন্ডারে ভরা হয়৷ উচ্চচাপে প্রতি বর্গইঞ্চিতে ৩২শ' পাউন্ড চাপে গ্যাস ভরা হয়৷ তাই সিলিন্ডারের এই চাপ সামলাবার মত শক্তি থাকে৷ বাংলাদেশে সিলিন্ডারগুলো বিদেশ থেকে আনা হয় এবং এর জন্য অনুমতি লাগে৷ তবে এরসঙ্গে অন্যান্য কনভারসন কিট আমাদানিতে অনুমতি লাগেনা৷ স্থানীয়ভাবেও তৈরি হয়৷ আর প্রতি পাঁচ বছর পর রিটেষ্ট করার কথা থাকলেও তা করেন না গড়ি মালিকরা৷ এমনকি গাড়ির ফিটনেসসহ অন্যান্য কাগজপত্র নবায়নের সময় রিটেস্টের প্রমাণও দাখিল করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়না৷ জানা গেছে, মাত্র ৫৩ হাজার ৮০০ সিলিন্ডারের রিটেস্টিং করা হয়েছে৷ মোট সিলিন্ডারের যা মাত্র ১৩-১৪ ভাগ৷
রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানী লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরনের কোনো ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি৷ একটি সিলিন্ডারও বিস্ফোরণ হয়নি৷ একটা ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ৷ যেটা হয় তাহল সিলিন্ডারের মাথায় একটা রেগুলেটর থাকে৷ ওটা নিম্নমানের হলে নানা সমস্যা হয়৷ এটা নিয়ে আমরা ও বিস্ফোরক অধিদপ্তর সেমিনারও করেছি৷''
তিনি বলেন, ‘‘বিআরটিএ'র দায়িত্ব আছে৷ গাড়ির ফিটনেস দেয়ার সময় সিএনজির রিটেস্টের কাগজপত্রও দেখার নিয়ম৷ সেটা না দেখলে সমস্যাতো হতেই পারে৷''
এই বিষয়ে বিআরটিএ-র সঙ্গে কথা বলতে চাইলে দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি৷ তবে একজন কর্মকর্তা জানান এটা বিআরটিএ-র রোড সেফটি বিভাগের দেখার কথা থাকলেও তারা দেখেনা৷
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রায় ১৮ বছর আগে পরিবেশ রক্ষায় সবুজ জ্বালানি হিসেবে গাড়িতে সিএনজি ব্যবহার শুরু হয়৷ কিন্তু এটা ঠিকমত মনিটরিং না করায় আতঙ্কে পরিণত হয়েছে৷