1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গাড়ি চালিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দুই নারী

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৯ জুন ২০২১

করোনা বিধ্বস্ত দেশ যখন থমকে গিয়েছিল, তখনও গতি রুদ্ধ হয়নি কলকাতার দুই নারীর৷ পিপিই পোশাক পরে ক্যাব চালিয়ে তারা কোভিড রোগীদের পৌঁছে দিয়েছেন হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে৷ 

কলকাতা শহরের বুকে ট্যাক্সি চালান বিজয়গড়ের শম্পা নন্দী৷ছবি: Payel Samanta/DW

ভারতে করোনা সংক্রমণ এখন নীচের দিকে৷ কিন্তু কয়েক সপ্তাহ আগেও ছবিটা এমন ছিল না৷ সংক্রমণের প্রকোপে মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল৷ কিন্তু শম্পা নন্দী আর টগরী শীল এসবের পরোয়া করেননি৷ কোভিড রোগীদের সেবা দিতে তারা প্রথম সারিতে নেমে কাজ করেছেন৷ সেবা দিয়ে চলছেন এখনও৷ 

মা-মেয়ের একই কক্ষপথ

কলকাতা শহরের বুকে পিঙ্ক ট্যাক্সি চালান বিজয়গড়ের শম্পা নন্দী৷ কোভিডের অনেক আগেই তার গাড়ির যাত্রা শুরু হয়েছিল৷ কোভিডের সময় শহর কলকাতা দেখল তার অন্য রূপ৷ পিপিই পোশাক পরে তিনি প্রথম ঢেউ থেকেই কোভিড আক্রান্তদের ট্যাক্সি পরিষেবা দিয়েছেন৷ ভয় করেনি? ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘যেদিন প্রথম বলা হয়েছিল কোভিড ডিউটি করতে, আমি রাজি হয়ে গিয়েছিলাম৷ কোনো ভয় বা নার্ভাস লাগেনি৷ মানুষের দরকার, মানুষের পাশে দাঁড়াব৷ তাই আমি আর কিছু ভাবিনি৷’’

শম্পা নন্দী

This browser does not support the audio element.

নারী হিসেবে পিছিয়ে থাকতে রাজি নন তিনি৷ তাই নিরাপত্তা নিয়ে আপোস না করেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন কলকাতার অন্যান্য নারী গাড়িচালকদের সঙ্গে৷ আবার পেশাদার ক্যাব পরিষেবার বাইরে একজন মা তিনি৷ কোভিড ডিউটি করে মেয়ের রান্না থেকে সংসারের যাবতীয় তাকেই দেখতে হয়৷ কখনো রান্না করতে করতে কোভিড রোগীর অনুরোধ এলে তাকে সব ফেলে বেরোতে হন৷ হয় না রান্না৷ প্রতিবেশী আর মেয়ে সামলে নেন সবকিছু৷ বয়সে ছোট হলেও নবম শ্রেণীর ছাত্রী অনন্য কুন্ডু বোঝে তার মায়ের দায়িত্ব৷ তাই মায়ের জন্য সে গর্বিত৷ তবে যখন পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক ছিল, তখন শঙ্কিতও ছিল৷ শম্পা বলেন, ‘‘মেয়ের মনে তখন ভয় ছিল৷ কিন্তু আমি বুঝিয়েছি, প্রোটেকশন নিয়ে বোরোচ্ছি তো৷ ভয় করে লাভ নেই৷ সবাই ঘরে বসে থাকলে কাজ এগোবে কী করে?’’

শম্পা খেয়াল করেছেন, চিকিৎসাকর্মীদের মতোই কোভিডের সঙ্গে গাড়িচালকদেরও লড়াই কতটা কঠিন! প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে ভ্যাকসিনের জন্য তারাও অগ্রাধিকার পেলে ভাল হতো৷ 

শিক্ষিকা যখন গাড়িচালক

টগরী শীল

This browser does not support the audio element.

ট্যাংরার বাসিন্দা টগরী শীল গাড়ি চালাচ্ছেন মাত্র সাত-আট মাস৷ তার মধ্যেই কোভিড রোগীদের বাহন চালানোর গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন৷ জরুরি পরিষেবার কাজের সূত্রে যখনই ফোন আসে, বেরিয়ে পড়েন৷ এভাবেই রোজ কত অসহায় মানুষকে তার গাড়ি করেই পৌঁছে দিচ্ছেন হাসপাতালের দরজায়৷ কয়েক সপ্তাহ আগেও হাসপাতালে অক্সিজেন-ওষুধের পাশাপাশি বেডের সংকট আতঙ্কে ফেলেছিল সবাইকে৷

ছাব্বিশ বছরের টগরী সেই সময়ের একটি অভিজ্ঞতার কথা ডয়চে ভেলেকে জানান৷ ঢাকুরিয়ার এক নব্বই বছরের কোভিড আক্রান্ত বৃদ্ধকে নিয়ে সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ছোটাছুটি শুরু হয়৷ কোথাওই বেড না মেলায় দিনভর চালক টগরীর ক্যাবেই তিনি অক্সিজেন নিতে থাকেন৷ একসময় মেডিকেল কলেজের ডাক্তাররাও টগরীর গাড়িতেই বৃদ্ধের চিকিৎসা করেন৷ এমন বহু ঘটনার সাক্ষী তিনি৷ টগরী বলেন, ‘‘একবার যখন ওই পিপিই কিটটা পরে ফেলি, তখন মাথায় আর কিছু থাকে না৷ এটা যুদ্ধক্ষেত্র আর আমি যোদ্ধা৷ রোগীকে বাঁচানো ছাড়া আর কোনো কিছুই ভাবতে পারি না৷’’

ড্রাইভিং-এর পাশাপাশি টগরী একটি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলেও খণ্ডকালীন শিক্ষকটা করেন৷ সেখানে মিড-ডে-মিল দেওয়া থাকে৷ প্রশাসনিক কাজের দায়িত্বও পড়ে৷ তাই কখনো কখনো অনলাইনে স্কুলের ছাত্রীদের ‘হোম টাস্ক' করাতে করাতেও কোভিড রোগীদের ট্যাক্সি পরিষেবা দিতে পারেন৷ কীভাবে? টগরী বলেন, ‘‘এখন অনলাইন ক্লাস চলছে৷ ফলে আমি নোটস রেডি করে বেরিয়ে যাই৷ এমনও হয় গাড়ির মধ্যে থাকতে থাকতেই ছাত্রীদের সঙ্গে নোটস আদানপ্রদান করি, কথা বলে নেই৷'' কাজের মধ্যেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে ভাল লাগে৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেক অসহায় পরিবারের ঔষধ কেনার টাকা থাকে না৷ তারা ক্যাবের ভাড়া দেবেন কী করে? মাঝেমাঝে তাদের পারিশ্রমিক ছাড়াই পৌঁছে দেই৷ তাতে অসুবিধা হয় না৷ এটুকু মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে ভালই লাগে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ