1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গায়েবি, মিথ্যা ও অজ্ঞাত পরিচয় মামলা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১ এপ্রিল ২০১৯

‘মিথ্যা মামলা’ বললেই সবকিছু স্পষ্ট হয়না৷ মিথ্যা মামলার আরেক সংস্করণ ‘গায়েবি মামলা’, যা এবার জাতীয় নির্বাচনের আগে বেশ আলোচিত হয়েছিল৷ আরও আছে মৃত ব্যক্তির নামে মামলা, অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামালা৷

Wörter der Woche | Zechpreller
ছবি: Colourbox

মামলার এই নানা প্রকারভেদ নিয়ে কথা বলার আগে সংজ্ঞা নির্ধারণের চেষ্টা করা যাক:

মামলা: যে মামলার অভিযোগ সত্য নয়৷ অথবা যা ঘটেছে তা বাড়িয়ে অভিযোগ করা হয়েছে৷ আবার এমনও হতে পারে, ঘটনা ঘটেছে কিন্তু যাদের আসামি করা হয়েছে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন৷

গায়েবি মামলা: গায়েবি মামলা শব্দটি সামনে আসে ৩০ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে৷ এইসব মামলায় আসলে ঘটনাই ঘটেনি বলে অভিযোগ৷ ঘটনা সাজিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা করা হয়েছে৷ গায়েবি মামলা প্রধানত রাজনৈতিক৷

অজ্ঞাত পরিচয় মামলা: এইসব মামলায় দু-একজন আসামির নাম থাকলেও বাকি আসামিরা থাকেন অজ্ঞাত পরিচয়৷ তাদের নাম ঠিকানা থাকেনা৷ আবার মামলার সব আসামিই অজ্ঞাত পরিচয় হতে পারে৷

প্রথম দুই ধরণের মামলা হয়রানিমূলক৷ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন অথবা ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষকে দমনে এই ধরণের মামলা হয়৷ আর অজ্ঞাত পরিচয় আসামির মামলায় হয়রানি ও পুলিশের উৎকোচ আদায়ের বড় সুযোগ থাকে৷ কারণ তদন্ত পর্যায়ে সন্দেহজনক হিসেবে ওই মামলায় যে কাউকে আটক করতে পারে পুলিশ৷ এই ধরণের মামলা রাজনৈতিকভাবেও ব্যবহার হতে পারে৷ কোনো রাজনৈতিক কর্মী বা নেতাকে আটকের পর তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকলেও ওই ধরণের কোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর সুযোগ থাকে৷

গায়েবি মামলার নমুনা

গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর৷ ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিচারে আদালত বসানোকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হন৷ ওই ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ এবং পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছে বলে চকবাজার থানায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়৷ মামলায় যাদের আসামি করা হয় তাদের মধ্যে আজিজ উল্লাহ নামে একজন কথিত ঘটনার ১৬ মাস আগেই ২০১৬ সালের মে মাসে মারা যান৷ মামলাটির বাদি পুলিশ নিজেই৷

এর আগে একইভাবে ৩ সেপ্টেম্বর আরেকটি মামলা করে চকবাজার থানা পুলিশ৷ সেই মামলায় আসামিদের মধ্যে একজন বিএনপি নেতা খতিবুর রহমান তাঁর এক মাস আগে ওই বছরের ১০ আগস্ট হজ করতে সৌদি আরব যান৷

ওই সময়ে দু'টি ঘটনা নিয়েই সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন ছাপা হয়৷ তাতে বলা হয় যে দুটি ঘটনার অভিযোগে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ওই দুটি ঘটনায় ককটেল বিস্ফোরণ বা হামলার ঘটনা অস্তিত্বহীন৷ আর দু'টি মামলায়ই এজাহারনামীয় ছাড়াও অজ্ঞাত পরিচয় আসামি আছে৷

মৃত ব্যক্তির নামে মামলা, ওয়ারেন্ট, চার্জশিট

২০১৬ সালের ২৬ জুন ঢাকার মিরপুর মধ্য পাইকপাড়ার হাবিবুর রহমানের বাড়িতে সশস্ত্র হামলা হয় বলে অভিযোগ৷ ওই ঘটনায় ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে ২৯ জনকে আসামি করে মিরপুর থানায় মামলা হয়৷ কিন্তু মামলায় ১২ নম্বর আসামি আরিফুর রহমান ঘটনার অনেক আগেই মারা যান৷ আর ১৯ নম্বর আসামি রুবেলের বয়স এক বছরের কম৷ কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, মিরপুর মডেল থানার পুলিশ মামলার তদন্ত করে মৃত ব্যক্তি এবং শিশুর নামেও চার্জশিট দেয়৷ আর তদন্ত চলাকালে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছিল৷ ২০১৭ সালের মে মাসে মামলাটির বিচার পর্যায়ে এই ঘটনা ধরা পড়ে৷

আদালতে গায়েবি মামলা

নির্বাচনের আগে গায়েবি মামলার বিষয়টি আদালতে নিয়ে যায় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা৷ ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী ও বিএনপির আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া হাইকোর্টে একটি রিট করেন৷ রিট আবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের ১ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন থানায় বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে তিন হাজার ৭৩৬টি গায়েবি মামলা দায়ের করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী৷ এসব মামলায় আসামি করা হয় তিন লাখ ১৩ হাজার ১৩০ জনকে৷ আর অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় কয়েক হাজার৷ এইসব ‘গায়েবি এবং মিথ্যা মামলা' বন্ধ এবং যে মামলাগুলো করা হয়েছে সেব্যাপারে তদন্ত চান তারা৷

শুনানির সময় আদালতে আইনজীবীরা বলেন, ১০ বছর আগে মারা গেছেন এমন লোকদেরও এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে৷ ২০০৭ সালে মারা গেছেন এমন লোককেও আসামি করা হয়েছে৷ শুনানির সময় কয়েকটি মামলার এজাহার পর্যবেক্ষণ করে হাইকোর্ট বলেন, ‘‘এ ধরনের মামলায় (গায়েবি) পুলিশের ভাবমূর্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়৷’’ বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বেঞ্চ এই রিটের ওপর বিভক্ত আদেশ দেন৷ পরে তৃতীয় বেঞ্চ রিটটি খারিজ করে দেয়৷

নারী নির্যাতন মামলায় মিথ্যার প্রাধান্য

পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালে নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে ১৫ হাজার ২১৯টি, ২০১৬ সালে ১৬ হাজার ৭৩০টি, ২০১৫ সালে ১৯ হাজার ৪৮৬টি, ২০১৪ সালে ১৯ হাজার ৬১৩টি, ২০১৩ সালে ১৮ হাজার ৯১টি, ২০১২ সালে ১৯ হাজার ২৯৫টি এবং ২০১১ সালে ১৯ হাজার ৬৮৩টি৷ পুলিশ সদরদপ্তর জানায় তদন্তে দেখা গেছে, এসব মামলার ৯০ ভাগই ভুয়া৷

আর ২০১৩ সালে তখনকার আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ঢাকায় এক সেমিনারে দাবি করেন, ‘‘নারী নির্যাতন মামলার ৮০ শতাংশই মিথ্যা মামলা৷’’ আর তখনকার আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘‘যৌতুক নিয়ে যেসব মামলা হয়, তার ৯০ শতাংশই মিথ্যা৷’’ তিনি বলেন, ‘‘বিদেশে ১০০ ভাগ আসামির সাজা হয়৷ আর আমাদের দেশে ৮০ শতাংশ খালাস পায়৷ এর কারণ মিথ্যা মামলা৷’’

মিথ্যা ও গায়েবি মামলা কেন হয়

মিথ্যা ও গায়েবি মামলার মূল কারণ প্রতিপক্ষকে হয়রানি ও ঘায়েল করা৷ এর সঙ্গে শুধু মামলার বাদি নয়, পুলিশ এবং এক শ্রেণির আইনজীবীও জড়িত থাকেন৷ থানায় দায়ের করা মামলায় পুলিশের হাত থাকে৷ আর আদালতের মামলায় হাত থাকে কিছু আইনজীবীর৷ আর যেসব মামলা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য দায়ের করা হয় তার পেছনে থাকে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা৷ আর অজ্ঞাতপরিচয় আসামি মামলায় দেয়ার মূল উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে অর্থ আদায়৷ আবার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে প্রয়োজন অনুযায়ী ওই সব মামলায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়৷

মানবাধিকারকর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবারের নির্বাচনের আগে আমরা মিথ্যা বা গায়েবি মামলার রাজনৈতিক ব্যবহার দেখেছি৷ আর অতীতে এত অল্প সময়ে এত বেশি গায়েবি মামলা আমরা হতে দেখিনি৷ এর উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের ঘায়েল করা৷ তাদের ভয়ের মধ্যে রাখা অথবা কারাগারে আটক রাখা৷ এইসব মামলার মধ্য দিয়ে রাজনীতি করার যে অধিকার তা বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে৷ ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে৷ বাকস্বাধীনতাকে সংকুচিত করা হয়েছে৷''

‘এবার রাজনৈতিক গায়েবি মামলা নতুন মাত্রা যোগ করেছে’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘তবে মিথ্যা মামলা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে৷ স্থানীয় বিরোধ, দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ, জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব এসব কারণে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মিথ্যা মামলা অতীত থেকে চলে আসছে৷ তবে এবার রাজনৈতিক গায়েবি মামলা নতুন মাত্রা যোগ করেছে৷ এটা সরাসরি রাজনৈতিক প্রভাবে হয়েছে, যা আমাদের পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি করে৷’’

অজ্ঞাত পরিচয় মামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘এটা সাধারণ মানুষকে হয়রানি এবং পুলিশের উৎকোচ আদায়ের একটি বড় হাতিয়ার৷ নিরীহ ব্যক্তিকে ওইসব মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক বা আটকের ভয় দেখিয়ে এক শ্রেণির পুলিশ বাণিজ্য করে৷ আর এর রাজনৈতিক ব্যবহারও আছে৷ কোনো রাজনৈকি নেতা-কর্মীকে আটকের পর কোনো মামলা না থাকলে অজ্ঞাত পরিচয় মামলায় আটক দেখানো হয়৷’’

দায় কার?

গায়েবি, মিথা মামলার দায় কার? পুলিশ ছাড়াও রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের চাপ এবং মামলাবাজদের দায়ী করা হয়৷ কিন্তু পুলিশের সাবেক এআইজি এবং ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান সৈয়দ বজলুল করিম পুলিশকে প্রধানত দায়ী করেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘থানায় যে-কোনো মানুষ যে-কোনো অভিযোগ নিয়ে যেতেই পারেন৷ কিন্তু পুলিশ যদি তার দায়িত্ব পালন করে তাহলে মিথ্যা বা গায়েবি মামলা অনেকটাই এড়ানো যায়৷ পুলিশের কাজ হলো যে-কোনো অভিযোগ এজাহার আকারে নেয়ার আগে তাৎক্ষণিক প্রাথমিক তদন্ত করা৷ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা এবং নিরপেক্ষ মানুষের সঙ্গে কথা বলা৷ এটা করলে মিথ্যা মামলা এড়ানো সম্ভব৷ তারপরও মিথ্যা মামলা হলে তদন্ত পর্যায়ে সেটা সুরাহা করা সম্ভব৷ কিন্তু যদি তদন্ত না করে অফিসে বসে কাজ করেন তাহলেতো আর কিছু করার থাকেনা৷ এগুলো দেখার জন্য সুপারভাইজিং অফিসার হিসেবে পুলিশের সিনিয়র অফিসারদের দায়িত্ব দেয়া আছে৷ তারা এটা ঠিকমত করেন বলে আমার মনে হয়না৷’’

‘এটা অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ কর্মকর্তার কারণে হয়’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘অজ্ঞাত আসামি বলে এজাহারে কিছু থাকার কথা নয়৷ এটা করা হয় উদ্দেশ্যমূলকভাবে৷ একটা মামলায় কয়েকশ' অজ্ঞাত আসামি করা হয়৷ এটা পুলিশ করে অবৈধ সুবিধা আদায়ের জন্য৷ নিরীহ মানুষকে হয়রানি করার জন্য৷ কিসের অজ্ঞাত? এখন জানা না গেলে তদন্তে জানা যাবে৷’’

রাজনৈতিক চাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কোনো পুলিশ কর্মকর্তা কোনো কর্তৃপক্ষের কোনো অনৈতিক আদেশ মানতে বাধ্য নন৷ পুলিশ যদি নৈতিক অবস্থানে থাকে, একটু সাহস দেখায় তাহলেই কেউ তাঁকে মিথ্যা বা গায়েবি মামলায় বাধ্য করতে পারেনা৷ আসলে এটা অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ কর্মকর্তার কারণে হয়৷ তারাও অনৈতিক সুবিধা নেয়, বিনিময়ে রাজনৈতিক সার্ভিস দেয়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা মানুষকে অনেক কষ্টের মধ্যে ফেলে৷ পুলিশের কাজ হচ্ছে মানুষকে ন্যায়বিচার পেতে সহায়তা করা, হয়রানি করা নয়৷ প্রাথমিক অনুসন্ধান ছাড়া থানায় বসে দালালের মাধ্যমে মামলা নিতে মৃত ব্যক্তি যে আসামি হবেন তাতে অবাক হওয়ার কী আছে?’’

প্রতিকার কী?

মিথ্যা বা গায়েমি মামলার আইনগত প্রতিকারের বিধান সাধারণভাবে যেমন দণ্ডবিধিতে আছে আবার বিশেষ কিছু আইনে আলাদাভাবে প্রটেকশন ক্লজও আছে৷ কিন্তু মামলা হয়ে গেলে হয়রানি থেকে মুক্তি নেই৷ কারণ যিনি এর শিকার তাকে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে মামলাটি মিথ্যা অথবা তাকে মিথ্যা আসামি করা হয়েছে৷ এর আগে ওই মিথ্যা মামলায় তাকে হাজিরা দিতে হবে, আইনজীবী নিয়োগ করতে হবে৷ এমনকি আটক হয়ে কারাগারেও যেতে হতে পারে৷ মিথ্যা মামলা থেকে তদন্ত পর্যায়েও রেহাই পাওয়া যেতে পারে৷ আর তা সম্ভব না হলে বিচারের মাধ্যমে রেহাই পেতে হবে৷ তবে এর বাইরে মিথ্যা মামলা বাতিলের জন্য উচ্চ আদালতেও আবেদন করা যায়৷ আদালত সন্তুষ্ট হলে মামলা স্থগিত বা বাতিল করতে পারেন৷

‘সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে দরকার আইনের শাসন’

This browser does not support the audio element.

ব্যারিস্টার মিতি সানজানা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মিথ্যা মামলা প্রমাণ করা গেলে এরজন্য ক্ষতিপূরণও পেতে পারেন৷ কিন্তু তার আগ পর্যন্ত হয়রানির শিকারতো হতেই হবে৷’’

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ বজলুল করিম বলেন, ‘‘পুলিশই পারে এই হয়রানি থেকে নিরীহ মানুষকে বাঁচাতে৷ মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করলেই মিথ্যা মামলা কমে যাবে৷ এজাহার দায়েরের আগেই সুবিবেচনা প্রয়োগ করতে হবে৷ কারণ এজাহার একবার দায়ের হলে সেটা আর সংশোধনের তখন সুযোগ থাকেনা৷’’

দণ্ডবিধির ২১১ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলা করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ কেউ যদি তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা আদালতে মিথ্যা প্রমাণ করতে পারেন তাহলে বাদির বিরুদ্ধে ওই ধারায় মামলা করা যায়৷ আর ফৌজদারি কার্যবিধি ২৫০ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন আদালত৷ কোনো পুলিশ কর্মকর্তা আমলযোগ্য নয় এ রকম কোনো মামলায় মিথ্যা প্রতিবেদন দিলে তার বিরুদ্ধেও এ ধারা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন আদালত৷

ব্যারিস্টার মিতি সানজানা জানান, ‘‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৭ ধারায় মিথ্যা মামলা বা অভিযোগের দায়ে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷ আবার যৌতুক আইনেও মিথ্যা অভিযোগকারীর শাস্তির বিধান আছে৷ কারণ পারিবারিক বিরোধ এবং সহিংসতার মামলায় প্রচুর মিথ্যা মামলা হয়৷ মিথ্যা মামলা ছাড়াও দণ্ডবিধির ১৯৩, ১৯৪ এবং ১৯৫ ধারায় স্পষ্ট বলা বলা আছে মিথ্যা সাক্ষ্যের মাধ্যমে মিথ্যা মামলায় সহায়তা অপরাধ৷ এই অপরাধে ৭ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে৷ যদি এমন একটি মিথ্যা মামলা করা হয় যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড তাহলে এই মিথ্যা মামলার শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড৷’’ তদন্ত পর্যায়ে মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব হলো ওই মিথ্যা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে মামলার জন্য আদালতে আবেদন করা৷

কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশে মিথ্যা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও প্রতিকার পাওয়ার নজির বিরল৷ আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ দেখা যায়না বললেই চলে৷ আর এই প্রতিকার পাওয়া এক দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়ার ব্যাপার৷ মিতি সানজানা বলেন, ‘‘তাই মিথ্যা মামলার হয়রানি থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে দরকার আইনের শাসন, সুশাসন৷ বিচার প্রক্রিয়ার একটি অংশ পুলিশ৷ তাই মামলা দায়েরের সময়ই যদি পুলিশ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে তাহলে মিথ্যা মামলা এড়ানো যায়৷ আর রাজনৈতিক কারণে, প্রভাবিত হয়ে মিথ্যা মামলার কালচার দূর করতে প্রয়োজন গণতন্ত্র ও সুশাসন৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ