‘‘কখনো কখনো প্রকৃত যোগ্যতার চেয়ে ফর্সা না কালো এটিই যোগ্যতার মাপকাঠি হয়ে ওঠে৷ তবুও আমরা বলি আমরা বর্ণবাদী নই৷'' বর্ণবাদ সম্পর্কে ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্যটি করেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী বন্যা মির্জা৷ তাঁর এই মন্তব্যটি দেখে বাসবি খুবই পছন্দ করেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘এটা বোধহয় আমাদের রক্তের সাথে মিশে আছে, যা কাটাতে কয়েক'শ বছর পার করতে হবে৷''
অন্যদিকে কালোকে যে অবহেলা করা হয় তা মানতে রাজী নন বন্ধু তাপস বোস৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘একদমই না, কারণ আমরা হিন্দু বাঙালিরা অতি কালো, শ্মশান কালী, কালী পূজা মহাভক্তি সহকারে বিশ্বাসের সাথে করে থাকি৷''
বন্ধু রনির মতে ফর্সা হওয়ার ক্রিমের বিজ্ঞাপনই নাকি বর্ণবাদকে উসকে দিচ্ছে৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘ফেয়ার্নেস ক্রিম সংক্রান্ত সব বিজ্ঞাপনই বর্ণবাদকে উসকে দিচ্ছে৷ তিনি বেশ দুঃখ করে লিখেছেন, ‘‘তারা এমনভাবে কথাগুলো বলে যাতে মনে হয় কালো মানুষ পৃথিবীতে থাকার যোগ্য না৷''
গরবিনি, আবেগী এবং স্বাধীনচেতা – বাঙালি নারীর সঙ্গে এই তিনটি বিশেষণই মানানসই৷ নারীর গুণ সম্পর্কে জানিয়েছেন ডয়চে ভেলের পাঠকরা৷ তাঁদের মতামত এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি বাঙালি নারীর দশগুণ নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Zaman/AFP/GettyImagesগরবিনি, আবেগী এবং স্বাধীনচেতা – বাঙালি নারীর সঙ্গে এই তিনটি বিশেষণই মানানসই৷ আবেগ যেমন তাঁদের দ্রুত স্পর্শ করে, তেমনি স্বাধীনতার প্রশ্নে কিন্তু তাঁরা সত্যিকার অর্থে অনড়৷ নিজের সত্ত্বা নিয়ে অহংকার তাঁদের আছে বটে, তবে তার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের মধ্যে রয়েছে অসীম ধৈর্য্য৷
ছবি: Zaman/AFP/GettyImagesবাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে শাড়ি৷ সেই শাড়ি বাঙালি নারীর সৌন্দর্য্য ফুটিয়ে তোলে চমৎকারভাবে৷ বিভিন্নভাবে শাড়ি পরতে জানেনও তাঁরা৷ আর ‘উপহার হিসেবে শাড়ি’? – কোন বাঙালি মেয়ে না চায় বলুন?
ছবি: DW/A. Islamবাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন৷ নববর্ষ, ঈদ কিংবা দুর্গা পূজা – সব উৎসবই যেন বাঙালি নারীর জন্য তৈরি৷ প্রতিটি উৎসবের সঙ্গে মানানসই পোশাক পরতে এবং সেই উৎসবের উপযুক্ত রান্নায় পারদর্শী তাঁরা৷ ডয়চে ভেলের পাঠক সুজন খানের কথায়, ‘‘বঙ্গের নারী লাজুক প্রকৃতির, কিন্তু যে কোনো উপলক্ষ্যেই প্রাণ খোলা হাসি উপচে পড়ে তাঁদের৷’’
ছবি: Zaman/AFP/GettyImagesবাঙালি নারী ‘ডায়েট’ করছেন, এমনটা বেশ বিরল৷ তাই খাওয়ার ব্যাপারে তাঁরা বেশ উদার৷ কথায় বলে না, মাছে-ভাতে বাঙালি? অবশ্য মাছ-ভাতের পাশাপাশি ফুসকা কিংবা চটপটি পেলে তো আর কথাই নেই৷ আসলে টক, ঝাল, নোনতা, মিষ্টি, এমনকি তেতোও পছন্দ এই নারীদের৷
ছবি: Debarati Mukherjiবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাই ধরুন৷ দেশ সামলানোর কঠিন দায়িত্ব পালনের মাঝেও রান্না ঘরে যেতে ভোলেন না তিনি৷ গত বছর ছেলের জন্য রান্না করার সময় তোলা তাঁর এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তুলেছিল৷ বাঙালি মেয়েরা রাঁধতে যে ভীষণ ভালোবাসেন!
ছবি: Sajeeb Wazedবাঙালি মেয়েদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা কি খুব কঠিন? না৷ সকলেই জানেন যে, কাজটা সহজই৷ একটি লাল গোলাপ পেলে কিংবা প্রিয় রেস্তোরাঁয় নিয়ে গেলেই তাঁরা সন্তুষ্ট৷ ডয়চে ভেলের পাঠক রন্জু খালেদের মতে, বাঙালি নারীর মধ্যে ‘একইসাথে দৃঢ়তা ও নমনীয়তা এবং প্রজাপতির চপলতা’ রয়েছে৷
ছবি: DW/A. Islamজীবনানন্দ দাসের ‘বনলতা সেন’ কিংবা রবি ঠাকুরের ‘কৃষ্ণকলি’ – বাঙালি নারীর কাজল কালো চোখের প্রশংসা পাবেন অনেক কবির কবিতাতেই৷ সত্যি বলতে কি, বাঙালি নারীর চোখ পুরুষকে টানে সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: N.Seelam/AFP/GettyImagesবাংলাদেশের কিংবা ভারতের মেয়েরা চুপ করে বসে আছেন – এমন দৃশ্য কল্পনা করাও কঠিন৷ তাঁরা কথা বলতে ভালোবাসেন৷ রান্না থেকে রাজনীতি – সব বিষয়েই একটা মতামত আছে তাঁদের৷ ডয়চে ভেলের পাঠক জিএনএস নয়নের কথায়, ‘‘নারী পুরুষের যে কোনো কষ্ট অতি সহজে ভুলিয়ে দিতে পারে৷ এই গুণই আমাকে মুগ্ধ করে, আবার সাথে অবাকও করে৷’’
ছবি: DW/A. Islamবাঙালি মেয়েরা নারীবাদী৷ বিতর্কিত বাঙালি লেখিকা তসলিমা নাসরিন তাঁদের অনেকেরই প্রিয়৷ নাসরিনের ‘আমার মেয়েবেলা’ পড়েনি এমন নারী পাওয়া মুশকিল৷
ছবি: AFP/Getty Imagesবাংলাদেশি কিংবা ভারতীয় বাঙালি নারীর গুণ কি আর অল্পতে জানানো যায়, বলুন? কিছু গুণ না হয় অজানাই থাক৷ তবে একটির কথা বলে শেষ করি, বাঙালি মেয়েরা কিন্তু ঘুরতে খুব ভালোবাসেন৷ তথ্য সহায়তা: ডয়চে ভেলে ফেসবুক পাতা, ইন্ডিয়াওপাইন্স, স্কুপহুপ
ছবি: DW/A. Islam
আর বন্ধু এইচএম আরিফ হোসেন কিন্তু রনির সাথে একমত৷ আর তাই তিনি বর্ণবাদ উসকে দেওয়ার সব বিজ্ঞাপন বন্ধ করার পক্ষে মত জানিয়েছেন ফেসবুকে৷
তবে জন সায়মনের কথা হচ্ছে, বর্ণবাদ বিষয়টি খুবই খারাপ৷ তাঁর মতে, সাদা মানুষরা সবসময় কালোদের ঘৃণা করে আর এটাই বাস্তব সত্য৷ তারা এ সম্পর্কে বড় বড় কথা বললেও তা কার্যে পরিণত করেনা৷
মোজাম্মেল হক বলছেন এটাই নাকি প্রচলিত নিয়ম হয়ে গেছে৷
সুভাষ সাহা বলছেন, গায়ের রং ফর্সা না কালো সে ব্যাপারে তো আর নিজেদের কিছু করার নেই, এর পুরোটাই ঈশ্বরের হাতে৷ এ সম্পর্কে প্রিয়া সাহাও সুভাষ সাহার সাথে একমত৷
‘‘গায়ের রং কালো হওয়া বিষয়টি নিয়েই আমি নিজেই লিখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ডয়চে ভেলে আমার মনের কথা জেনে ফেলেছে, অভিনন্দন!'' এই মন্তব্যটি করেছেন আমাদের পাঠক রুবী নাথ৷
সখটা আজব হলেও সত্যি যে ইউরোপের ফর্সা মানুষেরা শ্যামলা হতে চায় আর আমাদের দেশের মানুষেরা গায়ের রং ফর্সা করতে কত কী করে থাকে৷ এ সম্পর্কে ফেসবুক বন্ধু ইকবাল হোসেন ‘স্মাইলি' দিয়ে জানিয়েছেন তিনিও একথা জানেন যে কিছু শ্বেতাঙ্গ মানুষ শ্যামলা রংয়ের ত্বক খুবই পছন্দ করেন৷
সুভাষ সাহাও তা জানেন তবে তার কাছে এটা খুবই হাস্যকর মনে হয়৷ ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু আজাদ ইসলাম তাকে সমর্থন করেছেন৷
আমাদের ফেসবুকে লাবণ্য ইসলাম খুবই দুঃখ করে তার মনের কথা জানিয়েছেন যে প্রকৃত যোগ্যতার কথা সবাই নাকি বোঝে না অর্থাৎ গায়ের রংকেই বেশি মূল্য দেওয়া হয়৷
তবে ফজলে মনিরের মতামত হলো, ‘‘ফর্সা না কালো এটির সাথে ফিগার ও গুরুত্বপূর্ণ৷''
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন