1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গায়ের রঙ চাপা, ময়লা না পরিষ্কার?

৫ জুন ২০২০

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে পুরো অ্যামেরিকা ফুঁসছে৷ বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোতেও৷ কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় এ নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই৷ কারণ বর্ণ বৈষম্যে তারা আরও এগিয়ে৷

Bangladesch Kinderheirat
ছবি: Getty Images/A. Joyce

‘কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কাঁদো কেনো?’ কবি উপন্যাসে সেই কবে লিখেছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কিন্তু বাঙালিদের মন থেকে সেই ময়লা দূর হয়নি৷ হয়ত ভাবছেন আমার সাথে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে দেখে লিখতে বসেছি৷ না তা নয় বরং উল্টো৷ আমার সাথে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি, কিন্তু অন্ধ হলে যেমন প্রলয় বন্ধ হয় না, তেমনি আমার সাথে ঘটেনি বলে দেশে বর্ণ বিদ্বেষ নেই সেটা তো ঠিক না৷

আমরা যখন স্কুলে পড়ি ঠিক সেসময় আমার বাবার এক বন্ধুর বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গেলাম ওনাদের এবং আমাদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য৷ মেয়ে দেখে ঐ কাকুর বাসায় ঢুকতেই ওনার মা বললেন, মেয়ের গায়ের রং কেমন? পরিষ্কার? শ্যামলা, চাপা? এই ঘটনাটি আজ থেকে ৩২ বছর আগের ঘটনা৷ কিন্তু আমার ছোট্ট মনে দাগ কেটে গেছে৷ 

এরপর অনেকগুলো বছর কেটে গেছে৷ আমরা আরও আধুনিক আর সভ্য বলে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছি৷ কিন্তু আসলে কি তাই? ছোট্ট একটা ঘটনা বলি৷ ২০১৫ তে আমার বোনের মেয়ের বয়স যখন ৫ বছর, কেবল স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে৷ ওর গায়ের রং কালো৷ শুধু এই একটি কারণে স্কুলের কয়েকটি মেয়ে তাকে খেলায় নেয়নি৷ সে বাসায় এসে তার মা আর নানীর হাতে হাত রেখে বলেছিল, তোমরা ‘একরকম’ আমি আর বাবা ‘একরকম’৷ আমার দুলাভাইয়ের গায়ের রং ওর মত৷ ৫ বছর বয়সেই ওর মাথার মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলো বৈষ্যমের বীজ৷ যে সহপাঠীরা ওর সাথে এই আচরণ করেছিলো, তারা নিশ্চয়ই পরিবার থেকেই এটা শিখেছে৷

আমরা যে কতটা বর্ণবাদী, সেটা আর একটা ঘটনা থেকে আরও স্পষ্ট হয়েছে৷ অভিনেত্রী সুমাইয়া শিমু বিয়ে করেছেন ভীষণ মেধাবী, শিক্ষিত একজন পুরুষকে৷ কিন্তু এদেশের মানুষের কাছে তার রং চেহারার জন্য কতটা না হেয় হতে হয়েছে!

এত গেলো বর্ণ বৈষম্যের কথা৷ এবার আসি ধর্ম বৈষম্যে৷ তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় একটি বিরতির সময় আমরা দেখলাম দুই বান্ধবীর মধ্যে হাতাহাতি হচ্ছে৷ বিষয় কি? জানতে পারলাম হিন্দু-মুসলমান নিয়ে ঝগড়া৷ একজন বলছে, লাল পিঁপড়া হিন্দু আর একজন বলছে লাল পিঁপড়া মুসলমান৷ মুসলিম বান্ধবী এক পর্যায়ে ছড়া কেটে ওঠে, ‘নমো নমো তুলসিপাতা, হিন্দুরা খায় গরুর মাথা’৷ যাই হোক এক শিক্ষিকার মধ্যস্থতায় সেদিনের ঝগড়ার মিমাংসা হয়৷ মজার ব্যাপার হল৷ যে হিন্দু বান্ধবীটি ঝগড়া করছিলো পরে সে একজন মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করে দিব্যি সংসার করছে৷ 

অমৃতা পারভেজ, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Böll

স্কুলের আর একটি ঘটনা: স্কুলে হিন্দু আর মুসলমানদের আলাদা ক্লাস হত, যেহেতু বই আলাদা৷ হিন্দু ধর্মের ক্লাস হত অন্য একটি ছোট্ট ক্লাস রুমে৷ একবার আমাদের হিন্দু শিক্ষক অসুস্থ থাকায় আমরা ক্লাসে বসেছিলাম৷ আরবি শিক্ষক এসে বললেন, কি ব্যাপার তোমরা এখানে কেনো? হিন্দু হয়ে ইসলাম ধর্মের ক্লাসে থাকবা তা তো হবে না৷ আমরা তখন সেই ঠাঁ ঠাঁ রোদের মধ্যে মাঠে গিয়ে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়েছিলাম, যেনো কোন শাস্তি পেয়েছি৷

সাদা-কালো, হিন্দু-মুসলিম, রোগা-পাতলা, ছেলে-মেয়ে এইসব বৈষম্য আমাদের রক্তে ঢুকে গেছে৷ এমন বৈষম্য আমার মধ্যেও আছে৷ যেমন: মোটা ছেলেদের নামের আগে আমি মোটু, ভোটকা এগুলো বসিয়ে ডাকতে পছন্দ করি৷ যেমন ধরুন: মোটু মাহফুজ, ভোটকা রাসেল৷ কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন ছেলেরা কিন্তু এতে মোটেও রাগ করে না৷ কিন্তু আমি নিশ্চিত কোন মেয়ে হলে আমার অবস্থা খারাপ হত! এ যে দ্যাখেন আবারও আমি বৈষম্য করে ফেললাম৷ বললাম না বৈষম্য-বিদ্বেষ আসলে আমাদের মজ্জায়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ