গিরগিটি শুধু রং বদলায় না, তাদের মধ্যে আরও গুণাগুণ রয়েছে৷ যেমন টেক্সাসের এক প্রজাতি ত্বক থেকেই তরল পদার্থ শুষে নিয়ে মুখে পাঠিয়ে দিতে পারে৷ জার্মান বিজ্ঞানীরা সেই বৈশিষ্ট্য কৃত্রিম সারফেসের উপর প্রয়োগ করার পথে এগোচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
টেক্সাসের ‘পিগমি শর্ট-হর্নড লিজার্ড' বা বামন একশৃঙ্গ গিরগিটির একটি বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে৷ তেষ্টা পেলে সরাসরি জল পান করার প্রয়োজন নেই – সরাসরি ত্বকের মাধ্যমেই তরল পদার্থ গ্রহণ করতে পারে এই প্রাণী৷ ত্বকের অতি ক্ষুদ্র ছিদ্রের মাধ্যমে ভিজে বালুর মতো উৎস থেকে সে জল শুষে নেয়৷ সূক্ষ্ম নালীর মাধ্যমে সেই জল মুখে চলে আসে৷ আখেন শহরের আরডাব্লিউটিএইচ বিশ্ববিদ্যালয়ের আনা-ক্রিস্টিন জোয়েল বলেন, ‘‘আর্দ্রতা পাঠানোর এই প্রক্রিয়া আসলে অতি শুষ্ক পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার কায়দা৷ অর্থাৎ জলের প্রতিটি বিন্দু কাজে লাগাতে হবে, মুখে পাঠাতে হবে৷''
আখেন শহরের আরডাব্লিউটিএইচ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গিরগিটির ত্বকের এই নালী পরীক্ষা করে প্লাস্টিক ও ধাতুর সারফেসের উপর তা সফলভাবে অনুকরণ করতে পেরেছেন৷ সারফেসের অত্যাধুনিক কাঠামো – এমনকি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির পরোয়া না করেও পরোক্ষভাবে নির্দিষ্ট একটি দিশায় তরল পাঠাতে পারছে৷ এর জন্য কোনো শক্তিরও প্রয়োজন পড়ছে না৷
ছদ্মবেশী প্রাণীরা
আত্মরক্ষা এবং ছদ্মবেশ- প্রাণিজগতে এই দুটো শব্দ ব্যাপক পরিচিত৷ গিরগিটিকে এক্ষেত্রে প্রধান উদাহরণ হিসেবে নেয়া যেতে পারে৷ কেননা বহুরূপী এই প্রাণীটি নিজের রং বদলানোর ক্ষমতা রাখে৷ তবে কেবল লুকানোর জন্যই নয়, আছে আরো উদ্দেশ্য..
ছবি: picture-alliance/CTK Photo/O. Zaruba
মুড বদলালে রঙ বদলায়
রং বদলানোর ক্ষেত্রে গিরগিটিদের বিশেষজ্ঞ বলা যেতে পারে৷ আগে ধারণা করা হতো অন্য প্রাণীদের হাত থেকে বাঁচতেই গিরগিটিরা রঙ বদল করে৷ কিন্তু সম্প্রতি জানা গেছে এই রং বদলানোর ব্যাপারটা নির্ভর করে গিরগিটির মুডের উপর৷ যেমন সে আক্রমণাত্মক হলে বা রেগে গেলে রং বদলায়৷
ছবি: picture-alliance/MAXPPP/T. Suzan
রঙের উজ্জ্বলতা কমে বাড়ে
সব প্রজাতির গিরগিটিরা সব ধরনের রং বদলাতে পারে না৷ যেটা করে তাহল দিনের বিভিন্ন ভাগ অনুযায়ী নিজেদের রঙের উজ্জ্বলতা বাড়ায়-কমায়৷
ছবি: CC BY-SA 3.0/Poreddy Sagar
শিকার ধরা
গিরগিটিরা খুব ভালোভাবে ছদ্মবেশ ধরে শিকারের জন্য গাছের উপর চুপ করে বসে অপেক্ষা করে৷ কোনো নড়াচড়া করে না৷ তারপর পোকামাকড় কাছে এলে লম্বা জিহ্বা দিয়ে খপ করে খেয়ে ফেলে৷
ছবি: picture-alliance/CTK Photo/O. Zaruba
দৃষ্টিবিভ্রমে অনন্য জেব্রা
জেব্রার এই বেশ আসলেই ছদ্মবেশ৷ সাদা-কালো এই ডোরার কারণে একদল জেব্রা যখন মাঠে বসে থাকে তখন সিংহের দৃষ্টিবিভ্রম হয়৷ কেননা তখন পশুরাজ কোনো একটি প্রাণী দেখতে পান না৷
ছবি: AP
গাছের ডাল না পোকা!
ছদ্মবেশীদের মধ্যে অন্যতম এই শুঁয়োপোকাটি৷ এটি প্রজাপতি প্রজাতির৷ এটা দেখতে অনেকটা সরু কচি গাছের কাণ্ডের মতো৷ তাই গাছের উপর যখন এটি বসে তখন একে চেনার উপায় থাকে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
অনুকরণকারী অক্টোপাস
এটি একটি অনুকরণকারী অক্টোপাস, যা ‘কার্নিভাল স্কুইড’ নামে পরিচিত৷ সমুদ্রের তলদেশে এটি মুহূর্তে নিজের আকার ও রং পরিবর্তন করে ফেলতে পারে৷ যেমন সাপ, স্কুইড, শামুকের আকার ধারণ করতে পারে৷
ছবি: imago
অস্তিত্ব বোঝা দায়
মঙ্ক ফিশ এমনভাবে সমুদ্র তলদেশে থাকে যে বোঝাই যায় না এটার অস্তিত্ব৷ তাই মাছ শিকার খুবই সহজ হয়, অতর্কিতে পেছন থেকে মাছকে শিকার করে এরা৷
ছবি: imago/Bluegreen Pictures
7 ছবি1 | 7
মূল পরীক্ষার জন্য গবেষকরা টেক্সাসের বামন গিরগিটির সংরক্ষিত দেহ ব্যবহার করছেন৷ হাইস্পিড ক্যামেরার সাহায্যে তাঁরা ত্বকের উপর জল ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করেছেন৷ তাতে দেখা গেছে, যে জলের বিন্দু অন্যান্য দিকের তুলনায় মুখের অভিমুখে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যায়৷ বায়োলজিস্ট ফিলিপ কোমান্স বলেন, ‘‘আমরা এই ত্বক ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখেছি, যে প্রতিটি আঁশের মাঝে ক্ষুদ্র নালী রয়েছে৷ এত ক্ষুদ্র হওয়ার ফলে ‘ক্যাপিলারি এফেক্ট' বা কৈশিক প্রভাব দেখা যায়৷ অর্থাৎ জল নিজে থেকেই এগিয়ে যায়৷ এ ক্ষেত্রে গতি থাকে মুখের দিকে৷ অন্য যে বিষয়টি আমরা লক্ষ্য করেছি সেটা হলো এই, যে ত্বকের খাঁজে নালীর মোড়গুলি এমনভাবে সাজানো রয়েছে, যাতে জল মুখের দিকেই এগিয়ে যেতে পারে৷''
আরও একটি পরীক্ষার মাধ্যমে কোমান্স দেখালেন, পানি কত দ্রুত আঁশের ফাঁকে নালী দিয়ে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যায়৷ গিরগিটির পা নীল পানিতে ডোবালে সেই রঙিন পানির স্রোত উলকার বেগে পা থেকে বুকের উপর দিয়ে মুখের দিকে ধেয়ে যায়৷ ফিলিপ কোমান্স বলেন, ‘‘এখানে দেখা যাচ্ছে, যে পানি গিরগিটির শরীর বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে৷ অর্থাৎ পা থেকে কনুই দিয়ে মাথার দিকে৷ গিরগিটির শরীর কিছুটা ঘোরালে নীল পানি সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে৷ মানে সারা শরীরেই জলের বণ্টন ঘটে চলেছে এবং মুখের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যাতে গিরগিটি সেই জল পান করতে পারে৷''
ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে আঁশের মাঝে নালী স্পষ্ট দেখা যায়৷ ক্ষুদ্র এই কাঠামো বিশ্লেষণ করে তার বৈশিষ্ট্য ধাতব বা প্লেক্সিগ্লাস সারফেসে প্রয়োগ করা ছিল এক বিশাল চ্যালেঞ্জ৷ আকার-আয়তন ও ক্ষুদ্র জ্যামিতিক কাঠামো হুবহু নকল করতে হয়, যাতে জল নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারে৷
গিরগিটির আঁশের কাঠামো নকল করতে গবেষকরা এমন এক সফটওয়্যার তৈরি করেছেন, যা জৈব কাঠামো হুবহু বুঝে নিয়ে লেজার রশ্মির মাধ্যমে কৃত্রিম সারফেসের উপর প্রয়োগ করতে পারে৷
এবার এই সারফেসের উপরেও গিরগিটির মতো পরোক্ষভাবে পানি চলাচল দেখা যাচ্ছে৷ ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের নীচে গিরগিটির ত্বকের সঙ্গে কৃত্রিম সারফেসের কাঠামো তুলনা করলে অবশ্য বড় ধরনের পার্থক্য চোখে পড়ে৷ কিন্তু সেটাই তো কাম্য ছিল৷ ফিলিপ কোমান্স বলেন, ‘‘গিরগিটির ঘাটতি পূরণ করতে ত্বকের মধ্যে নানা বৈশিষ্ট্য তৈরি হয়েছে৷ আমরা তার মধ্যে শুধু তরল পদার্থ চলাচলের গুণটি বেছে নিয়েছি৷ সেই প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখে কৃত্রিম সারফেসের উপর তা প্রয়োগ করেছি৷''
গিরগিটির এই গুণ সম্ভবত কয়েক বছরের মধ্যে ইঞ্জিনের লুব্রিকেশন, কাচের উপর কন্ডেনসেশন পানি সরানো অথবা রেফ্রিজারেটরের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে৷
ত্বকের কয়েকটি রোগ
চর্মরোগে কম-বেশি সবাই ভোগেন৷ গরমকালেই এ জাতীয় রোগ বেশি দেখা দেয়৷ এছাড়া অপরিষ্কার ও ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস চর্মরোগের একটা অন্যতম কারণ৷ নিয়ম মেনে চললে রোগের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
একজিমা
একজিমা হলো ত্বকের এমন একটি অবস্থা যেখানে ত্বকে প্রদাহের সৃষ্টি হয়৷ একেক ধরনের একজিমার লক্ষণ একেক রকম হয়৷ তবে সাধারণভাবে লালচে, প্রদাহযুক্ত ত্বক; শুষ্ক, খসখসে ত্বক; ত্বকে চুলকানি; হাত ও পায়ের ত্বকের মধ্যে ছোট ছোট পানির ফুসকুড়ি ইত্যাদি হলো একজিমার লক্ষণ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
একজিমার কারণ
ডিটারজেন্ট, সাবান অথবা শ্যাম্পু থেকে একজিমার সংক্রমণ হতে পারে৷ অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠান্ডা ও স্যাঁতসেঁতে ভেজা আবহাওয়াও একজিমার কারণ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সোরিয়াসিস
এটি ত্বকের একটি জটিল রোগ৷ তবে সোরিয়াসিস কেবল ত্বক নয়, আক্রমণ করতে পারে শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও৷ সাধারণত ত্বকের কোষস্তর প্রতিনিয়ত মারা যায় এবং নতুন করে তৈরি হয়৷ সোরিয়াসিসে এই কোষ বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে৷ ত্বকের কয়েক মিলিমিটার থেকে কয়েক সেন্টিমিটার জায়গাজুড়ে এই সমস্যা দেখা দেয়৷
ছবি: Fotolia
আজীবন চিকিৎসা
সোরিয়াসিস রোগ যত পুরোনো হয়, ততই জটিল হতে থাকে৷ তাই দ্রুত শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার আওতায় আসা জরুরি৷ আক্রান্ত ব্যক্তিকে আজীবন চিকিৎসা নিতে হয়৷ সোরিয়াসিস বংশগতভাবে হতে পারে৷
ছবি: Fotolia
আর্সেনিকের কারণে চর্মরোগ
আর্সেনিক যুক্ত পানি খেলে ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ যেমন ত্বকের গায়ে ছোট ছোট কালো দাগ কিংবা পুরো ত্বক কালো হয়ে যেতে পারে, হাত ও নখের চামড়া শক্ত ও খসখসে হয়ে যেতে পারে৷ এছাড়া ত্বকের বিভিন্ন স্থানে সাদা-কালো দাগ দেখা দেয়াসহ হাত ও পায়ের তালুর চামড়ায় শক্ত গুটি বা গুটলি দেখা দিতে পারে৷
ছবি: DW
চরম পর্যায়
আর্সেনিক যুক্ত পানি পানের শেষ পরিণতি হতে পারে কিডনি ও লিভারের কর্মক্ষমতা লোপ পাওয়া; ত্বক, ফুসফুস ও মূত্রথলির ক্যানসার হওয়া; কিডনির কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া ইত্যাদি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দাদ
শরীরের যে-কোনো স্থান ফাংগাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে একে দাদ বলে৷ এই আক্রমণ মাথার চামড়ায়, হাত-পায়ের আঙুলের ফাঁকে কিংবা কুঁচকিতে হতে পারে৷ এটা ছোয়াঁচে রোগ৷ আক্রান্ত স্থান চাকার মতো গোলাকার হয় এবং চুলকায়৷ মাথায় দাদ দেখতে গোলাকার হয় এবং আক্রান্ত স্থানে চুল কমে যায়৷ প্রতিকার পেতে সাবান ও পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান প্রতিদিন ধুতে হবে৷ এছাড়া আক্রান্ত স্থান শুকনো রাখা জরুরি৷
ছবি: MEHR
পাঁচড়া
শিশুদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়৷ পরিষ্কার কাপড়-চোপড় ব্যবহার ও নিয়মিত গোসল করলে খোসপাঁচড়া থেকে রেহাই পাওয়া যায়৷
ছবি: MEHR
ঘামাচি
গরমের সময় ঘামাচি একটি সাধারণ সমস্যা৷ এটি সাধারণত তখনই হয় যখন ঘর্মগ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে যায়, ঘাম বের হয় না এবং ত্বকের নীচে ঘাম আটকে যায়৷ এর ফলে ত্বকের উপরিভাগে ফুসকুড়ি এবং লাল দানার মতো দেখা যায়৷ কিছু কিছু ঘামাচি খুব চুলকায়৷ ঘামাচি সাধারণত এমনিতেই সেরে যায়৷ তবে ঘামাচি সারানোর জন্য ত্বক সবসময় শুষ্ক রাখতে হবে এবং ঘাম শুকাতে হবে৷
ছবি: imago stock&people
ব্রণ
সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে এই রোগটি দেখা দেয়৷ তাই একে টিনএজারদের রোগও বলা যেতে পারে৷ ১৮ থেকে ২০ বছরের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এ রোগটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷ ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে তৈলাক্ত, ঝাল ও ভাজাপোড়া খাবারসহ চকলেট, আইসক্রিম ও অন্যান্য ফাস্টফুড খাওয়া কমাতে হবে৷ এছাড়া বেশি করে পানি ও শাক-সবজি খেতে হবে৷