গিলগিটে ভোট ঘোষণা করল পাকিস্তান। যা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে ভারত। পাকিস্তানও ফের কাশ্মীর নিয়ে সরব হলো আন্তর্জাতিক মঞ্চে।
বিজ্ঞাপন
পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন বিতর্কে জড়ালো ভারত। গিলগিট বালতিস্তানে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চূড়ান্ত বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। আগামী ১৫ নভেম্বর পাকিস্তান গিলগিটে নির্বাচনের দিন ঘোষণা করেছে। ভারতের বক্তব্য, সেনা দিয়ে ওই অঞ্চল পাকিস্তান দখল করে রেখেছে। ফলে সেখানে নির্বাচন বেআইনি। অন্য দিকে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফের কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করার চেষ্টা করেছে পাকিস্তান। তা নিয়েও পাল্টা জবাব দিয়েছে ভারত।
কাশ্মীর এবং লাদাখ সীমান্তে অবস্থিত গিলগিট বালতিস্তান নিয়ে ভারত, পাকিস্তান এবং চীনের মধ্যে বিতর্ক বহুদিনের। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় থেকেই এই অঞ্চল নিয়ে বিতর্ক চলছে। ভারতের দাবি, পাকিস্তান সৈন্য ব্যবহার করে এই্ অঞ্চল দখল করে বসে আছে। পাকিস্তানের দাবি, গিলগিট বালতিস্তান পাকিস্তানেরই অংশ। আবার চীনও এই অঞ্চলের কিছুটা অংশ দাবি করে।
পাকিস্তান এই অঞ্চলে নির্বাচন ঘোষণা করার পরে ভারত অত্যন্ত কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র বলেছেন, কাশ্মীর এবং লাদাখের সম্পূর্ণ অংশ ভারতীয় ভূখণ্ড। যারা সেই অঞ্চলের কোনো কোনো এলাকা দখল করে রেখেছে, তাদের সেখানে নির্বাচন করার কোনও অধিকার নেই। এ কাজ সম্পূর্ণ বেআইনি।
দেশভাগের আগুন, যা এখনো জ্বলছে
১৯৪৭ সালের ১৪/১৫ আগস্ট ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছিল৷ হিন্দু অধ্যুষিত ভারত এবং মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তান৷ সেই থেকে দুই দেশের কিছু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছাড়া কোনো উন্নতি হয়নি৷ বরং শত্রুতা বেড়েই চলেছে৷
ছবি: AP
দুই দেশের জন্ম
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই দেশে বিভক্ত হয়৷ জন্ম নেয় নতুন দুই রাষ্ট্র৷ ভারত ও পাকিস্তান৷ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং তাঁর দল অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ প্রথমে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোর উপর নিজেদের আধিপত্য দাবি করেন এবং পরবর্তীতে মুসলিমদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জানান৷ জিন্নাহ’র বিশ্বাস ছিল হিন্দু আর মুসলিমরা ভবিষ্যতে একসাথে থাকতে পারবে না৷
ছবি: picture alliance/dpa/United Archives/WHA
রক্তাক্ত পথ
পার্টিশন বা দেশ বিভাগ নৃশংস এবং ভয়াবহ এক অধ্যায়ের নাম৷ ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশিত হওয়ার সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে পাঞ্জাবে৷ ইতিহাসবিদরা বলেন, ঐ দাঙ্গায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷ জন্মভূমি ছেড়ে ভারত থেকে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আসে লাখ লাখ মানুষ৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Images
১৯৪৮ সালের যুদ্ধ
ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা পাওয়ার পর কাশ্মীর নিয়ে আবারো বিবাদে জড়িয়ে পড়ে৷ মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের দায়িত্বভার ন্যস্ত ছিল হিন্দু নেতার হাতে৷ কিন্তু জিন্নাহ চাইলেন এটা যাতে পাকিস্তানের অধীন হয়৷ ১৯৪৮ সালে দুই দেশের সেনাবাহিনী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে৷ কাশ্মীর উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ভারতীয় সেনারা৷ কিন্তু সেই সংঘর্ষের জের অব্যাহত আছে আজও৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো
উদারপন্থি ইতিহাসবিদরা বলেন, জিন্নাহ এবং মহাত্মা গান্ধী নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র দু’টির মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন চেয়েছিলেন৷ জিন্নাহ’র আশা ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো সম্পর্ক হবে ভারত-পাকিস্তানের৷ কিন্তু ১৯৪৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরিরা নতুন দিল্লির সঙ্গে বিবাদ অব্যাহত রাখে৷
ছবি: AP
উপস্থাপনের ভিন্নতা
ভারত ও পাকিস্তান সরকার দেশভাগের ব্যাপারটিকে একেবারে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করে৷ ভারত এটাকে ব্রিটিশদের শাসন থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের স্বাধীনতা আন্দোলনের ফসল হিসেবে উল্লেখ করে, যেখানে মহাত্মা গান্ধীকে এর স্থপতি বলা হয়৷ অন্যদিকে, পাকিস্তানি পাঠ্যপুস্তকে ব্রিটিশ এবং হিন্দুদের আধিপত্য থেকে মুক্তির আন্দোলন হিসেবে উল্লেখ করা হয় ১৪ আগস্টকে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
সম্পর্কের টানা-পোড়েন
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে গত সাত দশক ধরেই তিক্ত সম্পর্ক বিরাজ করছে৷ আর গত কয়েক বছর ধরে ইসলামি জঙ্গিবাদের কারণে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে দু’দেশের মধ্যে৷ নয়া দিল্লি বরাবরই পাকিস্তানকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গিবাদে মদদদাতা হিসেবে দায়ী করে আসছে৷ আর ইসলামাবাদ বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে৷
ছবি: Picture alliance/AP Photo/D. Yasin
6 ছবি1 | 6
২০১৮ সালেই পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট গিলগিট বালতিস্তানে ভোটের কথা ঘোষণা করেছিল। সে সময়েও তার তীব্র বিরোধিতা করেছিল ভারত। এ বছর আগেই সেখানে ভোট হওয়ার কথা ছিল। করোনার জন্য দিন পিছিয়ে ১৫ নভেম্বর করা হয়েছে। মোট ২৪টি আসনে সেখানে রাজ্য স্তরের নির্বাচন হওয়ার কথা।
একদিকে গিলগিট বালতিস্তান নিয়ে যখন ভারত সুর চড়িয়েছে, তখন সিআইসিএ-র বৈঠকে নতুন করে কাশ্মীর নিয়ে সরব হয়েছে পাকিস্তান। ফের সেখানে কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে আন্তর্জাতিক কূটনীতির দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে। এর আগে চীনের সাহায্য নিয়ে জাতিসংঘেও কাশ্মীর প্রসঙ্গ একাধিকবার তোলার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। সম্প্রতি তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধান এর্দোয়ানও কাশ্মীর নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চকে সরব হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ভারত অবশ্য এ বারও পাকিস্তানকে কড়া জবাব দিয়েছে। ভারত জানিয়েছে, কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তা নিয়ে পাকিস্তানের কথা বলার কোনও অধিকার নেই। ফলে ফের যে ভাবে আন্তর্জাতিক বৈঠকে পাকিস্তান এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছে, তা অনভিপ্রেত। ঠিক একই ভাবে গিলগিট প্রসঙ্গে ভারতকে জবাব দিয়েছে পাকিস্তান।