ইউরোপে সার্চ ইঞ্জিনের একচ্ছত্র আধিপত্য কমাতে ভোট দিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন প্রণেতারা৷ বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টের সদস্যরা এ সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেন৷ ইউরোপে গুগলের আধিপত্যই বেশি৷
বিজ্ঞাপন
খসড়ায় গুগলের উল্লেখ নেই
খসড়ার পক্ষে ভোট পড়েছে ৩৮৪টি এবং বিপক্ষে ১৭৪টি৷ তবে খসড়ায় গুগলের কথা উল্লেখ করা হয়নি৷ কিন্তু ইউরোপের দেশগুলোতে যেহেতু ৯০ ভাগ বাজার গুগল দখল করে রেখেছে, তাই গুগলকে লক্ষ্য করেই ঐ খসড়া করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
খসড়া ভোট
অবশ্য ভোট পাস হয়ে গেলেও এই খসড়া প্রস্তাবটি শুধু সুপারিশ হিসেবে গৃহীত হবে৷ ইউরোপীয় কমিশন যদি এই সুপারিশ মেনে নেয়, তবেই গুগলকে ইউরোপে তাদের নীতি বদলাতে বাধ্য করা যাবে৷ জার্মান কনজারভেটিভ দলের পার্লামেন্ট সদস্য এবং এই বিলের কো-স্পন্সর আন্দ্রেয়াস সোয়াব বলেছেন, ‘‘কোনো কিছুরই একাধিপত্য ভালো নয়, না কোম্পানিগুলোর জন্য না গ্রাহক, অর্থাৎ কাস্টমারদের জন্য৷'' বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই সার্চ ইঞ্জিন গুগলের কথা জিজ্ঞেস করা হলে সোয়াব বলেন, তিনি গুগলের বিরুদ্ধে নন৷ কেননা প্রতিদিনই এটি ব্যবহার করতে হয় তাঁকে৷ ইউরোপিয়ান কমপিটিশান কমিশনার মার্গারেটে ফেসটাগার বলেছেন, তিনি বিষয়টি পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানাবেন৷
নামি ব্র্যান্ড, দামি ব্র্যান্ড
পৃথিবীর মানুষ এদের এক নামে চেনে৷ নতুন পণ্য বাজারে এলে লাইন দিয়ে কেনে৷ লাভের হিসাব আর ভোক্তাদের মতামতের ভিত্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ডগুলোর এই তালিকা প্রকাশ করেছে ইকুইটি ডেটাবেজ ‘ব্র্যান্ডজি’ ৷
আইফোন, আইপ্যাড আর ম্যাক কম্পিউটারের বিপুল জনপ্রিয়তায় গত তিন বছর এ তালিকার শীর্ষে থাকা ‘অ্যাপল’ এবার নেমে এসেছে দ্বিতীয় অবস্থানে৷ গতবারের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কমে প্রতিষ্ঠানটির ব্র্যান্ড ভ্যালু দাঁড়িয়েছে ১৪৮ বিলিয়ন ডলারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিজনেস মেশিন
হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার তৈরি থেকে শুরু করে হোস্টিং এবং কনসাল্টিং সার্ভিস – সবই করে ‘আইবিএম’৷ ব্র্যান্ডজি-র তালিকার তৃতীয় অবস্থানে থাকা এ কোম্পানি চলতি বছর ডেটা সেন্টার ও ক্লাউড স্টোরেজের ব্যবসায় আরো ১.২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে৷ আইবিএম-এর ব্র্যান্ড ভ্যালু ১০৮ বিলিয়ন ডলার৷
ছবি: picture alliance / dpa
সফটওয়্যার ডাইনোসর
অনেক জল গড়িয়েছে, কিন্তু সফটওয়্যারের বাজারে ‘মাইক্রোসফট’-এর একক আধিপত্য এখনো অটুট৷ গত এক বছর এই অ্যামেরিকান প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ভ্যালু ৩০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৯০ বিলিয়ন ডলার৷ ব্র্যান্ডজি-র হিসাবে, গত কিছুদিনে প্রযুক্তি ব্যবসার কোম্পানিগুলোই সবচেয়ে বেশি সাফল্য দেখিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আই’অ্যাম লাভিং ইট
কারো হৃদয়ে পৌঁছানোর সবচেয়ে সহজ পথটি গেছে তাঁর পাকস্থলির মধ্য দিয়ে – এই সত্যটি ‘ম্যাকডোনাল্ডস’ ভালোই জানে৷ ভোক্তাদের ক্ষুধা মিটিয়ে বিপুল টাকা কামিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘ফুড চেইন’, তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু দাঁড়িয়েছে ৮৫ বিলিয়ন ডলারে৷ অবশ্য টাকার এই পরিমাণ গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম৷
ছবি: DW/A. Brenner
কোমল পানীয় হাতে হাতে
পৃথিবীর মাত্র দুটি দেশে ‘কোকা-কোলা’ বিক্রি হয় না – একটি কিউবা, অন্যটি উত্তর কোরিয়া৷ বাকি বিশ্বের ছেলে-বুড়ো সবার কাছে পরিচিত এই কোমল পানীয় কোম্পানির ব্র্যান্ড ভ্যালু ৮০ বিলিয়ন ডলার৷ ব্র্যান্ডজি-র তালিকায় কোকা-কোলার অবস্থান ৬ নম্বরে৷
ছবি: DW/P. Hille
জার্মান ব্র্যান্ড
জার্মান কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্র্যান্ডজি-র বিচারে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ‘এসএপি’৷ এই সফটওয়্যার কোম্পানির ব্র্যান্ড ভ্যালু ৩৬ বিলিয়ন ডলার৷ শীর্ষ ১০০ ব্র্যান্ডের তালিকায় থাকা অন্য জার্মান কোম্পানিগুলো হলো – ডয়চে টেলিকম (২৭তম), বিএমডাব্লিউ (৩২তম), মার্সিডিজ বেঞ্জ (৪২তম), সিমেন্স (৫৯তম) ও ডিএইচএল (৭৩তম)৷ আর ১০০তম অবস্থানে থাকা সুপারমার্কেট চেইন আলডি-র ব্র্যান্ড ভ্যালু সাড়ে ৯ বিলিয়ন ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুই চমক
গত এক বছরে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ‘ফেসবুক’-এর ব্র্যান্ড ভ্যালু ৬৮ শতাংশ বেড়ে ৩৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে৷ তারপরও ব্র্যান্ডজি-র তালিকায় ফেসবুকের অবস্থান ২১ নম্বরে৷ চলতি বছর সবচেয় বড় চমক দেখিয়েছে চীনা ইন্টারনেট কোম্পানি ‘টেনসেন্ট’৷ গত এক বছরে এ কোম্পানির ব্র্যান্ড ভ্যালু দ্বিগুণ বেড়ে ৫৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছে৷ তালিকায় টেনসেন্ট রয়েছে চতুর্দশ স্থানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হাওয়াই মিঠাই
শীর্ষ ১০০ ব্র্যান্ডের তালিকায় এবারের নতুন নামটি ‘টুইটার’৷ ১৩ বিলিয়ন ডলার ব্র্যান্ড ভ্যালু নিয়ে প্রথমবারেই এ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং কোম্পানি উঠে এসেছে তালিকার ৭১তম অবস্থানে৷ যদিও কেউ ঠিকঠাক জানে না, এ কোম্পানির লাভটা কীভাবে আসছে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
কেন এই ভোট
ভোটাভুটির পর এখন পর্যন্ত গুগল এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি৷ ২০১০ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গুগলের উপর নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করছে৷ এগুলোর মধ্যে আছে তথ্য নিরাপত্তা, কপিরাইট এবং ট্রাস্ট ইস্যু যা আইন করে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷
ওই খসড়ায় ইউরোপে গুগলকে ভেঙে দেওয়ার ও গুগলের বাকি ব্যবসা থেকে সংস্থাটির সার্চ ইঞ্জিন আলাদা করার প্রস্তাবও রয়েছে৷ ইউরোপ থেকে ওয়েবে যত অনুসন্ধান করা হয়, এর ৯০ শতাংশই গুগল ব্যবহার করে৷
খসড়া প্রস্তাবে ‘গুগলের অবৈধ ও পক্ষপাতমূলক আচরণ' বন্ধ করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে৷ অভিযোগ করা হয়েছে, গুগলের ব্যবসার জন্য যেটা সুবিধা হয়, সেভাবেই র্যাংকিং করা হয়৷ এতে ব্যবহারকারীর কথা ভাবা হয় না৷
ভোটের বিপক্ষে
তবে কয়েকজন রাজনীতিবিদ এই প্রস্তাবের বিপক্ষে মত দিয়েছেন৷ পার্লামেন্টের এএলডিই গ্রুপ সোফি ভেল্ড বলেছেন, ‘‘পার্লামেন্টের উচিত হয়নি গুগল বিরোধী খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা৷ কারণ এই প্রতিযোগিতায় কীভাবে গুগলকে পেছনে ফেলা যায় সে চিন্তা করা উচিত এবং গ্রাহককের কথা মাথায় রেখে কাজ করা উচিত৷''
গুগল কর্তৃপক্ষ এমনিতেই ইউরোপের বাজারে স্বস্তিতে নেই৷ এর আগে কর ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে আবার কখনো অভিযোগ উঠেছে প্রাইভেসি না মানার বিষয়টি নিয়েও৷ ফ্রান্স ও জার্মানি গুগলের কর ফাঁকির বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন৷