‘গুগল’-এ কি ব্যক্তিগত তথ্য আদৌ নিরাপদ? ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়া তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার অভিযোগে বিশাল অঙ্কের জরিমানা হলো ‘গুগল’-এর৷
বিজ্ঞাপন
আপনি কি জানেন ঠিক কীভাবে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করছে ‘গুগল' ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা? তাদের হাতে কি আসলেই নিরাপদ আপনাদের পছন্দের ছবি, ভিডিও, সিনেমা, গান, খাবার ও অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য? এই প্রশ্নগুলিকে সামনে রেখেই বর্তমানে ইউরোপে শুরু হয়েছে তথ্যসুরক্ষা বিষয়ে আলোচনা৷
শুধু তাই নয়, ব্যবহারকারীদের সম্মতি ছাড়াই তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে বিজ্ঞাপন ছড়ানোর অভিযোগে গুগল ও এ ধরনের অন্যান্য সংস্থার বিরুদ্ধে ইউরোপের দেশগুলোতে সমালোচনা হচ্ছে৷ সম্প্রতি ফ্রান্সের একটি আদেশে গুগলকে জরিমানা দেবার কথা বলা হয়৷
সোশ্যাল মিডিয়া ভেরিফিকেশন
ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব কীভাবে ভেরিফাইড করবেন, এমন প্রশ্ন অনেকেরই৷ জনপ্রিয় কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ভেরিফিকেশনের তথ্য পাবেন এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/A. Islam
ফেসবুক পেজ
পাবলিক ফিগার, ক্রীড়া, মিডিয়া, বিনোদন ও সরকারি পাতা ফেসবুক পেজ ভেরিফিকেশনের জন্য উপযুক্ত৷ পাতার সব তথ্য পূরণ করা আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন৷ এরপর ‘Request a Verified Badge’-এ গিয়ে নির্দিষ্ট ফর্মে পেজটি সিলেক্ট করুন৷ অফিসিয়াল আইডি আপলোড করুন৷ অফিসিয়াল পেজের লিঙ্ক দিন৷ এবার প্রেরণ করুন৷ ভাগ্য ভালো থাকলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আপনার পেজে ভেরিফাইড ব্লু মার্কটি দেখাবে৷
ছবি: DW/P. Böll
ফেসবুক প্রোফাইল
ফেসবুক পেজের মতো প্রোফাইলেও একই নিয়ম৷ তবে সেক্ষেত্রে প্রোফাইল ভেরিফিকেশনের ফর্ম পূরণ করতে হবে৷ বিজনেস পেজের ক্ষেত্রে নিয়ম একটু ভিন্ন৷ সেখানে ফর্ম পূরণ করে অথবা আপনার ও ব্যবসার সব তথ্য আছে এমন বিজনেস ডকুমেন্ট আপ করে ভেরিফাই করতে পারেন৷
ছবি: DW/A. Islam
টুইটার অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন
সংগীত, অভিনয়, ফ্যাশন, সরকার, রাজনীতি, ধর্ম, সাংবাদিকতা, মিডিয়া, ক্রীড়া, ব্যবসাসহ বিভিন্ন রকমের টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীরা ভেরিফিকেশনের জন্য আবেদন করতে পারতেন৷ সেজন্য প্রোফাইল পাবলিক থাকতে হতো৷ এজন্য একটি ফোন নম্বর ও ই-মেল অ্যাড্রেসও লাগতো৷ তবে আপাতত এই সুবিধা বন্ধ রেখেছে টুইটার৷
ছবি: DW/P. Böll
ইউটিউব
ইউটিউবে আপনার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার এক লাখ হলেই আপনি ভেরিফিকেশনের জন্য আবেদন করতে পারবেন৷ তবে পরবর্তীতে আপনি যদি চ্যানেলের নাম পরিবর্তন করেন, তাহলে ভেরিফাইড ব্যাজ উঠে যাবে৷
ছবি: Reuters/L. Nicholson
গুগল প্লাস
ফেসবুকের মতো গুগল প্লাসেও আপনি সরাসরি আবেদন করতে পারেন৷ তবে সেক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইটকে আগে ভেরিফাইড করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইনস্টাগ্রাম
ইনস্টাগ্রাম আগে শুধুমাত্র সেলিব্রেটি ব্যক্তি বা ব্র্যান্ডেরই ভেরিফিকেশনের সুযোগ দিতো৷ তবে এখন প্রোফাইল ‘পাবলিক’ রেখে যেকেউ অ্যাপের মাধ্যমে ভেরিফিকেশনের আবেদন করতে পারেন৷ তবে এজন্য প্রোফাইলের সব তথ্য যথাযথভাবে পূরণ রাখতে হবে৷
ছবি: DW
6 ছবি1 | 6
গুগল-এর কী অপরাধ?
২০১৭ সালে গুগলের মোট আয় ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি৷ এর একটি বিশাল অংশ আসে বিজ্ঞাপন থেকে৷ গুগল বা ফেসবুকের মতো সংস্থাগুলি সাধারণত ব্যবহারকারীর তথ্যের ভিত্তিতে ‘পার্সোনালাইজ' করে বিজ্ঞাপন দেখায়৷ কিন্তু তথ্যের সুরক্ষা বিষয়ক আলোচনাগুলি বিজ্ঞাপন দেখানোর এই প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলছে৷
জানা যাচ্ছে, ব্যবহারকারীদের সম্মতি ছাড়াই তাদের তথ্য ব্যবহার করে এই বিজ্ঞাপনগুলি দিয়েছে গুগল৷ এমন অস্বচ্ছতার অভিযোগে ফ্রান্সের তথ্যনিয়ন্ত্রণ সংস্থা ‘সিএনআইএল' মার্কিন সংস্থা ‘গুগল'কে ৫০ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের জরিমানার ঘোষণা করেছে৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে আদৌ কি এই অভিযোগ নতুন?
জিমেলের যে ছয়টি গোপন ফিচার আপনার জানা উচিত
গুগলের ইমেল সেবা জিমেলের ব্যবহারকারী অনেক৷ বিশেষ করে ইয়াহু মেলের বাজার কমার সঙ্গে সঙ্গে জিমেলের বাজার ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে৷ বিনামূল্যের এই ইমেল সেবার রয়েছে বিশেষ কিছু ফিচার যা আমরা অনেকেই জানি না৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online/Yay
শেষ মুহূর্তে ইমেল এডিট করতে চালু করুন ‘আনডু সেন্ড’
ইমেল লেখার পর সেন্ড বোতাম চাপার সঙ্গে সঙ্গে বড় কোনো ভুল চোখে পড়েছে? কিংবা মনে হচ্ছে, কোথাও আরেকটু সম্পাদনা করলো ভালো হতো? জিমেল কিন্তু এই সুযোগটা দেয়৷ একটা ইমেল সেন্ড করার পরও সেটাকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে চাইলে আনডু মানে যাতে গন্তব্যে না পৌঁছায় সেই ব্যবস্থা করা যায়৷ ‘আনডু সেন্ড’ অপশনটি চালু করতে পারবেন জিমেলের জেনারেল সেটিংসে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/J. Kalaene
সময় বাঁচাতে চালু করুন ‘ক্যানড রেসপন্সেস’
অনেক সময় দেখা যায়, অধিকাংশক্ষেত্রে আমরা একই ধরনের ইমেল বারবার লিখছি৷ এতে সময় খরচ হয়৷ তার চেয়ে বরং একই ধরনের ইমেল হলে সেটা সেভ করে ‘ক্যানড রেসপন্সেস’ হিসেবে জমা রাখা যায়৷ এরপর পরবর্তীতে সামান্য একটু সম্পাদনা করে একই ইমেল বারবার ব্যবহার করা যায়৷ ‘ক্যানড রেসপন্সেস’ ফিচারটি পাবেন জিমেল>সেটিংস>ল্যাবস> ক্যানড রেসপন্সেস গন্তব্যে৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online/Belcher
জিমেল অফলাইনেও ব্যবহার করা যায়
অনলাইনে থাকা অবস্থায় মনোযোগ দিয়ে কাজ করা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়৷ একটু পরপর নটিফিকেশন্স আর নতুন ইমেলের বিপ শোনা থেকে বিরত থাকতে তাই কেউ কেউ অফলাইন মোডে কাজ করতে চান৷ জিমেল অফলাইন অ্যাপটি তাদের জন্য৷ এই অ্যাপ ব্যবহার করে অফলাইনে থেকেও জিমেলের অনেক ফিচার এমনকি পুরনো ইমেলও দেখা যায়৷ পাশাপাশি নতুন ইমেল বা রিপ্লাই লিখে পরে অনলাইনে গেলে সেগুলো নির্দিষ্ট গন্তব্যে চলে যায়৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online/Tetra
ইনবক্স নটিফিকেশন বন্ধ রাখুন
জিমেলে নতুন কোনো ইমেল আসলেই সেটি মেন্যুবারে ইনবক্স লেখা শব্দের পাশে নম্বর আকারে প্রদর্শন শুরু হয়৷ অনেকর জন্য এটা বিরক্তিকর৷ কেননা, এই নম্বর দেখার পরই মনের মধ্যে ইমেলটি দেখার বাসনা বাড়তে থাকে৷ ফলে কাজে মনোযোগ দেয়া যায় না৷ এমনটা না চাইলে ‘ইমেল পজ্’ অপশনটি চালু করতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Wuestenhagen
অনাকাঙ্খিত ইমেল বন্ধ করবেন যেভাবে
আপনি হয়ত নিজের প্রয়োজনে কখনো কোনো ইমেল লিস্ট সাব্সক্রাইব করেছিলেন বা আপনার অজান্তেই কেউ হয়ত আপনাকে কোনো লিস্টে ঢুকিয়ে দিয়েছে৷ ফলে না চাইলেও অপ্রয়োজনীয় ইমেলে ভরে যায় আপনার ইনবক্স৷ এরকম পরিস্থিতি থেকে নিস্তার চাইলে ভিজিট করুন আনরোল ডটমি ওয়েবসাইটটি৷ সেখানে সাইন আপের পর অনাকাঙ্খিত ইমেল প্রাপ্তি থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারবেন সহজে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/K. Thomas
টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করুন
অনেকের কাছে জিমেল হচ্ছে তাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি৷ শুধু ইমেল নয়, গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ফাইল, ছবি, ভিডিও এমনকি ব্যাংকের তথ্যও অনেকে জিমেলে বা গুগলের অন্যান্য সেবায় জমা রাখেন৷ ফলে ইমেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মজবুত রাখা জরুরি৷ টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ফিচার চালু করলে আপনার ইমেল শুধু পাসওয়ার্ড দিয়ে খোলা সম্ভব হবে না৷ তখন পাসওয়ার্ড এবং মোবাইলে আসা কোড দিয়ে ইমেল চালু করতে হবে যা হ্যাক করা কার্যত অসম্ভব৷
২০১৮ সালের মে মাসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে আসে নতুন তথ্যসুরক্ষা আইন ‘জিডিপিআর’৷ এই আইন প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্যবহারকারীদের কাছে তাদের তথ্যের মালিকানা ও অধিকারস্বচ্ছভাবে তুলে ধরা৷ নতুন এই আইন বলে, কোনো সংস্থা এই দায়িত্ব পালন না করতে পারলে তাকে দিতে হতে পারে মোট আয়ের চার শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ৷
গত মাসে এই দায় সঠিকভাবে পালন না করতে পারায় ফেসবুককে দশ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা দিতে হয় ইটালিতে৷
প্রসঙ্গত, বিগত কয়েক বছর ধরেই ইউরোপে একাধিক অ্যাক্টিভিস্ট সংস্থা ইন্টারনেটে তথ্যসুরক্ষা ও ক্রেতাদের উন্নত অধিকার বিষয়ে লড়াই করছে৷ ফেসবুক, গুগলের মতো সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছে তারা৷
এমনই এক অভিযোগের তদন্তের ফল ফ্রান্সে সাম্প্রতিক এই ৫০ মিলিয়ন ইউরোর জরিমানা৷