প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের জন্য বিমান তৈরির জন্য গুজরাটে কারখানা বানাবে এয়ারবাস ও টাটা। সেখানে তৈরি হবে 'মেড ইন ইন্ডিয়া' বিমান।
বিজ্ঞাপন
ভোটের আগে নিজের রাজ্য গুজরাটকে বড় উপহার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার রাজ্যের বদোদরায় ২২ হাজার কোটি টাকা দিয়ে বিমান তৈরির কারখানা বানাবে টাটা এবং এয়ারবাস। সেখানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বিমান বানাবে তারা। এই প্রথম এয়ারবাসের সি-২৯৫ বিমান ইউরোপের বাইরে তৈরি হবে। এই প্রথম প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বিমান ভারতে তৈরি করবে কোনো বেসরকারি সংস্থা।
আগামী ৩০ অক্টোবর নরেন্দ্র মোদী এই কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
আগামী বছর সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের অগাস্টের মধ্যে এয়ারবাস ১৬টি উড়ানযোগ্য বিমান দেবে। বাকিটা টাটা গোষ্ঠী বানাবে। সফটওয়্যারও টাটা কনসালটেন্সি ও টাটা অ্যাডভান্স সিস্টেম দেবে।
আকাশ পণ্যের বেসাতি
নিরাপত্তা উদ্বেগ, বাণিজ্য যুদ্ধ আর উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা-সব মিলিয়ে, অস্বস্তিতে আছে বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো৷ সেই উত্তাপ কমাতে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে হয়ে গেলো বিমান শিল্পের ৫৩তম প্রদর্শনী৷
ছবি: Reuters/P. Rossignol
বিমান নির্মাতাদের উৎসব
শুরুটা হয়েছিল ১৯০৯ সালে৷ নিয়ম বেধে দুই বছর পর পর বসে বিমানের এই পসরা৷ প্যারিসের উত্তরে লা বুর্গেট বিমানবন্দর এই প্রদর্শনীর ঠিকানা৷ বাণিজ্যিক এই প্রদর্শনীতে সামরিক ও বেসামরিক-সব আকাশযান নিয়ে আসা হয়৷ বোয়িং বা এয়ারবাসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো পেল নিজেদের পণ্য আর সক্ষমতা তুলে ধরার বড় সুযোগ৷ সঙ্গে থাকছে নতুন উদ্ভাবণ নিয়ে বিনামূল্যে বিজ্ঞাপণ!
ছবি: Reuters/P. Rossignol
চাপের মুখে বোয়িং?
স্বচ্ছ্ব নীল আকাশে না তাকিয়ে, আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়ে যেন উদ্বিগ্ন বোয়িং! ৭৩৭ ম্যাক্স নিয়ে প্রশ্নের মুখে বিমান তৈরির বৃহৎ প্রতিষ্ঠানটি৷ এই বিমান দুই দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে৷ আর প্রাণ হারিয়েছেন ৩৪৬ আরোহী৷ ফলে আকাশ ছেড়ে, মাটিতে আশ্রয় নিয়েছে মডেলটি৷ সোমবার, প্রতিষ্ঠানটির সিএফও জানিয়েছেন, ওই বিমানের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে, তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ৷
ছবি: Reuters/P. Rossignol
সংকটে বোয়িং, সুযোগ এয়ারবাসের?
প্রর্দশনীতে বুঝে শুনে আলোচনার বাইরে থাকার চেষ্টা করেছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান বোয়িং৷ যা ইউরোপের অতি আদরের এয়ারবাসের বিপরীত মেরু! সুযোগ যখন এলো, তখন এ৩৩ নিও মডেলের বিমানটি নিয়ে বেশ হাঁক-ডাক দিয়েছে এয়ারবাস৷ যা আগের এ৩৩০ প্রশস্ত জেটের নতুর সংস্করণ৷ এছাড়াও এ৩৫০-১০০০ এবং এ৩২১এলআর বিমান দুটি নিয়েও বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিল এয়ারবাস৷
ছবি: Reuters/P. Rossignol
ইউরোপের সেরা
ফরাসী রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল মাক্রোঁ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বেশ জোরের সঙ্গে বলে আসছেন, এয়ারবাস হলো ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন৷ তাই এয়ারবাস কর্তৃপক্ষেরও ইচ্ছে ছিল, প্রদর্শনী ঘুরে দেখার সময় সময়, যেন রাষ্ট্রপতি আসেন তাদের স্টলে৷ হয়েছেও তাই৷ সুদিন চলছে এয়ারবাসের৷ ৫০তম জন্মদিনে চুটিয়ে ব্যবসা করেছে প্রতিষ্ঠানটি৷ যা আবার ভেঙেছে পুরনো সব রেকর্ড৷
ছবি: Reuters/B. Tessier
স্বাগত এমব্রেয়ার
বোয়িং আর এয়ারবাস আলোচনা এবার থাক৷ বিমান নির্মাণে যারা শীর্ষে যেতে চায়, তাদের জন্য প্রদর্শনীটি ছিল একটা দারুণ প্ল্যাটফর্ম৷ ব্রাজিলের প্রতিষ্ঠান এমব্রেয়ারের তৈরি ই১৯৫-২ বিমানটিও দৃষ্টি কেড়েছে৷ যদিও দিন শেষে, বিমান বাণিজ্যটা বোয়িং আর এয়ারবাসের ডুয়োপলিতে ঘুরপাক খাচ্ছে৷ কারণ এ বছরের শেষ নাগাদ, এমব্রেয়ারের বাণিজ্যিক বিমানের অংশে পুরো দখল নিতে যাচ্ছে বোয়িং৷
ছবি: Reuters/P. Rossignol
রাশিয়ার ভালোবাসা
এবার চোখ ফেরানো যাক, রাশিয়ার বহুমাত্রিক আনসাত হেলিকপ্টারে৷ অ্যাম্বুলেন্স সেবার সঙ্গে ভিআইপি যাতায়াতে বেশ উপযোগী এই আকাশযান৷ রাশিয়ান হেলিকপ্টার হোল্ডিংস কোম্পানির তৈরি আনসাত এই প্রথম ইউরোপে এলো৷ ৩০ বছর আগে, প্যারিস এয়ার শোতে এসেছিল রাশিয়ার বেসামরিক রবোক্রাফট৷
ছবি: Reuters/P. Rossignol
ফাইটার জেটও আছে!
দৃষ্টিটা বেসামরিক বিমানে আটকে গেলেও, প্রদর্শনী জুড়ে ছিল শক্তিশালী সামরিক আকাশ যান৷ নানা রকমের যুদ্ধ বিমান, সামরিক হেলিকপ্টারের পসরা সাজিয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো৷ বিশেষ করে তার্কিশ এরোস্পেসের ফাইটার জেট ওয়ান-টু-ওয়ান মক-আপ নজর কেড়েছে অনেকের৷
ছবি: Reuters/P. Rossignol
7 ছবি1 | 7
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে. ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ওই কারখানায় প্রথম 'মেড ইন ইন্ডিয়া' বিমান তৈরি হবে। মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে ভারতের বেসরকারি ক্ষেত্র উচ্চ প্রযুক্তির ও তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বিমান তৈরির ক্ষেত্রে প্রবেশ করবে। এর ফলে এই ধরনের বিমান আমদানি কমবে, বরং তা রফতানি করা হবে।
৫৬টা বিমান তৈরির পর এয়ারবাস 'মেড ইন ইন্ডিয়া' বিমান বাইরের দেশে বিক্রি করতে পারবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এয়ারবাস এখন স্পেনের কারখানায় যে কাজ করে, তার ৯৬ শতাংশ কাজ ভারতে করবে। ২০২৬ থেকে ২০৩১ পর্যন্ত এই বিমান বিদেশে রফতানি করা হবে।
এয়ারবাসএই বিমানের ইঞ্জিন, ল্যান্ডিং গিয়ার ও কিছু প্রযুক্তি দেবে। বাকি সফটওয্যার দেবে টাটারা। ভারতে এই বিমানের ১৩ হাজার ৪০০টি পার্ট তৈরি হবে। চার হাজার ৬০০ পার্ট জোড়া দেয়া হবে এবং সাতটি বড় অংশও জোড়া দেয়া হবে। সাতটি রাজ্যে ১২৫টি সংস্থাকে টাটারা চিহ্নিত করেছে, যারা ওই পার্টস সরবরাহ করবে।
এয়ারবাস কাহন
জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজনে ইউরোপীয় বিমান সংস্থা এয়ারবাস গত সপ্তাহে ৫০ বছর পূর্তি পালন করেছে৷ এ উপলক্ষে কর্মীদের নিয়ে আকাশেও উড়েছে প্রতিষ্ঠানটির একটি বিমান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Charmeux
যৌথভাবে শুরু
১৯৬৯ সালে ফ্রান্স, জার্মানি ও স্পেনের নির্মাতারা মিলে গড়ে তুলেছিলেন প্রতিষ্ঠানটি৷ বর্তমানে এর মোট পুজি প্রায় ৬৬ বিলিয়ন ইউরো৷ তবে ইউরো মুদ্রা চালু হওয়ার পর মূলত গতি পায় প্রতিষ্ঠানটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Seliverstova
কর্মীর সংখ্যাও কম নয়
বিনিয়োগের দিক থেকে বেড়ে উঠার পাশাপাশি, কর্মসংস্থানের সৃষ্টিও করেছে প্রতিষ্ঠানটি৷ বর্তমানে সারা বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির মোট কর্মীর সংখ্যা এক লক্ষ ৩০ হাজার৷
ছবি: dapd
ছিল প্রতিযোগিতা
প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে ১৯৮৪ সালে এ ৩২০ নামে একটি যাত্রীবাহী বিমান চালু করে তারা৷ যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং বিমানের সাথে পাল্লা দিতেই তারা মাঠে নামিয়েছিল এ ৩২০৷ মিলেছে সফলতাও৷
ছবি: Reuters/P. Hanna
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি
এ ৩২০ এর পথ ধরে পরবর্তীতে এ ৩২০ নিও নামে আরেকটি এয়ারবাস নামায় তারা৷ আর এটিই বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মূল চালিকাশক্তি৷
ছবি: Reuters/Regis Duvignau
ছিল ব্যর্থতাও
এয়াবাস উৎপাদন করতে গিয়ে সবসময় সফল ছিল না প্রতিষ্ঠানটি৷ চলতি বছরের প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা করে যে, তারা আর এ ৩৮০ এয়ারবাস বানাবে না৷ কেননা বিমানটির জন্য যথেষ্ট চাহিদা দেখছে না তারা৷
ছবি: em company/H. Goussé
আছে অভিযোগও
দীর্ঘ এ ৫০ বছরের যাত্রায় অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে৷ এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে একটি অর্থ লেনদেনে প্রতিষ্ঠানটির অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Horcajuelo
6 ছবি1 | 6
এই কারখানা হলে ৬০০জন অতি দক্ষ কর্মী চাকরি পাবেন। তিন হাজার পরোক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হবে। তাছাড়া তিন হাজার মাঝারি দক্ষতার চাকরিও তৈরি হবে। মোট ৪২ লাখ ৫০ হাজার শ্রমঘণ্টা তৈরি হবে।
এয়ারবাসের স্পেনের কারখানায় ২৪০ জন ইঞ্জিনিয়ারকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
এই বিমান ৪০ থেকে ৪৫ জন প্যারাট্রুপার বা ৭০ জন যাত্রী নিয়ে যেতে পারবে।