গুজরাটে সেতু ভেঙে যাওয়ার পরেই নবান্নে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক কর্তারা।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার নবান্নে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসছেন পশ্চিমবঙ্গের পূর্ত দপ্তরের কর্মকর্তারা। বৈঠকে থাকার কথা রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী পুলক রায়েরও। রাজ্য এবং জেলাস্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের কাছ থেকে বিভিন্ন সেতু নিয়ে ইতিমধ্যেই রিপোর্ট আনা হয়েছে।
রোববার রাতে গুটরাটের মোরবিতে একটি সেতু ভেঙে পড়ে। শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এখনো হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কয়েকশ মানুষ। শতাব্দীপ্রাচীন সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। শুধু তা-ই নয়, একসঙ্গে এত মানুষকে কেন ওই সেতুতে উঠতে দেওয়া হলো, তা নিয়েও নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
কলকাতার ব্রিজ: ভাঙছে চাঙড়, গজাচ্ছে বটগাছ, বাড়ছে ফাটল
তিন বছর আগে ভেঙে পড়ে মাঝেরহাট সেতু। বিশেষজ্ঞ কমিটি বলেছিল, ২০টি ব্রিজ সারানো দরকার। কিছু সারানো হয়েছে। কলকাতার সেতু ঘুরে দেখে ডিডাব্লিউ-র বিশেষ ছবিঘর।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মা উড়ালপুলে বটগাছ
বাইপাসে পার্ক সার্কাস কানেকটরের উপর তৈরি হয়েছে এই সেতু। কলকাতা তথা রাজ্যের দীর্ঘতম উড়ালপুল। দশ কিলোমিটার লম্বা এই উড়ালপুলের গায়ে দেখা গেল বটগাছের চারা গজিয়ে গেছে। যা সেতুর ক্ষতি করতে পারে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উল্টোডাঙা সেতুতে ফাটল
আট বছর আগে ভেঙে পড়েছিল এই ব্রিজের একাংশ। বহুদিন বন্ধ ছিল উড়ালপুলের একাংশ। তারপর সারানো হয়েছে। হাইটবার লাগানো হয়েছে। বড় গাড়ি উঠতে দেয়া হয় না। এই ব্রিজেও ফাটল চোখে পড়েছে। বৃহস্পতিবার মেরামতির জন্য উড়ালপুল বন্ধ ছিল।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বিজন সেতুর বেহাল স্থিতি
কসবায় এই সেতুটির অবস্থা বছর পাঁচেক আগে বেশ খারাপ ছিল। তারপর সারাই হয়েছে। সিমেন্ট ও রঙের প্রলেপ পড়েছিল। কিন্তু আবার এই সেতুর অবস্থা খারাপ হচ্ছে। বেরিয়ে পড়ছে কংক্রিটের কঙ্কাল।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সোনারপুর রেল ওভারব্রিজ
ব্রিজের শুরুতে পুলিশ বাজেয়াপ্ত করা গাড়ি রাখে। ব্রিজের নীচে মাছের আড়ত। বেশ নোংরা। এর ফলে ব্রিজের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শিয়ালদহ ফ্লাইওভার
সরকারি নাম বিদ্যাপতি সেতু। ব্রিজের নীচে বিশাল বাজার। কোনো গাড়ি চলে না। ১৯৭৮ সালে তৈরি এই ব্রিজ মেট্রো রেলের সুড়ঙ্গ তৈরির জন্য চারদিন বন্ধ রাখা হয়েছিল। আগে এখানে ট্রাম চলতো। তাও এখন বন্ধ। ট্রামনাইলে পিচ ঢালা হয়েছে। কিন্তু এর ফলে লোহার পাত গরম হয়ে ব্রিজে ফাটল ধরার আশঙ্কা আছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
হাওড়া ব্রিজে গুটখার ক্ষত
কলকাতার বিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক। এই সেতুও গুটখার (পান মশলা) থুতুর নির্যাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কিছুদিন আগে বিশেষ কেমিক্যাল লাগানো হয়েছিল। এবার এই সেতু সারাবার পরিকল্পনা করেছে সরকার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নতুন মাঝেরহাট ব্রিজ
ভেঙে পড়া সেতুর জায়গায় তৈরি হয়েছে নতুন সেতু। তার নাম দেয়া হয়েছে জয় হিন্দ ব্রিজ। ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সেতুর উদ্বোধন করেন। দুই বছর তিন মাস বন্ধ থাকার পর আবার চালু হয় মাঝেরহাট সেতু। নতুন ব্রিজ। তাই বাসিন্দারা এখন আশ্বস্ত। এই সেতুতে অতিরিক্ত ভার পড়লে সেন্সরের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছে যাবে লালবাজার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে। প্রচুর ক্যামেরাও লাগানো হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
করুণাময়ী ব্রিজের মেরামত
মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার পর দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জের কাছে করুণাময়ী ব্রিজের একাংশ ভেঙে যায়। ২০২০ সালে পরীক্ষার জন্য চারদিন বন্ধ রাখা হয় এই সেতু। তারপর তা সারানো হয়। কিন্তু এখন সেই ব্রিজের নীচে গাছ গজিয়েছে দেখা গেল। চারপাশে জঞ্জাল।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সারানো হয়েছে অরবিন্দ সেতু
মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর নজর পড়ে এই ব্রিজের দিকে। মেরামতি হয়। কিন্তু তারপরেও ব্রিজের হাল পুরোপুরি ফেরানো যায়নি। ভারী যানবাহন নিষিদ্ধ। তাই ব্রিজে রয়েছে হাইটবার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
চিংড়িহাটা ফ্লাইওভার নিয়ে আশঙ্কা
লকডাউনের সময় করা এক সমীক্ষায় এই সেতুটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই চিন্তা এখনো রয়েছে। এই সেতুর থামের অবস্থান নিয়েও সমস্যা আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কালীঘাট ব্রিজের হাল
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির কাছে এই ব্রিজ। মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর জরুরি ভিত্তিতে এই সেতু মেরামতের নির্দেশ দেয়া হয়। মেরামত হয়েছে। পণ্যবাহী গাড়ি নিষিদ্ধ। হাইটবার লাগানো হয়েছে। নীল-সাদা রঙ দিয়েও এই সেতুর জীর্ণতা ঢাকা পড়ছে না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
টালিগঞ্জ ব্রিজের অবস্থা ভালো নয়
১৯৩২ সালে তৈরি হয় এই সেতু। ব্রিজের নীচ দিয়ে বইছে আদিগঙ্গা। ব্রিজের উপরে ফুটপাথ জুড়ে বাজার বসে। ৮৯ বছর বয়সি এই ব্রিজের অবস্থা ভালো নয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ঢাকুরিয়া ব্রিজ ও ইঁদুর
ঢাকুরিয়া ব্রিজের নীচে ইঁদুরবাহিনী চার ফুট মতো গর্ত করে ফেলেছিল। আপাতত পরিস্থিতি সামাল দেয়া গেছে। তবে পুরসভা, সহ একাধিক সংস্থা মনে করছে, জোড়াতালি দিয়ে আপাতত বিপদ কাটানোর চেষ্টা হয়েছে ঠিকই, ভবিষ্যতে সমস্যা আবার বড় হয়ে দেখা দিতে পারে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আম্বেডকর সেতুর অবস্থা
ইস্টার্ন বাইপাসের পাশে আম্বেডকর সেতু। এই বছরের গোড়ার দিকে তিনদিন বন্ধ রেখে সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা হয়েছে। কাছে কিছু মার্বেলের গুদাম আছে। তাই ভারী যানবাহন চলাচল করে। জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ করা হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নাগেরবাজার ফ্লাইওভারের সমস্যা
সরকারি নাম রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সেতু। বাম আমলে কাজ শুরু হয়েছিল। তবে ২০১২-তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বোধন করেন। ব্রিজের নিকাশি ব্যবস্থা ভালো নয়। উপর থেকে নীচে জল পড়ে সমস্যার সৃষ্টি করে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বেলগাছিয়া রেল ওভারব্রিজ
এই রেল ওভারব্রিজের নীচে দুইটি স্টেশন। কলকাতা এবং টালা চক্ররেল স্টেশন। এই ব্রিজের উপর দিয়ে ট্রাম চলত। পিচের অবস্থা বালো নয়। ফাটল, গর্ত ভর্তি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বাঘাযতীন রেল ওভারব্রিজের হাল
খুবই খারাপ অবস্থায় ছিল এই রেলওভারব্রিজ। ২০১৭ সালে ব্রিজের একটা চাঙড় ভেঙে পড়ে। তারপর এই ব্রিজ সারানোর কাজ শুরু হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কামালগাজি উড়ালপুলের অবস্থা ভালো
পাঁচ বছর আগে তৈরি হয়েছে এই উড়ালপুল। ৮৪ কোটি টাকা খরচ করে। এখনো অবস্থা ভালো আছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দ্বিতীয় হুগলি সেতুর অবস্থা ভালো
সরকারি নাম বিদ্যাসাগর সেতু। বেশি পরিচিত দ্বিতীয় হুগলি সেতু নামে। বছর তিরিশেকের এই সেতুর অবস্থা যথেষ্ট ভালো।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শতবর্ষ পেরনো সুইং ব্রিজ
খিদিরপুর সুইং ব্রিজের বয়স একশ পার হয়েছে। ব্রিজটি জাহাজ এলে আড়াআড়িভাবে ঘুরে যেতে পারে। তাই এর নাম সুইং ব্রিজ। বয়স হলেও ভালো অবস্থায় আছে এই ব্রিজ।
লোহার তৈরি পুরনো ব্রিজ। নতুন রঙ হয়েছে। কিন্তু তাতেও জীর্ণতা ঢাকা যায়নি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
গর্ডেনরিচ বাস্কিউল ব্রিজ
১৯৬৬ সালে তৈরি হয়েছিল এই ব্রিজ। ব্রিজটি আড়াআড়ি খুলে যেতে পারে। কলকাতা বন্দরের তত্ত্বাবধানে আছে এই ব্রিজ। অবস্থা ভালো।
ছবি: Subrata Goswami/DW
টালা সেতু ভেঙে নতুন ব্রিজ
২০২০ থেকে টালা সেতুতে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এরপর সেতু ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নতুন সেতু তৈরি হচ্ছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পোস্তা উড়ালপুলও ভাঙা হচ্ছে
২০১৬-তে ভেঙে পড়ে নির্মীয়মান পোস্তা উড়ালপুলের একটি অংশ। এখন পুরোটাই ভেঙে ফেলা হচ্ছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
25 ছবি1 | 25
সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনা পশ্চিমবঙ্গেও ঘটেছে। কলকাতায় পোস্তা উড়ালপুল তৈরি হওয়ার সময় ভেঙে পড়েছিল। উল্টোডাঙা উড়ালপুল ভেঙে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছিল। ভেঙে পড়েছিল মাঝেরহাট ব্রিজ। গত বছর ডয়চে ভেলে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে কলকাতার একাধিক উড়ালপুল পরীক্ষা করে দেখেছিল। দেখা গেছিল, একাধিক সেতুর স্বাস্থ্য ভালো নয়। বস্তুত, মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর সরকার একটি বিশেষজ্ঞ দল তৈরি করেছিল। রাজ্যের এবং কলকাতার বিভিন্ন সেতু পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। গুজরাটের ঘটনার পর সেই রিপোর্ট এবং সেতুগুলির বর্তমান অবস্থা নিয়ে ফের বৈঠকে বসছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
ডয়চে ভেলেকে সেতু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সোমনাথ ঘোষ বলেছেন, ''কলকাতার একাধিক সেতুর স্বাস্থ্য ভালো নয়। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন আছে বেশ কিছু সেতুর।'' বস্তুত, ডয়চে ভেলের কলকাতার সাংবাদিক সুব্রত গোস্বামী সেতু নিয়ে একটি নীরীক্ষণমূলক সংবাদ করার সময় একাধিক সেতুতে ফাটলের ছবি তুলে ধরেছিলেন। যার কয়েকটি সারানো হলেও কিছু সেতুর অবস্থা এখনো বিপজ্জনক।
বিপজ্জনক সেই সেতুগুলি নিয়ে এদিন বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা। দুর্ঘটনা রুখতে বহু সেতুর উপর ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বার লাগিয়ে বড় গাড়ি ওঠা বন্ধ করা হয়েছে একাধিক সেতুতে। রাতের দিকে অনেক সেতু বন্ধ রাখা হয়। এছাড়াও কলকাতায় বেশ কিছু প্রমোদ সেতু আছে। সেগুলির স্বাস্থ্য নিয়েও এদিনের বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা। নবান্ন সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে, এদিনের বৈঠকের পর ফের একটি সেতু মনিটারিং কমিটি তৈরি হতে পারে। শহর এবং জেলার সেতুগুলি যারা নতুন করে পরীক্ষা করে দেখবে।