সম্প্রতি গাজা স্ট্রিপে যুদ্ধবিরতি চেয়ে একটি মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস। তারই জেরে তার ইস্তফা চাইলেন জাতিসংঘে ইসরায়েলের দূত। শুধু তা-ই নয়, ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, আপাতত গুতেরেসের সঙ্গে তারা কোনো বৈঠক করবেন না।
হামাসের হামলা ঠেকাতে হিমসিম খাচ্ছে ইসরায়েল
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের হামলায় রীতিমতো চমকে গেছে ইসরায়েল৷ ক্ষয়ক্ষতির ধাক্কা ইসরায়েলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে আগের ধারণাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে৷
ছবি: Jack Guez/AFP/Getty Images
সংগীত উৎসবে হামলা
গাজার কাছেই সুপারনোভা মিউজিক ফেস্টিভালে হামলা করে হামাস৷ শনিবার হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের সীমান্ত ভেদ করে ঢুকে পড়ে৷ তাদের জন্য এই উৎসবটি ছিল সহজ টার্গেট৷ কমপক্ষে ২৬০ জন মারা গেছেন সেখানে৷ অনেককে বন্দি করা হয়েছে৷ পরে ইসরায়েলি সেনারা জায়গাটি সুরক্ষিত করে৷
ছবি: Jack Guez/AFP/Getty Images
হামাসকে হটানো
ইসরায়েলি সেনারা নিয়মিত ফিলিস্তিনি এলাকায় অভিযান চালায়৷ এসব অভিযানে প্রতিপক্ষের যোদ্ধারা এবং সাধারণ মানুষ মারা যান৷ খুব কমই তাদের একই পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে৷ কর্তৃপক্ষকে তাই নিজেদের শহরগুলোকে সুরক্ষিত করার ব্যাপারে তেমন প্রস্তুত মনে হয়নি৷ ইসরায়েলি সেনা যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে৷
ছবি: Thomas Coex/AFP/Getty Images
ইসরায়েলি কবর
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধে সাধারণত ফিলিস্তিনে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হয়৷ গেল সপ্তাহান্তে হামাসের হামলা সেই সংখ্যাকে বদলে দেয়৷ মৃতদের মধ্যে ইসরায়েলি সাধারণ মানুষই বেশি ছিলেন৷ ২০০০ সালে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময়ও একই পরিস্থিতি ছিল৷ ইহুদিদের যেহেতু খুব দ্রুত কবর দেবার নিয়ম, তাই ঘটনার পরপরই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়৷
ছবি: Maya Alleruzzo/AP/picture alliance
রক্তদান
ইসরায়েলি ইহুদিদের একটা অংশ ধর্মীয় কর্মে যুক্ত৷ তাদের জন্য সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া বাধ্যতামূলক নয়৷ তাদের অনেকেই হাসপাতালগুলোতে রক্ত দিতে চলে এসেছেন৷ হাসপাতালগুলোতে কয়েক হাজার আহত ইসরায়েলি ভর্তি হয়েছেন৷
ছবি: Ronen Zvulun/REUTERS
সুদূরপ্রসারী প্রভাব
হামাস ও ইসরায়েলের এই যুদ্ধের সুদূরপ্রসারী প্রভাব যে শুধু ভূরাজনৈতিকভাবে পড়ে তা নয়, ইসরায়েলে অনেক দূর দেশ থেকে মানুষ আসেন কাজ করতে৷ এদের মধ্যে রয়েছেন থাইল্যান্ডের অনেক মানুষ৷ তাদের অনেককে হামাস যোদ্ধারা মেরে ফেলেছে, বা তুলে নিয়ে গেছে৷ কারো কারো কোন খোঁজই নেই৷
ছবি: Thomas Suen/REUTERS
ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর অগ্রাধিকার
ইসরায়েলিরা একটা ট্রমার মধ্য দিয়ে গেলেও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, কেমন করে কোন সতর্কবার্তা ছাড়াই হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ করে৷ তাদের অভিযোগ, ইসরায়েলি বাহিনী দেশের মানুষকে রক্ষা করার চেয়ে ফিলিস্তিনি এলাকা ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক বিতর্কিতভাবে দখল ও সেখানে সেটেলার ইসরায়েলিদের সেবায় লেগে আছে৷
ছবি: HAZEM BADER/AFP
যুদ্ধের প্রস্তুতি
ইসরায়েলের সেনাদের জন্য এখন শোকপালনের সময় নেই৷ তারা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছেন৷ ২০০৫-এ যেই গাজা উপত্যকা ছেড়ে এসেছেন, সেখানে আবার ঢোকার প্রস্তুতি নিয়েছেন৷ দেশটির প্রধানমন্ত্রী গাজার মানুষদের এলাকা ছেড়ে যাবার আহ্বান করেছেন, যেটি আসলে তাদের জন্য অসম্ভব, কারণ সব সীমান্ত ইসরায়েল বন্ধ করে রেখেছে৷
ছবি: Jack Guez/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে গুতেরেস বলেছেন, ''এই মুহূর্তে এই সংঘাত বন্ধ হওয়া উচিত। গাজা স্ট্রিপে আমরা যা দেখছি, তা থেকে পরিষ্কার যে সেখানে আন্তর্জাতিক আইন মানা হচ্ছে না।'' এখানেই শেষ করেননি গুতেরেস। বলেছেন, ওই অঞ্চলে ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘদিন ধরে কার্যত পরাধীন হয়ে আছেন। হামাস যে আক্রমণ চালিয়েছে, তা একদিনে তৈরি হয়নি। এই হামাসকে অবশ্য জাতিসংঘ, অ্যামেরিকা, ইউরোপ সকলেই সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে গণ্য করে।
গুতেরেসের এই মন্তব্যের পর তার কড়া সমালোচনা করেছে ইসরায়েল। জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাড এরডান বলেছেন, 'শতাধিক মানুষকে যারা খুন করেছে, পুরুষ, নারী, শিশু কাউকে রেহাই দেয়নি, সেই হামাসকে সমর্থন করেছেন গুতেরেস। জাতিসংঘের প্রধান থাকার আর কোনো অধিকার তার নেই।'
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও এবিষয়ে মুখ খুলেছেন। এলি কোহেন বলেছেন, ৭ অক্টোবর যারা নির্বিচারে হত্যা করল গুতেরেস কার্যত তাদের সমর্থন করেছেন। তার কথায়, 'গুতেরেস আপনি কোন বিশ্বে থাকেন জানি না, তবে এটা আমাদের বিশ্ব নয়, এটুকু বলতে পারি।' জাতিসংঘের প্রধানের সঙ্গে বৈঠকও বাতিল করেছেন তিনি।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে একটি অনুষ্ঠান চত্বরে আক্রমণ চালায় হামাস। প্রায় ২২০ জন বেসামরিক মানুষকে পণবন্দি করে তারা। তাদের মাত্র সামান্য কয়েকজনকে সম্প্রতি ছেড়েছে তারা। বাকিরা এখনো বন্দি। পাশাপাশি বহু মানুষকে হত্যাও করে তারা। তারই জেরে পাল্টা আক্রমণ চালায় ইসরায়েল। গাজা স্ট্রিপকে কার্যত ধ্বংসাবশেষে পরিণত করেছে ইসরায়েল। সেখানেও প্রচুর বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বস্তুত, ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসকে সম্পূর্ণ শেষ না করা পর্যন্ত তাদের সংঘাত চলবে।
এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধ বন্ধ করার আর্জি জানিয়েছে অনেকেই। সাধারণ মানুষের হত্যা নিয়ে সরব হয়েছে বহু দেশ। গুতেরেসও সেই কথাই বলার চেষ্টা করেছিলেন বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশের অভিমত।